ঋতু পরিবর্তনের এই সময়ে বাড়ছে বিভিন্ন রোগের প্রকোপ, করণীয় কী
Published: 7th, April 2025 GMT
আজ ৭ এপ্রিল, বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। প্রতি বছরের মতো এবারও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) উদ্যোগে আন্তর্জাতিক ও স্থানীয়ভাবে দিবসটি উদ্যাপিত হচ্ছে। এ বছর দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য—জন্ম হোক সুরক্ষিত, ভবিষ্যৎ হোক আলোকিত। যা মা ও শিশুর স্বাস্থ্য-সুরক্ষার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।
বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। বছরের প্রতিটি ঋতু আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর ভিন্নভাবে প্রভাব ফেলে। আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন রোগের প্রকোপও বেড়ে যায়। বিশেষভাবে শিশুদের ক্ষেত্রে এই সময়ে বাড়তি যত্ন নেওয়া জরুরি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা.
শীত থেকে গরম: যে রোগগুলোর প্রকোপ বাড়ে
শীত শেষে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করলে আমাদের শরীর নতুন আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সময় নেয়। এ সময় বেশ কিছু রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। যেমন—
ডায়রিয়া ও হিট স্ট্রোক: শীতের তুলনায় গরমে পানি ও খাবারের দ্রুত দূষণ হয়, যা ডায়রিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। এ ছাড়া প্রচণ্ড গরমে শরীর অতিরিক্ত ঘাম ঝরিয়ে পানিশূন্য হয়ে পড়তে পারে, যা হিটস্ট্রোকের কারণ হতে পারে।
টাইফয়েড: দূষিত পানি ও খাবারের মাধ্যমে সালমোনেলা টাইফি ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করলে টাইফয়েড হয়।
ত্বকের সমস্যা: অতিরিক্ত গরম ও আর্দ্রতার কারণে ঘামাচি, ছত্রাকজনিত সংক্রমণ ও ত্বকের অ্যালার্জির প্রকোপ বাড়তে পারে।
গরম থেকে শীত: যে রোগগুলোর প্রকোপ বাড়ে
গরমের পর শরীর শীতের পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর সময় নেয়, ফলে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে। এ সময় নিম্নলিখিত রোগগুলোর ঝুঁকি বাড়ে—ঠান্ডা ও ফ্লু: ঠান্ডা আবহাওয়ায় ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস বেশি সক্রিয় হয়, ফলে সর্দি-কাশি, গলাব্যথা ও জ্বর দেখা দেয়।
নিউমোনিয়া ও ব্রঙ্কাইটিস: শীতের শুষ্ক আবহাওয়ায় ফুসফুসের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের নিউমোনিয়া ও ব্রঙ্কাইটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
ডেঙ্গু: যদিও ডেঙ্গুর প্রকোপ সাধারণত বর্ষাকালে বেশি থাকে, তবে বছরের শেষভাগে কিছু এলাকায় সংক্রমণ চলমান থাকতে পারে, বিশেষ করে যদি বৃষ্টিপাত হয় ও মশার বংশবিস্তার অব্যাহত থাকে।
ঋতু পরিবর্তনের সময় সুস্থ থাকার উপায়
ডা. মো. সাইফুল্লাহর মতে, ঋতু পরিবর্তনের সময় যে রোগগুলো বেশি দেখা দেয়, সেগুলোর প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই বেশি ভালো। এতে ভোগান্তি কমে। তাই এই সময়ে বেশ কিছু সচেতনতা অবলম্বন করা জরুরি। যেমন—
পর্যাপ্ত পানি পান: পানিশূন্যতা রোধে প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা ভালো।
স্বাস্থ্যকর খাবার: এই সময়ে মৌসুমি ফল ও শাকসবজি বেশি খেতে হবে, যাতে পর্যাপ্ত ভিটামিন ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। এগুলো রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা: হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে এবং রান্নার আগে ও খাওয়ার আগে সঠিক নিয়ম মেনে হাত ধোয়া জরুরি।
সঠিক পোশাক পরিধান: শীত থেকে গরমে গেলে হালকা ও বাতাস চলাচলযোগ্য কাপড় পরা ভালো, আর গরম থেকে শীতে গেলে উষ্ণ পোশাক পরতে হবে।
পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম: শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম জরুরি। সেই সঙ্গে দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে হবে।
