সপ্তাহজুড়ে থাকবে বজ্র-বৃষ্টি, কিছুটা বাড়বে তাপ
Published: 3rd, May 2025 GMT
দেশের সব বিভাগে চলতি সপ্তাহে বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শনিবার রাতে আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হকের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
রোববার থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জেলায় দমকা হাওয়া, বিদ্যুৎ চমকানো, বজ্রপাত ও বৃষ্টিসহ বজ্রপাত হতে পারে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, আগামী কয়েক দিন সারা দেশে বিরতি দিয়ে বৃষ্টি হতে পারে। সেটা ৮ মে পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। আজ দুপুরে এক স্থানে বৃষ্টি আবার বিকেলে অন্য স্থানে বৃষ্টি, এমনটা হতে পারে। তবে ৮ ও ৯ মে থেকে বৃষ্টি কমে গিয়ে দেশে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এ সময় দেশের আকাশ মেঘলা থাকার সম্ভাবনা বেশি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের দৈনিক বুলেটিনের তথ্যমতে, গত শুক্রবার সর্বোচ্চ ৫৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে ফেনীতে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলায়। সর্বোচ্চ ৩৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল রাজশাহীর বাঘাবাড়িতে। ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে সেটাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলা হয়।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর ইরানে ক্ষোভ, কট্টরপন্থিরা চায় প্রতিশোধ
ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান সংঘাতের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে ইরানের প্রধান পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে বোমা হামলার পর দেশ ও প্রবাসের ইরানিরা দ্রুত পাল্টে যাওয়া ঘটনাপ্রবাহ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন ও প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন।
রবিবার (২২ জুন) ভোরে যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ কৌশলগত বোমারু বিমান থেকে ফেলা বাঙ্কার-বাষ্টার বোমা এবং নৌপ্ল্যাটফর্ম থেকে উৎক্ষেপণকৃত টমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ইরানের তিনটি প্রধান পারমাণবিক স্থাপনা ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহানে আঘাত করে।
ট্রাম্প দাবি করেছেন, এসব পারমাণবিক স্থাপনা ‘সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে’, যদিও এই দাবির পক্ষে এখনো কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি।
আরো পড়ুন:
‘অপেক্ষা ও পর্যবেক্ষণে’ ইরানের মার্কিন হামলার সম্ভাব্য জবাব
আলজাজিরার বিশ্লেষণ
ইরানে হামলার জন্য ট্রাম্পকে অভিশংসনের মুখোমুখি হতে হবে কি?
ইরানের কর্তৃপক্ষ কয়েক ঘণ্টা পর হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে। তবে তেহরান জানায়, কোনো তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়েনি। আন্তর্জাতিক আনবিক শক্তি সংস্থাও (আইএইএ) নিশ্চিত করেছে, স্থাপনাগুলোর বাইরে কোনো তেজস্ক্রিয় দূষণ হয়নি।
ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এ হামলার প্রভাবকে খাটো করে দেখানোর চেষ্টা করছে। ইরান সরকার-চালিত বার্তা সংস্থা আইআরএনএ ফোরদোর কাছাকাছি এলাকা থেকে এক প্রতিবেদনে জানায়, সেখানে শুধু সামান্য ধোঁয়া দেখা গেছে; যেটি সম্ভবত বিমান প্রতিরক্ষা স্থাপনার জায়গা এবং জরুরি সেবাদানকারী বাহিনীর কোনো বড় ধরনের তৎপরতা চোখে পড়েনি। ফোরদোকে ইরানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং দুর্গম পারমাণবিক স্থাপনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
রবিবার (২২ জুন) সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া স্যাটেলাইট চিত্রগুলোতে ফোরদোতে সম্ভাব্য হামলার চিহ্ন দেখা যায়। ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল জিবিইউ-৫৭ বোমাগুলো মাটির গভীরে ঢুকে বিস্ফোরিত হয়েছে, যার লক্ষ্য ছিল পাহাড়ের নিচে অবস্থিত ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস করা।
ইরানের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রধান পীর হোসেইন কলিভান্দ জানিয়েছেন, এই হামলায় কোনো প্রাণহানির তথ্য নেই।
ছবিতে আরো দেখা যায়, হামলার কয়েক দিন আগে থেকেই ফোরদোর আশপাশে ট্রাক ও বুলডোজারের ব্যাপক চলাচল ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের হামলা প্রত্যাশা করে ইরান সেখানকার সরঞ্জাম ও পারমাণবিক উপাদান সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিল।
পারমাণবিক স্থাপনাকে রক্ষা করতে ফোরদোর প্রবেশ টানেলগুলোর মুখে মাটি দিয়ে ভরাট করার জন্য ভারী যন্ত্রপাতিও মোতায়েন করা হয়েছিল, যাতে আগত বোমাগুলোর ক্ষয়ক্ষতি সীমিত রাখা যায়।
তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যাযের সম্মেলনে যোগ দিয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি জানান, তেহরানের সামরিক প্রতিক্রিয়া অবধারিত।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমার দেশ আক্রান্ত হয়েছে এবং আমাদের প্রতিক্রিয়া জানাতেই হবে। আমাদের ধৈর্য ধরে চলতে হবে এবং এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একটি তুলনামূলক জবাব দিতে হবে। কেবল এই পদক্ষেপগুলো বন্ধ হলে তবেই আমরা কূটনৈতিক পথ এবং আলোচনার পুনরায় শুরু নিয়ে সিদ্ধান্ত নেব।”
