১. ব্যথানাশক ওষুধের অতিরিক্ত ব্যবহার

আমরা প্রায়ই সাধারণ সমস্যায় ফার্মেসি থেকে ব্যথানাশক ওষুধ কিনে খাই। যেমন আইবুপ্রোফেন বা অ্যাসপিরিন। এসব ওষুধ বেশি পরিমাণে বা অনেক দিন ধরে খেলে কিডনির ভেতরের ছোট নালিগুলোর ক্ষতি হতে পারে। বিশেষ করে যাঁরা বয়স্ক বা যাঁদের আগে থেকেই কোনো রোগ আছে, তাঁদের ক্ষেত্রে এসব ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া উচিত নয়। এ ধরনের ওষুধ কিডনির রক্তপ্রবাহ কমিয়ে দেয়। যদি ব্যথা কমাতে হয়, তাহলে কম ডোজের ওষুধ এবং অবশ্যই অল্প সময়ের জন্য খাবেন। তবে সবচেয়ে ভালো হয় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেলে।

২.

যথেষ্ট পানি না খাওয়া

কিডনির প্রধান কাজ হলো পানির সাহায্যে শরীরের বর্জ্য পদার্থ বের করে দেওয়া। পানি কম খেলে কিডনি ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। গরমের দিনে পানি না খেলে ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা দেখা দেয়। তখন প্রস্রাব ঘন ও গাঢ় হয়ে যায় এবং তাতে খনিজ উপাদান ও বর্জ্যের মাত্রা বেড়ে কিডনিতে পাথর বা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। তাই প্রতিদিন অন্তত দেড় থেকে দুই লিটার বা ছয়-আট গ্লাস পানি খাওয়া ভালো। অবশ্য গরমের দিনে বা ব্যায়াম করার সময় আরও বেশি পানি খাওয়া ভালো। তবে হৃদ্‌রোগ বা লিভারের সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পানি খেতে হবে।

আরও পড়ুনডাবের পানি কিডনির জন্য উপকারী হলে কিডনি রোগে খেতে নিষেধ করা হয় কেন২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪৩. অতিরিক্ত মদ্যপান

অ্যালকোহল আমাদের শরীরকে পানিশূন্য করে ফেলে। ফলে কিডনির স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত হয়। বেশি অ্যালকোহল পান করলে রক্তচাপও বেড়ে যায়। এটা কিডনির জন্য ক্ষতিকর। আমরা জানি, অ্যালকোহল লিভারের ক্ষতি করে। লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেই চাপ পড়ে কিডনির ওপর। তাই অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকাই ভালো।

৪. ধূমপান করা

ধূমপান করলে ফুসফুসের সঙ্গে কিডনিরও ক্ষতি হয়। সিগারেটের ধোঁয়ায় থাকা বিষাক্ত পদার্থ কিডনির কোষগুলোকে সরাসরি আঘাত করতে পারে। এ ছাড়া ধূমপাপের ফলে রক্তনালিগুলো সরু হয় এবং কিডনিতে রক্ত চলাচল কমিয়ে দেয়। ফলে কিডনি ঠিকভাবে করতে পারে না। ধূমপান ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিও বাড়ায়। এই দুটি রোগই কিডনির ক্ষতির অন্যতম কারণ। তাই ধূমপান ত্যাগ করা সবচেয়ে ভালো।

৫. অতিরিক্ত ওজন

যাঁদের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি, তাঁদের কিডনি রোগের ঝুঁকি বেশি। অতিরিক্ত ওজন হৃদ্‌রোগ ও ডায়াবেটিসের মতো রোগ ডেকে আনে। এতে কিডনির কার্যকারিতা কমে যায়। শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কিডনির স্বাভাবিক কাজে বাধা দিতে পারে। তাই স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং নিয়মিত ব্যায়াম করার মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা খুব জরুরি। পেটের চর্বি বাড়াও কিডনির জন্য ক্ষতিকর। বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই) অনুযায়ী ১৮.৫–২৪.৯–এর মধ্যে স্কোর থাকলে তা স্বাস্থ্যকর ধরা হয়। নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া এবং ব্যায়াম করলে ওজন কমে। গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে পাঁচ দিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁট বা হালকা দৌড়ানো কিডনির জন্য উপকারী।

আরও পড়ুনআপনার কিডনি কি সুস্থ আছে১৩ মার্চ ২০২৫৬. অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার, যেমন ফাস্ট ফুড বা কোমল পানীয় কিডনির জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। এমনকি বেশি লবণ খাওয়াও বিপজ্জনক। ফাস্ট ফুডে প্রচুর লবণ, চিনি, ক্ষতিকর চর্বি ও রাসায়নিক পদার্থ থাকে, যা কিডনির ওপর চাপ সৃষ্টি করে। বেশি লবণ খেলে শরীরে সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং রক্তচাপ বাড়ে। আর আগেই বলেছি, রক্তচাপ বাড়া কিডনির জন্য ক্ষতিকর। প্রতিদিন ৬ গ্রামের (এক চা চামচ) বেশি লবণ খাওয়া উচিত নয়।

