প্রতিষ্ঠিত গেরস্থ ও বড় চাষিদের বিস্তর ফসলি জমিতে ফসল উৎপাদনের মূল কাজ করেন স্থানীয় বর্গাচাষিরা। অন্যান্য এলাকার চেয়ে হাওরবেষ্টিত সুনামগঞ্জ অঞ্চলে ফসল উৎপাদনের এ সংগ্রামটা অনেক বেশি কঠিন চাষিদের জন্য। জেলার হাওর অধ্যুষিত অঞ্চলের সবচেয়ে দুর্গম এলাকাগুলোতে বোরো ফসল আবাদের জন্য ভিটেবাড়ি ছাড়তে হয় সেখানকার বর্গাচাষিদের। সেখানে তারা গড়ে তোলেন মৌসুমি বসতি। বর্ষায় হাওরের এসব অংশজুড়ে থাকে বিস্তীর্ণ জলরাশি।
শুষ্ক মৌসুমে হাওরের পানি নেমে গেলে এর দুর্গম অংশে প্রতি মৌসুমে গড়ে তোলা হয় বর্গাচাষিদের অস্থায়ী বসতি। এসব বসতি কোথাও জিরাতি, আবার কোথাও খলাবাড়ি নামে পরিচিত।
শত বছর আগে ফসল আবাদের তাগিদ থেকে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলাধীন মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের সীমানাবর্তী দেখার হাওরে গড়ে উঠেছিল প্রান্তিক চাষিদের প্রথম অস্থায়ী আবাস। সেখান থেকে হাওর অঞ্চলের চাষিদের ঐতিহ্যে পরিণত হয় খলাবাড়ি।
বিশাল হাওরের মাঝখানে স্থাপন করা হয় খলাবাড়ি নামে পরিচিত এ অস্থায়ী আবাস। যার সঙ্গে যুক্ত থাকে বিশাল আঙিনা। এসব এলাকায় গিয়ে ফসলের তদারকি করা কঠিন। তাই বছরের সাত-আট মাসের জন্য সেখানে খলাবাড়ি স্থাপন করেন চাষিরা। তেল-লবণ ছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছু সেখানে নিজেরা ব্যবস্থা করেন। এই সময়ে হাওরের বিস্তীর্ণ জমিতে বোরো ধান আবাদের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।
খড়, ছন, বাঁশ আর মাটি দিয়ে বানানো হয় খলাবাড়ির অস্থায়ী ঘরগুলো। বৈরী আবহাওয়া, নানা প্রতিকূলতাকে সঙ্গী করে সপরিবারে সেখানে অবস্থান করেন বর্গাচাষিরা।
একদিকে জমিতে ধানের আবাদ চলতে থাকে,  অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজন মেটাতে সবজি চাষ, হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল পালনসহ সবই করেন চাষিরা। মৌসুমের শুরুতে জমি আবাদের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া ফসল উৎপাদনের প্রক্রিয়া সেখানে শেষ হয় ধান মাড়াই, শুকানো ও গোলায় তোলা পর্যন্ত। এই পুরো সময় সেখানে থাকেন চাষিরা।
বর্গাচাষিদের অনেকে হাওরের খলাবাড়িতে আসছেন বংশ পরম্পরায়। চলতি মৌসুমে সেখানে থাকা অবস্থান করছেন ৩০টি পরিবার।
এসব বর্গাচাষি পরিবারের পুরুষ সদস্যরা জমিতে বোরো ধান রোপণ, রক্ষণাবেক্ষণ, কর্তন ও শুকানোর কাজে যুক্ত থাকেন। নারীরা বাড়ির আঙিনায় শাকসবজির আবাদ, গবাদিপশু পালন, রান্না-বান্নার কাজ করেন। বৈশাখে নতুন ধান তুলে বাড়ি ফেরেন তারা।
দোয়ারাবাজার উপজেলার পান্ডারগাঁও গ্রামের বাসিন্দা স্মৃতি রঞ্জন দাস জানান, কার্তিক মাসে পরিবার নিয়ে এখানে এসেছেন। হাওরের পতিত জমিতে বাঁশ, খড় আর মাটি দিয়ে বানিয়েছেন অস্থায়ী ঘর। এবার ১৪ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছেন তিনি। এখানে বছরের প্রায় ৮ মাস থাকেন তারা।
একই উপজেলার বাজিতপুরের বাসিন্দা জবর আলী বলেন, কুঁড়ে ঘর বানাতে প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। জ্যৈষ্ঠ মাসে যাওয়ার সময় ঘর ভেঙে বাড়ি নিয়ে যাবেন। এখানে থেকে জমি চাষ করছেন। পান্ডারগাঁওয়ের সীমা রানী দাস বলেন, আবাদের জন্য হাওরের মাঝে ঘর বানিয়ে থাকেন তারা। রাস্তাঘাট না থাকায় বাজারে যেতে অসুবিধা হয়। সবচেয়ে বড় সমস্যা বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট। 
খলাবাড়িতে অবস্থানকারী ৩০টি বর্গাচাষি পরিবারের সদস্যরা জানান, অন্তত বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থাটুকু এখানে করা উচিত। একই দাবি জানিয়ে মোল্লাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল হক বলেন, খলাবাড়ির বর্গাচাষিরা এ অঞ্চলের বোরো উৎপাদনে যে অবদান রাখছেন তা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। তাদের জন্য সেখানে পানি ও বিদ্যুৎ সেবাটুকু নিশ্চিত করা সবার দায়বদ্ধতা।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হ ওর বর গ চ ষ র দ র জন য পর ব র হ ওর র

