গাজার উদ্দেশে ত্রাণ নিয়ে যাত্রা করা জাহাজে বোমা হামলা
Published: 2nd, May 2025 GMT
মানবিক সহায়তা নিয়ে ফিলিস্তিনের গাজার অভিমুখে থাকা একটি জাহাজে ড্রোন দিয়ে বোমা হামলা চালানো হয়েছে। মাল্টা উপকূলে আন্তর্জাতিক জলসীমায় এ হামলায় জাহাজটি বিকল হয়ে গেছে।
আজ শুক্রবার এক বিবৃতিতে ওই মানবিক সহায়তা আয়োজনকারী সংগঠন ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি) এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে। হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে সংগঠনটি বলছে, নিরস্ত্র বেসামরিক জাহাজটির সম্মুখভাগে সশস্ত্র ড্রোন দিয়ে দুইবার হামলা চালানো হয়েছে। এতে জাহাজটিতে আগুন ধরে যায় এবং এর কাঠামোয় বড় ধরনের ফাটল দেখা দেয়।
তবে এ বিষয়ে এখনো ইসরায়েল কোনো মন্তব্য করেনি।
ত্রাণবাহী জাহাজটি বর্তমানে মাল্টা উপকূল থেকে ১৪ নটিক্যাল মাইল (২৫ কিলোমিটার) দূরে অবস্থান করছে। জাহাজে গাজাবাসীর জন্য মানবিক সহায়তার পাশাপাশি অধিকারকর্মীরা ছিলেন। তাঁরা জানিয়েছেন, শুক্রবার ভোরে জাহাজের জেনারেটর লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। এতে সেটি বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে এবং ডুবে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের পোস্ট করা ছবি ও ভিডিওতে দেখা গেছে, জাহাজের ওপর আগুন জ্বলছে ও বিস্ফোরণ ঘটছে।
জাহাজে ১২ জন নাবিক ও ৪ জন বেসামরিক নাগরিক ছিলেন জানিয়ে মাল্টা সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তাঁরা সবাই সুস্থ আছেন। জাহাজটিকে সহায়তা করতে কাছাকাছি থাকা একটি টাগ বোটকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও মাল্টা সরকারের ওই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
অন্যদিকে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন জানিয়েছে, ২১টি দেশের অধিকারকর্মীরা জাহাজটিতে ছিলেন। ইসরায়েলের বেআইনিভাবে গাজা অবরোধ করে সেখানে হত্যাযজ্ঞ চালানোর প্রতিবাদ এবং গাজাবাসীর জীবন রক্ষার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে তাঁরা যাত্রা করেছিলেন।
ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘গাজায় চলমান অবরোধ এবং আন্তর্জাতিক জলসীমায় আমাদের বেসামরিক জাহাজে বোমা হামলাসহ আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের জবাব চাইতে ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতদের অবশ্যই তলব করতে হবে।’
যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গত মার্চের মাঝামাঝি থেকে গাজায় আবার সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। এরপর দুই মাস ধরে উপত্যকাটি কঠোরভাবে অবরোধ করেছে দেশটি। গাজায় তারা কোনো খাবার, জ্বালানি, ওষুধসহ জীবনরক্ষাকারী অন্যান্য জিনিসপত্রও নিতে দিচ্ছে না।
গাজায় মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংগঠনগুলো বলেছে, তারা এর মধ্যে তাদের মজুদ করা খাদ্যপণ্যের শেষভাগটাও বিতরণ করে ফেলেছে। ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত ফিলিস্তিনের এই উপত্যকার কর্মকর্তারা শুক্রবার বলেছেন, গাজায় দুর্গতদের খাবার সরবরাহ করা রান্নাঘরগুলো আগামী এক সপ্তাহ বা ১০ দিনের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাবে।
গাজা অবরোধ করে রাখার পেছনে যুক্তি হিসেবে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলে আসছেন, গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছালে তা হামাস সদস্যরা চুরি করে নিয়ে তাঁদের যোদ্ধাদের সরবরাহ করেন বা বিক্রি করে দেন। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে গাজায় বড় ধরনের ত্রাণ চুরি হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এই কাজে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা।
এর আগে ২০১০ সালেও তুরস্ক থেকে ত্রাণ নিয়ে গাজার উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন ফ্রিডম ফ্লোটিলার কর্মীরা। মাভি মারমারা নামের ওই জাহাজে একপর্যায়ে হামলা চালিয়েছিলেন ইসরায়েলি সেনারা। তাতে ১০ জন নিহত এবং ২৮ জন আহত হয়েছিলেন।
