‘এইবারের মত ঈদ আমার জীবনে দেহি না। রাস্তায় কোনো যানযট নাই, কোনো ঝামেলাও নাই। গত ১০-১৫ বছর ধইরা ঢাহা থাহি। প্রতিবার ২শ টেহার ভাড়া ১ হাজার টেহা দেই। এইবার হেরুম বাড়তি ভাড়াও লাগে নাই। চ্যালচ্যালায়া বাড়িত গেছি, অহন আবার ছুডি শেষ কইরা ঢাহা যাইতাছি।’

ময়মনসিংহ নগরীর ঢাকা বাইপাসে কথাগুলো বলছিলেন ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার বাসিন্দা আতাউর রহমান। গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিকের কাজ করেন তিনি। 

আতাউরের মতোই ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেওয়া একাধিক যাত্রীর সঙ্গে কথা হয় সমকালের। এসময় তারা বলেন, চাঁদাবাজি না থাকায় এবারের ঈদে বাড়তি ভাড়া আদায় করতে পারছেন না পরিবহন শ্রমিকরা। আবার বিগত বছরগুলোর ন্যায় মোড়ে মোড়ে পুলিশের হয়রানি না থাকায় কোনও ধরনের যানজট পোহাতে হচ্ছে না। আবার লম্বা ছুটি পাওয়ায় সবাই সুবিধামতো সময়ে যাওয়া আসা করতে পারছেন। ময়মনসিংহের ব্রিজ মোড়, মাসকান্দা বাস টার্মিনাল ও ঢাকা বাইপাস মোড়ের চিত্রগুলো ঠিক এমনই।

একটি চিত্র দেখা গেছে ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনেও। ঢাকার একটি সফটওয়্যার কোম্পানিতে গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেন মেহেদী শরীফ। এবারের ঈদে অনলাইনে টিকিট কেটেছেন তিনি। সেজন্য কোনও দালালের খপ্পরে পড়তে হয়নি তাকে। স্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষমান আরো কয়েকজন যাত্রী জানান, এবারের ঈদে বড় কোনও শিডিউল বিপর্যয় হয়নি। তাই তারা সময়মতো ট্রেনে বাড়ি ফিরতে পেরেছেন। আবার টিকিট ছাড়া যাত্রী ভ্রমণে কড়াকড়ি আরোপ করায় ট্রেনের বগিতে তেমন গাদাগাদি নেই। এতে ঢাকায় ফেরা যাত্রীরা স্বস্তির কথাই জানিয়েছেন।

শুক্রবার সরেজমিনে ময়মনসিংহ মহাসড়কের সবগুলো পয়েন্টে ঘুরে দেখা গেছে কোথাও তেমন যাত্রীর চাপ নেই। ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেওয়া যাত্রীরা লোকাল বাসে উঠতে চাইলে বাসের হেলপাররা প্রতিযোগিতা করে তাদের বাসে উঠাতে চাইছেন। ব্রীজ মোড়ের যাত্রীরা ২০০ থেকে ৩০০ টাকার ভেতরে লোকাল বাসে করেন ঢাকায় যেতে পারছেন।

ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফিরছেন এমন কয়েকজন যাত্রী জানান, অফিস শুরু হওয়ায় পরিবারের সদস্যদের বাড়িতে রেখেই ফিরতে হয়েছে। তবে বাড়তি ভাড়া না থাকা এবং রাস্তায় কোনো ভোগান্তি না হওয়ায় তার চেহারার স্বস্তির ছাপ স্পষ্ট। নেত্রকোনা থেকে ঢাকায় যাওয়া শাহজালাল পরিবহনের এক যাত্রী বলেন, এখনো স্কুল-কলেজের ঈদের ছুটি শেষ না হওয়ায় বাড়িতেই থেকে গেছেন পরিবারের সদস্যরা। অফিস করতে আমাকে ফিরতে হয়েছে। তবে কোনো ভোগান্তি ছাড়াই দ্রুত পৌঁছে গেছি। প্রতিবছর ঈদের সময় যে বাড়তি ভাড়া গুনতে হতো সেটা পরিবারের পেছনে খরচ করতে পেরে আনন্দিত হয়েছি।

ময়মনসিংহ জেলার ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (প্রশাসন) আবু নাসের মো.

