দেশের সব স্থলবন্দ ও কাষ্টমস স্টেশন ব্যবহার করে সুতা আমদানির ব্যবস্থা চালু রাখার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ নীটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ)। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংগঠনটির পক্ষ থেকে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনকে চিঠি দিয়েছেন সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।

গত ১৩ এপ্রিল এক প্রজ্ঞাপনে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুবিধা বাতিল করে এনবিআর। যারা ১৩ এপ্রিল বা এর আগে ঋণপত্র খুলেছিলেন, তারা কী করবেন, এ নিয়ে মাঠ পর্যায়ের অস্পষ্টতা দূর করতে নতুন ব্যাখ্যা দিয়েছে এনবিআরের শুল্ক বিভাগ।

এনবিআরের নতুন আদেশে বলা হয়েছে, যেসব আমদানিকারক ১৩ এপ্রিল বা তার আগে সুতা আমদানির ঋণপত্র স্থাপন করেছেন বা ওই তারিখের আগে সুতা আমদানির ঋণপত্র সংশোধন করেছেন, সেসব ঋণপত্রের পণ্য চালান উক্ত প্রজ্ঞাপনের আওতায় পড়বে না।

স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি বন্ধ করার জন্য দেশীয় স্পিনিং মিল মালিকরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিন মাস আগে সরকার এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া শুরু করে। পরে ট্যারিফ কমিশন থেকে এনবিআর চেয়ারম্যানকে চিঠি পাঠানো হয়।

চিঠিতে দেশীয় টেক্সটাইল শিল্পের স্বার্থ সংরক্ষণে সব সীমান্ত সংলগ্ন সড়ক ও রেলপথ এবং স্থলবন্দর ও কাস্টমস হাউসের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে সুতা কাউন্ট নির্ণয়ে যথাযথ অবকাঠামো প্রস্তুত না হওয়া পর্যন্ত আগের মতো সমুদ্রবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুপারিশ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর স্থলপথে সুতা আমদানি বন্ধ করা সংক্রান্ত আদেশ জারি করে।

বাণিজ্য উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য লেখা বিকেএমইএর চিঠিতে বলা হয়েছে, দেশীয় টেক্সটাইল শিল্প সুরক্ষায় স্থল বন্দরের মাধ্যমে সুতা আমদানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। নিঃসন্দেহে প্রস্তাবিত এ সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে চলমান প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।

চিঠিতে অভিযোগ করা হয়েছে, মূল স্টেকহোল্ডার তৈরিপোশাক শিল্পোদ্যক্তাদের বাদ দিয়ে শুধুমাত্র একটি ব্যবসায়িক সংগঠনের প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা স্বাপেক্ষে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এছাড়া যে অনুসন্ধানী রিপোর্টের উল্লেখ করা হয়েছে, তা বিকেএমইএকে অবহিত করা হয়নি। এভাবে একতরফা আলোচনার ভিত্তিতে সব স্থলবন্দর ও কাষ্টমস স্টেশন ব্যবহার করে সুতা আমদানির ব্যবস্থা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করাটা বাংলাদেশের তৈলি পোশাক শিল্প বিশেষ করে নীটওয়্যার শিল্পের জন্য ক্ষতিকারক হবে।

যেসব যুক্তি বা অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্থল বন্দর বন্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে তা বিকেএমইএ যথার্থ মনে করে না। এ প্রসঙ্গে বিকেএমইএর যৌক্তিক কয়েকটি মতামতগুলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।

বিটিএমএর চিঠির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিকেএমইএর মতামতগুলো হচ্ছে-বিটিএমএর তথ্যমতে, বাংলাদেশে সব ধরনের সুতা আমদানিতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে ঘোষিত দাম অপেক্ষা স্থলবন্দর থেকে সুতা আমদানিতে উল্লেখযোগ্যহারে অবমূল্যায়ন করা হয়।

‘আমরা মনে করি এই তথ্যটি সঠিক নয় বরং চট্টগ্রাম বন্দর ও স্থলবন্দর থেকে আমদানিকৃত সুতার মূল্য প্রায় সমান বরং কোন কোন ক্ষেত্রে স্থলবন্দর থেকে আমদানিকৃত সুতার মূল্য বেশি। বিগত দিনগুলোর কাষ্টমস ডেটাবেইজ চেক করলে সঠিক তথ্যটি পাওয়া যাবে।’