চিকিৎসকের পরামর্শ: যেকোনো ধরনের অসুস্থতা অনুভব করলে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
প্রসঙ্গত বর্তমানে বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও স্বাস্থ্যসেবা নেওয়া সম্ভব, যা দ্রুত ও সহজ সমাধান দিতে পারে। এমনই একটি প্ল্যাটফর্ম ‘সুখী’, যেখানে বিশেষ মূল্য মাত্র ২০ টাকা ফি দিয়ে অনলাইনে তাৎক্ষণিক চিকিৎসকের পরামর্শ পেতে পারেন। এ ছাড়া রয়েছে যেকোনো রোগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ, হোম ল্যাব টেস্ট সার্ভিস, বাসায় ওষুধ সরবরাহসহ সব ধরনের স্বাস্থ্যসেবার সমাধান। আর ঘরে বসেই এমন সুবিধা নিশ্চিত হওয়ায় আগ্রহীদের সময় ও ভোগান্তি দুটোই কমায়।
তাই ঋতু পরিবর্তনের সময়ে বা যেকোনো অসুস্থতায় সুখী (Shukhee)-র ওয়েবসাইটে অথবা অ্যাপ থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার মাধ্যমে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের দ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অনুমোদনের প্রথম দিন সেন্ট মার্টিন যায়নি কোনো পর্যটকবাহী জাহাজ
দীর্ঘ ৯ মাস পর শনিবার থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার। কিন্তু প্রথম দিন কোনো জাহাজ সেন্ট মার্টিনে না যাওয়ার কারণে পর্যটকেরা দ্বীপে যেতে পারেননি। হাজারো পর্যটক সেন্ট মার্টিনে যেতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন। অন্যদিকে জাহাজমালিকেরা বলছেন, সরকারের বিভিন্ন শর্তের কারণে পর্যটকদের আগ্রহ না থাকায় জাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী দ্বীপটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। ১ নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলে সরকারের কোনো বাধা নেই। লিখিতভাবে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে দিনে গিয়ে দিনেই চলে আসতে হবে; রাতে থাকা যাবে না।
এদিকে রাতে থাকার সুযোগ না থাকায় পর্যটকেরা যেতে আগ্রহী হচ্ছেন না। কারণ, দীর্ঘ সময় ভ্রমণ করে দ্বীপে গিয়ে আবার সেদিনই চলে আসতে হবে। এ কারণে জাহাজমালিকেরাও জাহাজ চালাতে অনীহা প্রকাশ করছেন। তাঁদের দাবি, দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত নয়।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম বলেন, জাহাজমালিকেরা যদি জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখেন, সেটা তাঁদের ব্যাপার। সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের জারি করা ১২টি নির্দেশনা এবার কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করবে জেলা প্রশাসন।
শাহিদুল আলম বলেন, আগে টেকনাফ থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করলেও নিরাপত্তার কারণে এখন কক্সবাজার শহর থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াত করবে।
সি ক্রুজ অপারেটরস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (স্কোয়াব) সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া ঘাট থেকে জাহাজ ছেড়ে গেলে সেন্ট মার্টিন পৌঁছাতে সাত থেকে আট ঘণ্টা সময় লাগে। ফলে পর্যটকেরা কিছুই ঘুরে দেখতে পারবেন না। দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসা যেমন কষ্টসাধ্য, তেমনি ব্যবসার জন্যও তা অলাভজনক। এ কারণেই অনেক পর্যটক সেন্ট মার্টিন যেতে অনীহা প্রকাশ করেছেন।
হোসাইন ইসলাম আরও বলেন, রাতযাপন করার সুযোগ না থাকলে সেন্ট মার্টিনের পর্যটন মৌসুম জমে না। পর্যটকেরা রাতের সৈকত দেখতে চান, ঢেউয়ের শব্দ শুনতে চান। সেটাই তো সেন্ট মার্টিনের আসল আকর্ষণ।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিচালক মো. জমির উদ্দিন বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সরকারের নির্দেশনা কঠোরভাবে কার্যকর করা হবে। এ লক্ষ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনসেন্ট মার্টিনে নিষেধাজ্ঞা উঠছে কাল, তবে জাহাজ চলবে কি৩১ অক্টোবর ২০২৫