আগের রাতে কিছুটা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে গেছে। অনেক দিন পর এমন হাওয়া এসেছিল। কিছুটা সময় ধরে মেঘ ডেকেছে। সঙ্গে ছিল দু–চার ফোঁটা বৃষ্টিও। সেই বৃষ্টির দাগ তখনো থেকে গেছে চৈত্রদিনের ধুলায়, ঘাসে। গাছের শুকনা পাতারা ঝরে পড়েছে। নতুন পাতারা শরীরের ধুলাবালি মুছে যেন তখন স্নান সেরে নিয়েছে। পাতায় ফিরছে চকচকে শান্ত-সহজ ভাব। ওই ঝোড়ো হাওয়া, ওই বৃষ্টির আঁচ তখনো বাতাসকে ছেড়ে যায়নি। বাতাসে কিছুটা গরমের উত্তাপ আছে, তবে অতটা গায়ে লাগছে না। তখন (সোমবার, ৭ মার্চ) দুপুর গড়িয়ে বিকেলের দিকে সূর্য অনেকটাই কাত হয়ে গেছে। বিকেলটা এ রকমই তো হওয়ার কথা।
হাওরের বুকে তখন তিরতির করা হাওয়ারা পালক মেলেছে। বিস্তীর্ণ ফসলের খেতে ধানের ছড়া, ধানের পাতাকে সঙ্গী করে হাওয়ারা দুলছে। যেন শত শত কিশোরী খোঁপায় বুনো ফুল জড়িয়ে অংশ নিয়েছে নাচে। ওখানে (হাওরে) বাতাস আরও নরম, আরও শীতল। পুরো প্রান্তরে তখন আর কিছু নেই, শুধু চোখজুড়ানো বেতের ফলের মতো নীলাভ ধানের সবুজ। আর আছে এখানে-ওখানে চিহ্নের মতো কিছু মানুষের হাঁটাচলা, কাজ। কিছু খোলা স্থানে চরানো হয়েছে গরুর পাল। রাখাল রাজা দূরে কোথাও বসে পাহারা দিচ্ছেন। হয়তো এমন সময়কে একদিন কোনো এক মুহূর্তে জীবনানন্দ দাশ দেখেছিলেন, ‘এইখানে সময়কে যতদূর দেখা যায় চোখে/ নির্জন খেতের দিকে চেয়ে দেখি দাঁড়ায়েছে অভিভূত চাষা;.
হাওরের যতই গভীরে যাই, ওখানে এই ধানের সবুজে তখন ওরকম দু–চারজন অভিভূত কৃষকের সঙ্গেই দেখা হতে থাকে। তাঁরা খেতে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকা ফসলের পাশাপাশি আলপথ ধরে হেঁটে ঘুরে ধানের লাবণ্য দেখেন। কোনো খেতে ধানে পাক ধরছে। শস্যের ভারে গাছের শরীর নুয়ে আসছে। আর অল্প কিছুদিন পর এই ধান সোনার রঙের মতো রূপ নিয়ে হেসে উঠবে সারা হাওরেই। চাষিরা কাস্তে নিয়ে মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়বেন। এ যেন ‘রয়েছি সবুজ মাঠে—ঘাসে/ আকাশ ছড়ায়ে আছে নীল হ’য়ে আকাশে-আকাশে;...।’
কোথাও সোনালি রং ধরছে ধানে। কিছু জমির ধান পেকে গেছে। পাকা ধান কেটে নিচ্ছেন কৃষক। তবে পাকা ধানের খেত খুব সামান্যই। কোথাও ধানের শিষ আস্তে আস্তে সোনালি হয়ে উঠছে।অচেনা কারও পক্ষে এখন মনে করা কঠিন, আর কিছুদিন পর যখন আকাশ থেকে জল নামবে, ঢল নেমে আসবে হাওরের বুকে। তখন এই হাওর আর থাকবে না। সব সবুজ মুছে ওখানে ভেসে উঠবে জলের মরমি ঢেউ। মাঠ, ঘাট পার হয়ে গ্রামে ছুটবে জল, কারও ভিটেবাড়িকেও ছুঁয়ে দেখবে। আর জলের অমন প্রশস্ত বুকে ঘুরে বেড়াবে শাপলা-শালুক ফুল, শেওলা। মাঝে মাঝে দেখা মিলবে দু–একটি পালতোলা নৌকার। যে নৌকার জেলেরা মাছের খোঁজে ভেসে বেড়াবে জলের বুকে।