বিটিএমএর প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে-চীন, তুরস্ক, উজবেকিস্তান ও বাংলাদেশে উৎপাদিত সুতার গড় মূল্য প্রায় সমান। এই তথ্যটি সম্পূর্ণ ভুল। প্রকৃতপক্ষে ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক, উজবেকিস্তান ও চীনে উৎপাদিত সুতার দাম বাংলাদেশের সুতার দামের তুলনায় কম এবং উল্লিখিত প্রতিটি দেশের এফওবি মূল্য প্রায় সমান। অর্থাৎ আমাদের দেশীয় সুতার দাম বেশি। ডাম্পিং মূল্যে সুতা আমদানির কোন সুযোগ নেই।

কারণ বিগত প্রায় ২৫-৩০ বছর ধরেই ভারতসহ অন্যান্য দেশের সুতার মূল্য, বাংলাদেশের সুতার মূল্যের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ কম। এতদিন ধরে ডাম্পিং মূল্যে কোন দেশ সুতা রপ্তানি করবে না। তাছাড়াও যেখানে বিশ্বের সব দেশের সুতার মূল্য প্রায় সমান, সেখানে সবাই ডাম্পিং মূল্যে সুতা বিক্রয় করবে সেটা বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে না।

এছাড়া গত ২৪ মার্চ অনুষ্ঠিত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভা থেকে জানা গেছে, স্থলবন্দর দিয়ে অবৈধভাবে সুতা প্রবেশ করে। বিটিএমএর অভিযোগ অনুসারে বাংলদেশের আমদানিকারকেরা ১টি ট্রাকের এলসি করে ৩ ট্রাক সুতা আমদানি করে।

এনবিআর এর তথ্যমতে, ২০২৪ সালে বাংলাদেশে বৈধ উপায়ে ৯৬,০০০ মেট্রিক টন সুতা আমদানি হয়েছে। বিটিএমএর এই অভিযোগ যদি আমলে নেওয়া হয়, তাহলে নিশ্চয় এই পরিমাণের সমান বা দ্বিগুণ সুতা অবৈধ উপায়ে আমদানি হয়েছে। ১টি ট্রাকে যদি ৯ টন সুতা আনা যায়, তাহলে এই বিপুল পরিমাণ সুতা চোরাই পথে আনতে হলে ১০,৬৬৬টি ট্রাক অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করাতে হবে, যা বাংলাদেশ এবং ভারত উভয় রাষ্ট্রের কাষ্টমস কর্মকর্তাদের যৌথ দুর্নীতির মাধ্যমেও সম্ভব নয়। সুতরাং, এই তথ্যটি আরো বিচার বিশ্লেষণের দাবি রাখে। উপরোক্ত তথ্য প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত কোনভাবেই স্থল বন্দর বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সমিচীন হবে না।

চিঠিতে বলা হয়েছে, ভারত থেকে সুতা রপ্তানি করার ক্ষেত্রে রপ্তানীকারকেরা তাদের রপ্তানির উপরে বিশেষ সহায়তা প্রাপ্ত হন। ভারতীয় রপ্তানিকারকেরা যদি অবৈধ উপায়ে সুতা রপ্তানি করে থাকে, সেক্ষেত্রে এই সুবিধা তারা পাবে না। তারা নিশ্চয় নিজেদের ক্ষতিগ্রস্ত করে, লস দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে সুতা বিক্রয় করবে না।

স্থলবন্দর চালু রাখার গুরুত্ব এবং প্রয়াজনীয়তা
ফাস্ট ফ্যাশন ভ্যালু অ্যাডেড প্রডাক্ট তৈরির ক্ষেত্রে আমাদের লিড টাইম অত্যন্ত সীমিত। স্থলপথে যেখানে ৫-৭দিনে সুতা আনা সম্ভব, সেখানে সমুদ্রপথে প্রায় ২৫/৩০ দিন প্রয়োজন। ফলে, স্থলপথে সুতা আমদানি করা গেলে আমাদের প্রত্যাশিত লিড পূরণ করা সম্ভব হবে যা আমাদের রপ্তানির অগ্রগতির জন্য সহায়ক।

এছাড়া অনেক সময় উৎপাদিত পণ্যে গুণগত মান নিশ্চিতে বায়ার কর্তৃক সরবরাহকারী নির্দিষ্ট করা থাকে। এছাড়া উল্লেখ্য, স্থানীয় বাজারের তুলনায় পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সুতার মান সাধারণত সন্তোষজনক ও তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী। সুতরাং আমাদের কাছে কোন বিকল্প পন্থা না থাকায় বায়ার নির্ধারিত সরবরাহকারীর কাছ থেকেই অনেক সময় সুতা সংগ্রহ করা সুবিধাজনক এবং বাঞ্ছনীয়।

