নেত্রকোনায় সীমান্তে ভারতীয় বুনো হাতির পাল, আতঙ্কে এলাকাবাসী
Published: 29th, April 2025 GMT
নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার সীমান্ত এলাকায় ভারত থেকে আসা বুনো হাতির পাল ঢুকে পড়েছে। গতকাল সোমবার রাত নয়টার দিকে উপজেলার রংছাতি ইউনিয়নের জাগিরপাড়া এলাকায় ৩০ থেকে ৩৫টি হাতি প্রবেশ করে। হাতির পায়ের নিচে পড়ে কাঁচা–পাকা বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কৃষকেরা জানিয়েছেন, প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী হাতির তাণ্ডবে জাগিরপাড়া এলাকা ছাড়াও পাশের হাতিবেড়, চন্দ্রডিঙ্গা, বেতগড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে স্থানীয় বাসিন্দারা ঢাক–ঢোল পিটিয়ে আগুন জ্বালিয়ে লোকালয়ে হাতির প্রবেশ ঠেকান।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গারো পাহাড় থেকে কয়েক বছর ধরে আমন ও বোরো ধানের মৌসুমে খাদ্যের সন্ধানে বুনো হাতির পাল কলমাকান্দা ও দুর্গাপুর সীমান্ত এলাকায় ঢুকে পড়ে। এসব হাতি ঘরবাড়ি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করে। দুই বছর আগে হাতির আঘাতে কলমাকান্দার রংছাতির বেতগড়া এলাকায় কৃষক মো.
জাগিরপাড়া গ্রামের কৃষক আবুল মিয়া জানান, ‘৮টি বাচ্চাসহ প্রায় ৩৫টি হাতি হঠাৎ করে পাহাড় থেকে নেমে আমাদের খেতে ঢুকে ফসলে তাণ্ডব চালায়। এতে আশপাশের গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে আমরা সবাই মিলে বাঁশি, ঢাক–ঢোল, টর্চলাইট, লাঠিসোঁটা ও আগুনের মশাল জ্বেলে প্রায় দুই ঘণ্টা চেষ্টার পর হাতির পালটিকে তাড়াতে সক্ষম হই।’
কৃষক তরিকুল মিয়া বলেন, ‘আমার প্রায় ২০০ শতক জমির ধান নষ্ট করে ফেলেছে। আমরা ফসল নিয়ে আতঙ্কে আছি। কারণ, দিনের বেলায় হাতি পাহাড়ের টিলায় অবস্থান করলেও রাতে দল বেঁধে লোকালয়ে নেমে এসে তাণ্ডব চালায়।’
ওই এলাকার কৃষক সুদীপ্ত হাজং বলেন, ‘গতকাল রাতের আঁধারে একদল ভারতীয় হাতি সীমান্ত অতিক্রম করে আমাদের এলাকায় নেমে আসে। মানুষ ও ঘরবাড়ির কোনো ক্ষতি না করলেও বোরোর ফসলি খেত নষ্ট করেছে। এসব হাতি একবার যে খেত লক্ষ্য করে, তা বিনষ্ট করবেই। হাতির আক্রমণ থেকে বাঁচতে আমরা সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
রংছাতি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান খান পাঠান বলেন, সীমান্ত এলাকায় সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে হাতির আক্রমণ। হাতির তাণ্ডবে এই এলাকার মানুষ দিশেহারা। দিনের বেলায় টিলায় থাকলেও রাত হলেই লোকালয়ে নেমে আসে। সীমান্তে হাতি সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাইযুল ওয়াসীমা নাহাত বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। তবে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কলম ক ন দ এল ক য় আতঙ ক
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য
দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।
আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।
লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।
আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।
কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।