৭. পর্যাপ্ত না ঘুমানো

ঘুমের অভাবেও কিডনির সমস্যা হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা প্রতিদিন ৬ ঘণ্টার কম বা ১০ ঘণ্টার বেশি ঘুমায়, তাঁদের দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। তাই বেশির ভাগ মানুষের জন্য প্রতিদিন ৭–৯ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন। পর্যাপ্ত ঘুম আমাদের শরীরকে বিশ্রাম দেয় এবং কিডনিকেও ভালোভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। অনিদ্রা বা বারবার ঘুম ভেঙে যাওয়ার মতো ঘুমের সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

এসবের বাইরেও বয়স বা বংশগত ইতিহাস আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। তবুও আমরা এসব বভ্যাস ত্যাগ করতে পারলে কিডনি সুস্থ রাখা সম্ভব।

সূত্র: সায়েন্স অ্যালার্ট ও দ্য কনভারসেশন

আরও পড়ুনকিডনি ভালো রাখবে সকালের এই ৫ অভ্যাস০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ব স থ যকর সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

বিগ-বির মাধ্যমে জাপানের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী বাংলাদেশ

এক দশক আগে বঙ্গোপসাগর ঘিরে বাংলাদেশের জন্য বিগ-বি নামে পরিচিত বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট গ্রহণ করেছিল জাপান। বঙ্গোপসাগরীয় শিল্প প্রবৃদ্ধির ওই উদ্যোগে রয়েছে মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর, বিদ্যুৎ প্রকল্প আর আধুনিক পরিবহনব্যবস্থার বিকাশ। মে মাসের শেষে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের জাপান সফরে বিগ–বির মাধ্যমে সহযোগিতা জোরদারের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। তাঁর জাপান সফরের আগে টোকিওতে ১৫ মে অনুষ্ঠেয় দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকেও বিষয়টিতে প্রাধান্য দেবে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের ষষ্ঠ বৈঠকের প্রস্তুতি হিসেবে বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে জাপানের আলোচনায় কোন কোন বিষয়গুলোতে বাংলাদেশের অগ্রাধিকার থাকবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

১৫ মে টোকিওতে দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিবদের বৈঠকে জসীম উদ্দিন বাংলাদেশের এবং জাপানের জ্যেষ্ঠ উপমন্ত্রী আকাহোরি তাকেশি তাঁর দেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন।  
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে কোন কোন বিষয়গুলো ১৫ মের আলোচনায় প্রাধান্য পেতে পাবে, তা নিয়ে মতামত নেওয়া হয়। পররাষ্ট্রসচিবদের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার আসন্ন সফরসহ সচিব পর্যায়ের সফর নিয়ে আলোচনা হয়।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বিগ–বিতে সহযোগিতা জোরদারের পাশাপাশি ব্যবসা, বিনিয়োগ, নবায়নযোগ্য ও পরিবেশবান্ধব জ্বালানি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ খাতভিত্তিক সহযোগিতা জোরদারের ওপর অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়।

জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার নানা বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টার আসন্ন সফর নিয়ে আলোচনা হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, টোকিওতে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকটি দুই ভাগে বিভক্ত থাকবে। প্রথম ভাগে থাকবে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নানা বিষয়। আর দ্বিতীয় ভাগে থাকবে আঞ্চলিক ভূরাজনীতি ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি।

আঞ্চলিক বিষয়াদিতে জাপানের বিগ–বি নিয়ে আলোচনা হবে। এ সময় ঢাকার পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্কের বাস্তবতা তুলে ধরা হবে। সেই সঙ্গে এ প্রকল্প সামনে এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিও বলা হবে। পরে ভারত যদি এর সঙ্গে যুক্ত হতে চায়, তবে তার ব্যবস্থা রাখার কথা বলা হবে।

বিগ–বির সঙ্গে ২০২৩ সালে ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলকে যুক্ত করে জাপান। কিন্তু ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে চরম টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্ক। এমন এক প্রেক্ষাপটে বিগ–বিকে বিশেষ করে সংযুক্তিকে বাংলাদেশের পরিমণ্ডলে নেওয়ার পরিকল্পনায় আপাতত একটা ধাক্কা এসেছে। এ নিয়ে জাপান নানাভাবে নিজেদের অস্বস্তির বিষয়টি বাংলাদেশকে জানিয়েছে। বিগ–বি জাপানের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের অগ্রাধিকার প্রস্তাব হওয়ায় এটিতে বিশেষ গুরুত্ব আছে টোকিওর। তাই ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে আগ্রহী জাপান।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক এবং প্রধান উপদেষ্টার টোকিও সফরে জাপান প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিবিড় করার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে পারে। বিশেষ করে বাংলাদেশের কাছ থেকে সমরাস্ত্র বিক্রির ওপর কয়েক বছর ধরে আগ্রহ প্রকাশ করে আসছে জাপান।

বাংলাদেশকে ২০২৩ সালে জাপানের সরকারি নিরাপত্তা সহায়তায় (ওএসএ) যুক্ত করা হয়েছে। মূলত জাপান নিজের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়াতে এই কাঠামো তৈরি করেছে। ওএসএর মাধ্যমে জাপান বন্ধুরাষ্ট্রের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা আরও গভীর করার এবং ওই দেশের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা দিয়ে থাকে। ওএসএর মাধ্যমে জাপান একটি দেশের সশস্ত্র বাহিনীকে ঋণের পরিবর্তে অনুদান দিয়ে থাকে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