Prothomalo:
2025-10-02@21:18:36 GMT

অভিনন্দন কিআ

Published: 2nd, October 2025 GMT

আমাদের অনেক ছোটবেলায় বাসায় একটা পত্রিকা বড় ভাই কিনে আনত। সেটার নাম ছিল শুকতারা। সম্ভবত কলকাতা থেকে প্রকাশিত বাচ্চাদের পত্রিকা। ছবি আর গল্পে ভরা বাচ্চাদের মজার একটা পত্রিকা। আমি তখন একবারেই ছোট। পড়তেও পারতাম না। তবে বড় ভাইবোনদের ওই পত্রিকা নিয়ে কাড়াকাড়ি দেখে বুঝতাম মজার কিছু আছে নিশ্চয়ই তাতে।

তারপর আরেকটু বড় হয়ে পেলাম কচি-কাঁচা, আরও পরে এল, মানে আমরা হাতে পেলাম টাপুর টুপুর। এগুলো আমাদের দেশের পত্রিকা। কী সুন্দর ছবি থাকত আর থাকত গল্প, ছড়া, মাঝেমধ্যে কমিকসও থাকত। ছবি আঁকতেন বিখ্যাত আর্টিস্টরা (তখন বুঝতাম না)—প্রাণেশ দাস, হাশেম খান, রফিকুন নবী। তখন আমি স্কুলে ভর্তি হয়ে পড়তে শিখে গেছি। অর্থাৎ আমার শৈশব কেটেছে এসব মজার পত্রিকা পড়ে পড়ে।

এখনকার বাচ্চারা ভাগ্যবানই বলব। তারা দিব্যি এক যুগ ধরে কিশোর আলো পাচ্ছে। এ রকম ঝকঝকে কাগজে ছাপা আগাগোড়া রঙিন ছবিতে ভরপুর একটা পত্রিকা প্রতি মাসে পাচ্ছে। সেখানে তাদের লেখাও ছাপা হচ্ছে.

..আর কী লাগে।

মাঝখানে কিশোর বাংলা নামে একটা ট্যাবলয়েড পত্রিকাও চলেছে অনেক দিন। বেশ জনপ্রিয় ছিল পত্রিকাটা। সম্ভবত সেটি সাপ্তাহিক ছিল। সেখানেই প্রথম ছাপা হয়েছিল দীপু নাম্বার টু।

টাপুর টুপুর (সম্ভবত চট্টগ্রাম থেকে এই পত্রিকাটা বের হতো) নিয়ে আমার অদ্ভুত একটা স্মৃতি আছে। তখন ১৯৭১ সাল। সারা দেশটাকে তছনছ করছে পাকিস্তানি সেনারা। আমাদের বাসা লুট হয়ে গেছে। আমরা ভাইবোনেরা মাকে নিয়ে নৌকায় করে অন্য একটা গ্রামে পালিয়ে যাচ্ছিলাম। যেতে হচ্ছে ছোট ছোট খাল–বিল ধরে। নদীতে যাওয়া যাচ্ছে না। কারণ, গানবোটের ভয়, মাঝিরা নদীতে যাবেন না।

বৃষ্টি শুরু হয়েছে। হঠাৎ দেখি একটা খালের ধারে অনেক বইপত্র পানিতে ভাসছে। আমার কেন যেন মনে হলো এগুলো নিশ্চয়ই আমাদের বাসার লুট হওয়া বইগুলো। তারপরই দেখি একটা টাপুর টুপুর ভাসছে। তার ঝকঝকে রঙিন প্রচ্ছদটার ওপর টুপটাপ করে বৃষ্টি হচ্ছে। আহা, আমার যে কী কষ্ট হলো!

