Samakal:
2025-08-11@22:15:09 GMT

নাকের বদলে নরুন!

Published: 10th, May 2025 GMT

নাকের বদলে নরুন!

চট্টগ্রামের আনোয়ারায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) বিভিন্ন খাল পুনর্খনন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করিতে গিয়া বৃক্ষনিধনের যজ্ঞ চলিতেছে, উহা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। শনিবার প্রকাশিত সমকালের প্রতিবেদন বলিতেছে, উপজেলার চারটি খালের ৪০ কিলোমিটার পুনর্খনন করিতে গিয়া ইতোমধ্যে খালসমূহের দুই পার্শ্বের বিভিন্ন প্রজাতির পাঁচ সহস্রাধিক বৃক্ষ কাটিয়া ফেলা হইয়াছে। শুধু উহা নহে, খাল পুনর্খনন সম্পূর্ণ শেষ করিতে হইলে সেখানে আরও পাঁচ সহস্র বৃক্ষ কাটিতে হইতে পারে বলিয়া আশঙ্কা স্থানীয়দের। পরিহাসের বিষয় হইল, বিএডিসি চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার ভূ-উপরিস্থ পানির মাধ্যমে সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের অংশ হিসেবে উক্ত খাল খননের উদ্যোগ গ্রহণ করিয়াছে; অথচ উহার জন্য যে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত প্রয়োজন তাহা সম্ভব হয় কেবল প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক থাকিলে, যেখানে বৃক্ষের অবদান অপরিসীম। এহেন আয়োজনকে নাকের বদলে নরুন পাইবার আয়োজন বলিলে কি ভুল হইবে?

বিস্ময়কর হইলেও সত্য, খাল খননের কর্মে নিয়োজিত যান্ত্রিক খনক চলাচলের সুবিধার্থে নাকি দুই পাশের বৃক্ষসমূহ কাটা হইতেছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই বিপুল অগ্রগতির যুগে এই সর্বনাশা কথা কতখানি গ্রহণযোগ্য? বাস্তবে ইহা প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের খামখেয়াল অথবা কাষ্ঠ ব্যবসায়ীদের সহিত উহাদের অশুভ কোনো আঁতাতের ফল কিনা তাহা খতাইয়া দেখা প্রয়োজন। প্রতিবেদন মতে, বিএডিসির এহেন সিদ্ধান্তের কারণে সংশ্লিষ্ট বৃক্ষমালিকরা বৃক্ষসমূহকে বিক্রয় করিয়া দিতে বাধ্য হইতেছেন।

অধিকতর বিস্ময়কর হইল, পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপপরিচালক বলিয়াছেন, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নহেন। অথচ সরকারি-বেসরকারি যে কোনো প্রকল্পে বৃক্ষ কর্তন তো বটেই, অন্য পরিবেশগত জটিলতা এড়াইবার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র গ্রহণ করিতে হয়। অন্তত পরিবেশ আইনে উহাই বলা আছে। বন বিভাগ বা পরিবেশ অধিদপ্তরের এহেন কর্তব্যে অবহেলা এই প্রথম দেখা গেল তাহা নহে। অতীতে ইহার ভূরি ভূরি নজির রহিয়াছে। আমরা জানি, আন্তর্জাতিক নিয়মে পরিবেশ-প্রতিবেশের ভারসাম্য সুরক্ষায় একটা রাষ্ট্রে মোট ভূখণ্ডের অন্তত ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকিতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশে আছে মাত্র ৯ শতাংশ বা তাহার কিছু কমবেশি। ইহাও জানিয়া রাখা প্রয়োজন, বাংলাদেশের এই বনভূমির একটা অংশ কথিত সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির অধীনে রোপিত বৃক্ষ, যাহা কোনো প্রকারেই প্রাকৃতিক বনের বিকল্প নহে। এহেন বৃক্ষ কর্তনের পরিণাম কী হইতে পারে তাহা নূতন করিয়া বলার কিছু নাই। জলবায়ু পরিবর্তনের যে নেতিবাচক প্রভাব লইয়া সমগ্র বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি হইয়াছে, উহাতে পাইকারি বৃক্ষ কর্তনের ভূমিকা কম নহে। বাংলাদেশে বিশেষত গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা যে ইদানীং অসহনীয় হইয়া উঠিয়াছে, বিশেষজ্ঞরা উহার দায় বহু বৎসর ধরিয়াই অন্যান্য বিষয়ের সহিত বন ধ্বংস ও নির্বিচার বৃক্ষ কর্তনের উপরও দিয়া আসিতেছেন। দুর্ভাগ্যবশত, দেশের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে যদ্রূপ ইহাতে কর্ণপাত করিবার কোনো আগ্রহ পরিলক্ষিত হয় না, তদ্রূপ মাঠ পর্যায়েও একই বিষয়ে সচেতনতা দৃশ্যমান নহে।