জহির জানান, এবারের ঈদ যাত্রায় সড়কে তেমন বড় কোনো দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি। ছুটির প্রথম দিন থেকে বড় কোনো যানজট হয়নি ময়মনসিংহের মহাসড়কে। এবারের ঈদে সড়ক দুর্ঘটনার হারও কম। যাত্রীদের তেমন একটা অভিযোগ ছিল না। ছুটি শেষে তারা স্বাচ্ছন্দে বাড়ি ফিরতে পারছেন। আমাদের কষ্ট সার্থক হয়েছে।

ভোক্তা অধিকার ময়মনসিংহের সহকারী পরিচালক আব্দুস সালাম জানান, ঈদের আগের দিন পর্যন্ত আমরা মহাসড়কে অভিযান পরিচালনা করেছি। এবারের ঈদে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার খুব একটা অভিযোগ নেই। তবুও যেখানে অনিয়ম দেখেছি সেখানে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করেছি। যাত্রী এবং পরিবহন শ্রমিকদের সচেতন করার চেষ্টা করেছি। ঈদের পরও যাত্রীদের কাছ থেকে আমরা তেমন কোনো আক্ষেপ শুনতে পাচ্ছি না। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মানুষ এবার শান্তিতে যাতায়াত করতে পেরেছে।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

আমিরাতকে হারিয়ে সুপার ফোরে পাকিস্তান

এশিয়া কাপ-২০২৫ এর সুপার ফোরে জায়গা করে নিলো আনপ্রেডিক্টেবল পাকিস্তান। বুধবার দিবাগত রাতে ‘এ’ গ্রুপে নিজেদের শেষ ম্যাচে স্বাগতিক আরব আমিরাতকে ৪১ রানের ব্যবধানে হারিয়ে ভারতের সঙ্গী হলো সালমান-শাহীনরা।

দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের আলো-ঝলমলে রাতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান সংগ্রহ করে ৯ উইকেটে ১৪৯ রান। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৭.৪ ওভার পর্যন্ত টিকেছিল আমিরাত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১০৫ রানেই গুটিয়ে যায় তাদের ইনিংস। সেই সুবাদে সহজ জয় নিয়ে শেষ চারে জায়গা নিশ্চিত করে পাকিস্তান।

আরো পড়ুন:

আরব আমিরাতকে ১৪৭ রানের টার্গেট দিল পাকিস্তান

বেথেলের ইতিহাস গড়া দিনে ইংল্যান্ডের দাপুটে জয়

এই জয়ের নায়ক নিঃসন্দেহে শাহীন শাহ আফ্রিদি। বিপদের মুহূর্তে নামতে হয় তাকে ব্যাট হাতে। সেখানে ১৪ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কার ঝড়ে অপরাজিত ২৯ রানের ইনিংস খেলেন তিনি, যা পাকিস্তানের সংগ্রহকে দাঁড় করায় লড়াইযোগ্য অবস্থানে। শুধু ব্যাটেই নয়, বল হাতেও ছিলেন সমান কার্যকর। ৩ ওভারে মাত্র ১৬ রান খরচ করে তুলে নেন ২টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। এমন সর্বাঙ্গীন পারফরম্যান্সে স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচসেরার পুরস্কার উঠে যায় তার ঝুলিতে।

তবু শুরুটা বেশ আশাব্যঞ্জক ছিল আমিরাতের। ১৩.৫ ওভার পর্যন্ত তারা প্রতিযোগিতায় টিকে ছিল দারুণভাবে। তিন উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ করেছিল ৮৫ রান। কিন্তু এরপর যেন ধস নামে। মাত্র ২০ রানের ব্যবধানে বাকি সাত উইকেট হারিয়ে পুরো দল অলআউট হয়ে যায় ১০৫ রানে। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৫ রান করেন রাহুল চোপড়া, যার ইনিংসে ছিল ১টি চার ও ১টি ছক্কা। ধ্রুব পারাশার যোগ করেন ২০, মুহাম্মদ ওয়াসিম ১৪ এবং আলিশান শারাফু করেন ১২ রান।

পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণে শাহীনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দুটি করে উইকেট নেন হারিস রউফ ও আবরার আহমেদ।

এর আগে ব্যাট হাতে পাকিস্তানও ভুগেছে। চারজন ছাড়া কেউ দুই অঙ্কে পৌঁছাতে পারেননি। ফখর জামান খেলেন ৩৬ বলে ৫০ রানের দৃষ্টিনন্দন ইনিংস, যেখানে ছিল ২টি চার ও ৩টি ছক্কা। শাহীন আফ্রিদির অপরাজিত ২৯ রান ছাড়া অধিনায়ক সালমান আলি আগা ২০ এবং মোহাম্মদ হারিস যোগ করেন ১৮ রান।

আমিরাতের হয়ে দুর্দান্ত বোলিং করেন জুনায়েদ সিদ্দিকী। তিনি ৪ ওভারে মাত্র ১৮ রান দিয়ে তুলে নেন ৪টি উইকেট। সিমরানজিত সিংয়ের বোলিং ফিগারও কম চমকপ্রদ নয়, ৪ ওভারে ২৬ রান খরচ করে শিকার করেন ৩ উইকেট।

এই জয়ে পাকিস্তান-ভারত দ্বৈরথের আরেকটি অধ্যায় লেখার সুযোগ তৈরি হলো। শুধু তাই নয়, ভাগ্য যদি সহায় হয়, তবে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর ফাইনাল লড়াইও দেখা যেতে পারে এবারের এশিয়া কাপে।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