স্ত্রীসহ পরমাণু কমিশনের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
Published: 5th, May 2025 GMT
দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ মঞ্জুর আহসান এবং তার স্ত্রী মোছা. নার্গিস খানমের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। আজ সোমবার ঢাকার মেট্রোপলিটন জ্যেষ্ঠ জজ জাকির হোসেন গালিব দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এদিন দুদকের পক্ষে সংস্থাটির উপসহকারী পরিচালক আনিসুর রহমান তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়, মঞ্জুর আহসানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও সরকারি অর্থ লুটপাটের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। অনুসন্ধানকালে গোপন সূত্রে জানা যায়, অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে অনুসন্ধান কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ অবস্থায় তারা যেন বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারেন এজন্য তাদের বিদেশগমন রহিত করা প্রয়োজন।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
নেই অফিস, নিবন্ধনের আড়ালে লোক দেখানো রাজনীতি!
জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য নতুন রাজনৈতিক দল গজিয়ে উঠছে একের পর এক। খাতা-কলমে আবেদন জমা পড়েছে ১৪৭টি। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, অনেক দল শুধু নামেই দল। নেই অফিস, নেই কার্যক্রম, নেই সাংগঠনিক কাঠামো। বেশ কিছু ‘কেন্দ্রীয় কার্যালয়’ খুঁজে পাওয়া গেল হোটেলের ভেতরে, ট্রাভেল এজেন্সির কক্ষ কিংবা তালাবদ্ধ ব্যক্তিগত বাসার ড্রয়িংরুমে।
রাজধানীর নয়াপল্টন, পুরানা পল্টন, সিদ্ধেশ্বরী, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এই ‘ঠিকানার ভেলকি’। এমন তথাকথিত রাজনৈতিক দলগুলোর অস্তিত্ব নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।
হোটেলের ভেতরে ‘দলীয় কার্যালয়’
পুরানা পল্টনের ৫৪ নম্বর বাড়ির নিচতলায় রয়েছে ‘মুসলিম হোটেল অ্যান্ড কাবাব ঘর’। অথচ এই ঠিকানাকেই কেন্দ্রীয় কার্যালয় বলে উল্লেখ করেছে ‘বাংলাদেশ তিসারী ইনসাফ দল’। বৃস্পতিবার (২৬ জুন) দলের চেয়ারম্যান মো. মিনহাজ প্রধান দাবি করেন, ভবনের তৃতীয় তলায় তাদের অফিস রয়েছে, যা বর্তমানে ‘সংস্কারে’।
কিন্তু স্থানীয়দের মতে, উক্ত তলা বহুদিন ধরে বন্ধ। হোটেল ম্যানেজার স্পষ্টভাবেই জানিয়ে দেন, “মিনহাজ সাহেব মাঝে মধ্যে নাশতা করতে আসেন। এখানে কোনো দলীয় অফিস নেই।”
ট্রাভেল এজেন্সি নয়, এখন ‘ন্যায় বিচার পার্টি’!
ইসলাম টাওয়ারের সপ্তম তলায় গেলে চোখে পড়ে ‘আল আমিন ট্রাভেলস’-এর সাইনবোর্ড। অথচ কাগজে-কলমে এখানে বসেছে ‘জাতীয় ন্যায় বিচার পার্টির’ কেন্দ্রীয় কার্যালয়। চেয়ারম্যান মো. কামরুজ্জামান বলেন, “তাড়াহুড়ো করে ঠিকানাটা দিয়েছি। পরে বদলাব।”
ঠিক এমনিভাবে, ‘বাংলাদেশ ইউনাইটেড পার্টি’, ‘আজাদী পার্টি’, ‘জাস্টিস ফর হিউমিনিটি পার্টি’, ‘বাংলাদেশ নাগরিক পার্টি’- সবাই কোনো না কোনো প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা ব্যবহার করে নিবন্ধনের চেষ্টা চালাচ্ছে।
১২ বাই ৬ ফুট কক্ষেই কেন্দ্রীয় কার্যালয়!
