Prothomalo:
2025-04-30@22:28:09 GMT

নৈরাজ্যের অবসান হোক

Published: 26th, April 2025 GMT

চট্টগ্রাম মহানগরকে যানজট ও ফুটপাতগুলোকে দখলমুক্ত করে একটি শৃঙ্খলার মধ্যে আনার প্রাথমিক চেষ্টা হিসেবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন ঘোষণা দিয়েছেন নগরের ফুটপাতগুলোতে হকার বসবে বেলা তিনটা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত। যেখানে দিনের পুরোটা সময় ফুটপাতসহ রাস্তার অনেকটা জুড়ে হকারদের দখলে থাকে, সেখানে আট ঘণ্টা সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হলো। এই ঘোষণা চট্টগ্রাম নগরবাসীকে স্বস্তি দিলেও ভয় কাটেনি তাদের।

অতীতে ফুটপাত পথচারীদের জন্য অবাধ করার এবং নগরের সৌন্দর্য বাড়ানো প্রচেষ্টা বারবার ব্যর্থ হয়েছে বলেই এই ভয়। চসিকের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে সকালে হকার বসবে না। এ সময় অফিস আদালত, স্কুল–কলেজ.

বিপণিকেন্দ্র ও হাটবাজারে যাওয়ার পথ নির্বিঘ্ন ও বাধাহীন থাকবে। তাতে ভোগান্তি কমে যাবে অনেক।

২০ এপ্রিল নিউমার্কেট এলাকায় ফুটপাতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, নালা ও নর্দমায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম চলার সময় সিটি মেয়র এই ঘোষণা দিয়েছেন। এ সময় তিনি হকারদের পুনর্বাসনের ওপরও গুরুত্ব দেন। তিনি হকারদের পুনর্বাসনের জন্য নির্ধারিত স্থানও পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে হকারদের জন্য নির্ধারিত সময়সীমার কথা জানান তিনি।

যানজট নিরসনের লক্ষ্যে হকারদের পুনর্বাসন ও হকার উচ্ছেদের ক্ষেত্রে চাপ প্রয়োগ না করে বুঝিয়ে কাজ আদায়ের পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি। মেয়র জানান, বিকেল পাঁচটা থেকে হকারদের জন্য ফুটপাত ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু হকারদের অনুরোধে সময়টা এগিয়ে এনে বেলা তিনটা করা হয়েছে।

ফুটপাতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং হকারমুক্ত করার যেকোনো প্রচেষ্টার পাশাপাশি যে প্রশ্নটি উঠে আসে, সেটি হলো এতজন হকারের জীবিকার কী হবে? সে কথা বিবেচনা করে মেয়র জানান, তাঁরা জহুর হকার্স মার্কেটের জায়গায় একটি বহুতল ভবন এবং রেলস্টেশন–সংলগ্ন এলাকায় আরেকটি বহুতল ভবন গড়ে তুলে সেখানে হকারদের পুনর্বাসন করার পরিকল্পনা করেছেন।

মেয়রের ঘোষণাটি সঙ্গে সঙ্গে বাস্তবায়িত হয়নি। এ ঘোষণার পর এক সপ্তাহও অতিক্রান্ত হয়নি; কিন্তু চট্টগ্রাম নগরের ফুটপাত দখল, রাস্তার মাঝখানে পসরা সাজিয়ে বসা, রাস্তায় সারি সারি যানবাহন, যানজটের অচলায়তন, অনুমোদনহীন যান চলাচলের নৈরাজ্য চলছেই। এই নৈরাজ্য চট্টগ্রামের নাগরিকদের প্রতিদিনের জীবনকে যন্ত্রণার জীবনে পরিণত করেছে। অতিষ্ঠ করে তুলেছে তাঁদের।

বন্দরনগরীর ট্রাফিক–ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার অন্যতম কারণ ফুটপাত ও রাস্তা দখল। ফুটপাত ও রাস্তার অংশ দখল হয়ে গেলে মানুষ রাস্তার ওপর হাঁটে, এর ওপর আছে রাস্তায় পার্কিং। ফলে যান চলাচলের পথ হয়ে পড়ে সংকীর্ণ। আর তাতে যানজট অনিবার্য হয়ে পড়ে। এই যানজট প্রায় নগরজুড়ে। বিশেষ করে প্রবর্তক মোড়, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, আসাদগঞ্জ, নিউমার্কেট, রেয়াজুদ্দিন বাজার আমতলা, তিনপুলের মাথা, স্টেশন রোড, জিপিএর সামনে, মুরাদপুর, জিইসি মোড়, বহাদ্দারহাট, ষোলশহর ২ নম্বর গেট, ওয়াসা, টাইগারপাস, দেওয়ানহাট, চৌমুহনী, আগ্রাবাদ, বারেক বিল্ডিং মোড়, ফ্রি-পোর্ট, কাস্টমস মোড়, অক্সিজেন, অলংকার, একে খান এলাকায় দিনের বেশির ভাগ সময় যানজট থাকে। এর ওপর পানির লাইন, গ্যাসলাইন, সড়ক মেরামত, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ, নালা সংস্কারের কাজ তো আছেই। সেগুলো যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। এই বিশৃঙ্খল পরিবেশ থেকে মুক্তি পেতে ট্রাফিক বিভাগ, জেলা প্রশাসন এবং সিটি করপোরেশন যে যার মতো কাজ করলেও তাদের মধ্যে কোনো সমন্বয় দেখা যায়নি। সে কারণে কোনো ইতিবাচক ফল বেরিয়ে আসেনি।

