অলির কথায় ‘বরবাদ’ সিনেমার দুই গানে মেতেছে দর্শক
Published: 15th, April 2025 GMT
ঈদের সবচেয়ে আলোচিত ‘বরবাদ’ সিনেমার শেষ দৃশ্য, সিনেমা হলে পিনপতন নীরবতা। এমন সময় বেজে উঠেছে ‘জিন্দা’ শিরোনামের এক গান, যা শুনে দর্শকের মন ছুঁয়ে গেছে। গানটির কথা লিখেছেন সময়ের আলোচিত গীতিকার সোমেশ্বর অলি।
‘বরবাদ’ সিনেমার তাঁর আরও একটি গান আছে; যেটি আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তিই আগেই অডিও ভার্সন ইউটিউব ট্রেডিংয়ে চলে এসেছে। গানটির নাম ‘মহামায়া’; খায়রুল ওয়াসীর সুরে গানটির সংগীতায়োজন করেছেন আমজাদ হোসেন। গানটি গেয়েছেন মাইনুল আহসান নোবেল। গতকাল এটা ইউটিউবে প্রকাশ করা হয়েছে।
গানটি প্রসঙ্গে গীতিকার সোমেশ্বর অলির ভাষ্য, ‘বরবাদ সিনেমার নির্মাতা মেহেদী হাসান হৃদয় চেয়েছিলেন একটি বিরহের গান, যেখানে নায়ককে বিধ্বস্ত ও বিধ্বংসী আচরণ করতে দেখা যাবে। ব্যস, এটুকুই ছিল ব্রিফ। এরপর লিখতে শুরু করি। বেগ পেতে হয়নি। লেখার পর মনে হলো, এই কথাগুলো আমি আগেও বলতে চেয়েছি, কিন্তু এমন কিছু লেখার প্রস্তাব আসেনি বা এমনিতে লিখলেও সেটি উপস্থাপনের সুযোগ বা মাধ্যম ছিল না। এই সিনেমাতে সেটি ঘটতে যাচ্ছে, বিশেষ পাওনা শাকিব খান। এই গান গাওয়ার জন্য টিমের কাছে নোবেলই প্রথম পছন্দ ছিলেন। তিনি দুর্দান্ত গেয়েছেন। খায়রুল ওয়াসী নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে সুর করেছেন আর আমজাদ হোসেন রক ব্যালাড বা এ জাতীয় গানের সংগীতায়োজনে সিদ্ধহস্ত, আবারও প্রমাণ পাওয়া গেল। সবমিলিয়ে মহামায়া দারুণ টিমওয়ার্ক।’
‘জিন্দা’ গান প্রসঙ্গে গীতিকার সোমেশ্বর অলি জানালেন, ‘জিন্দা গানের প্রস্তাব পাই একবারে শেষ মুহূর্তে, সুরও করা ছিল। খায়রুল ওয়াসীর সুর করা; সিচুয়েশন জানার পর আমি লিখি। এক লেখাতেই পরিচালকের সেটা পছন্দ হয়। গানটা এখনো মুক্তি না পেলেও যারা সিনেমা দেখছেন তাঁদের গানটা পছন্দ হচ্ছে।’
মেহেদী হাসান হৃদয়ের পরিচালনায় ‘বরবাদ’ সিনেমায় শাকিব খানের নায়িকা ইধিকা পাল। আরও আছেন মিশা সওদাগর, ফজলুর রহমান বাবু, শহীদুজ্জামান সেলিম, যীশু সেনগুপ্ত।
প্রসঙ্গত, সোমেশ্বর অলি এর আগে শাকিব খানের জন্য ‘ঈশ্বর’, ‘এক প্রেম’ শিরোনামে দুটি গান লিখেছিলেন; যার মধ্যে ‘ঈশ্বর’ তুমুল সাড়া ফেলেছিল।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বরব দ
এছাড়াও পড়ুন:
আজও আছে পরতে পরতে সৌন্দর্য
কারুকার্যখচিত বিশাল ভবন। দেয়ালের পরতে পরতে মনোহর সৌন্দর্য। মনোরম পরিবেশে ভবনের চারপাশে দাঁড়িয়ে সুন্দরী পরীর আবক্ষ মূর্তি। ছবির মতো সাজানো ‘পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি’ এখন কালের সাক্ষী।
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলের নাগরপুরের কলমাই নদীতীরে ১৫ একর জমিতে জমিদারবাড়িটি। ঢুকতেই চোখে পড়ে পুরোনো মন্দির। লোকমুখে প্রচলিত, শরতের দিনে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে এখানে ব্যস্ত থাকতেন ভারতবর্ষের নামকরা কারিগররা। কালের বিবর্তনে স্থানটি এখন নির্জন। নেই আগের গৌরব-আভিজাত্যের ছাপ, এমনকি প্রতিমা তৈরির ব্যস্ততাও।
