Prothomalo:
2025-11-03@09:11:12 GMT

নৈরাজ্যের অবসান হোক

Published: 26th, April 2025 GMT

চট্টগ্রাম মহানগরকে যানজট ও ফুটপাতগুলোকে দখলমুক্ত করে একটি শৃঙ্খলার মধ্যে আনার প্রাথমিক চেষ্টা হিসেবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন ঘোষণা দিয়েছেন নগরের ফুটপাতগুলোতে হকার বসবে বেলা তিনটা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত। যেখানে দিনের পুরোটা সময় ফুটপাতসহ রাস্তার অনেকটা জুড়ে হকারদের দখলে থাকে, সেখানে আট ঘণ্টা সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হলো। এই ঘোষণা চট্টগ্রাম নগরবাসীকে স্বস্তি দিলেও ভয় কাটেনি তাদের।

অতীতে ফুটপাত পথচারীদের জন্য অবাধ করার এবং নগরের সৌন্দর্য বাড়ানো প্রচেষ্টা বারবার ব্যর্থ হয়েছে বলেই এই ভয়। চসিকের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে সকালে হকার বসবে না। এ সময় অফিস আদালত, স্কুল–কলেজ.

বিপণিকেন্দ্র ও হাটবাজারে যাওয়ার পথ নির্বিঘ্ন ও বাধাহীন থাকবে। তাতে ভোগান্তি কমে যাবে অনেক।

২০ এপ্রিল নিউমার্কেট এলাকায় ফুটপাতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, নালা ও নর্দমায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম চলার সময় সিটি মেয়র এই ঘোষণা দিয়েছেন। এ সময় তিনি হকারদের পুনর্বাসনের ওপরও গুরুত্ব দেন। তিনি হকারদের পুনর্বাসনের জন্য নির্ধারিত স্থানও পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে হকারদের জন্য নির্ধারিত সময়সীমার কথা জানান তিনি।

যানজট নিরসনের লক্ষ্যে হকারদের পুনর্বাসন ও হকার উচ্ছেদের ক্ষেত্রে চাপ প্রয়োগ না করে বুঝিয়ে কাজ আদায়ের পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি। মেয়র জানান, বিকেল পাঁচটা থেকে হকারদের জন্য ফুটপাত ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু হকারদের অনুরোধে সময়টা এগিয়ে এনে বেলা তিনটা করা হয়েছে।

ফুটপাতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং হকারমুক্ত করার যেকোনো প্রচেষ্টার পাশাপাশি যে প্রশ্নটি উঠে আসে, সেটি হলো এতজন হকারের জীবিকার কী হবে? সে কথা বিবেচনা করে মেয়র জানান, তাঁরা জহুর হকার্স মার্কেটের জায়গায় একটি বহুতল ভবন এবং রেলস্টেশন–সংলগ্ন এলাকায় আরেকটি বহুতল ভবন গড়ে তুলে সেখানে হকারদের পুনর্বাসন করার পরিকল্পনা করেছেন।

মেয়রের ঘোষণাটি সঙ্গে সঙ্গে বাস্তবায়িত হয়নি। এ ঘোষণার পর এক সপ্তাহও অতিক্রান্ত হয়নি; কিন্তু চট্টগ্রাম নগরের ফুটপাত দখল, রাস্তার মাঝখানে পসরা সাজিয়ে বসা, রাস্তায় সারি সারি যানবাহন, যানজটের অচলায়তন, অনুমোদনহীন যান চলাচলের নৈরাজ্য চলছেই। এই নৈরাজ্য চট্টগ্রামের নাগরিকদের প্রতিদিনের জীবনকে যন্ত্রণার জীবনে পরিণত করেছে। অতিষ্ঠ করে তুলেছে তাঁদের।

বন্দরনগরীর ট্রাফিক–ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার অন্যতম কারণ ফুটপাত ও রাস্তা দখল। ফুটপাত ও রাস্তার অংশ দখল হয়ে গেলে মানুষ রাস্তার ওপর হাঁটে, এর ওপর আছে রাস্তায় পার্কিং। ফলে যান চলাচলের পথ হয়ে পড়ে সংকীর্ণ। আর তাতে যানজট অনিবার্য হয়ে পড়ে। এই যানজট প্রায় নগরজুড়ে। বিশেষ করে প্রবর্তক মোড়, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, আসাদগঞ্জ, নিউমার্কেট, রেয়াজুদ্দিন বাজার আমতলা, তিনপুলের মাথা, স্টেশন রোড, জিপিএর সামনে, মুরাদপুর, জিইসি মোড়, বহাদ্দারহাট, ষোলশহর ২ নম্বর গেট, ওয়াসা, টাইগারপাস, দেওয়ানহাট, চৌমুহনী, আগ্রাবাদ, বারেক বিল্ডিং মোড়, ফ্রি-পোর্ট, কাস্টমস মোড়, অক্সিজেন, অলংকার, একে খান এলাকায় দিনের বেশির ভাগ সময় যানজট থাকে। এর ওপর পানির লাইন, গ্যাসলাইন, সড়ক মেরামত, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ, নালা সংস্কারের কাজ তো আছেই। সেগুলো যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। এই বিশৃঙ্খল পরিবেশ থেকে মুক্তি পেতে ট্রাফিক বিভাগ, জেলা প্রশাসন এবং সিটি করপোরেশন যে যার মতো কাজ করলেও তাদের মধ্যে কোনো সমন্বয় দেখা যায়নি। সে কারণে কোনো ইতিবাচক ফল বেরিয়ে আসেনি।