পুরানা পল্টনের একটি ছোট্ট কক্ষে নাম দিয়েছে ‘বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদ’। এক পাশে বুকশেলফ, অন্য পাশে দুই সিটের সোফা। দলের সভাপতি আতিকুর রহমান রাজা বলেন, “ছোট পরিসরে শুরু করেছি। আপাতত বড় অফিস নেওয়ার দরকার নেই।”
আর ‘বাংলাদেশ ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট পার্টি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয় তালাবদ্ধ। পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা বলছেন, তারা শুধু জানেন আলমগীর হোসেন একজন আইনজীবী। তিনি কোনো দলের সভাপতি, সে খবর তাদের অজানা।
ড্রয়িংরুম, আধাপাকা বাড়ি ঠিকানা
দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীতে যে ভবনের ঠিকানা ‘জাস্টিস ফর হিউমিনিটি পার্টি’ দিয়েছে, বাস্তবে সেটি একটি আধাপাকা একতলা বাড়ি।
বাড়ির মালিক আবুল কালাম বলেন, “এখানে কোনো অফিস বা দল কখনো ছিল না। আমাদের পরিবারই থাকে। অর্থাৎ, দল আছে খাতা-কলমে; বাস্তবে নয়।”
নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব (নিবন্ধন) কে এম আলী নেওয়াজ বলেন, “নিবন্ধন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আমরা সরেজমিন যাচাই করছি। ঠিকানা ও সংগঠন নিয়ে মিথ্যা তথ্য দিলে সেই দল নিবন্ধন পাবে না।”
কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুধু দলীয় নাম থাকলেই চলবে না—সাংগঠনিক কাঠামো, নেতৃত্ব, অফিস, কার্যক্রম—সব যাচাই করা হবে।
নামেই বড় দল
এইসব দলের নাম শুনে অনেকেরই মনে হতে পারে, বুঝি বিরাট কোনো রাজনীতির দল: মানবতার জাস্টিস পার্টি, বেকার মুক্তি পরিষদ, জনজোট, আজাদী মুভমেন্ট, নাগরিক পার্টি। বাস্তবতা হলো, সাইনবোর্ড নেই, কোনো সভা-সমাবেশ নেই, নেই কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি। শুধু আছে তালাবদ্ধ ঘর বা খাবারের দোকান, যেখানে মাঝে মাঝে নেতারা নাশতা করতে আসেন।
নিবন্ধন নয়, পেছনের দরজা
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ‘ঠিকানা ভিত্তিক’ নিবন্ধনের ধারা রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। নিবন্ধন একটি সাংবিধানিক প্রক্রিয়া। অথচ অনেকেই এই প্রক্রিয়াকে ব্যবহার করছে ক্ষমতার পেছনের দরজা খোলা রাখতে।
বিশিষ্ট রাজনীতি বিশ্লেষক ড. তানভীর আহমেদ বলেন, “যারা রাজনৈতিক কাঠামো গড়ার ক্ষমতা রাখে না, তারা শুধু কাগজে-কলমে দল তৈরি করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নিবন্ধন নিতে চায়। এর মাধ্যমে গণতন্ত্র দুর্বল হয়, রাজনীতিতে দায়হীনতা বাড়ে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র আবির রায়হান বলেন, “রাজনীতি জনগণের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, জবাবদিহিতার জন্য। সেই রাজনীতির মূলধারা যদি শুরু হয় মিথ্যা ঠিকানা আর লোক দেখানো কক্ষ দিয়ে, তাহলে ভবিষ্যতের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কীভাবে বিশ্বাস রাখা যায়?”
এই নিবন্ধনের প্রক্রিয়া যেন লোক দেখানো ‘ঠিকানার খেলা’তে পরিণত না হয়, সেটা নিশ্চিত করাই এখন নির্বাচন কমিশনের প্রধান দায়িত্ব। না হলে, খাতায় ১৪৭টি নতুন দল থাকলেও বাস্তবে থাকবে না একটিও গণতান্ত্রিক দল।
ঢাকা/এস