‘এই গরিবের ছাওয়াক যে সম্মান কইরলেন, তাতে মনটা ভরি গেল’
Published: 15th, April 2025 GMT
‘বাহে, শনিবার রাইত ১০টার সময় ছাওয়াটার ব্যথা ওঠে। সে কি ব্যথা, আতালি পাতালি। গ্রামের দাই আসি অনেক চেষ্টা করিল। কই, কিছুই তো হইল না। এলা কি করং। ওত রাইতত হাসপাতাল যাইম কেমন করি। গাড়ি, ঘোড়া, রিকশা-কিছুই নাই। তারপর একখান অটোরিকশা জোগাড় করি ভোর ৫টার সময় ফুলবাড়ি থাকি লালমনিরহাট রওনা হনো। শহরের সাপটানা বাজারের ক্লিনিকে হাজির হই হামরাগুলা। ক্লিনিকের লোকজন অপারেশন করি মোর ছোট নাতনিক দুনিয়ার মুখ দেখায়ছে। এলা নাতনিসহ হামার ছাওয়া ভাল আছে।’
নববর্ষের প্রথম প্রহরে জন্ম নেওয়া নাতনিকে দৈনিক সমকাল বরণ করে নিয়েছে এমন কথাতে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন নানি জমিলা বেগম। কথা না থামিয়ে তিনি আরও বলতে থাকেন, ‘‘বাহে, হামরা গরিব, মূর্খ মানুষ। নববর্ষ, বরণ অত কিছু বুঝি না। তবে তোমরা গুলো এই গরিবের ছাওয়াক যে সম্মান কইরলেন, তাতে মনটা ভরি গেল। এমন এক দিনে নাতনির জন্ম হইল। তাই হাউস করিয়া নাতনির নাম রাখমো ‘বৈশাখি’।’’
লালমনিরহাট শহরের খোদেজা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সোমবার নববর্ষের প্রথম প্রহরে সকাল ৬টায় শাহ আলম ও হামিদা দম্পতির কোলজুড়ে আসে কন্যাশিশু। নতুন বাংলা বছরে সন্তান উপহার পেয়ে তাদের পরিবারে বইছে খুশির বন্যা। এটি তাদের দ্বিতীয় কন্যাসন্তান। বড় মেয়ে শিমু নার্সারি শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। পার্শ্ববর্তী কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার নাওডাঙ্গা কুমারপাড়া গ্রামের শাহ আলম মিয়া পেশায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে পুরোনো খাতাপত্র, পত্রিকা, ভাঙ্গা টিন কিনে শহরে তা বিক্রি করেন। দিনে তিন থেকে চারশত টাকা আয় হয়। তা দিয়েই চলে সংসার। পাঁচ শতকের বসতভিটায় তিন ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে তিনিও বসবাস করেন। বসতভিটার ওইটুকু জায়গা ছাড়া তার আর কিছুই নেই। তাই সন্তানকে ক্লিনিকে রেখে টাকার সন্ধানে ছুটছেন তিনি। গ্রাম্য সুদি মহাজনদের নিকট থেকে টাকা সংগ্রহ করে ক্লিনিকের বিল পরিশোধ করতে হবে তাঁকে। তিনি বলেন, ‘আমি ব্যবসায়ী নয়। দিনমজুর বা হকার কবার পান। দিন আনি দিন খায়। হামার কাছোত নববর্ষ বলি কিছু নাই। তবে সাংবাদিক ভাই, তোমার পত্রিকার এত সুন্দর কথা শুনি হামার মন ভালো হইয়া গেল। তোমরা দোয়া কইরবেন ছাওয়াক মুই নেখাপড়া শিখাইম। দুই মেয়ে নিয়ে হামার কোনো কষ্ট নাই। আল্লাহ মেয়েকে সুস্থ রাখছে, তাতেই হামরা খুশি।
শাহ আলমের এসব কথা শুনে ক্লিনিকের বিছানায় শুয়ে থাকা নবজাতকের মা হামিদা বেগম বলেন, ‘আমি অষ্টম শ্রেণি পাস করেছি। বাবা ভাড়ায় অটোরিকশা চালায়। অভাবের সংসারে ইচ্ছা থাকার পরেও লেখাপড়া করতে পারিনি। অল্প বয়সেই বিয়ে হয়ে যায়। ২০১৪ সালে বিয়ে হয়। পরের বছরে প্রথম সন্তানের জন্ম হয়। ইচ্ছা আছে মেয়ে দুটিকে মনের মতো মানুষ করমো।’
রোববার বিকেলে ফুলবাড়ি থেকে রোগীর খাওয়া ও শিমুকে নিয়ে ক্লিনিকে আসেন দাদি মিথিজান। তিনি বলেন, শিমু ক্লিনিকে ছোট বোনকে দেখে বাড়িতে ফিরতে চায় না। বোনের সঙ্গে রাত কাটাবে বলে জেদ শুরু করে। তিনি জানান, চলতি মাসের ৫ থেকে ৭ তারিখের মধ্যে ডেলিভারি হবে বলে ডাক্তার বলেছিল। সময় পার হলে সবাই চিন্তায় পড়ে যায়। এখন মা ও মেয়ে ভালো আছে।
ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিশ্বজিৎ জানায়, বাড়িতে অনেক চেষ্টা করেও ডেলিভারি করাতে পারেনি হামিদা বেগমের পরিবার। সময় ক্ষেপণ করায় রোগীর বেশ সমস্যা হয়েছিল। আপাতত মা ও শিশু শঙ্কামুক্ত। প্রসূতি মা হামিদা বেগমের অস্ত্রোপচার করেন বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রাক্তন প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ শ র জন ম নববর ষ
এছাড়াও পড়ুন:
প্রেম ছিল না তবু কেন মধুবালাকে বিয়ে করেছিলেন কিশোর কুমার
দিলীপ কুমারের সঙ্গে বিচ্ছেদের কিছুদিন পরই কিশোর কুমারকে বিয়ে করেন অভিনেত্রী মধুবালা। তবে তখন তিনি ছিলেন অসুস্থ। কিশোর কুমার জানিয়েছিলেন, ভালোবাসা থেকে নয়, বরং কথা রাখতেই তিনি এ বিয়ে করেছিলেন।
মধুবালা ও দিলীপ কুমারের প্রেম নিয়ে একসময় মুখর ছিল মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। কিন্তু অভিনেত্রীর বাবার বাধার কারণে সে সম্পর্কে ফাটল ধরে এবং দুজনের বিচ্ছেদ ঘটে। কিছুদিন পরেই কিশোর কুমারকে বিয়ে করেন মধুবালা। তাঁদের এই বিয়ে অনেককে চমকে দিয়েছিল। কারণ, তাঁদের প্রেমের কথা তখনো গোপন ছিল। তবে মধুবালার শরীর তখন ভালো যাচ্ছিল না। বলা হয়, দীর্ঘ রোগভোগের সময় কিশোর কুমার তাঁকে মায়ের বাড়িতে রেখেই চলে যান।
দ্য ইলাস্ট্রেটেড উইকলি অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কিশোর কুমার বলেছিলেন, ‘বিয়ের আগেই জানতাম, ও খুব অসুস্থ। কিন্তু কথা তো দিয়েছিলাম। তাই সে কথা রেখেই ওকে ঘরে এনেছিলাম স্ত্রী হিসেবে। জানতাম, ওর জন্মগত হৃদ্রোগ আছে। তবু ৯ বছর ধরে সেবা করেছি। চোখের সামনেই ওকে মরতে দেখেছি। কেউ বুঝবে না এর যন্ত্রণা, না ভুগলে। ও অসম্ভব সুন্দরী ছিল। আর কত যন্ত্রণায় মারা গেছে, সেটা চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। হতাশায় চিৎকার করত, কান্নাকাটি করত। এত প্রাণোচ্ছল মানুষ নয়টা বছর বিছানায় শুয়ে থাকবে—এ কল্পনাই করা যায় না। ডাক্তার বলেছিল, ওকে হাসিখুশি রাখতে হবে। আমি তা–ই করেছি—ওর শেষনিশ্বাস পর্যন্ত। কখনো হেসেছি, কখনো কেঁদেছি ওর সঙ্গে।’
তবে কিশোর কুমারের এই বক্তব্য নিয়ে সংশয় তৈরি হয়। কারণ, পরে ফিল্মফেয়ার সাময়িকীতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে একেবারে ভিন্ন কথা বলেন তিনি। সেই সাক্ষাৎকারে কিশোর কুমার বলেন, ‘মধুবালার সঙ্গে আমি প্রেমে পড়িনি কখনো। বরং ওর প্রেমিক ছিল আমার বন্ধু দিলীপ কুমার। আমি তো শুধু ওদের বার্তা পৌঁছে দিতাম। বিয়ের প্রস্তাবটা দিয়েছিল মধুবালাই। এমনকি, যখন আমার প্রথম স্ত্রী রুমা তখনো আমার সঙ্গে ছিল, তখনো মধু বলত, “ওকে কখনো ছেড়ো না, না হলে আমি তোমার হয়ে যাব।”’
আরও পড়ুনকিশোর কুমার কি সত্যিই ঘরে কঙ্কাল আর মাথার খুলি নিয়ে ঘুমাতেন২৭ মে ২০২৫মধুবালার পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, চিকিৎসকেরা তখন বলেছিলেন, অভিনেত্রীর পক্ষে শারীরিক সম্পর্ক কিংবা সন্তানধারণ কোনো কিছুই সম্ভব নয়। সেই বাস্তবতা হয়তো প্রভাব ফেলেছিল কিশোরের সিদ্ধান্তে। এক ঘনিষ্ঠজন বলেন, ‘আমরা বলছি না কিশোরদা ভুল করেছিলেন। ডাক্তার তো স্পষ্ট বলেছিল—শারীরিক সম্পর্ক বা সন্তান কোনোটাই সম্ভব নয়। তবে একজন নারীর তো মানসিক সঙ্গীও দরকার হয়।’
ওই ঘনিষ্ঠজন আরও জানান, কিশোর কুমার তিন মাসে একবার আসতেন মাত্র। বলতেন, ‘আমি এলে তুমি কাঁদবে, আর এতে তোমার হৃদ্যন্ত্রের ক্ষতি হবে। তুমি বিষণ্ন হয়ে পড়বে।’ সে সময় মধু অনেক ছোট ছিলেন, ঈর্ষাও ছিল স্বাভাবিক। হয়তো এ দূরত্বই ধীরে ধীরে তাঁকে শেষ করে দিয়েছিল।
১৯৬৯ সালে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান বলিউড অভিনেত্রী মধুবালা