গাজায় অভিযান জোরদারে রিজার্ভ সৈন্যদের ডাকছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী
Published: 5th, May 2025 GMT
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে সামরিক অভিযান আরো জোরদার ও বিস্তারের জন্য হাজার হাজার রিজার্ভ সৈন্যকে ডাকতে শুরু করেছে। খবর বিবিসির।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, গাজায় আটক জিম্মিদের ফিরিয়ে আনা এবং হামাস যোদ্ধাদের পরাজিত করার লক্ষ্যে তারা ‘চাপ বৃদ্ধি’ করছে।
তবে সমালোচকরা বলছেন, যুদ্ধবিরতি ভেঙে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক সামরিক অভিযান বন্দীদের মুক্তির নিশ্চয়তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।
আরো পড়ুন:
গাজায় নিহতের সংখ্যা সাড়ে ৫২ হাজার ছাড়াল
গাজায় ইসরায়েলের বোমাবর্ষণ অব্যাহত, নিহত আরো অর্ধশতাধিক
নতুন পরিকল্পনার আওতায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা নতুন এলাকায় অভিযান চালাবে এবং মাটির উপরে এবং নিচে ‘সব অবকাঠামো ধ্বংস’ করবে।
ইসরায়েলি গণমাধ্যম জানিয়েছে, ইসরায়েলি নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা গাজায় অভিযান ফের সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছে। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আসন্ন সফর শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই অভিযান শুরু হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বর্তমানে হামাসের হাতে ৫৯ জন জিম্মি রয়েছেন, যাদের মধ্যে ২৪ জনের জীবিত বলে বিশ্বাস করা হয়। গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেঙে নতুন করে হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে আর কোনো ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তি পায়নি।
এই সময়ের মধ্যে গাজার বিশাল এলাকা দখলে নিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে আবারো লাখ লাখ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। একই সঙ্গে, গাজায় প্রায় দুই মাস ধরে চলছে মানবিক সহায়তার ওপর কঠোর অবরোধ।
খাদ্য, পানি এবং ওষুধের তীব্র ঘাটতির কথা জানিয়ে বিভিন্ন সংস্থা বলছে, এই অবরোধ একটি ‘ক্ষুধানীতি’, যা যুদ্ধাপরাধের সমান হতে পারে। তবে এই অভিযোগ ইসরায়েল প্রত্যাখ্যান করেছে।
সমালোচকরা বলছেন, ইসরায়েল সরকারের নতুন পরিকল্পনাটি ক্লান্ত রিজার্ভ সৈন্যদের ওপর আরো চাপ সৃষ্টি করবে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এরই মধ্যে অনেকের পাঁচ থেকে ছয়বার ডাক পড়েছে। একই সঙ্গে জিম্মিদের পরিবারের উদ্বেগ পুনর্নবীকরণ করবে, যারা সরকারকে হামাসের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এটিই জীবিতদের বাঁচানোর একমাত্র উপায়।
জিম্মিদের পরিবার এবং বিরোধী দলগুলো দীর্ঘদিন ধরেই ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে জিম্মিদের মুক্তির জন্য চুক্তির আলোচনাকে ভেস্তে দেওয়ার এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার অভিযোগ করে আসছেন। তবে, এই অভিযোগ নেতানিয়াহু অস্বীকার করেন।
যুদ্ধের প্রায় ১৯ মাস পরেও নেতানিয়াহু তার পরবর্তী পরিকল্পনা উপস্থাপন করেননি।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে, হাজার হাজার রিজার্ভ সৈন্য নেতানিয়াহুর সরকারকে যুদ্ধ বন্ধ করে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার জন্য একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়ে চিঠিতে স্বাক্ষর করেছে।
শনিবার সন্ধ্যায় ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। তেল আবিবে এক বন্দির মা চলমান যুদ্ধকে ‘অপ্রয়োজনীয়’ বলে অভিহিত করেন।
রবিবার গাজায় আরো দুজন ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ। একই দিনে, ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরের কাছে আঘাত হেনেছে। এতে অন্তত আটজন আহত হন। নেতানিয়াহু প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
গাজায় ইসরায়েলের নতুন পরিকল্পনার জবাবে হুতিরা বলেছে, তারা ইসরায়েলের বিমানবন্দর লক্ষ্য করে আরো হামলা চালাবে।
হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রবিবার রাতে জানিয়েছে, গাজায় গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় ৪০ ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরো ১২৫ জন আহত হয়েছেন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের দাবি, এই হামলায় প্রায় ১২০০ নিহত ও দুই শতাধিক ইসরায়েলিকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে গেছে হামাস যোদ্ধারা। এর জবাবে ওই দিনই গাজায় বিমান হামলা ও পরে স্থল অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
