চট্টগ্রাম মহানগরকে যানজট ও ফুটপাতগুলোকে দখলমুক্ত করে একটি শৃঙ্খলার মধ্যে আনার প্রাথমিক চেষ্টা হিসেবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন ঘোষণা দিয়েছেন নগরের ফুটপাতগুলোতে হকার বসবে বেলা তিনটা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত। যেখানে দিনের পুরোটা সময় ফুটপাতসহ রাস্তার অনেকটা জুড়ে হকারদের দখলে থাকে, সেখানে আট ঘণ্টা সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হলো। এই ঘোষণা চট্টগ্রাম নগরবাসীকে স্বস্তি দিলেও ভয় কাটেনি তাদের।
অতীতে ফুটপাত পথচারীদের জন্য অবাধ করার এবং নগরের সৌন্দর্য বাড়ানো প্রচেষ্টা বারবার ব্যর্থ হয়েছে বলেই এই ভয়। চসিকের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে সকালে হকার বসবে না। এ সময় অফিস আদালত, স্কুল–কলেজ.
২০ এপ্রিল নিউমার্কেট এলাকায় ফুটপাতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, নালা ও নর্দমায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম চলার সময় সিটি মেয়র এই ঘোষণা দিয়েছেন। এ সময় তিনি হকারদের পুনর্বাসনের ওপরও গুরুত্ব দেন। তিনি হকারদের পুনর্বাসনের জন্য নির্ধারিত স্থানও পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে হকারদের জন্য নির্ধারিত সময়সীমার কথা জানান তিনি।
যানজট নিরসনের লক্ষ্যে হকারদের পুনর্বাসন ও হকার উচ্ছেদের ক্ষেত্রে চাপ প্রয়োগ না করে বুঝিয়ে কাজ আদায়ের পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি। মেয়র জানান, বিকেল পাঁচটা থেকে হকারদের জন্য ফুটপাত ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু হকারদের অনুরোধে সময়টা এগিয়ে এনে বেলা তিনটা করা হয়েছে।
ফুটপাতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং হকারমুক্ত করার যেকোনো প্রচেষ্টার পাশাপাশি যে প্রশ্নটি উঠে আসে, সেটি হলো এতজন হকারের জীবিকার কী হবে? সে কথা বিবেচনা করে মেয়র জানান, তাঁরা জহুর হকার্স মার্কেটের জায়গায় একটি বহুতল ভবন এবং রেলস্টেশন–সংলগ্ন এলাকায় আরেকটি বহুতল ভবন গড়ে তুলে সেখানে হকারদের পুনর্বাসন করার পরিকল্পনা করেছেন।
মেয়রের ঘোষণাটি সঙ্গে সঙ্গে বাস্তবায়িত হয়নি। এ ঘোষণার পর এক সপ্তাহও অতিক্রান্ত হয়নি; কিন্তু চট্টগ্রাম নগরের ফুটপাত দখল, রাস্তার মাঝখানে পসরা সাজিয়ে বসা, রাস্তায় সারি সারি যানবাহন, যানজটের অচলায়তন, অনুমোদনহীন যান চলাচলের নৈরাজ্য চলছেই। এই নৈরাজ্য চট্টগ্রামের নাগরিকদের প্রতিদিনের জীবনকে যন্ত্রণার জীবনে পরিণত করেছে। অতিষ্ঠ করে তুলেছে তাঁদের।
বন্দরনগরীর ট্রাফিক–ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার অন্যতম কারণ ফুটপাত ও রাস্তা দখল। ফুটপাত ও রাস্তার অংশ দখল হয়ে গেলে মানুষ রাস্তার ওপর হাঁটে, এর ওপর আছে রাস্তায় পার্কিং। ফলে যান চলাচলের পথ হয়ে পড়ে সংকীর্ণ। আর তাতে যানজট অনিবার্য হয়ে পড়ে। এই যানজট প্রায় নগরজুড়ে। বিশেষ করে প্রবর্তক মোড়, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, আসাদগঞ্জ, নিউমার্কেট, রেয়াজুদ্দিন বাজার আমতলা, তিনপুলের মাথা, স্টেশন রোড, জিপিএর সামনে, মুরাদপুর, জিইসি মোড়, বহাদ্দারহাট, ষোলশহর ২ নম্বর গেট, ওয়াসা, টাইগারপাস, দেওয়ানহাট, চৌমুহনী, আগ্রাবাদ, বারেক বিল্ডিং মোড়, ফ্রি-পোর্ট, কাস্টমস মোড়, অক্সিজেন, অলংকার, একে খান এলাকায় দিনের বেশির ভাগ সময় যানজট থাকে। এর ওপর পানির লাইন, গ্যাসলাইন, সড়ক মেরামত, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ, নালা সংস্কারের কাজ তো আছেই। সেগুলো যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। এই বিশৃঙ্খল পরিবেশ থেকে মুক্তি পেতে ট্রাফিক বিভাগ, জেলা প্রশাসন এবং সিটি করপোরেশন যে যার মতো কাজ করলেও তাদের মধ্যে কোনো সমন্বয় দেখা যায়নি। সে কারণে কোনো ইতিবাচক ফল বেরিয়ে আসেনি।
কোনো কোনো সময় কিছু পদক্ষেপ সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না অথবা কেউ মেনে নেন না। যেমন শতাব্দীপ্রাচীন জব্বারের মেলা উপলক্ষে লালদীঘিকে ঘিরে যে মেলা হয়, তাতে সারা দেশ থেকে আসা পণ্যের পসরা বসে। এ সময় ওই এলাকায় যান চলাচল করতে পারে না। এটি বছরের মাত্র দু্টি দিন। এই ঝামেলা চট্টগ্রামবাসী মেনে নিয়েছেন। কারণ, এই মেলা ঘিরে বিরাট অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ঘটে। হাজার হাজার মানুষ এই মেলা থেকে সারা বছরের জন্য নানা পণ্য সংগ্রহ করে। বলী খেলার আগের দিন ২৪ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সকালে কোনো দোকানপাট বসতে দেওয়া হয়নি। পরে অবশ্য বিকেলের দিকে মেলা জমে যায়। না হলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পড়তেন বিপাকে।