এর আগে গত সপ্তাহে একটি অজ্ঞাত স্থান থেকে টেলিভিশনে প্রচারিত বার্তায় ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেই হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, “যদি যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি এই যুদ্ধে জড়ায়, তবে তার জন্য তা মারাত্মক ক্ষতির কারণ হবে।”
তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র যে ক্ষতির মুখে পড়বে, তা ইরানের মুখোমুখি হওয়া ক্ষতির চেয়ে অনেক বেশি হবে। এবং এই ক্ষতি হবে চিরস্থায়ী।”
ইরানের কট্টরপন্থিদের প্রতিক্রিয়া: ‘কার্যকর পদক্ষেপ নাও’
যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর ইরানি রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ও বহু কঠোরপন্থি রাজনীতিবিদ প্রচণ্ড ক্ষোভে ফেটে পড়েন।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের চ্যানেল-৩ একটি মানচিত্র দেখায়, যেখানে সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, বাহরাইন ও ইরাকে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিগুলো চিহ্নিত করা হয়; যা ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের আওতাভুক্ত।
চ্যানেলটির উপস্থাপক মেহদি খানালিজাদে বলেন, “এখন শুধু ইরানি জাতি নয়, বরং পুরো অঞ্চলের মানুষ বুঝে গেছে যে সকল মার্কিন নাগরিক ও সামরিক সদস্য এখন বৈধ লক্ষ্যবস্তু। আমরা আলোচনা চালাচ্ছিলাম, কূটনৈতিক পথে অগ্রসর হচ্ছিলাম কিন্তু তোমরা রক্তপাত বেছে নিয়েছো। ওভাল অফিসে বসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এখন ৫০ হাজার মার্কিন সেনার কফিন গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।”
অন্য এক উপস্থাপক আমির হোসেইন তাহমাসেবি, যিনি গত সপ্তাহে ইসরায়েলি হামলার পর তেহরানের উত্তরে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবন থেকে একটি চ্যালেঞ্জিং ভিডিও প্রকাশ করেছিলেন, তিনি বলেন, “আমি ট্রাম্পের ওপর থু থু দিই এবং তার ওপরও, যে তাকে শান্তির প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করে।”
খামেনি-নিযুক্ত কট্টরপন্থি দৈনিক কেহান-এর প্রধান সম্পাদক হোসেইন শরিয়তমাদারি লিখেছেন, “এখন পালা আমাদের; প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে বাহরাইনে মার্কিন নৌবাহিনীর ওপর অবিলম্বে ক্ষেপণাস্ত্র বর্ষণ করতে হবে।”
তিনি আবার তার পুরোনো দাবি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ইরানের উচিত কৌশলগত হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেওয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির জাহাজগুলোর জন্য প্রবেশাধিকার অস্বীকার করা।
ইরানি পার্লামেন্টের অন্যতম কঠোরপন্থি সদস্য জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হামিদ রেসায়ি আরো একধাপ এগিয়ে বলেছেন, “ইরানের উচিত সৌদি আরবে মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে হামলা চালানো।”
যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তেহরান ও রিয়াদের মধ্যে সম্পর্ক অনেকটাই উষ্ণ হয়েছে।
ইরানে অধিকাংশ নাগরিক এখনো রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত ইন্টারনেট বিধিনিষেধের কারণে অনলাইনে যেতে পারছেন না। তবে যারা প্রক্সি সংযোগের মাধ্যমে অনলাইনে যেতে সক্ষম হয়েছেন, তারা যুদ্ধ নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন।
এক্সে এক ইরানি লিখেছেন, “ত্রিশ বছরের তেলের অর্থ আর ত্রিশ বছরের অর্থনৈতিক সুযোগ, যা কোটি কোটি মানুষকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো উন্নত নাগরিক করে তুলতে পারত, তা এখন তিনটি গভীর গর্তে পরিণত হয়েছে (ইঙ্গিত ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায়)।
আরেকজন ব্যঙ্গ করে লিখেছেন, “ট্রাম্প বলেন, ‘আমি শুধু পৃথিবীর সবচেয়ে ভারী বোমা ফেলে দিই, এরপর সব শান্তির হয়ে যাবে।’”
দুইবারের অস্কারজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাতা আসগর ফারহাদি ইনস্টাগ্রামে ইরানের জাতীয় গর্ব দামাভান্দ পর্বতের ছবি দিয়ে লিখেছেন, “দামাভান্দের মতো অটল, শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত ইরানের জন্য।”
বিদেশিদের প্রতি সমর্থনকারীদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি
যদিও কিছু বিদেশে বসবাসকারী এবং দেশীয় সরকার-বিরোধী ইরানি নাগরিক মনে করছেন, মার্কিন ও ইসরায়েলি হামলা হয়তো শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনে সহায়ক হতে পারে; এ নিয়ে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ও কর্তৃপক্ষ তীব্র নিন্দা ও হুমকি দিয়েছে।
প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ানের যোগাযোগ পরিষদের প্রধান এলিয়াস হাজরাতি শনিবার রাতে টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেন, “যারা ইসরায়েল ও আমেরিকার পক্ষে অবস্থান নেন, তারা সম্মানহীন বিরোধী; যারা নিজেদের দেশ বিক্রি করে দিচ্ছেন।”
ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানায়, “যারা ইচ্ছাকৃতভাবে বা অনিচ্ছাকৃতভাবে ইসরায়েলের সঙ্গে সহযোগিতা করেছেন, তারা রবিবারের মধ্যে আত্মসমর্পণ করুন নতুবা ‘যুদ্ধকালীন শত্রুপক্ষের সহযোগী ও ষড়যন্ত্রকারী’ হিসেবে সর্বোচ্চ শাস্তির মুখোমুখি হবেন।”
যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইরান বেশ কয়েকজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে, যাদের মধ্যে রবিবার সকালে একজনকে ‘ইসরায়েলের জন্য গুপ্তচরবৃত্তির’ অভিযোগে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা/রাসেল