এছাড়াও পড়ুন:

যমুনা সেতুতে ঈদের ছুটির শেষ ৪৮ ঘণ্টায় ৭ কোটি টাকার টোল আদায়

ঈদের ছুটি শেষে গত দুই দিনে সড়কে কর্মস্থলগামী মানুষের চাপ বেড়ে যায় বহুগুণ। বেড়ে যায় যমুনা সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন পারাপারও। বেড়েছে টোল আদায়ও। গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে শনিবার রাত ১২টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টায় ১ লাখ ৭৭৭টি যানবাহন সেতু পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে ৬ কোটি ৯১ লাখ ৪৯ হাজার ৪৫০ টাকা।

যমুনা সেতু টোলপ্লাজা সূত্র জানায়, শুক্রবার রাত ১২টা থেকে শনিবার রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৫১ হাজার ৫৯৫টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে ৩ কোটি ৪৮ লাখ ৩৬ হাজার ২৫০ টাকা। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গগামী ১৮ হাজার ২৬৬টি যানবাহন রয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৪৪ লাখ ৫২ হাজার ২০০ টাকা। অপর দিকে ঢাকাগামী ৩৩ হাজার ৩২৯টি যানবাহন পার হয়েছে। টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৩৮ লাখ ৪ হাজার ৫০ টাকা।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে শুক্রবার রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৪৯ হাজার ১৮২টি যানবাহন পারাপার হয়। এতে টোল আদায় হয়েছে ৩ কোটি ৪৩ লাখ ১৩ হাজার ২০০ টাকা। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গের দিকে ১৮ হাজার ৩৬৫টি যানবাহন পার হয়। এতে টোল আদায় হয় ১ কোটি ৪৮ লাখ ৩৮ হাজার ৩০০ টাকা। অপর দিকে ঢাকাগামী যানবাহন ছিল ৩০ হাজার ৮১৭টি। এর বিপরীত টোল আদায় ১ কোটি ৯৪ লাখ ৭৪ হাজার ৯০০ টাকা।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ যমুনা সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবির জানান, স্বাভাবিক সময়ে ১৮ থেকে ২০ হাজার যানবাহন প্রতিদিন পারাপার হয়। এবার ঈদের ছুটির শুরুতে এবং শেষে যানবাহন পারাপার কয়েক গুণ বেড়ে যায়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