Samakal:
2025-08-08@21:14:23 GMT

সুন্দরবনে অসুন্দর মাছ শিকার

Published: 5th, May 2025 GMT

সুন্দরবনে অসুন্দর মাছ শিকার

সুন্দরবন ম্যানগ্রোভ বন। ১৯৯৬ সালে সুন্দরবনে তিনটি অভয়ারণ্য প্রতিষ্ঠা করা হয়। তিনটি ডলফিন অভয়ারণ্য তৈরি করা হয় ২০১২ সালে। ২০১৪ সালে সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডকে মেরিন প্রটেকটেড এরিয়া ঘোষণা করা হয়। ১৯৯২ সালে এটি ৫৬০তম রামসার সাইট হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো সুন্দরবনকে ৭৯৮তম বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করে। এই বন বাংলাদেশের মানুষের কাছে মায়ের মতো। কেননা, যখনই জলোচ্ছ্বাস হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় হয়েছে; সুন্দরবন তখনই আমাদের মায়ের মতো বুকে আগলে রেখে রক্ষা করেছে। সিডর, আইলা, রোয়ানু, বুলবুল, ফণী এবং সর্বশেষ আম্পানেও সুন্দরবন আমাদের রক্ষা করেছে। সুন্দরবনের কারণে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের গতি ৭০ কিলোমিটার কমেছে। এটি জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা কমিয়েছে তিন থেকে চার ফুট। অথচ ১৯৬০ সালের পর আমাদের দেশে যত ঘূর্ণিঝড় হয়েছে, তার মধ্যে আম্পান ছিল সবচেয়ে দীর্ঘ। এত দীর্ঘ হওয়ার পরও সিডর বা আইলার চেয়ে এর ক্ষয়ক্ষতি ছিল অনেক কম। কেননা, সুন্দরবনে এসেই এ ঝড়ের গতি কমতে শুরু করে। জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা ১৫ থেকে ১৮ ফুট হওয়ার শঙ্কা থাকলেও সুন্দরবনের কারণে এটি কমে ১০ থেকে ১২ ফুট হয়। ২০০৭ সালে সিডর আর ২০০৯ সালে যে আইলার তাণ্ডব দেখা গেছে বাংলাদেশে, তারও ক্ষয়ক্ষতি কমিয়েছে সুন্দরবন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশবিদ্যা ইনস্টিটিউটের গবেষণা প্রতিবেদনমতে, ঘূর্ণিঝড় সিডরের সময় সুন্দরবন ৪৮৫ দশমিক ২৯ মিলিয়ন ডলারের সম্পদ রক্ষা করেছিল।   

সুন্দরবনের অধিকাংশ এলাকায় জোয়ার-ভাটা হয় বলে এ বনের গাছপালা লবণাক্ততা সহনশীল। এ বনের প্রধান বৃক্ষ সুন্দরী, গেওয়া, গরান, বাইন, ধুন্দুল, কেওড়া, গোলপাতা। এ ছাড়া রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা হরিণ, বানর এখানকার উল্লেখযোগ্য প্রাণী। সুন্দরবনে ২৮৯ প্রজাতি স্থলজ প্রাণীর বসবাস। এর মধ্যে ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ৮ প্রজাতির উভচর, মাছসহ ২১৯ প্রজাতির জলজ প্রাণী আছে। এখানে প্রায় ৫০ প্রজাতির পাখির বাস। এই বনটি উপকূলবর্তী হওয়ায় সমুদ্র দ্বারা প্রভাবিত। সৈকত, মোহনা, জলাভূমি, মাটির প্রকৃতির কারণে এটি স্বতন্ত্র বাস্তুতন্ত্র গঠন করেছে। 
দিন দিন সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে। প্রাণিহত্যা, চোরাচালানের পাশাপাশি বিভিন্ন খালে বিষ দিয়ে মাছ শিকার সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যকে ভয়াবহ হুমকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এক শ্রেণির অসাধু জেলে সুন্দরবনের খালে জোয়ারের আগে চিড়া, ভাত বা অন্য কিছুর সঙ্গে কীটনাশক মিশিয়ে ছিটিয়ে দেয়। এতে অভয়ারণ্যের খালে অল্প সময়েই অনেক মাছ ধরতে পারে। ফসলের পোকা দমনে যেসব কীটনাশক ব্যবহার করা হয়, তা দিয়েই এসব মাছ ধরা হয়। সাধারণত ডায়মগ্রো, ফাইটার, রিপকর্ড ও ভেসিকল নামে কীটনাশক দিয়ে মাছ ধরা হয়। এসব বিষ প্রয়োগ করা হলে খালের ছোট বড় সব ধরনের মাছ মারা যায়। শুধু মাছ নয়, পোনাও মারা যায়। এসব বিষ মিশ্রিত পানি গভীর সমুদ্রে গিয়ে সেখানকার প্রাণীরও ক্ষতি করে। এই বিষ তাৎক্ষণিক শুধু মাছই মেরে ফেলে না; দীর্ঘদিন খাল বা সমুদ্রে থাকার ফলে জলজ নানা প্রাণীও ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এতে মাছের প্রজনন ক্ষমতাও হ্রাস পায়। মাছের সংখ্যা কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এর ওপর নির্ভরশীল অন্যান্য প্রাণীও খাদ্য সংকটে পড়ে। তা ছাড়া বিষযুক্ত মাছ খেয়ে পাখি ও বড় মাছও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