দীর্ঘ ১৫ মাস ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের পর যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় হামাস ও ইসরায়েল। তবে এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় ফের তীব্র হামলা শুরু করে ইসরায়েল।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু করার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৫২ হাজার ৫৩৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহতের মোট সংখ্যা ১ লাখ ১৮ হাজার ৪৯১ জনে পৌঁছেছে।
গাজায় ইসরায়েলি হামলা নিহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল য় ইসর য় ল ইসর য় ল র ত হয় ছ ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেডসহ ১৪০০০ শিক্ষক নিয়োগপ্রক্রিয়া চলছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা
চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুল ফিডিং কর্মসূচি শুরু হবে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। আজ সোমবার (৪ আগস্ট) দুপুরে রংপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে এক মতবিনিময় সভার আগে সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানান।
প্রাথমিক উপদেষ্টা বলেন, ‘আশা করি, সেপ্টেম্বর থেকে স্কুল ফিডিং কর্মসূচি শুরু হবে। প্রকল্পের ক্রয়প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যারা বাস্তবায়ন করবে, তাদের প্রশিক্ষণও চলছে। আগস্টের মধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করে সেপ্টেম্বরেই মাঠে নামা যাবে।’ তিনি আরও বলেন, দুটি প্রকল্পের মাধ্যমে দেশজুড়ে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। এর মধ্যে বড় প্রকল্পটি ১৫০টি উপজেলার সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চালু হবে, অন্য প্রকল্পটি কক্সবাজার ও বান্দরবানে কার্যকর হবে।
আরও পড়ুনঅষ্টম শ্রেণিতে আবারও বৃত্তি পরীক্ষা ফিরছে, আছে প্রশ্নও২৮ জুলাই ২০২৫বিধান রঞ্জন রায় বলেন, প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেড দেওয়াসহ প্রায় ১৪ হাজার শিক্ষক নিয়োগ এবং পিএসসির মাধ্যমে ৩ হাজার প্রধান শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। নিম্নবিত্ত শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির পাশাপাশি মানোন্নয়নে জোর দেওয়া হচ্ছে। বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পরীক্ষার বাইরে থাকলেও তাদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা চালু আছে।
সরকারি বিদ্যালয়ে সময় বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১ বছরে মাত্র ১৮০ দিন স্কুল থাকে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সংযোগ যদি না থাকে, তাহলে শেখার সুযোগ সীমিত হয়। তাই সহশিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে বিদ্যালয়কে শিশুদের আনন্দঘন পরিবেশে রূপান্তর করা হচ্ছে।
আরও পড়ুনপ্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার্থীর তথ্য এন্ট্রি যাচাই ও অনুমোদন করার জরুরি নির্দেশনা০৩ আগস্ট ২০২৫এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা, বিভাগীয় কমিশনার মো. শহীদুল ইসলাম, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামান এবং পরিচালক (নীতিনির্ধারণ ও কার্যক্রম) মোহাম্মদ কামরুল হাসান।
জেলা প্রশাসন ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের আয়োজনে ‘প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নের বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় সভা’ অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল। এতে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে বিভিন্ন অংশীজনের মতামত গ্রহণ করা হয়।
সভায় জেলার বিভিন্ন উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক এবং শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা অংশ নেন। তাঁরা মাঠপর্যায়ে প্রাথমিক শিক্ষার বাস্তব চিত্র তুলে ধরেন এবং বিভিন্ন সমস্যা, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন।
আরও পড়ুনপ্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা ২০২৫: প্রশ্নপত্রের কাঠামো ও নম্বর বিভাজন প্রকাশ৫ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনবিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ই-ভিসা চালু করল যুক্তরাজ্য৭ ঘণ্টা আগে