এতে বলা হয়েছে, ‘অতীতে দেখা গেছে স্থলবন্দর বন্ধ করা হলে বাংলাদেশি সুতা তৈরির কারখানা মালিকেরা উচ্চমূল্যে সুতা বিক্রয় করা শুরু করে। ফলে, বাজারের ওপর কোন নিয়ন্ত্রণ থাকে না। যেহেতু আমরা আন্তর্জাতিক বাজারে পোশাক রপ্তানি করি সুতরাং আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করেই আমাদের সুতার দাম নির্ধারণ করা উচিৎ। অন্যথায়, বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি তৈরি পোশাক শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং আমরা আন্তর্জাতিক বাজারে সক্ষমতা হারাব।’

চট্টগ্রাম বন্দর, যা দেশের ৯০ শতাংশ বাণিজ্য পরিচালনা করে, বর্তমানে বন্দরটিতে অপ্রতুল লজিস্টিক সুবিধা, লোডিং ও আনলোডিং সমস্যা এবং কন্টেইনার জটের সম্মুখীন। তাই কেবল মাত্র সমুদ্রবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি করলে চট্টগ্রম বন্দরের ওপর চাপ সৃষ্টি হবে। এর ফলে, পণ্য উৎপাদন সময় বৃদ্ধি পাবে এবং নির্দিষ্ট সময়ে ডেলিভারি ব্যহত হবে, যা আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের অসন্তোষ সৃষ্টি করবে এবং রপ্তানির ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

স্থল বন্দর দিয়ে সুতা আমদানি বন্ধ করায় সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে বিকেএমইএ কয়েকটি প্রস্তাবনা দিয়েছে, সেগুলো হচ্ছে-সুতার কাউন্ট নিরীক্ষণের জন্য সংশ্লিষ্ট স্থলবন্দর বা কাস্টম হাউসে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি স্থাপনে বিকেএমইএ প্রয়োজনীয় সম্পূর্ণ সহযোগিতা প্রদান করতে পাবে। প্রয়োজনে বিকেএমইএ, বিজিএমইএ ও বিটিএমএর একটি টিম সার্বক্ষণিক তদারকিতে রাখা যেতে পারে। এছাড়া, স্থলবন্দর বা কাস্টম হাউসে একটি বিশেষ কাউন্টার বা শেড স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে, যা কার্যক্রমের সঠিক তদারকি নিশ্চিত করবে।

চিঠিতে দাবি করা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের মোট জাতীয় রপ্তানির ৪৩.

৩৫ শতাংশ নিট পোশাক শিল্পের অবদান, পোশাক রপ্তানিতে অবদান ৫৩.৩৪ শতাংশ এবং দেশের মোট জিডিপিতে নীট পোশাক খাতের অবদান প্রায় ৪.২ শতাংশ। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে এই শিল্পের অবদান বিবেচনা করে উল্লিখিত পরিস্থিতির নিরীখে দেশের সব স্থলবন্দর এবং কাস্টম স্টেশনের মাধ্যমে সুতা আমদানির কার্যক্রম অব্যাহত রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে আমরা মনে করি।’

বিকেএমইএ মনে করে বাংলাদেশের স্পিনিং মিলগুলো বেঁচে থাকলে নীটওয়্যার শিল্পই সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে। কিন্তু, বিটিএমএর উৎপাদিত সুতা কেন বিক্রি হচ্ছে না, তার মূল কারণ অনুসন্ধান না করে, অযৌক্তিক কারণ দেখিয়ে একটি শিল্পকে বাঁচাতে গিয়ে অন্য একটি শিল্পকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেওয়া কখনোই প্রত্যাশিত হতে পারে না। মূলত ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে নগদ সহায়তা কমিয়ে দেওয়া প্রকারান্তরে প্রায় বন্ধ করে দেওয়ার ফলে দেশীয় সুতা বিক্রয় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

সুতরাং, সব স্থলবন্দর এবং কাস্টমস স্টেশনের মাধ্যমে সুতা আমদানির কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন বিটিএমইএ সভাপতি।

ঢাকা/হাসনাত/সাইফ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব ক এমইএর ব ক এমইএ ব ট এমএর উৎপ দ ত আমদ ন র আমদ ন ক ক ষ টমস ঋণপত র র জন য ক স টম আম দ র উল ল খ গ রহণ ব যবস অবদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে

দুর্গাপূজা উপলক্ষে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ মাছ ভারতে রপ্তানি হয়েছে। আজ বুধবার দেশের ছয়টি প্রতিষ্ঠান ১২ দশমিক ৫০ ডলার কেজিতে এই ইলিশ রপ্তানি করা হয়েছে, যা বাংলাদেশি টাকায় ১ হাজার ৫২৫ টাকা।

অথচ এদিন যশোর শহরের মাছের আড়তে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের প্রতি কেজি ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকায় পাইকারি বেচা–কেনা হয়েছে। খুচরা বাজারে সেই ইলিশ কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দরে ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে; অর্থাৎ দেশের খুচরা বাজারের দামের চেয়ে কম দামে ইলিশ ভারতে রপ্তানি হচ্ছে।

