মাদক বিক্রির ৩৪ কোটি টাকা ব্যাংকে, পরিচয় দেন ব্যবসায়ী
Published: 29th, April 2025 GMT
পরিচয় দেন ব্যবসায়ী বলে। আয়কর নথিতে প্রতি অর্থবছরে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা আয়ের হিসাব পাওয়া যায়। অথচ তাঁর ২৯টি ব্যাংক হিসাবে সোয়া ২৩ কোটি টাকা জমা হওয়ার তথ্য সামনে এসেছে। তাঁর গৃহিণী স্ত্রীর ১৬ ব্যাংক হিসাবেও রয়েছে বড় অঙ্কের টাকা, প্রায় ১১ কোটি। ঢাকায় পাঁচতলা একটি বাড়ি রয়েছে এই দম্পতির, আছে ফ্ল্যাট।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বলছে, আমদানি-রপ্তানি ব্যবসার আড়ালে বিদেশ থেকে মাদকের কাঁচামাল এনে বিক্রি করেন ঢাকার মোহাম্মদপুরের বছিলা এলাকার জুনায়েদ ইবনে সিদ্দিকী। মাদক ব্যবসার মাধ্যমে বিপুল অর্থসম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। তাঁর স্ত্রী ফাতেমাতুজ জোহরার ব্যাংক হিসাবে মাদক বেচার টাকার বড় একটি অংশ ঢুকেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে করা মামলায় এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলায় জুনায়েদের সহযোগী হিসেবে আবুল কালাম আজাদ, ফারহানা আফ্রিন, দীন ইসলাম, কুদ্দুস মিয়া, মামুন, রতন কুমার মজুমদার ও নজরুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ফারহানা, দীন ইসলাম ও নজরুল—এই তিনজন জুনায়েদের আত্মীয়।
জুনায়েদের আয়কর নথির তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৫–১৬, ২০১৮–১৯ ও ২০১৯–২০ অর্থবছরে তাঁর আয় ছিল ৩ লাখ থেকে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা। অথচ অনুসন্ধানে তাঁর ২৩টি ব্যাংক হিসাব থাকার তথ্য সামনে এসেছে। এসব ব্যাংক হিসাবে জমা হয়েছে ২৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা।চার বছরের অনুসন্ধান শেষে জুনায়েদ ও তাঁর সহযোগীদের মাদক ব্যবসার মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের অর্থ অর্জনের তথ্য সামনে এসেছে। শুরুটা হয়েছিল ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ থেকে ১২ কেজি ৩২০ গ্রাম অ্যামফিটামিন (ইয়াবা তৈরির কাঁচামাল) জব্দ করার ঘটনায়। ওই ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। শুরুতে এজাহারে জুনায়েদের নাম ছিল না। পরে পিবিআইয়ের তদন্তে তাঁর নাম উঠে আসে। সেই সূত্র ধরে বিস্তারিত তদন্তে জুনায়েদের বিপুল অর্থসম্পদের তথ্য পায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।
জুনায়েদের স্ত্রী জোহরার আয়ের কোনো উৎস নেই। অথচ তাঁর ১৬টি ব্যাংক হিসাব থাকার তথ্য জানা গেছে। ওই সব ব্যাংক হিসাবে জমা রয়েছে ১০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। এফডিআর (স্থায়ী আমানত) রয়েছে ৪ কোটি টাকার।সম্প্রতি বিমানবন্দর থানার ওই মামলায় জুনায়েদ, আজাদ, নজরুলসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পিবিআই। এ মামলায় জুনায়েদ ও আজাদসহ সাতজন গ্রেপ্তার হওয়ার পর উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। জুনায়েদের স্ত্রীসহ তিনজন পলাতক।
জুনায়েদদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে করা মামলার বাদী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো.
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, জুনায়েদ ও তাঁর সহযোগীরা অবৈধ পথে মাদকদ্রব্যের কাঁচামাল বিদেশ থেকে দেশে এনে বিক্রি করার পাশাপাশি মাদকদ্রব্য বিদেশে পাচার করেন।
জুনায়েদের দাবি, তিনি টেক্সটাইল ও রাসায়নিক আমদানি-রপ্তানি করেন। তবে অধিদপ্তরের অনুসন্ধান বলছে, পুরান ঢাকায় থাকা তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আইডিএস ট্রেডার্সের মাধ্যমে বিদেশ থেকে গোপনে মাদকদ্রব্যের কাঁচামাল আনেন তিনি।
জুনায়েদের আয়কর নথির তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৫–১৬, ২০১৮–১৯ ও ২০১৯–২০ অর্থবছরে তাঁর আয় ছিল ৩ লাখ থেকে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা। অথচ অনুসন্ধানে তাঁর ২৩টি ব্যাংক হিসাব থাকার তথ্য সামনে এসেছে। এসব ব্যাংক হিসাবে জমা হয়েছে ২৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকার এফডিআর (স্থায়ী আমানত) করেছেন।
মামলার এজাহারে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বলেছে, মাদক ব্যবসার মাধ্যমে আয় করা টাকা দিয়ে জুনায়েদ নামে–বেনামে বাড়ি–গাড়ি কিনেছেন। এর মধ্যে পাঁচতলা বাড়ির ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে মোহাম্মদপুরের বাঁশবাড়ী এলাকা। এ ছাড়া মোহাম্মদপুরে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
মাদক ব্যবসার মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জুনায়েদের আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর মক্কেল একজন কেমিক্যাল ব্যবসায়ী। হয়রানি করার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
অবশ্য আদালতে জমা দেওয়া পিবিআইয়ের অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, জুনায়েদ দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসায় জড়িত।
