‘বাহে, শনিবার রাইত ১০টার সময় ছাওয়াটার ব্যথা ওঠে। সে কি ব্যথা, আতালি পাতালি। গ্রামের দাই আসি অনেক চেষ্টা করিল। কই, কিছুই তো হইল না। এলা কি করং। ওত রাইতত হাসপাতাল যাইম কেমন করি। গাড়ি, ঘোড়া, রিকশা-কিছুই নাই। তারপর একখান অটোরিকশা জোগাড় করি ভোর ৫টার সময় ফুলবাড়ি থাকি লালমনিরহাট রওনা হনো। শহরের সাপটানা বাজারের ক্লিনিকে হাজির হই হামরাগুলা। ক্লিনিকের লোকজন অপারেশন করি মোর ছোট নাতনিক দুনিয়ার মুখ দেখায়ছে। এলা নাতনিসহ হামার ছাওয়া ভাল আছে।’

নববর্ষের প্রথম প্রহরে জন্ম নেওয়া নাতনিকে দৈনিক সমকাল বরণ করে নিয়েছে এমন কথাতে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন নানি জমিলা বেগম। কথা না থামিয়ে তিনি আরও বলতে থাকেন, ‘‘বাহে, হামরা গরিব, মূর্খ মানুষ। নববর্ষ, বরণ অত কিছু বুঝি না। তবে তোমরা গুলো এই গরিবের ছাওয়াক যে সম্মান কইরলেন, তাতে মনটা ভরি গেল। এমন এক দিনে নাতনির জন্ম হইল। তাই হাউস করিয়া নাতনির নাম রাখমো ‘বৈশাখি’।’’

লালমনিরহাট শহরের খোদেজা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সোমবার নববর্ষের প্রথম প্রহরে সকাল ৬টায় শাহ আলম ও হামিদা দম্পতির কোলজুড়ে আসে কন্যাশিশু। নতুন বাংলা বছরে সন্তান উপহার পেয়ে তাদের পরিবারে বইছে খুশির বন্যা। এটি তাদের দ্বিতীয় কন্যাসন্তান। বড় মেয়ে শিমু নার্সারি শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। পার্শ্ববর্তী কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার নাওডাঙ্গা কুমারপাড়া গ্রামের শাহ আলম মিয়া পেশায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে পুরোনো খাতাপত্র, পত্রিকা, ভাঙ্গা টিন কিনে শহরে তা বিক্রি করেন। দিনে তিন থেকে চারশত টাকা আয় হয়। তা দিয়েই চলে সংসার। পাঁচ শতকের বসতভিটায় তিন ভাইয়ের  পরিবারের সঙ্গে তিনিও বসবাস করেন। বসতভিটার ওইটুকু জায়গা ছাড়া তার আর কিছুই নেই। তাই সন্তানকে ক্লিনিকে রেখে টাকার সন্ধানে ছুটছেন তিনি। গ্রাম্য সুদি মহাজনদের নিকট থেকে টাকা সংগ্রহ করে ক্লিনিকের বিল পরিশোধ করতে হবে তাঁকে। তিনি বলেন, ‘আমি ব্যবসায়ী নয়। দিনমজুর বা হকার কবার পান। দিন আনি দিন খায়। হামার কাছোত নববর্ষ বলি কিছু নাই। তবে সাংবাদিক ভাই, তোমার পত্রিকার এত সুন্দর কথা শুনি হামার মন ভালো হইয়া গেল। তোমরা দোয়া কইরবেন ছাওয়াক মুই নেখাপড়া শিখাইম। দুই মেয়ে নিয়ে হামার কোনো কষ্ট নাই। আল্লাহ মেয়েকে সুস্থ রাখছে, তাতেই হামরা খুশি।

শাহ আলমের এসব কথা শুনে ক্লিনিকের বিছানায় শুয়ে থাকা নবজাতকের মা হামিদা বেগম বলেন, ‘আমি অষ্টম শ্রেণি পাস করেছি। বাবা ভাড়ায় অটোরিকশা চালায়। অভাবের সংসারে ইচ্ছা থাকার পরেও লেখাপড়া করতে পারিনি। অল্প বয়সেই বিয়ে হয়ে যায়। ২০১৪ সালে বিয়ে হয়। পরের বছরে প্রথম সন্তানের জন্ম হয়। ইচ্ছা আছে মেয়ে দুটিকে মনের মতো মানুষ করমো।’

রোববার বিকেলে ফুলবাড়ি থেকে রোগীর খাওয়া ও শিমুকে নিয়ে ক্লিনিকে আসেন দাদি মিথিজান। তিনি বলেন, শিমু ক্লিনিকে ছোট বোনকে দেখে বাড়িতে ফিরতে চায় না। বোনের সঙ্গে রাত কাটাবে বলে জেদ শুরু করে। তিনি জানান, চলতি মাসের ৫ থেকে ৭ তারিখের মধ্যে ডেলিভারি হবে বলে ডাক্তার বলেছিল। সময় পার হলে সবাই চিন্তায় পড়ে যায়। এখন মা ও মেয়ে ভালো আছে।

ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিশ্বজিৎ জানায়, বাড়িতে অনেক চেষ্টা করেও ডেলিভারি করাতে পারেনি হামিদা বেগমের পরিবার। সময় ক্ষেপণ করায় রোগীর বেশ সমস্যা হয়েছিল। আপাতত মা ও শিশু শঙ্কামুক্ত। প্রসূতি মা হামিদা বেগমের  অস্ত্রোপচার করেন বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রাক্তন প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা.

ভোলানাথ ভট্টাচার্য্য। তাঁকে সহায়তা করেন ডা. হাবিব। ডা. ভোলানাথ ভট্টাচার্য্য বলেন, সমকালের এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগে তিনি খুশি। বিশেষ দিনে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এই চেষ্টাকে তিনি স্বাগত জানান।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ শ র জন ম নববর ষ

এছাড়াও পড়ুন:

কেইনের জোড়া গোলে চেলসিকে হারাল বায়ার্ন, চ্যাম্পিয়ন পিএসজির গোল উৎসব

বায়ার্ন মিউনিখ ৩–১ চেলসি

২০১২ সালে আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় ইতিহাস গড়েছিল চেলসি। ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখকে টাইব্রেকারে হারিয়ে প্রথমবারের মতো পরেছিল ইউরোপসেরার মুকুট।

 তবে এরপর থেকে বায়ার্নের সঙ্গে মুখোমুখি সব ম্যাচেই হেরেছে চেলসি। লন্ডনের ক্লাবটি পারল না আজও। হ্যারি কেইনের জোড়া গোলে চেলসিকে ৩–১ ব্যবধানে হারিয়েছে বায়ার্ন।

আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় ম্যাচের ২০ মিনিটে বায়ার্ন প্রথম গোলটা পেয়েছে উপহারসূচক। চেলসির সেন্টার–ব্যাক ট্রেভোহ চালোবাহ নিজেদের জালে বল জড়ালে এগিয়ে যায় বাভারিয়ানরা।

কিছুক্ষণ পরেই ব্যবধান দ্বিগুণ করেন কেইন। এবার ভুল করে বসেন চেলসির মইসেস কাইসেদো। নিজেদের বক্সে কেইনকে কাইসেদো অযথা ট্যাকল করলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি।

নতুন মৌসুমে গোলের পর গোল করেই চলেছেন হ্যারি কেইন

সম্পর্কিত নিবন্ধ