তবে এখনকার বাচ্চারা ভাগ্যবানই বলব। তারা দিব্যি এক যুগ ধরে কিশোর আলো পাচ্ছে। এ রকম ঝকঝকে কাগজে ছাপা আগাগোড়া রঙিন ছবিতে ভরপুর একটা পত্রিকা প্রতি মাসে পাচ্ছে। সেখানে তাদের লেখাও ছাপা হচ্ছে...আর কী লাগে।

কিশোর আলোর এক যুগ পূর্তিতে একটা গল্প শেয়ার করা যেতে পারে। আমার বাসায় একটা বাচ্চা মাঝেমধ্যে আসত। সে নাকি মহাপড়ুয়া। ক্লাস টুতে পড়ে। আমার কাছে আসার কারণ, গল্পের বই লাগবে তার। আমিও তাকে বেছে বেছে বাচ্চাদের বই পড়তে দিতাম। একদিন নতুন কোনো বাচ্চাদের বই না পেয়ে একটা কিশোর আলো দিলাম। তার ভ্রু কুঁচকে গেল।

‘এটা তো কিশোর আলো।’

‘হ্যাঁ।’

‘কিশোরদের পত্রিকা।’

‘হ্যাঁ।’

‘আমি তো কিশোর না। মা বলে আমি শিশু।’

‘এটা শিশু–কিশোর সবার পত্রিকা। চাইলে বড়রাও পড়তে পারে।’

‘বড়রাও পড়তে পারে?’ সে বেশ অবাক হলো বলে মনে হলো।

‘হ্যাঁ, কেন? জানো না বড়দের মধ্যে কিন্তু শিশুরাও থাকে।’

‘বুঝেছি।’ সে গম্ভীর হয়ে মাথা নাড়ে।

‘কী বুঝেছ?’

‘এ জন্যই বাবা পাবজি খেলে...’

আমি আর কী বলব। তার গুরুগম্ভীর মন্তব্যের পর আমি আর কিছু বলিনি। তবে অনেক দিন হলো সে আর আসে না বই নিতে। একদিন পথে তার মায়ের সঙ্গে দেখা। তার কথা জিজ্ঞেস করতেই তিনি জানালেন, সে নাকি এখন নিজেই কিশোর আলো কিনে পড়ে। বই পড়া তো আছেই; পাশাপাশি এখন রীতিমতো গল্প লেখা শুরু করেছে কিশোর আলোর জন্য। কে জানে হঠাৎ হয়তো একদিন দেখব কিশোর আলোতে তার গল্প ছাপা হয়েছে। হতেই পারে। কিশোর আলো তো তাদেরই পত্রিকা। এক যুগ পূর্তিতে কিআকে অভিনন্দন।

আহসান হাবীব লেখক ও উন্মাদ পত্রিকার সম্পাদক

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক শ র আল এক য গ আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

অভিনন্দন কিআ

আমাদের অনেক ছোটবেলায় বাসায় একটা পত্রিকা বড় ভাই কিনে আনত। সেটার নাম ছিল শুকতারা। সম্ভবত কলকাতা থেকে প্রকাশিত বাচ্চাদের পত্রিকা। ছবি আর গল্পে ভরা বাচ্চাদের মজার একটা পত্রিকা। আমি তখন একবারেই ছোট। পড়তেও পারতাম না। তবে বড় ভাইবোনদের ওই পত্রিকা নিয়ে কাড়াকাড়ি দেখে বুঝতাম মজার কিছু আছে নিশ্চয়ই তাতে।

তারপর আরেকটু বড় হয়ে পেলাম কচি-কাঁচা, আরও পরে এল, মানে আমরা হাতে পেলাম টাপুর টুপুর। এগুলো আমাদের দেশের পত্রিকা। কী সুন্দর ছবি থাকত আর থাকত গল্প, ছড়া, মাঝেমধ্যে কমিকসও থাকত। ছবি আঁকতেন বিখ্যাত আর্টিস্টরা (তখন বুঝতাম না)—প্রাণেশ দাস, হাশেম খান, রফিকুন নবী। তখন আমি স্কুলে ভর্তি হয়ে পড়তে শিখে গেছি। অর্থাৎ আমার শৈশব কেটেছে এসব মজার পত্রিকা পড়ে পড়ে।

এখনকার বাচ্চারা ভাগ্যবানই বলব। তারা দিব্যি এক যুগ ধরে কিশোর আলো পাচ্ছে। এ রকম ঝকঝকে কাগজে ছাপা আগাগোড়া রঙিন ছবিতে ভরপুর একটা পত্রিকা প্রতি মাসে পাচ্ছে। সেখানে তাদের লেখাও ছাপা হচ্ছে...আর কী লাগে।

মাঝখানে কিশোর বাংলা নামে একটা ট্যাবলয়েড পত্রিকাও চলেছে অনেক দিন। বেশ জনপ্রিয় ছিল পত্রিকাটা। সম্ভবত সেটি সাপ্তাহিক ছিল। সেখানেই প্রথম ছাপা হয়েছিল দীপু নাম্বার টু।