কোনো কোনো সময় কিছু পদক্ষেপ সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না অথবা কেউ মেনে নেন না। যেমন শতাব্দীপ্রাচীন জব্বারের মেলা উপলক্ষে লালদীঘিকে ঘিরে যে মেলা হয়, তাতে সারা দেশ থেকে আসা পণ্যের পসরা বসে। এ সময় ওই এলাকায় যান চলাচল করতে পারে না। এটি বছরের মাত্র দু্টি দিন। এই ঝামেলা চট্টগ্রামবাসী মেনে নিয়েছেন। কারণ, এই মেলা ঘিরে বিরাট অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ঘটে। হাজার হাজার মানুষ এই মেলা থেকে সারা বছরের জন্য নানা পণ্য সংগ্রহ করে। বলী খেলার আগের দিন ২৪ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সকালে কোনো দোকানপাট বসতে দেওয়া হয়নি। পরে অবশ্য বিকেলের দিকে মেলা জমে যায়। না হলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পড়তেন বিপাকে।

দুই–তিন দিনের মেলা ভেঙে যানজট নিরসন করা যাবে না। তার জন্য দরকার স্থায়ী সমাধান। চট্টগ্রাম শহরের সড়কগুলোর মানচিত্র চোখের সামনে রেখে সিটি করপোরেশনে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কী পদক্ষেপ নিতে হবে, তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব বিভাগ একসঙ্গে বসা দরকার। সেই বৈঠক শুধু দায় এড়ানোর জন্য নয়, তার জন্য চাই নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা। চট্টগ্রাম বিশৃঙ্খল যানজটের শহর, ফুটপাতে নৈরাজ্যের শহর—এই দুর্নাম ঘোচাতে হলে মানুষের জীবনযাপনকে শান্তিময় করতে সিটি করপোরেশনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অন্য কোনো বিকল্প নেই।

ওমর কায়সার প্রথম আলোর চট্টগ্রাম অফিসের বার্তা সম্পাদক

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য ন এল ক য় ফ টপ ত য নজট

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব’

ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ২টা ২০ মিনিট। মাথার ওপর প্রখর রোদের উত্তাপ। প্রচণ্ড গরমে ত্রাহি অবস্থায় একটু বিশ্রাম নিতে গাছের ছায়ার খোঁজে ক্লান্ত পথিক। এমন সময় ঘর্মাক্ত শরীরে একটি ভবন নির্মাণের কাজ করতে দেখা গেল কয়েকজন শ্রমিককে। তাদের একজন তোঁতা মিয়া, অপরজন হাবিবুল।

হাবিবুল পাথর ভরেই যাচ্ছেন, তোঁতা মিয়া সেগুলো মাথায় করে একের পর এক টুড়ি ছাদ ঢালাইয়ের জন্য পৌঁছে দিচ্ছেন নির্দিষ্ট স্থানে। সেখানেও বালু-পাথরের মিশ্রণ করছেন আরও কয়েকজন। তাদের কর্মযজ্ঞের এক ফাঁকে কথা হয় তোঁতা মিয়ার সঙ্গে।

আলাপকালে তোঁতা মিয়া বলেন, ‘সারাদিন কাম (কাজ) কইরা ৫০০ ট্যাহা (টাকা) হাজিরা পাই। এইডি দিয়া কোনোমতে বউ-পুলাপান নিয়া দিন পার করতাছি। মে দিবস-টিবস কী কইতারতাম না। আমরার মতো গরিব মানুষ কাম না করলে পেডে ভাত জুটতো না এইডাই কইতারবাম।’

গতকাল বুধবার ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকাজ করার সময় এসব কথা বলেন তোঁতা মিয়া (৪৫)। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আকুয়া এলাকায়। এ সময় কথা হয় আরেক নির্মাণ শ্রমিক একাদুল মিয়ার সঙ্গে। একাদুলও জানেন না মে দিবস কী। তিনি বলেন, ‘এই কাম কইরা খাইয়া-না খাইয়া বউ-পুলাপান লইয়া কোনোরহমে দিন পার করতাছি। বর্তমান বাজারো জিনিসপাতির দাম বাড়লেও আমরার মজুরি বাড়ে না। পাঁচ বছর আগেও যা পাইতাম, অহনও তাই পাই।’ তিনি বলেন, ‘কয়েক ট্যাহা সঞ্চয় করবাম এই বাও (উপায়) নাই। অসুখ অইয়া চার দিন ঘরে পইড়া থাকলে না খাইয়া থাহন লাগব। আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব?’

আজ বৃহস্পতিবার মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের এই দিনটি সারাবিশ্বের শ্রমিক শ্রেণির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বহির্বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয় নানা আয়োজনে। কিন্তু যাদের অধিকার আদায়ের জন্য এ দিনটি পালন করা হয়– তারাই জানেন না দিবসটি সম্পর্কে। তাদের আরেকজন দিনমজুর রাজন মিয়া। রাজন জানান, এসব দিবসে তাদের মতো গরিব মানুষের কোনো লাভ-লোকসান নেই। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