যে সুন্দরবন আমাদের বাঁচায়, তাকে বাঁচাতে আমাদের প্রত্যেকের এগিয়ে আসা উচিত। সুন্দরবনের খালগুলোতে বিষ প্রয়োগে মাছ শিকার যে মাত্রায় বেড়েছে, তাতে সহজেই অনুমেয়, প্রাকৃতিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলবে সুন্দরবন। তাই আসুন সুন্দরবনকে আমরা রক্ষা করি।

ড.

বিভূতিভূষণ মিত্র: শিক্ষক ও গবেষক

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ন দরবন র ঘ র ণ ঝড় আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

সুন্দরবনে অস্ত্রসহ আসাবুর বাহিনীর ২ সহযোগী আটক

সুন্দরবনে অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ বনদস্যু আসাবুর বাহিনীর দুই সহযোগীকে আটক করেছে কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন, মোংলা। 

আটককৃতদের সংরক্ষণে থাকা ৩টি একনলা বন্দুক, ১০ রাউন্ড তাজা কার্তুজ, ৫ রাউন্ড ফাঁকা কার্তুজ এবং অস্ত্র তৈরির সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়। 

বুধবার (৬ আগস্ট) সকালে কোস্ট গার্ড মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক এ তথ্য জানান। এর আগে মঙ্গলবার বিকালে তাদেরকে আটক করা হয়।

আটককৃতরা হলেন- মো. বাদশা গাজী (৪৫) ও মেহেদী হাসান (২৭)। তারা খুলনা জেলার পাইকগাছা থানার বাসিন্দা।

কোস্ট গার্ড মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক বলেন, “গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারি মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সুন্দরবনের দস্যু আসাবুর বাহিনীর সদস্যরা ডাকাতির উদ্দেশ্যে সুন্দরবনের শিবসা নদী সংলগ্ন শরবতখালী এলাকায় গমন করবে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে ওই এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়। কোস্টগার্ডের উপস্থিতি টের পেয়ে দস্যুরা পালানোর চেষ্টা করে। তখন কোস্টগার্ড সদস্যরা ২ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। পরবর্তীতে ওই এলাকা তল্লাশি করে ৩টি একনলা বন্দুক, ১০ রাউন্ড তাজা কার্তুজ, ৫ রাউন্ড ফাঁকা কার্তুজ এবং অস্ত্র তৈরির সরঞ্জামাদিসহ সুন্দরবনের কুখ্যাত ডাকাত আসাবুর বাহিনীর দুই সহযোগীকে আটক করা হয়।”

তিনি জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে আটক ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন ধরে কুখ্যাত ডাকাত আসাবুর বাহিনীর সঙ্গে ডাকাতি এবং ডাকাত দলকে অস্ত্র, গোলাবারুদ ও রসদ সরবরাহের মাধ্যমে সহযোগিতা করে আসছিল। সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করতে কোস্ট গার্ড ভবিষ্যতেও এধরনের অভিযান অব্যাহত রাখবে বলে জানান তিনি।

ঢাকা/শহিদুল/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুন্দরবনের কেয়াখালীর খালের পাশে হরিণ ধরার ৬০০ ফাঁদ উদ্ধার
  • সুন্দরবনে অস্ত্রসহ আসাবুর বাহিনীর ২ সহযোগী আটক