দীর্ঘদিন থেকে আমদানি–রপ্তানি ব্যবসার আড়ালে জুনায়েদ ও তাঁর সহযোগীরা মাদক কেনাবেচায় জড়িত। মো. আলী আসলাম হোসেন, অতিরিক্ত পরিচালক, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর গৃহিণী স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবে ১১ কোটি টাকাজুনায়েদের স্ত্রী জোহরার আয়ের কোনো উৎস নেই। অথচ তাঁর ১৬টি ব্যাংক হিসাব থাকার তথ্য জানা গেছে। ওই সব ব্যাংক হিসাবে জমা রয়েছে ১০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। এফডিআর (স্থায়ী আমানত) রয়েছে ৪ কোটি টাকার। এ ছাড়া জুনায়েদের আত্মীয় ফারহানার ব্যাংক হিসাবে ৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা জমা হওয়ার তথ্য পেয়েছে অধিদপ্তর।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বলছে, জুনায়েদের অন্যতম সহযোগী আবুল কালাম আজাদ। তাঁর ছয়টি ব্যাংক হিসাবে জমা হওয়া অর্থের পরিমাণ ৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এ ছাড়া সাভারে তাঁর একটি বাড়ির খোঁজ পেয়েছে অধিদপ্তর।
জুনায়েদের স্ত্রী জোহরার আয়ের কোনো উৎস নেই। অথচ তাঁর ১৬টি ব্যাংক হিসাব থাকার তথ্য জানা গেছে।মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক খোরশেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, শিগগিরই জুনায়েদসহ অন্যদের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের মামলায় গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
[তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, সাভার]
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস য় ২৩ ক ট তদন ত আমদ ন ঘটন য় সহয গ অথচ ত র সহয
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রুটে দুই ট্রেনের সময় বদলে যাচ্ছে
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে চলা সৈকত এক্সপ্রেস ও প্রবাল এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচি পরীক্ষামূলকভাবে নতুন করে নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। নতুন সময়সূচি আগামী ১০ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারগামী সৈকত এক্সপ্রেস (৮২১ নম্বর ট্রেন) ট্রেনটি এখন সকাল সোয়া ৬টায় চট্টগ্রাম স্টেশন ছেড়ে যায়। নতুন সূচি অনুযায়ী, পরীক্ষামূলকভাবে এ ট্রেন চলাচল করবে ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে।
আর কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামগামী প্রবাল এক্সপ্রেস (৮২২ নম্বর ট্রেন) ট্রেনটি কক্সবাজার স্টেশন ছাড়বে সকাল ১০টায়। এখন এ ট্রেন ছাড়ে ১০টা ২০ মিনিটে। গত মঙ্গলবার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে চলাচলরত সৈকত এক্সপ্রেস ও প্রবাল এক্সপ্রেসের সময়সূচি পরীক্ষামূলকভাবে পরিবর্তনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের উপপ্রধান পরিচালন কর্মকর্তা তারেক মুহাম্মদ ইমরান।
রেলওয়ের সহকারী প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু বক্কর সিদ্দিকীকের সই করা এক চিঠিতে বলা হয়েছে, যাত্রীদের চাহিদা ও সময়ানুবর্তিতা রক্ষায় সুষ্ঠুভাবে ট্রেন পরিচালনার জন্য কক্সবাজারগামী সৈকত এক্সপ্রেস এবং চট্টগ্রামমুখী প্রবাল এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচি পরিবর্তন করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার রুটে এখন দুই জোড়া আন্তনগর ট্রেন চলাচল করে। ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত চলাচল করে আরও দুই জোড়া আন্তনগর ট্রেন।
কক্সবাজার রেললাইনে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছিল ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর। প্রথমে ঢাকা থেকে কক্সবাজার এক্সপ্রেস নামে আন্তনগর বিরতিহীন ট্রেন দেওয়া হয়। এরপর গত বছরের জানুয়ারিতে চলাচল শুরু করে পর্যটক এক্সপ্রেস। এটাও দেওয়া হয় ঢাকা থেকে। চট্টগ্রাম থেকে ট্রেন না দেওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়।
গত বছরের ৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত এক জোড়া বিশেষ ট্রেন চালু করা হয়। দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই ট্রেন। এরপর ইঞ্জিন ও কোচের সংকটের কথা বলে গত বছরের ৩০ মে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের চাপে সেই অবস্থান থেকে সরে আসে রেলওয়ে। গত বছরের ১২ জুন থেকে আবার চালু হয় ট্রেন। আর নিয়মিত ট্রেন চলাচল শুরু হয় চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে।
সৈকত এক্সপ্রেস ট্রেনটি যাত্রী ওঠানামার জন্য ষোলশহর, জানালী হাট, পটিয়া, দোহাজারী, সাতকানিয়া, চকরিয়া, ডুলাহাজরা ও রামু স্টেশনে থামবে।
আর প্রবাল এক্সপ্রেস যাত্রাপথে থামবে ষোলশহর, গোমদণ্ডী, পটিয়া, দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া, ডুলহাজারা, ইসলামাবাদ ও রামু স্টেশনে।