মানবিক সহায়তা নিয়ে ফিলিস্তিনের গাজার অভিমুখে থাকা একটি জাহাজে ড্রোন দিয়ে বোমা হামলা চালানো হয়েছে। মাল্টা উপকূলে আন্তর্জাতিক জলসীমায় এ হামলায় জাহাজটি বিকল হয়ে গেছে।

আজ শুক্রবার এক বিবৃতিতে ওই মানবিক সহায়তা আয়োজনকারী সংগঠন ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি) এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে। হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে সংগঠনটি বলছে, নিরস্ত্র বেসামরিক জাহাজটির সম্মুখভাগে সশস্ত্র ড্রোন দিয়ে দুইবার হামলা চালানো হয়েছে। এতে জাহাজটিতে আগুন ধরে যায় এবং এর কাঠামোয় বড় ধরনের ফাটল দেখা দেয়।

তবে এ বিষয়ে এখনো ইসরায়েল কোনো মন্তব্য করেনি।

ত্রাণবাহী জাহাজটি বর্তমানে মাল্টা উপকূল থেকে ১৪ নটিক্যাল মাইল (২৫ কিলোমিটার) দূরে অবস্থান করছে। জাহাজে গাজাবাসীর জন্য মানবিক সহায়তার পাশাপাশি অধিকারকর্মীরা ছিলেন। তাঁরা জানিয়েছেন, শুক্রবার ভোরে জাহাজের জেনারেটর লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। এতে সেটি বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে এবং ডুবে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের পোস্ট করা ছবি ও ভিডিওতে দেখা গেছে, জাহাজের ওপর আগুন জ্বলছে ও বিস্ফোরণ ঘটছে।

জাহাজে ১২ জন নাবিক ও ৪ জন বেসামরিক নাগরিক ছিলেন জানিয়ে মাল্টা সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তাঁরা সবাই সুস্থ আছেন। জাহাজটিকে সহায়তা করতে কাছাকাছি থাকা একটি টাগ বোটকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও মাল্টা সরকারের ওই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

অন্যদিকে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন জানিয়েছে, ২১টি দেশের অধিকারকর্মীরা জাহাজটিতে ছিলেন। ইসরায়েলের বেআইনিভাবে গাজা অবরোধ করে সেখানে হত্যাযজ্ঞ চালানোর প্রতিবাদ এবং গাজাবাসীর জীবন রক্ষার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে তাঁরা যাত্রা করেছিলেন।

ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘গাজায় চলমান অবরোধ এবং আন্তর্জাতিক জলসীমায় আমাদের বেসামরিক জাহাজে বোমা হামলাসহ আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের জবাব চাইতে ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতদের অবশ্যই তলব করতে হবে।’

যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গত মার্চের মাঝামাঝি থেকে গাজায় আবার সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। এরপর দুই মাস ধরে উপত্যকাটি কঠোরভাবে অবরোধ করেছে দেশটি। গাজায় তারা কোনো খাবার, জ্বালানি, ওষুধসহ জীবনরক্ষাকারী অন্যান্য জিনিসপত্রও নিতে দিচ্ছে না।

গাজায় মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংগঠনগুলো বলেছে, তারা এর মধ্যে তাদের মজুদ করা খাদ্যপণ্যের শেষভাগটাও বিতরণ করে ফেলেছে। ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত ফিলিস্তিনের এই উপত্যকার কর্মকর্তারা শুক্রবার বলেছেন, গাজায় দুর্গতদের খাবার সরবরাহ করা রান্নাঘরগুলো আগামী এক সপ্তাহ বা ১০ দিনের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাবে।

গাজা অবরোধ করে রাখার পেছনে যুক্তি হিসেবে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলে আসছেন, গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছালে তা হামাস সদস্যরা চুরি করে নিয়ে তাঁদের যোদ্ধাদের সরবরাহ করেন বা বিক্রি করে দেন। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে গাজায় বড় ধরনের ত্রাণ চুরি হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এই কাজে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা।

এর আগে ২০১০ সালেও তুরস্ক থেকে ত্রাণ নিয়ে গাজার উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন ফ্রিডম ফ্লোটিলার কর্মীরা। মাভি মারমারা নামের ওই জাহাজে একপর্যায়ে হামলা চালিয়েছিলেন ইসরায়েলি সেনারা। তাতে ১০ জন নিহত এবং ২৮ জন আহত হয়েছিলেন।

গত বছরের অক্টোবরে গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাসের সদস্যরা ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ঢুকে সশস্ত্র হামলা চালান। এতে প্রায় এক হাজার মানুষ নিহত হন। এরপর ওই দিন থেকে গাজায় নির্বিচার হামলা চালায় ইসরায়েল। মাঝে কিছুদিন যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও মার্চের মাঝামাঝিতে আবার হামলা শুরু করে ইসরায়েল। তাদের এই দফার হামলার অন্তত ২ হাজার ৩২৬ জন নিহত হয়েছেন, যাতে গাজায় মোট নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫২ হাজার ৪১৮ জনে পৌঁছেছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল জ হ জট অবর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