দুই–তিন দিনের মেলা ভেঙে যানজট নিরসন করা যাবে না। তার জন্য দরকার স্থায়ী সমাধান। চট্টগ্রাম শহরের সড়কগুলোর মানচিত্র চোখের সামনে রেখে সিটি করপোরেশনে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কী পদক্ষেপ নিতে হবে, তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব বিভাগ একসঙ্গে বসা দরকার। সেই বৈঠক শুধু দায় এড়ানোর জন্য নয়, তার জন্য চাই নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা। চট্টগ্রাম বিশৃঙ্খল যানজটের শহর, ফুটপাতে নৈরাজ্যের শহর—এই দুর্নাম ঘোচাতে হলে মানুষের জীবনযাপনকে শান্তিময় করতে সিটি করপোরেশনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অন্য কোনো বিকল্প নেই।
ওমর কায়সার প্রথম আলোর চট্টগ্রাম অফিসের বার্তা সম্পাদক
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য ন এল ক য় ফ টপ ত য নজট
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকায় অটোমোবাইল ও কৃষি যন্ত্রপাতির প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে শনিবার
ঢাকায় দুই দিনব্যাপী অটোমোবাইল ও কৃষি যন্ত্রপাতির প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে আগামী শনিবার। এতে অটোমোবাইল, কৃষি যন্ত্রপাতিসহ হালকা প্রকৌশল খাতের ২৬টি স্টল থাকবে। পাশাপাশি শিল্পের সহায়ক প্রতিষ্ঠানের স্টল থাকবে আরও ১২টি। প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
বাংলাদেশ অটোমোবাইলস অ্যাসেম্বলার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ও অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সহযোগিতায় এই প্রদর্শনীর আয়োজন করছে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)। ঢাকার তেজগাঁও শিল্প এলাকায় এডিসন প্রাইম ভবনের ছাদে এই প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। এই ভবনেই বিসিআইয়ের কার্যালয় অবস্থিত।
আজ বৃহস্পতিবার বিসিআই কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে দুই দিনব্যাপী এই প্রদর্শনী নিয়ে বিস্তারিত জানান চেম্বারটির সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী। আরও উপস্থিত ছিলেন অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সভাপতি আলিমুল আহসান চৌধুরী, বিসিআইয়ের পরিচালক মো. শাহেদ আলম, এস এম শাহ আলম, জিয়া হায়দার প্রমুখ।
বিসিআইয়ের সভাপতি বলেন, হালকা প্রকৌশল খাতে বাংলাদেশে বর্তমানে ছোটবড় প্রায় ৫০ হাজার প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই খাতে কাজ করেন ১০ লাখ মানুষ। হালকা প্রকৌশল খাতে স্থানীয় বাজার ১২ বিলিয়ন ডলারের হলেও দেশীয় উৎপাদকেরা অর্ধেক পূরণ করতে পারছেন। তা ছাড়া হালকা প্রকৌশল খাতের বৈশ্বিক বাজারের আকার প্রায় ৮ ট্রিলিয়ন ডলার। তিনি আরও বলেন, তৈরি পোশাক খাত আর বেশি মূল্য সংযোজন করতে পারবে না। ফলে আমাদের অর্থনীতিকে টেকসই করতে হলে আমাদের অন্য খাতে যেতে হবে। সে ক্ষেত্রে হালকা প্রকৌশল খাত পারে বড় সম্ভাবনার।
অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সভাপতি আলিমুল আহসান চৌধুরী বলেন, প্রতিবছর কৃষিজমি কমছে। কৃষকের বয়স বাড়ছে, তার কারণ তরুণেরা খুব কম কৃষিকাজে আসছেন। বিশ্বের অনেক দেশেই মোট জনগোষ্ঠীর ১০ শতাংশের কম কৃষিকাজে নিয়োজিত। ১০ শতাংশ মানুষ বাকি ৯০ শতাংশের জন্য খাদ্য জোগান দিচ্ছে। সে কারণে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। বাংলাদেশেও কৃষিকাজে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। তবে বড় অংশই আমদানি করতে হচ্ছে।
আলিমুল আহসান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে ১২০০ থেকে ১৫০০ কোটি টাকার কৃষি যন্ত্রপাতির বাজার আছে। তার মধ্যে দেশীয় কোম্পানিগুলো সরবরাহ করছে মাত্র ৪০০ থেকে ৪৫০ কোটি টাকার যন্ত্রাংশ। নীতিসহায়তা পেলে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।