গত বছরের অক্টোবরে গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাসের সদস্যরা ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ঢুকে সশস্ত্র হামলা চালান। এতে প্রায় এক হাজার মানুষ নিহত হন। এরপর ওই দিন থেকে গাজায় নির্বিচার হামলা চালায় ইসরায়েল। মাঝে কিছুদিন যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও মার্চের মাঝামাঝিতে আবার হামলা শুরু করে ইসরায়েল। তাদের এই দফার হামলার অন্তত ২ হাজার ৩২৬ জন নিহত হয়েছেন, যাতে গাজায় মোট নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫২ হাজার ৪১৮ জনে পৌঁছেছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল জ হ জট অবর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
ইরান–ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলা রূপ নিতে পারে দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতে
ইরান–ইসরায়েল পাল্টাপাল্টি হামলা ঘিরে উত্তেজনা বেড়েছে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে তেহরান। একই হুমকি দিয়েছে ইসরায়েলও। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চলতে থাকলে তেহরানকে জ্বালিয়ে দেওয়া হবে। এমন পরিস্থিতিতে দুই দেশ দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকদের অনেকে।
এই সংঘাতের শুরু বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ইরানে ইসরায়েলের ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামের অভিযানের মধ্য দিয়ে। ওই রাতে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনায় হামলা চালানো হয়। বৃহস্পতিবার রাতের হামলার পর শুক্র ও শনিবারও ইরানের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে নিহত হন ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা, পরমাণুবিজ্ঞানীসহ ৭৮ জন। শনিবার রাতেও ইরানের বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলের হামলা চলছে।
ইসরায়েলের হামলার কড়া জবাব দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিসহ বিভিন্ন কর্মকর্তা। এরপর শুক্রবার রাতে ইসরায়েলের তেল আবিব ও জেরুজালেমে ক্ষেপণাস্ত্র এবং রকেট হামলা চালায় ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড কোর (আইআরজিসি)। এ হামলায় বিধ্বস্ত হয় বেশ কয়েকটি ভবন। নিহত হন তিন ইসরায়েলি। আহত হন অন্তত ৩৪ জন।
ইসরায়েলে ‘ট্রু প্রমিজ–৩’ নামে অভিযান চালিয়ে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ইরানের কর্মকর্তারা। পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে এক ইরানি কর্মকর্তা শনিবার দেশটির বার্তা সংস্থা ফারস নিউজকে বলেন, গত রাতে ইরানের চালানো সীমিত হামলার মধ্য দিয়ে ইসরায়েলকে মোকাবিলা শেষ হবে না। হামলা চলবে। আগ্রাসনকারীদের জন্য তা হবে খুবই পীড়াদায়ক। নিজেদের কাজের জন্য তারা অনুতপ্ত হবে।
ইসরায়েলের পাশাপাশি দেশটির মিত্রদেরও হুমকি দিয়েছে ইরান। শুক্রবার রাতে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে সহায়তা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের সামরিক ঘাঁটি এবং যুদ্ধজাহাজ রয়েছে। ইসরায়েলের মিত্র এই দেশগুলো চলমান সংঘাতে হস্তক্ষেপ করলে তাদেরও হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হবে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে ইরান সরকার।
তেহরানকে ‘জ্বালিয়ে দেওয়ার’ হুমকি
ইরান ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে গেলে তেহরানকে ‘জ্বালিয়ে দেওয়ার’ হুমকি দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। শনিবার এক বিবৃতিতে তিনি আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উদ্দেশে বলেছেন, খামেনি ইরানের নাগরিকদের জিম্মি করছেন। ইসরায়েলের জনগণের ক্ষতি হলে ইরানকে চড়া মূল্য দিতে হবে। খামেনি যদি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে থাকেন, তাহলে তেহরান ‘জ্বলবে’।
পরে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘আমরা আয়াতুল্লাহ সরকারের প্রতিটি স্থাপনা ও লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানব। (ইসরায়েলের হামলা) থেকে এত দিন তারা যা টের পেয়েছে, তা আগামী দিনগুলোতে যে হামলা চালানো হবে, তার তুলনায় কিছুই নয়।’ বর্তমানে ইসরায়েলি বাহিনী ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদনের সক্ষমতা ধ্বংস করছে বলে জানান তিনি।
এমন পরিস্থিতিতে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি সামরিক সংঘাত শুরু হতে পারে বলে মনে করছেন বিবিসির মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক সংবাদদাতা হুগো বাচেগা। তিনি বলেন, ইরানে চালানো হামলাকে দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতের সূচনা বলে ইতিমধ্যে উল্লেখ করেছেন ইসরায়েলের কর্মকর্তারা। এর অর্থ হলো তাঁরা ইরানে আরও লম্বা সময় ধরে হামলা চালাতে চান।
