ভারতের কংগ্রেস সভাপতি ও রাজ্যসভার বিরোধী নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখে অবিলম্বে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকার অনুরোধ করেছেন। একই অনুরোধ করেছেন লোকসভার বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধীসহ অন্য বিরোধী নেতারাও।

বিরোধী নেতাদের সমস্বর দাবি, পেহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলার মোকাবিলায় গোটা দেশ ঐকবদ্ধ। সমবেতভাবে তারা এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় প্রস্তুত। এই কঠিন সময়ে একতা ও সংহতি জরুরি। সে জন্য অবিলম্বে সংসদের উভয় কক্ষের এক বিশেষ অধিবেশন ডাকা হোক।

দুদিন ধরে কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, আরজেডি, বামপন্থী দলগুলো এ বিষয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছিল। আজ মঙ্গলবার খাড়গে ও রাহুল আলাদাভাবে চিঠি লিখে আনুষ্ঠানিকভাবে সেই অনুরোধ জানান।

একই অনুরোধ করেছেন আরজেডির সংসদ সদস্য মনোজ ঝা ও সিপিআই নেতা পি সন্তোষ কুমারও। তাঁরাও চিঠি লিখে বলেছেন, পেহেলগামের পর সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকা খুবই জরুরি।

কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে এখনো এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
প্রধানমন্ত্রীকে রাহুল লিখেছেন, ‘এই সন্ধিক্ষণে এটা দেখানো দরকার যে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমরা সব সময় জোটবদ্ধ ও এককাট্টা। আমরা বিরোধীরা বিশ্বাস করি যে এ সময় সংসদের দুই কক্ষের এক বিশেষ অধিবেশন ডাকা জরুরি যেখানে সব দলের প্রতিনিধিরা একতা ও দৃঢ়চেতা মনোভাব দেখাতে পারবেন।’

খাড়গের বক্তব্যও একই ধরনের। তিনি লিখেছেন, এই পরিস্থিতিতে একতা ও সংহতি অত্যন্ত আবশ্যক। তাই উভয় কক্ষের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হোক। দেশ সবাইকে দেখাতে পারবে, পরিস্থিতির মোকাবিলায় সবাই দৃঢ়চেতা।

সিপিআইয়ের রাজ্যসভা সদস্য পি সন্তোষ কুমার চিঠি লিখেছেন সংসদীয় মন্ত্রী কিরেণ রিজিজুকে। বিশেষ অধিবেশন ডাকার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, সেখানে শোক প্রকাশের পাশাপাশি দেশের দৃঢ়তার প্রতিফলনও সবাই রাখতে পারবেন। দেশকে দেখানো যাবে যে সবাই ঐকবদ্ধ। তিনি লিখেছেন, ওই হামলা দেশের সামগ্রিক চেতনাকে প্রবলভাবে নাড়া দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে আরজেডির মনোজ ঝা বলেছেন, ‘এই বিপর্যয়ে আমরা সবাই যে সমব্যথী এবং একতা, ন্যায়বিচার ও শান্তির পক্ষে, দেশবাসীকে তা দেখানো ও বোঝানো প্রয়োজন। সরকারেরও উচিত, সব নির্বাচিত সদস্যকে আস্থায় নেওয়া।’
সরকার কী করবে, এখনো তার কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। পেহেলগামের পর সরকারের পক্ষে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা হয়েছিল। যদিও প্রধানমন্ত্রী সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না। ফলে কংগ্রেস সভাপতির সমালোচনা তাঁকে শুনতে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে আরও এক সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার দাবি বিরোধীরা জানিয়ে রেখেছে। সরকার যদিও সাড়া দেয়নি।

পাঁচ বছর আগে পূর্ব লাদাখে গলওয়ানে ভারত–চীন সেনা সংঘর্ষের পরেও বিশেষ অধিবেশন ডাকার দাবি উঠেছিল। সরকার মানেনি। শুধু তা–ই নয়, লাদাখ পরিস্থিতি নিয়ে সংসদে আলোচনাও করতে দেওয়া হয়নি। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কমিটির সদস্যদের লাদাখ পরিভ্রমণের অনুমতিও দেয়নি সরকার।

সরকার জানে যে পেহেলগাম নিয়ে ভারতের সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হলে সরকারকে গাফিলতির সমালোচনা শুনতে হবে। প্রধানমন্ত্রীকেও উপস্থিত থাকতে হবে, জবাবদিহি করতে হবে এবং ব্যর্থতার দায় নিতে হবে। সরকার মোটেই তা হতে দিতে চাইবে না। অতীতে এমন পরিস্থিতিতে সরকার বিরোধীদের কোনো দাবিই মানেনি। এবার কী করা হবে, সেদিকেই আপাতত বিরোধীদের দৃষ্টি নিবদ্ধ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর স থ ত মন ত র অন র ধ সরক র সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

নুরাল পাগলার দরবার থেকে চুরি হওয়া জেনারেটর উদ্ধার, যুবক গ্রেপ্তার

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরাল পাগলার দরবার থেকে চুরি হওয়া একটি জেনারেটর উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় মো. মিজানুর রহমান (২৪) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়।

গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নে অভিযান চালিয়ে মিজানুরকে গ্রেপ্তার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও গোয়ালন্দ ঘাট থানা-পুলিশ। মিজানুরের বাড়ি রাজবাড়ী সদর উপজেলার লক্ষ্মীকোল সোনাকান্দর গ্রামে।

আরও পড়ুননিহতের বাবার মামলায় গ্রেপ্তার আরও ২, দেড় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির দাবি১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এ নিয়ে দুই মামলায় মোট ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. শরীফ আল রাজীব।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ৫ সেপ্টেম্বর গোয়ালন্দের নুরাল পাগলার দরবারে বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এ সময় মিজানুর রহমান জেনারেটর চুরি করে নিয়ে যাচ্ছেন—এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরে ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে মিজানুরকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়। মিজানুরকে দরবারে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, লাশ পোড়ানো ও হত্যার ঘটনায় হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁকে রাজবাড়ীর আদালতে সোপর্দ করার প্রস্তুতি চলছে।

আরও পড়ুননুরাল পাগলার দরবারে হামলায় হত্যা মামলা, মসজিদের ইমামসহ চারজন গ্রেপ্তার০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ওই দিন পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় উপপরিদর্শক (এসআই) সেলিম মোল্লা বাদী হয়ে প্রায় তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করে ৬ সেপ্টেম্বর মামলা করেন। এই মামলায় মোট ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদিকে দরবারে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, হত্যা ও কবর থেকে লাশ তুলে মহাসড়কে পুড়িয়ে ফেলার ঘটনায় নিহত ভক্ত রাসেল মোল্লার বাবা আজাদ মোল্লা বাদী হয়ে ৮ সেপ্টেম্বর মামলা করেন। ওই মামলায় সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় এখন পর্যন্ত মিজানুরসহ নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