দেশের চেয়ে কম দামে ইলিশ মাছ রপ্তানি কীভাবে সম্ভব হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে রপ্তানিকারকদের ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিএন্ডএফ) এজেন্ট জুয়েল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রপ্তানিকারকেরা ইলিশের জাহাজ থেকে সরাসরি মাছ কেনেন।‌ ছোট–বড় মিলিয়ে যখন কেনেন, তখন একটু কম দামে তাঁরা কিনতে পারেন। এ কারণে তাঁদের পুষিয়ে যায়। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার জানা নেই।’

যশোর শহরের বড় বাজারের মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইলিশ মাছের সরবরাহ কম। যে কারণে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে বেচাকেনা হচ্ছে। খুচরা ইলিশ বিক্রেতা লিয়াকত আলী বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর ইলিশ মাছের দাম বাড়তি। বাজারে সরবরাহ কম। যে কারণে এ বছর ইলিশ মাছের দাম কমার সম্ভাবনা আর দেখছি না।’

যশোর বড় বাজার মৎস্যজীবী আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ পিয়ার মোহাম্মদ জানান, আজ যশোরের বাজারে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকা কেজি দরে পাইকারি কেনাবেচা হয়েছে। আর কেজি আকারের ইলিশ প্রতি কেজি ৩ হাজার টাকার ওপরে বেচাকেনা হয়েছে। ভারতের রপ্তানির কারণে স্থানীয় বাজারে এখন ইলিশ মাছ সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে, যে কারণে দাম বেশি। অথচ গত বছর এই সময়ে কেজি আকারের ইলিশ মাছের দাম ছিল সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬০০ টাকা কেজি। এবার প্রায় দ্বিগুণ দামে সেই ইলিশ কেনাবেচা হচ্ছে।

বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, এ বছর সরকার ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১ হাজার ২০০ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। আজ থেকে ইলিশ মাছ রপ্তানি শুরু হলো। গত বছর ইলিশ রপ্তানির অনুমতি ছিল ২ হাজার ৪২০ টন। বেনাপোল বন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ৫৩২ টন। এবারও অনুমোদনকৃত ইলিশ রপ্তানির কোটা পূরণ হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ৫ অক্টোবরের মধ্যে ইলিশ রপ্তানি শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর।

জানতে চাইলে বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের ফিশারিজ কোয়ারেন্টিন সজীব সাহা বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদিত ইলিশ রপ্তানির প্রথম চালানে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ১২ দশমিক ৫০ ডলার মূল্যে ৩৭ দশমিক ৪৬০ টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। ছয়টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই ইলিশ ভারতে পাঠানো হয়েছে। রপ্তানি করা ইলিশের একটি বাক্স খুলে দেখা গেছে, ৩৮টি ইলিশ মাছের ওজন ২১ কেজি; অর্থাৎ প্রতিটি ইলিশের ওজন ছিল ৫৫০ গ্রাম। এ ছাড়া ৭০০ থেকে ৮৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছও রপ্তানি হয়েছে। ৫৫০ গ্রাম থেকে ৮৫০ গ্রাম আকারের মধ্যে ইলিশ মাছ রপ্তানি হচ্ছে।

পদ্মার রুপালি ইলিশ স্বাদ আর গন্ধে অতুলনীয় হওয়ায় দুই বাংলায় এ মাছ বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে দুর্গাপূজায় অতিথি আপ্যায়নে খাবারের প্রধান তালিকায় ইলিশ রাখেন কলকাতার বাঙালিরা। আগে ইলিশ সাধারণ রপ্তানি পণ্যের তালিকায় উন্মুক্ত থাকলেও উৎপাদন সংকট দেখিয়ে ২০১২ সালে দেশের বাইরে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় তৎকালীন সরকার। তবে ২০১৯ সাল থেকে বিশেষ বিবেচনায় কেবল দুর্গাপূজা উপলক্ষে আবারও ইলিশ রপ্তানির সুযোগ দেয় সরকার।

আরও পড়ুনদুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতের ‘বিশেষ অনুরোধে’ ইলিশ রপ্তানির অনুমতি: মৎস্য উপদেষ্টা২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পের বিমা দাবি নিষ্পত্তির অনুরোধ বিটিএমএর
  • প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে
  • আখাউড়া স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ
  • শ্রম আইন সংশোধন দ্রুত শেষ করতে বলেছে মার্কিন প্রতিনিধিদল
  • জামায়াত আমিরের সঙ্গে শিল্প মালিক‌দের সৌজন্য সাক্ষাৎ