স্কাউট সদস্যদের চেষ্টায় ভোগান্তি কমলো যাত্রীর
Published: 6th, April 2025 GMT
পাবনার ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশন। একদল স্কাউট সদস্যের কারও হাতে ট্রেনের বগির ‘ক’, ‘খ’, ‘গ’ লেখা প্ল্যাকার্ড, কেউবা যাত্রীদের টিকিট দেখে তাদের আসন খুঁজে দিচ্ছেন। আবার কেউ ভিড় সামাল দিয়ে যাত্রীদের উঠিয়ে দিচ্ছেন ট্রেনে। কারও কাঁধে বৃদ্ধ যাত্রীদের লাগেজ।
ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থলমুখী মানুষের ট্রেনযাত্রা সহজ করতে এমন কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন সেঞ্চুরী রেলওয়ে মুক্ত স্কাউট গ্রুপের প্রায় ৩০ জন সদস্য। স্টেশনে যাত্রীর ভিড় সামাল দিতে স্বেচ্ছাশ্রমে এ কাজ করেছেন তারা। তাদের ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগে স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ করতে পেরেছেন যাত্রীরাও।
এতে একদিকে যাত্রীরা স্টেশনে এসে ঝামেলা ছাড়াই ট্রেনে উঠে সহজে গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা করতে পেরেছেন। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষও তাদের উদ্যোগে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। ঈদের পরদিন থেকে গতকাল রোববার পর্যন্ত ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে রোভার স্কাউট লিডার ও সদস্যরা এভাবে যাত্রীদের সেবা দিয়েছেন।
জানা গেছে, স্কাউট সদস্যরা নারী ও বয়স্ক যাত্রীদের ট্রেনে উঠতে সহায়তা করেছেন। পাশাপাশি ফুট ওভারব্রিজ অতিক্রম করতে গিয়ে যেসব যাত্রী ব্যাগ-লাগেজ নিয়ে দুর্ভোগে পড়েন, এসব নিজেরাই কাঁধে নিয়ে তাদের ট্রেনে উঠতে সহায়তা করেন। যাত্রীদের নির্দিষ্ট বগি ও সিট খুঁজে দেওয়ার পাশাপাশি বিনা টিকিটে ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা, টিটিই ও টিসিদের কার্যক্রমে সহায়তা ও অনলাইনে টিকিট কাটাসহ নানান ঝক্কি তারা সামাল দিয়েছেন নিজ উদ্যোগে।
এ সময় রেলওয়ে সেঞ্চুরি স্কাউট গ্রুপের সভাপতি আবদুল্লাহ আল চিশতী, সহসভাপতি ফাতেমা রোকেয়া বাসার, ইছামতী মুক্ত স্কাউট গ্রুপের সম্পাদক সোহেল আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। এ কার্যক্রম পরিচালনা করেন গ্রুপ সম্পাদক এস এম আল-আমিন। স্কাউট ও রোভার স্কাউটদের নেতৃত্ব দেন মুসাভীর আল আরাফ, মো.
ইছামতী মুক্ত স্কাউট গ্রুপের সম্পাদক সোহেল আহমেদ বলেন, প্রতিবছর ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফিরতি পথে রেলস্টেশনে মানুষের ভোগান্তি দেখে মনে হয়েছে, তাদের কীভাবে রক্ষা করা যায়। সে চিন্তা থেকেই ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঈশ্বরদী দেশের অন্যতম বড় জংশন। প্রতিদিন প্রায় ৪০টি ট্রেন বিভিন্ন রুটে চলাচল করে। এসব রুটের হাজারো যাত্রীর দুর্ভোগ লাঘবে ভূমিকা রাখতে পেরে তারা খুশি।
স্টেশনের সুপারিনটেনডেন্ট মনিরুজ্জামান স্কাউট সদস্যদের এমন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তারা নিজেদের উদ্যোগে রেলকর্মী ও যাত্রীদের পাশে থেকে সহায়তা করেছেন।
সিনিয়র টিটিই আবদুল আলিম বিশ্বাস মিঠু বলেন, ঈদের পর কর্মস্থলমুখী যাত্রীদের সামাল দিতে রেল কর্মচারীদের হিমশিম খেতে হয়। এমন সময় স্কাউট সদস্যরা সহায়তা করায় তাদের কার্যক্রম পরিচালনা সহজ হয়েছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলে ইরানের নতুন হামলায় নিহত বেড়ে ৫, আহত ২৯
ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে অন্তত চার জায়গায় হামলা চালিয়েছে ইরান। এ হামলায় তিনজন নিহত হয় বলে জানায় জেরুজালেম পোস্ট। বিবিসি আরও দুইজন নিহতের খবর দেয়। এরপর আরেকজনের ফলে নতুন হামলায় ইসরায়েলে নিহত বেড়ে পাঁচজনে পৌঁছাল।
আজ সোমবার আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের অ্যাম্বুলেন্স ও ব্লাড ব্যাংক সংস্থাগুলো বলছে, এসব হামলায় ২৯ জন আহত হয়েছেন।
বিবিসির খবরে বলা হয়, ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি পরিষেবার প্রধান ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম জানান, মধ্য ইসরায়েলজুড়ে ইরানের হামলায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন নারী, একজন পুরুষ।
এর আগে সিএনএন ইসরায়েলের ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দেয়। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের খবর বলছে, ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে হামলায় একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়াও বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়াও সেখান আরও তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।
এর আগে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছিল, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।
আজ সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।
সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।
ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।
সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’
তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।
এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েল সরকারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর।
এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া সাতজন এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবাদানকারীরা।