কুষ্টিয়ায় টেনেহিঁচড়ে রাস্তায় নিয়ে নারী চিকিৎসক ও তাঁর স্বামীকে বেধড়ক মারধরের ঘটনায় মামলা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টায় হওয়া মামলায় তিনজন নারীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ২০ থেকে ২৫ জনকে।

কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেন মামলার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। ভুক্তভোগী চিকিৎসক শারমিন সুলতানার স্বামী মুহাম্মদ মাসুদ রানা বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন।

মামলার এজাহারে বাদী করেছেন, সোমবার দুপুরে তাঁর স্ত্রী শারমিন সুলতানা (৩৭) শহরের কোর্টপাড়া র‌্যাব গলির লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে ফোনকল পেয়ে রোগী দেখতে যান। সেখানে পৌঁছানোর পর রিকশা থেকে নামা মাত্রই সংঘবদ্ধভাবে ওঁৎ পেতে থাকা এজাহারনামীয় আসামিরা তাঁর স্ত্রীর পথরোধ করেন এবং গালাগাল করতে থাকেন। তখন তাঁর স্ত্রী আসামিদের গালাগাল করতে নিষেধ করেন এবং গালাগালের কারণ জিজ্ঞাসা করলে আসামিসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাঁর স্ত্রীকে এলোপাতাড়ি কিলঘুষি ও লাথি মেরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত জখম করে।

এজাহারে আরও বলা হয়েছে, একপর্যায়ে আসামিরা চিকিৎসক শারমিন সুলতানার পরনের কাপড় টেনেহিঁচড়ে ছিঁড়ে ফেলে শ্লীলতাহানি করে। খবর পেয়ে তিনি (স্বামী) ও তাঁর গাড়িচালক স্ত্রীকে রক্ষা করতে গেলে তাঁদেরও মারধর করা হয়। আসামিরা স্মার্টফোনসহ তাঁর স্ত্রীর কাছে থাকা সোনার গয়না ও দেড় লাখ টাকা নিয়ে নেয়। পরে তাঁদের হুমকিধমকি দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

আরও পড়ুনটেনেহিঁচড়ে রাস্তার ওপর মারধর : থানা থেকে বাড়ি ফিরলেন ভুক্তভোগী নারী চিকিৎসক ১০ ঘণ্টা আগে

কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি মোশাররফ হোসেন বলেন, মামলায় তিনজন নারীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁদের সবার বাড়ি মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলায়। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ২০ থেকে ২৫ জনকে। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হবে।

বিএনপির নিন্দা

চিকিৎসক দম্পতিকে মারধরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও আক্রান্ত চিকিৎসক পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম। একই সঙ্গে সরকারের প্রতি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে অতিসত্বর দোষীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক মুহম্মদ মুনির হোসেনের পাঠানো বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়। বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের চিকিৎসক ও ড্যাবের নেতা নাসিমুল বারী।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর সারা বাংলাদেশে ধারাবাহিকভাবে চিকিৎসক নির্যাতনের ঘটনা চলমান রয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সবার প্রত্যাশা ছিল ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার হবে; কিন্তু সেই সব ঘটনার আদৌ কোনো অগ্রগতি এখনো দৃশ্যমান নয়। আবারও একই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে, এবার কুষ্টিয়ায় এক চিকিৎসক দম্পতি দুর্বৃত্তদের হিংস্রতার শিকার হয়েছেন।

আরও পড়ুননারী চিকিৎসককে টেনেহিঁচড়ে রাস্তার ওপর মারধর, রক্ষা পাননি চিকিৎসক স্বামীও০৫ মে ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক ম রধর র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

সাত বছর আগে সাংবাদিক খাসোগি হত্যার পর প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন সৌদি যুবরাজ

যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। আগামীকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে তিনি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বৈঠকের লক্ষ্য তেল ও নিরাপত্তা খাতে দুদেশের বহু দশকের সহযোগিতার সম্পর্ক আরও গভীর করা। একই সঙ্গে বাণিজ্য, প্রযুক্তি এবং সম্ভাব্য পারমাণবিক জ্বালানি খাতে সম্পর্ক আরও বিস্তৃত করা।

২০১৮ সালে ইস্তাম্বুলে সাংবাদিক এবং সৌদি রাজপরিবারের কট্টর সমালোচক জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ডের পর এটাই যুবরাজ সালমানের প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফর।

আরও পড়ুনসৌদি আরবের যুবরাজের সঙ্গে বৈঠক করলেন ট্রাম্প১৩ মে ২০২৫

সৌদি আরবের গোয়েন্দারা ইস্তাম্বুলে সৌদি দূতাবাসের ভেতর খাসোগিকে হত্যা করেছিলেন বলে অভিযোগ। এ হত্যাকাণ্ড বিশ্বজুড়ে তুমুল আলোড়ন তুলেছিল। অনেকে অভিযোগ করেছিলেন, খাসোগি হত্যাকাণ্ডের পেছনে যুবরাজ সালমানের হাত রয়েছে।

পরে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিল, যুবরাজই খাসোগিকে অপহরণ বা হত্যার অনুমোদন দিয়েছিলেন।

যুবরাজ সালমান খাসোগিকে হত্যার নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে তিনি সৌদি আরব সরকারের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা হিসেবে এ হত্যার দায় স্বীকার করেছিলেন।

খাসোগি হত্যার পর সাত বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র এবং সবচেয়ে বেশি তেল উত্তোলনকারী দেশ সৌদি আরব নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক নতুন করে এগিয়ে নিতে চাইছে।

আরও পড়ুনসৌদি আরবের সঙ্গে ‘ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অস্ত্র বিক্রির চুক্তি’ যুক্তরাষ্ট্রের১৩ মে ২০২৫

ট্রাম্প গত মে মাসে সৌদি আরবে তাঁর সফরের সময় দেওয়া ৬০ হাজার কোটি ডলারের সৌদি বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতির সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছেন।

মে মাসের ওই সফরে ট্রাম্প সৌদি আরবে মানবাধিকার–সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা স্পষ্টভাবে এড়িয়ে গিয়েছিলেন। এবারও তিনি একই পথে হাঁটবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে যুবরাজ মোহাম্মদ আঞ্চলিক অস্থিরতার মধ্যে নিজ দেশের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চাইছেন। একই সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি (এআই) এবং বেসামরিক খাতে একটি পারমাণবিক প্রকল্প চুক্তির পথে অগ্রসর হতে চাইছেন।

আরও পড়ুনখাসোগি হত্যা সবচেয়ে জঘন্য ধামাচাপার ঘটনা: ট্রাম্প২৪ অক্টোবর ২০১৮

যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব দীর্ঘদিন ধরেই এমন একটি সম্পর্ক বজায় রেখেছে, যেখানে সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তাদের পছন্দমতো দামে তেল বিক্রি করবে এবং যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবকে নিরাপত্তা দেবে।

আরও পড়ুনখাসোগিকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে: সৌদি আরব২৬ অক্টোবর ২০১৮

সম্পর্কিত নিবন্ধ