টাপুর টুপুর (সম্ভবত চট্টগ্রাম থেকে এই পত্রিকাটা বের হতো) নিয়ে আমার অদ্ভুত একটা স্মৃতি আছে। তখন ১৯৭১ সাল। সারা দেশটাকে তছনছ করছে পাকিস্তানি সেনারা। আমাদের বাসা লুট হয়ে গেছে। আমরা ভাইবোনেরা মাকে নিয়ে নৌকায় করে অন্য একটা গ্রামে পালিয়ে যাচ্ছিলাম। যেতে হচ্ছে ছোট ছোট খাল–বিল ধরে। নদীতে যাওয়া যাচ্ছে না। কারণ, গানবোটের ভয়, মাঝিরা নদীতে যাবেন না।

বৃষ্টি শুরু হয়েছে। হঠাৎ দেখি একটা খালের ধারে অনেক বইপত্র পানিতে ভাসছে। আমার কেন যেন মনে হলো এগুলো নিশ্চয়ই আমাদের বাসার লুট হওয়া বইগুলো। তারপরই দেখি একটা টাপুর টুপুর ভাসছে। তার ঝকঝকে রঙিন প্রচ্ছদটার ওপর টুপটাপ করে বৃষ্টি হচ্ছে। আহা, আমার যে কী কষ্ট হলো!

তবে এখনকার বাচ্চারা ভাগ্যবানই বলব। তারা দিব্যি এক যুগ ধরে কিশোর আলো পাচ্ছে। এ রকম ঝকঝকে কাগজে ছাপা আগাগোড়া রঙিন ছবিতে ভরপুর একটা পত্রিকা প্রতি মাসে পাচ্ছে। সেখানে তাদের লেখাও ছাপা হচ্ছে...আর কী লাগে।

কিশোর আলোর এক যুগ পূর্তিতে একটা গল্প শেয়ার করা যেতে পারে। আমার বাসায় একটা বাচ্চা মাঝেমধ্যে আসত। সে নাকি মহাপড়ুয়া। ক্লাস টুতে পড়ে। আমার কাছে আসার কারণ, গল্পের বই লাগবে তার। আমিও তাকে বেছে বেছে বাচ্চাদের বই পড়তে দিতাম। একদিন নতুন কোনো বাচ্চাদের বই না পেয়ে একটা কিশোর আলো দিলাম। তার ভ্রু কুঁচকে গেল।

‘এটা তো কিশোর আলো।’

‘হ্যাঁ।’

‘কিশোরদের পত্রিকা।’

‘হ্যাঁ।’

‘আমি তো কিশোর না। মা বলে আমি শিশু।’

‘এটা শিশু–কিশোর সবার পত্রিকা। চাইলে বড়রাও পড়তে পারে।’

‘বড়রাও পড়তে পারে?’ সে বেশ অবাক হলো বলে মনে হলো।

‘হ্যাঁ, কেন? জানো না বড়দের মধ্যে কিন্তু শিশুরাও থাকে।’

‘বুঝেছি।’ সে গম্ভীর হয়ে মাথা নাড়ে।

‘কী বুঝেছ?’

‘এ জন্যই বাবা পাবজি খেলে...’

আমি আর কী বলব। তার গুরুগম্ভীর মন্তব্যের পর আমি আর কিছু বলিনি। তবে অনেক দিন হলো সে আর আসে না বই নিতে। একদিন পথে তার মায়ের সঙ্গে দেখা। তার কথা জিজ্ঞেস করতেই তিনি জানালেন, সে নাকি এখন নিজেই কিশোর আলো কিনে পড়ে। বই পড়া তো আছেই; পাশাপাশি এখন রীতিমতো গল্প লেখা শুরু করেছে কিশোর আলোর জন্য। কে জানে হঠাৎ হয়তো একদিন দেখব কিশোর আলোতে তার গল্প ছাপা হয়েছে। হতেই পারে। কিশোর আলো তো তাদেরই পত্রিকা। এক যুগ পূর্তিতে কিআকে অভিনন্দন।

আহসান হাবীব লেখক ও উন্মাদ পত্রিকার সম্পাদক

সম্পর্কিত নিবন্ধ