আলোচ্য খাল খনন কর্মসূচি যে গুরুত্বপূর্ণ, অন্তত স্থানীয় কৃষি উৎপাদনের জন্য সহায়ক, তাহা লইয়া কোনো বিতর্ক নাই। কিন্তু এহেন একদেশদর্শী উন্নয়ন যে চূড়ান্ত বিচারে সমূহ ক্ষতি ঘটায় সেই জ্ঞানও থাকা প্রয়োজন। উন্নয়ন হইতে হইবে টেকসই উন্নয়ন, যেখানে পরিবেশ-প্রতিবেশের সংরক্ষণ একটা জরুরি বিষয়। তাহা না হইলে জনগণের বিপুল অর্থ ব্যয়ে হয়তো মাইলের পর মাইল খাল খনন হইতে পারে, সেই খালে হয়তো কিছুকাল পানিও থাকিতে পারে, এক পর্যায়ে সেই পানি শুকাইয়া যাইবে। তখন উক্ত প্রকল্পের পশ্চাতে ব্যয়িত অর্থ অপচয় বলিয়াই গণ্য হইবে। আমরা মনে করি, অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টিতে নজর দেবেন, সেচ প্রকল্পের নামে বৃক্ষ কর্তন শুধু বন্ধই নহে, এহেন অপকর্মের সহিত যুক্ত কর্মকর্তাদের আইনের আওতায়ও আনিবেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: খ ল খনন প রকল প পর ব শ

এছাড়াও পড়ুন:

সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম

সালাতুল হাজত একটি নফল নামাজ, যা বিশেষ প্রয়োজনকে সামনে রেখে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে আদায় করা হয়। এই নামাজের মাধ্যমে মুমিন ব্যক্তি জীবনের বিভিন্ন কঠিন পরিস্থিতিতে আল্লাহর নৈকট্য ও সাহায্য কামনা করে।

হাদিসে সালাতুল হাজতের ফজিলত ও নিয়ম বর্ণিত আছে, যা মুমিনের আল্লাহর ওপর ভরসাকে দৃঢ় করে।

সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম

সালাতুল হাজত একটি নফল নামাজ, যা সাধারণত দুই রাকাত আদায় করা হয়। তবে ইচ্ছা হলে চার বা ততোধিক রাকাতও পড়া যায়। নামাজের নিয়ম বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো:

১. অজু করা

সালাতুল হাজত নামাজের জন্য পূর্ণ পবিত্রতা প্রয়োজন। তাই প্রথমে অজু করতে হবে। অজুর ফরজ চারটি: মুখমণ্ডল ধোয়া, দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধোয়া, মাথায় মসেহ করা এবং দুই পা টাখনু পর্যন্ত ধোয়া। এ ছাড়া সুন্নত অনুযায়ী অজু করা উত্তম, যেমন বিসমিল্লাহ বলে শুরু করা, কুলি করা, নাকের ভেতরে পানি দেওয়া ইত্যাদি। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৮৫)

সালাতুল হাজত একটি নফল নামাজ, যা বিশেষ প্রয়োজনকে সামনে রেখে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে আদায় করা হয়। সাধারণ ফরজ বা নফল নামাজের মতোই পড়তে হয়।

২. নিয়ত করা

নামাজ শুরু করার আগে মনে মনে সালাতুল হাজতের নিয়ত করতে হবে। নিয়তের উদাহরণ: ‘আমি দুই রাকাত সালাতুল হাজত নফল নামাজ আল্লাহর জন্য আদায় করছি, আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করে।’

নিয়ত মনে মনে করা যথেষ্ট, মুখে বলা জরুরি নয়। (সাইয়্যিদ সাবিক, ফিকহুস সুন্নাহ, পৃষ্ঠা: ১৪৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ২০১৮)

আরও পড়ুনইশরাকের নামাজ: সকালের আলোয় আল্লাহর নৈকট্য ০৪ জুলাই ২০২৫

৩. দুই রাকাত নামাজ আদায়

প্রথম রাকাত: তাকবিরে তাহরিমা (আল্লাহু আকবার) বলে নামাজ শুরু করা। সুরা ফাতিহার পর যেকোনো সুরা পড়া, যেমন সুরা ইখলাস। তারপর রুকু, সিজদা ও অন্যান্য নিয়ম অনুসরণ করে প্রথম রাকাত সম্পন্ন করা।

দ্বিতীয় রাকাত: একইভাবে সুরা ফাতিহার পর একটি সুরা পড়া, রুকু, সিজদা ও তাশাহহুদ পড়ে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করা।

এই নামাজ সাধারণ ফরজ বা নফল নামাজের মতোই পড়তে হবে, তবে খুশুখুজু (মনোযোগ) বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৪৭৮)