মন্দির ঘুরে দেখা যায়, এর কোথাও কোথাও ইট খসে পড়েছে। পুরোনো দিনের নকশা হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য। মন্দিরের পেছনে বিশাল তিনটি মহল, যা সেকালে তিন তরফ নামে পরিচিত ছিল। মহলগুলোর আলাদা কোনো নাম পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে বড় মহলে বর্তমান পাকুটিয়া বিসিআরজি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পরিচালিত হচ্ছে।
দোতলা ভবনের নির্মাণশৈলী মুগ্ধ করবে সবাইকে। যদিও সংস্কারের অভাবে ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাশেই অপূর্ব লতাপাতার কারুকার্যখচিত বিশাল আরেকটি ভবন, যার মাথায় ময়ূরের মূর্তি। এ ছাড়া কিছু নারী মূর্তিরও দেখা মেলে। জমিদার আমলের টিনের চৌচালা ঘরে অস্থায়ীভাবে সরকারি তহশিল অফিস স্থানান্তর হলেও, সেটি এখন স্থায়িত্ব পেয়েছে।
লতাপতায় আচ্ছন্ন ভবনের একাংশ বর্তমানে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং আরেকাংশে একটি বেসরকারি দাতব্য সেবা সংস্থা কার্যক্রম চালাচ্ছে। ভবনটির পিলারের মাথায় এবং দেয়ালেও অসাধারণ নকশা মুগ্ধ করে।
দোতল আরেকটি মহল, যার সামনে বিশাল শান বাঁধানো সিঁড়ি। অন্য সব ভবনের সঙ্গে এটির নকশার যথেষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ভবনটির বারান্দা ও পুরোনো কাঠের দরজা সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে কয়েক গুণ। ভবনটির মাথায় ময়ূরের সঙ্গে দুই পাশে দুই নারী মূর্তির দেখা মেলে। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে গেলে গাছগাছালির সবুজে ঘেরা পুরো জমিদারবাড়ির সৌন্দর্য বিমোহিত করতে বাধ্য। যদিও ভবনের ভিন্ন অংশ খসে পড়ছে, হারাচ্ছে রূপ-লাবণ্য।
জমিদারবাড়ির পেছনে রয়েছে দীঘি ও দুটি পরিত্যক্ত কূপ। এ ছাড়া জমিদারবাড়ির বিশাল মাঠের এক কোণে নাটমন্দির। জানা যায়, নাগরপুরের সঙ্গে কলকাতার একটি বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে আসেন ধনাঢ্য ব্যক্তি রামকৃষ্ণ সাহা মণ্ডল। তিনিই ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ব্রিটিশদের কাছ থেকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে জমি কিনে জমিদারি শুরু করেন।
রামকৃষ্ণ সাহার দুই ছেলে বৃন্দাবন ও রাধাগোবিন্দ। রাধা নিঃসন্তান। তবে বৃন্দাবনের তিন ছেলে– ব্রজেন্দ্র মোহন, উপেন্দ্র মোহন ও যোগেন্দ্র মোহন দীর্ঘকাল রাজত্ব করেন। এভাবে পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি তিন ভাইয়ের তরফে বিভক্ত থাকলেও, জমিদাররা সবাই ছিলেন প্রজানন্দিত। বৃন্দাবনের মেজ ছেলে উপেন্দ্রকে কাকা রাধাগোবিন্দ দত্তক নেন। ফলে উপেন্দ্র কাকার জমিদারির পুরো সম্পত্তি লাভ করেন।
দৃষ্টিনন্দন পাকুটিয়া জমিদারবাড়িতে প্রতিনিয়ত পর্যটকের ভিড় বাড়ছে। ইতিহাসের সাক্ষী বাড়িটি সংস্কার না হওয়ায় একদিকে যেমন সৌন্দর্য হারাচ্ছে, অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মের কাছে অজানা থেকে যাচ্ছে ইতিহাস। জমিদারবাড়িটি পুরাকীর্তি হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে নিয়ে সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবি জোরালো হচ্ছে।