আয় বেড়েছে ৩৫২ কোটি টাকা, তবু মুনাফা কমল ৯০ কোটি

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ কোম্পানি রেনাটার মুনাফা কমে গেছে। কোম্পানিটি চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই–মার্চ) মুনাফা করেছে ১৬৮ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের চেয়ে কোম্পানিটির মুনাফা কমেছে ৯০ কোটি টাকা বা ৩৫ শতাংশ। ২০২৩–২৪ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে রেনাটা ২৫৮ কোটি টাকা মুনাফা করেছিল।

গতকাল বুধবার কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সভায় চলতি অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়। সেই প্রতিবেদন থেকে কোম্পানিটির মুনাফা কমে যাওয়ার এ তথ্য পাওয়া গেছে। যদিও এই সময়ে কোম্পানিটির ব্যবসা বেড়েছে।

আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, রেনাটা গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছররের মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে ৩ হাজার ১৩৩ কোটি টাকার ব্যবসা বা আয় করেছে। এই আয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৫২ কোটি টাকা বা প্রায় ১৩ শতাংশ বেশি। ২০২৩–২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে কোম্পানিটির তাদের ব্যবসা থেকে আয় করেছিল ২ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা। আয় যতটা বেড়েছে তার চেয়ে বেশি হারে বেড়েছে উৎপাদন খরচ। রেনাটার চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ৩ হাজার ১৩৩ কোটি টাকার ব্যবসা বা আয়ের বিপরীতে উৎপাদন খরচ হয়েছে ১ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা। তার আগের অর্থবছরের একই সময়ে ২ হাজার ৭৮১ কোটি টাকার আয়ের বিপরীতে কোম্পানিটির উৎপাদন খরচ ছিল ১ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির উৎপাদন খরচ বেড়েছে ৩১৪ টাকা বা ২১ শতাংশ।

এ ছাড়া কোম্পানির পণ্য বিক্রি, উৎপাদিত পণ্য সরবরাহ এবং ব্যাংকঋণের সুদ বাদ খরচও আগের বছরের চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে রেনাটার পণ্য বিক্রি ও সরবরাহ বাবদ খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৩৪ কোটি টাকায়। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৭০৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে এই খাতে কোম্পানিটির খরচ বেড়েছে ১২৫ কোটি টাকা বা ১৮ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে রেনাটার সুদ বাবদ খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৫ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৮০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ঋণের সুদ বাবদ কোম্পানিটির খরচ বেড়েছে ৪৫ কোটি টাকা বা ৫৬ শতাংশের বেশি।

কোম্পানি–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পণ্য বিক্রি, সরবরাহ ও ঋণের সুদ বাবদ খরচ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়ে যাওয়ায় কোম্পানিটির মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ জন্য মুনাফা আগের বছরের চেয়ে কমে গেছে।

চলতি অর্থবছরের ৯ মাসের পাশাপাশি চলতি বছরের প্রথম তিন মাসের আয়–ব্যয়ের হিসাবও আলাদাভাবে প্রকাশ করেছে রেনাটা। তাতে দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে কোম্পানিটি ১ হাজার ৬৫ কোটি টাকার ব্যবসা করে মুনাফা করেছে ৫৬ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে কোম্পানিটি ৯২১ কোটি টাকার ব্যবসা করে ৭২ কোটি টাকার মুনাফা করেছিল।

রেনাটা লিমিটেড শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত পুরোনো কোম্পানিগুলোর একটি। এটি ১৯৭৯ সালে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত হয়। সেই হিসাবে এটি শেয়ারবাজারে ৪৬ বছরের পুরোনো একটি কোম্পানি। ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানি হিসেবে এটি শেয়ারবাজারে ‘এ’ শ্রেণিভুক্ত। সর্বশেষ গত জুনে সমাপ্ত অর্থবছর শেষে কোম্পানিটি শেয়ারধারীদের ৯২ শতাংশ বা শেয়ারপ্রতি ৯ টাকা ২০ পয়সা লভ্যাংশ দিয়েছে। ঢাকার বাজারে গতকাল দিন শেষে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ৪৯১ টাকা। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে কোম্পানিটি যে মুনাফা করেছে তাতে বাজারে এটির শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত বা পিই রেশিও দাঁড়িয়েছে ২৫–এ। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, শেয়ারবাজারে যে কোম্পানির পিই রেশিও যত কম সেই কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ তত বেশি লাভজনক বা কম ঝুঁকিপূর্ণ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বোরো ধানে নামছে চালের দর উত্তাপ সবজির বাজারে
  • বোরো ধানে নামছে চালের দর, উত্তাপ সবজির বাজারে
  • ১ হাজার ২০০ মাইল পথ পাড়ি দিল চালকবিহীন ট্রাক
  • কমেছে চালের দাম
  • দাম কমেছে চালের, বেড়েছে সবজি-মাছ-মুরগির
  • ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের ফল গড়াবে বহুদূরে
  • আয় বেড়েছে ৩৫২ কোটি টাকা, তবু মুনাফা কমল ৯০ কোটি
  • নিষেধাজ্ঞা শেষে ইলিশ ধরা শুরু, চাঁদপুরের মাছঘাটে কর্মব্যস্ততা
  • আদানির সঙ্গে চুক্তি ক‌রে শুল্ক ফাঁকি