কোনো কোনো সময় কিছু পদক্ষেপ সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না অথবা কেউ মেনে নেন না। যেমন শতাব্দীপ্রাচীন জব্বারের মেলা উপলক্ষে লালদীঘিকে ঘিরে যে মেলা হয়, তাতে সারা দেশ থেকে আসা পণ্যের পসরা বসে। এ সময় ওই এলাকায় যান চলাচল করতে পারে না। এটি বছরের মাত্র দু্টি দিন। এই ঝামেলা চট্টগ্রামবাসী মেনে নিয়েছেন। কারণ, এই মেলা ঘিরে বিরাট অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ঘটে। হাজার হাজার মানুষ এই মেলা থেকে সারা বছরের জন্য নানা পণ্য সংগ্রহ করে। বলী খেলার আগের দিন ২৪ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সকালে কোনো দোকানপাট বসতে দেওয়া হয়নি। পরে অবশ্য বিকেলের দিকে মেলা জমে যায়। না হলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পড়তেন বিপাকে।

দুই–তিন দিনের মেলা ভেঙে যানজট নিরসন করা যাবে না। তার জন্য দরকার স্থায়ী সমাধান। চট্টগ্রাম শহরের সড়কগুলোর মানচিত্র চোখের সামনে রেখে সিটি করপোরেশনে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কী পদক্ষেপ নিতে হবে, তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব বিভাগ একসঙ্গে বসা দরকার। সেই বৈঠক শুধু দায় এড়ানোর জন্য নয়, তার জন্য চাই নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা। চট্টগ্রাম বিশৃঙ্খল যানজটের শহর, ফুটপাতে নৈরাজ্যের শহর—এই দুর্নাম ঘোচাতে হলে মানুষের জীবনযাপনকে শান্তিময় করতে সিটি করপোরেশনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অন্য কোনো বিকল্প নেই।

ওমর কায়সার প্রথম আলোর চট্টগ্রাম অফিসের বার্তা সম্পাদক

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য ন এল ক য় ফ টপ ত য নজট

এছাড়াও পড়ুন:

গণভোট নিয়ে মতভেদে উপদেষ্টা পরিষদের উদ্বেগ

জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সম্ভাব্য দ্রুতত সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।

সোমবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়। যদিও এর আগেই এক সংবাদ সম্মেলনে এমন কথায় জানান আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।

প্রেস উইং জানায়, জাতীয় ঐক্যমত কমিশন থেকে প্রণীত জুলাই সনদ এবং এর বাস্তবায়ন সংক্রান্ত বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদের একটি জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সংস্কার বিষয়ে ঐকমত্য স্থাপনের প্রচেষ্টার জন্য এবং বহু বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলির প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়।  

এতে বলা হয়, উপদেষ্টা পরিষদের সভায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) আদেশ চূড়ান্তকরণ এবং এতে উল্লেখিত গণভোট আয়োজন ও গণভোটের বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করা হয়। এতে লক্ষ্য করা হয় যে, ঐকমত্য কমিশনে দীর্ঘদিন আলোচনার পরও কয়েকটি সংস্কারের সুপারিশ বিষয়ে ভিন্ন মত রয়েছে। এছাড়া, গণভোট কবে অনুষ্ঠিত হবে ও এর বিষয়বস্তু কী হবে এসব প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর  মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে সে জন্য সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে গণভোটের সময় কখন হবে, গণভোটের বিষয়বস্তু কী হবে, জুলাই সনদে বর্ণিত ভিন্নমতগুলো প্রসঙ্গে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে তা নিয়ে ঐক্যমত কমিশনের প্রস্তাবগুলোর আলোকে জরুরী ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে সভা অভিমত ব্যক্ত করে।

এসব ক্ষেত্রে ফ্যসিবাদবিরোধী আন্দোলনের দীর্ঘদিনের মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোকে স্বীয় উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করে দ্রুততম সময়ে ( সম্ভব  হলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে) সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা প্রদান করার আহ্বান জানানো হয়। এমন নির্দেশনা পেলে সরকারের পক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ অনেক সহজ হবে। বলেও উল্লেখ করা হয়। পরিস্থিতিতে কালক্ষেপণের যেকোনো সুযোগ নাই সেটাও সবার বিবেচনায় রাখার জন্য বলা হয়।

সভায় ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্থে আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সরকারের সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করা হয়।

রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে ঐক্যবদ্ধ নির্দেশনা না পেলে কী হবে এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরা আলাপ-আলোচনা করে এই বিষয়েও আমাদের একটি ঐক্যবদ্ধ নির্দেশনা দেবে—এ প্রত্যাশা করছি। ওনারা যদি আলাপ-আলোচনা করেন, আমাদের জন্য কাজটি অত্যন্ত সহজ হয়। ওনারা যদি ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে না পারে, অবশ্যই সরকার সরকারের মতো সিদ্ধান্ত নেবে।” 

ঢাকা/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