‘সবকিছু কাঁপছিল’
শুক্রবার রাতে ইসরায়েলে চালানো ইরানের হামলার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ট্রু প্রমিজ–৩’। এদিন রাতভর তেল আবিব ও জেরুজালেম লক্ষ্য করে শত শত ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরানের সামরিক বাহিনী। ইসরায়েলের অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস গতকাল জানিয়েছে, এই হামলায় এক নারীসহ তিন ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন। আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন অন্তত ৩৪ জন।
তেল আবিবে ইরানের হামলা শুরুর পর বিভিন্ন এলাকা থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু করেন। অনেকে ভূগর্ভস্থ আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটে যান। এমনই একজন চেন গাবিজোন। আল–জাজিরাকে তিনি বলেন, ‘ভূগর্ভস্থ কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়ার কয়েক মিনিট পর বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাই। সবকিছু কাঁপছিল। চারদিক ধোঁয়া ও ধুলায় ঢেকে যায়।’
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজ–এর খবরে বলা হয়েছে, ইরানের হামলায় তেল আবিবের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় একটি বহুতল ভবনের নিচের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া শহরের উপকণ্ঠে আরও নয়টি ভবন ধ্বংস হয়ে যায়। জেরুজালেমেও বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা যায়।
শুক্রবার রাতে ইরান দেড় শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজ। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর দাবি, এসব ক্ষেপণাস্ত্রের বেশির ভাগই আকাশে থাকতে প্রতিহত করা হয়েছে। একই সঙ্গে সংঘাত বৃদ্ধির শঙ্কায় লেবানন ও জর্ডান সীমান্তে সেনা মোতায়েন করেছে ইসরায়েল। আর পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত দেশটির বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
তেহরানের এক ভবনেই নিহত ৬০
বৃহস্পতিবার রাতের হামলায় তেহরান থেকে ২২৫ কিলোমিটার দূরে নাতাঞ্জ পরমাণু প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে শুক্রবার ও শনিবার ইরানের ফোর্ডো ও ইসপাহান পরমাণুকেন্দ্রে হামলা চালায় ইসরায়েল। তবে হামলার পর এসব পরমাণুকেন্দ্র থেকে তেজস্ক্রিয় পদার্থের বিকিরণ বৃদ্ধি পায়নি বলে জানিয়েছে বৈশ্বিক পারমাণবিক নজরদারি সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি (আইএইএ)।
বৃহস্পতিবার রাতের হামলায় প্রায় ২০০ যুদ্ধবিমান অংশ নিয়েছিল বলে জানায় ইসরায়েল। শুক্র ও শনিবারের হামলায়ও কয়েক ডজন যুদ্ধবিমান অংশ নেয় বলে জানিয়েছে তারা। ইরানের বেশ কিছু ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন কারখানায় হামলা চালানো হয়েছে। এ ছাড়া তেহরানের মেহরাবাদ বিমানবন্দরে যুদ্ধবিমান রাখার স্থানেও হামলা হয়েছে। বোমাবর্ষণ করা হয়েছে জানজান শহরের একটি সেনাঘাঁটিতে।
পরে শনিবার রাতে ইরানের দক্ষিণাঞ্চলের বুশেহর প্রদেশে সাউথ পার্স গ্যাসক্ষেত্রে ইসরায়েল বোমা হামলা চালায়। এতে গ্যাসক্ষেত্রটিতে আগুন ধরে যায়। পরে ইরান জানায়, তাদের দুটি গ্যাসক্ষেত্রে হামলা হয়েছে। শনিবার রাতে দেশটির বন্দর আব্বাসেও হামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে আল–জাজিরা।
ইসরায়েলের পক্ষ থেকে শনিবার জানানো হয়েছে, হামলা শুরুর পর থেকে ইরানের মোট ২০ জন সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে তারা। এর মধ্যে দেশটির সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল বাঘেরি ও আইআরজিসির প্রধান হোসেইন সালামি রয়েছেন। এ ছাড়া ৯ জন পরমাণুবিজ্ঞানীকে হত্যা করা হয়েছে।
জাতিসংঘে ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির সায়েদি শুক্রবার জানিয়েছেন, ইসরায়েলের হামলায় ইরানে ৭৮ জন নিহত হন। আহত হয়েছেন ৩২০ জনের বেশি। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই বেসামরিক লোকজন। এর মধ্যে তেহরানের একটি বহুতল আবাসিক ভবনে হামলায় ২০টি শিশুসহ প্রায় ৬০ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল।
পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যে শনিবার ইসরায়েলের তিনটি এফ–৩৫ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করেছে তেহরান। এসব যুদ্ধবিমানের দুই পাইলটকে আটক করা হয়েছে বলে ইরানের সেনাবাহিনীর বরাতে জানিয়েছে তেহরান টাইমস।
ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র পাঠিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র
সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই–এর খবরে বলা হয়েছে, ইরানে হামলার আগে ইসরায়েলকে গোপনে প্রায় ৩০০টি অত্যাধুনিক ‘হেলফায়ার’ ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুই মার্কিন কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন। ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের বিষয়টি ইঙ্গিত দেয় যে ইরানে ইসরায়েলের হামলার পরিকল্পনার বিষয়ে আগে থেকেই জানত যুক্তরাষ্ট্র।
যদিও ইসরায়েলের হামলার বিষয়টি আগে থেকে জানার কথা রয়টার্স, ফক্স নিউজসহ একাধিক গণমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ হামলায় মার্কিন বাহিনী ভূমিকা রাখেনি বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। তবে ইরানে হামলার আগে যুক্তরাষ্ট্র যে ইসরায়েলে বিপুল হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করেছে, সে খবর এত দিন প্রকাশ করা হয়নি।
হেলফায়ার হলো লেজারনিয়ন্ত্রিত আকাশ থেকে ভূমিতে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার জন্য এই ক্ষেপণাস্ত্র উপযুক্ত নয়। তবে বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুলভাবে আঘাত হানার জন্য এটি বেশ কার্যকর। যুক্তরাষ্ট্রের এক জ্যেষ্ঠ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে বলেন, হেলফায়ার ব্যবহারের নির্দিষ্ট সময় ও ক্ষেত্র আছে। এগুলো ইসরায়েলের জন্য বেশ কার্যকর।
ইরানের পারমাণবিক প্রকল্প নিয়ে রোববার তেহরানের সঙ্গে ওয়াশিংটনের আলোচনায় বসার কথা ছিল। ইসরায়েলের হামলার পর তা স্থগিত করেছে ইরান। এ হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দোষারোপ করে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাকাই বলেছেন, ‘একদিকে আপনি আলোচনার দাবি করবেন, অন্যদিকে জায়নবাদী শাসকগোষ্ঠীকে ইরানের ভূখণ্ডে হামলা চালাতে দেবেন, তা হতে পারে না।’
‘ইরানে শাসক পরিবর্তনের আশায় ইসরায়েল’
ইরান-ইসরায়েলের শত্রুতা বহু পুরোনো। ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লবের সময় দেশটির পশ্চিমাপন্থী নেতা মোহাম্মদ রেজা শাহ ক্ষমতাচ্যুত হন। তিনি ইসরায়েলকে তেহরানের বন্ধু মনে করতেন। তবে এরপর ক্ষমতায় আসা শাসকেরা ইসরায়েলকে শত্রু হিসেবে বিবেচনা করে আসছেন। ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় সর্বশেষ সংঘাত শুরুর পর দুই দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে ইরানে হামলার মাধ্যমে ইসরায়েল নিজেদের একটি উদ্দেশ্য পূরণের আশা করছে বলে মনে করেন অস্ট্রেলিয়ার ডেকিন ইউনিভার্সিটির মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক রাজনীতির অধ্যাপক শাহরাম আকবারজাদেহ। সেটি হলো ইরানের শাসক পরিবর্তন। তিনি বলেন, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাত শুরু হলে ইসরায়েলকে নিরাপত্তা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সুযোগই কাজে লাগাতে চাইছেন। তিনি চাইছেন, যুক্তরাষ্ট্র যেন এই সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে এবং ইরানে শাসনব্যবস্থায় কোনো ধরনের পরিবর্তন আসে।
তবে ইরান ও ইসরায়েলের সংঘাত যেন আরও ভয়াবহ দিকে মোড় না নেয়, সে জন্য দুই পক্ষকেই সংযত থাকতে বলেছে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ। গত শুক্রবার নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকেও দুই দেশকে সংযত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। গতকাল পোপ চতুর্দশ লিও একই আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, কারও কখনোই অন্যের অস্তিত্বকে হুমকিতে ফেলা উচিত নয়।
এমন পরিস্থিতিতে ইরান–ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলা নিয়ে ফোনালাপ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। মধ্যপ্রাচ্যে এ উত্তেজনা কমানোর বিষয়ে ফোনালাপে একমত হয়েছেন সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারও। আর সৌদি যুবরাজের সঙ্গে ফোনালাপে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেছেন, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য ইসরায়েল সবচেয়ে বড় হুমকি।