পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ডে ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোকে ‘লজ্জাজনক’ বলে অ্যাখ্যায়িত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বুধবার পাকিস্তানে ভারত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ কথা বলেন। 

ক্ষেপণাস্ত্র হামলা নিয়ে ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘এটা লজ্জাজনক। আমরা এইমাত্র এটি সম্পর্কে শুনেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘মানুষ অতীতের ওপর ভিত্তি করে জানত যে কিছু ঘটতে চলেছে। কারণ উভয় পক্ষই বহু দশক এবং শতাব্দী ধরে  লড়াই করে আসছে। তবে আমি আশা করি, এটি খুব দ্রুত শেষ হবে। খবর দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া

এদিকে ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় পাকিস্তানে অন্তত তিনজন নিহত ও ১২ জন আহত হয়েছেন। পাকিস্তানের আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি জানান, বুধবার রাতে পাকিস্তানের কোটলি, ভাওয়ালপুর, মুরিদকে, বাগ ও মুজাফ্ফরবাদে ‘কাপুরুষোচিত’ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ইতোমধ্যে এ হামলার বদলা নিতে শুরু করেছে। খবর ডনের

হামলায় হতাহতের বিষয়ে লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী বলেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে পরে আরও তথ্য জানানো হবে। এর কিছুক্ষণ পর তিনি পাকিস্তানের জিউ নিউজকে ক্ষয়ক্ষতির একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়েছেন। তাতে বলেছেন, ভাওয়ালপুরের আহমেদপুর ইস্ট এলাকায় একটি শিশু নিহত ও ১২ জন আহত হওয়ার খবর পেয়েছেন। কোটলিতে দুইজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।

তিনি জানান, আহমেদপুরে একটি মসজিদে হামলা হয়েছে। কাছের একটি বাড়িও আক্রান্ত হয়েছে। সেখানে একটি শিশু ও তার বাবা–মা আটকা পড়েছেন। তাদেরকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

কোটলিতেও একটি মসজিদে হামলা হয়েছে। মুজাফ্ফরবাদে একটি সড়কে ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে। তাতে কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি। পাকিস্তানি বাহিনী স্থল ও আকাশপথে এই হামলার জবাব দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ভারতের সশস্ত্র বাহিনী ‘অপারেশন সিন্দুর’ শুরু করেছে। এর আওতায় পাকিস্তান ও পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের নয়টি স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী বুধবার এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানিয়েছে।

বিবৃতিতে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী জানায়, ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের অভিযানে পাকিস্তানের ৯টি জায়গায় হামলা চালানো হয়েছে। এই হামলায় সশস্ত্র গোষ্ঠীর অবকাঠামো লক্ষ্য করা হয়েছে। পাকিস্তানের সেনা সদস্যদের ওপর কোনো হামলা চালানো হয়নি।

২২ এপ্রিল ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন। এ ঘটনার পেছনে পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে নয়াদিল্লি অভিযোগ করলেও, তা নাকচ করেছে পাকিস্তান। এরপর থেকে দুই দেশই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ নিয়েছে। এতে পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হচ্ছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সশস ত র আহম দ

এছাড়াও পড়ুন:

আওয়ামী লীগ ও ভারতের জন্য বাংলাদেশে একটা দাঙ্গা প্রয়োজন: গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

আওয়ামী লীগ ও ভারতের জন্য বাংলাদেশে একটা দাঙ্গা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেছেন, তাহলে রাজনৈতিক মোড়টা ঘুরতে পারে, নির্বাচন বানচাল হতে পারে। সে জন্যই জাতীয় স্বার্থে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।

শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গয়েশ্বর চন্দ্র এ কথা বলেন। জাতীয়তাবাদী মতাদর্শের সনাতনীদের নিয়ে বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটি এ সমাবেশের আয়োজন করে।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘শেখ মুজিব বিহারি-বাঙালি দাঙ্গা লাগিয়ে, বিহারি-বাঙালি আলাদা করে ১৯৭০–এর নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিলেন এই অঞ্চলের লোকদের বাঙালি বানিয়ে। এ ধরনের ঘটনা ঘটানোরও পেছনে আওয়ামী লীগ অত্যন্ত পটু। দরকার হলে নিজের ঘরে আগুন দিয়ে দেবে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই নেতা আরও বলেন, সাম্প্রদায়িকতার মাঝে একটা রাজনীতি আছে। এ ভারতবর্ষে, এ উপমহাদেশে অনেক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছে রাজনৈতিক কারণে। কিছু গুজবের কারণে। ভারতে এসব দাঙ্গা এখনো চলমান। রাজনৈতিক কুটিলতার মধ্যে এ সাম্প্রদায়িকতা এখন না, হাজার বছর আগে থেকে আছে।

কোনো মানুষ কিংবা ধর্ম সাম্প্রদায়িক নয় উল্লেখ করে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, কখনো কোনো কিছু মোকাবিলা করার জন্য দাঙ্গা-ফ্যাসাদ করাতে হয়। যাতে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি আরেক দিকে চলে যায়। এইচ এম এরশাদও ’৮৮ সালে এ কাজটা করেছিলেন। বাংলাদেশে মুসলমান নয়, হিন্দুরাই হিন্দুদের শত্রু, হিন্দুরাই হিন্দুদের ক্ষতি করে।

গয়েশ্বর আরও বলেন, ‘আমি হিন্দু–মুসলমানের ব্যবধান বুঝি না। আমি খারাপ আর ভালো লোকের ব্যবধান বুঝি। সৎ লোক–প্রতারকের ব্যবধান বুঝি। আমি সাম্প্রদায়িকতা পছন্দ করি না, অসাম্প্রদায়িক জীবন যাপন করতে পছন্দ করি।’

সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘হিন্দু-মুসলমান আমরা একটা বৃহত্তর সংস্কৃতির অংশ। এখানে কোনো প্রভেদ ছিল না, কোনো বিভেদ ছিল না। এটাকে শেখ হাসিনা ভাঙতে চেয়েছেন।

দেখাতে চেয়েছেন এই দেশ বিভেদ–বিভাজনে ভরপুর। সুতরাং আমাকে সমর্থন করো। অন্য বিরোধী দল কাউকে সমর্থন করবে না। এ কারণে তিনি জোর করে জনসমর্থন ব্যতিরেকে দিনের ভোট রাতে করে ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের যেতে না দিয়ে নির্বাচন কমিশন দিয়ে ভোট করেছেন, বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে বিনষ্ট করেছেন।’

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পূজা উদ্‌যাপন ফ্রন্টের সভাপতি অপর্ণা রায় দাস। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, যুগ্ম মহাসচিব মীর সরাফত আলী, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী এবং জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামানিক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