এখন সেই জলের দেখা পাওয়ার সুযোগ নেই, শুকনা হাওরের বুক এখন ধানের মাতৃভূমি হয়ে আছে। কাউয়াদীঘি হাওরের যেদিকে যত দূর তাকানো যায়, সেদিকেই শুধু ধান আর ধান। সবুজ-ধূসর চাদরের মতো দিগন্তজুড়ে বিছানো রয়েছে ধানের খেত।... ‘সোনার সিঁড়ির মতো ধানে আর ধানে/ তোমারে খুঁজেছি আমি নির্জন পেঁচার মতো প্রাণে।’ ওখানে তখন জল নয়, ধানের খোঁজেই আছে মানুষ, অভিভূত চাষারাই।
একটু ছায়ায় বিশ্রাম নিতে অস্থায়ী তাঁবু। ৭ এপ্রিল মৌলভীবাজারের কাউয়াদীঘি হাওরেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হ ওর র
এছাড়াও পড়ুন:
শেফালি আর দীপ্তিতে নতুন মুম্বাইয়ে নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত
নাবি মুম্বাই। নয়া মুম্বাই। নতুন সেই মুম্বাইয়ে কাল নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পেল মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত।
দীপ্তি শর্মার করা ৪৬তম ওভারের তৃতীয় বলে নাদিন ডি ক্লার্কের তোলা ক্যাচটি এক্সট্রা কাভারে ভারত অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌরের হাতে জমা হতেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের আনন্দে মাতল পুরো ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকা ২৪৬ রানে অলআউট, ভারত ৫২ রানে জয়ী।
ভারতের জয়ের উৎসব অবশ্য শুরু হয়ে গিয়েছিল পাঁচ ওভার আগেই। লরা ভলভার্টকে ফিরিয়ে পথের কাঁটা উপড়ে ফেলেই উদ্যাপন শুরু করেছিল ভারতীয়রা। অসাধারণ এক সেঞ্চুরি করে দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক চোখ রাঙাছিলেন ভারতের উৎসব ভন্ডুল করার। কিন্তু সেঞ্চুরি করার পরপরই ক্যাচ তুললেন ভলভার্ট। আর সেই ক্যাচ নিতে গিয়ে আমানজোত কৌর ভারতের প্রায় শত কোটি মানুষের হৃৎস্পন্দন প্রায় থামিয়ে দিয়েছিলেন। একবার নয়, দুবার নয়, তৃতীয়বারের চেষ্টাতেই ক্যাচ নিতে পারেন আমানজোত। এবারও বোলার সেই অফ স্পিনার দীপ্তি শর্মা।
৯৮ বলে ১০১ রান করে ভলভার্ট যখন ফিরলেন দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ৪১.১ ওভারে ২২০/৭। এরপর শুধু আনুষ্ঠানিকতাই ছেড়েছে ভারত। দীপ্তি আরও ২টি উইকেট নিয়ে পেয়ে গেছেন ৫ উইকেট। আর ভারত হয়ে গেছে চ্যাম্পিয়ন। এর আগে ব্যাট হাতেও ৫৮ বলে ৫৮ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন দীপ্তি।
ব্যাট হাতে ৮৭ রান করা শেফালি বর্মা বল হাতে নিয়েছেন ২ উইকেট