৪. নামাজের পর দোয়া

নামাজ শেষে আল্লাহর প্রশংসা ও দরুদ পড়ে নিজের প্রয়োজনের জন্য দোয়া করতে হবে। আব্দুল্লাহ ইবনে আবু আওফা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির আল্লাহর কাছে কোনো প্রয়োজন বা মানুষের কাছে কোনো দরকার থাকে, সে যেন অজু করে দুই রাকাত নামাজ পড়ে, তারপর আল্লাহর প্রশংসা করে, নবীর ওপর দরুদ পড়ে এবং এই দোয়া পড়ে:

উচ্চারণ: ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল হালিমুল কারিম, সুবহানাল্লাহি রাব্বিল আরশিল আজিম, আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন, আসআলুকা মুজিবাতি রাহমাতিক, ওয়া আজাইমা মাগফিরাতিক, ওয়াল গানিমাতা মিন কুল্লি বিরর, ওয়াস সালামাতা মিন কুল্লি ইসম। লা তাদা লি জাম্বান ইল্লা গাফারতাহু, ওয়া লা হাম্মান ইল্লা ফাররাজতাহু।’

অর্থ: ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি সহনশীল ও দয়ালু। পবিত্র মহান আরশের প্রভু আল্লাহ। সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজগতের প্রভু আল্লাহর জন্য। আমি তোমার কাছে তোমার রহমতের কারণ, ক্ষমার দৃঢ়তা, প্রতিটি পুণ্যের লাভ এবং সব পাপ থেকে মুক্তি প্রার্থনা করি। আমার কোনো গুনাহ রেখো না, যা তুমি ক্ষমা করোনি এবং কোনো দুশ্চিন্তা রেখো না, যা তুমি দূর করোনি।’ (সুনান তিরমিজি, হাদিস:: ৪৭৮)

৫. অতিরিক্ত দোয়া

ওপরের দোয়ার পর নিজের প্রয়োজন বা দরকারের জন্য নিজের ভাষায় আল্লাহর কাছে দোয়া করা। দোয়া করার সময় আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রাখা এবং ধৈর্যের সঙ্গে ফলাফলের অপেক্ষা করা।

আরও পড়ুননামাজ আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধির একটি ধাপ১৭ জুলাই ২০২৫সালাতুল হাজতের সময়

সালাতুল হাজত নির্দিষ্ট কোনো সময়ের সঙ্গে সীমাবদ্ধ নয়। এটি যেকোনো সময় আদায় করা যায়, তবে নিষিদ্ধ সময় (যেমন সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত বা ঠিক মধ্যাহ্নে) এড়িয়ে চলতে হবে। সর্বোত্তম সময় হলো:

রাতের শেষ প্রহর (তাহাজ্জুদের সময়)।

ফজর বা মাগরিব নামাজের পর।

জুমার দিনে, বিশেষ করে আসর ও মাগরিবের মাঝে। (মুহাম্মদ ইবনে সালিহ, আল-ফিকহুল মুয়াসসার, পৃষ্ঠা: ১৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ২০১৫)

সালাতুল হাজতের ফজিলত

সালাতুল হাজত নামাজের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে উল্লেখ আছে। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সালাতুল হাজত পড়ে এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করে, আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করেন।’ (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৪৭৮)

এই নামাজ মুমিনের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনার একটি শক্তিশালী মাধ্যম, যা মানসিক শান্তি ও ইমানের দৃঢ়তা বাড়ায়।

সতর্কতা

নিষিদ্ধ সময় এড়ানো: সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত ও মধ্যাহ্নে নামাজ পড়া থেকে বিরত থাকা।

খুশুখুজু: নামাজ ও দোয়ায় মনোযোগ বজায় রাখা, যাতে ইবাদত পূর্ণতা পায়।

হারাম প্রয়োজনে না: সালাতুল হাজত শুধু জায়েজ ও হালাল প্রয়োজনের জন্য পড়তে হবে।

ধৈর্য: দোয়ার ফলাফলের জন্য ধৈর্য ধরা, কারণ আল্লাহ সর্বোত্তম সময়ে প্রয়োজন পূরণ করেন। (ইবনে হাজার আসকালানি, ফাতহুল বারি, ২/৪৮০, দারুল মা’রিফা: ১৯৮৯)

সালাতুল হাজত নামাজ মুমিনের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনার একটি অসাধারণ মাধ্যম। এটি দুই রাকাত নফল নামাজ, যার পর নির্দিষ্ট দোয়া ও নিজের প্রয়োজনের জন্য দোয়া করা হয়। জীবনে ব্যস্ততার মাঝেও এই নামাজ সহজেই আদায় করা যায়।

আরও পড়ুনজীবনকে ছন্দে ফেরাবে ‘ধীর নামাজ’২৪ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