কাঠামোগত সংস্কারের অভাবে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি
Published: 10th, May 2025 GMT
দেশে কাঠামোগত সংস্কারের অভাবে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি। এর ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কথা শোনা গেছে। কিন্তু বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সে তুলনায় হয়নি। অন্যদিকে বৈষম্য প্রকট হয়েছে। ‘বাংলাদেশ ২০৩০: অংশীদারিত্বমূলক অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞরা এমন মত দিয়েছেন। গতকাল শনিবার রাজধানীর হোটেল শেরাটন, ঢাকায় এর আয়োজন করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআরআই)। প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী এতে প্রধান অতিথি ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পিআরআই চেয়ারম্যান জায়েদী সাত্তার।
অনুষ্ঠানে লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, ‘যেদিকে তাকাই না কেন, কোনো সিন্ডিকেটকে সক্রিয় দেখি। আমরা এসব জায়গায় কাঠামোগত পরিবর্তন আনতে পারছি না। কারণ, আমলারা তাদের সুবিধাজনক কাঠামো ভাঙতে চান না। আবার অনেক ব্যবসায়ী কাঠামোগত পরিবর্তনের কথা বলেন। অথচ তারা নিজেরাই সুবিধা নেওয়ার তদবির করে থাকেন, যা পুরো পরিবর্তনের প্রয়াসকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে। অর্থনীতির অবস্থা জানার শ্বেতপত্র এবং অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ-সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের সুপারিশের আলোকে অনেক প্রতিষ্ঠানে সংস্কার আনা হয়েছে। এ বিষয়ে কাজ অব্যাহত আছে।
প্রকাশিত গ্রন্থের লেখক এবং পিআরআইর ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ বলেন, দেশের জাতীয় উন্নয়নযাত্রা কিছু সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অংশগ্রহণমূলক গণতান্ত্রিক শাসনের অভাব, দুর্নীতি, পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের অভাব, আয় বৈষম্য বৃদ্ধি প্রভৃতি বিষয় স্থিতিশীলতা ও টেকসই উন্নয়নের জন্য হুমকি। এই গ্রন্থে এসব চ্যালেঞ্জের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড.
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং গবেষণা সংস্থা সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, সংস্কারের ক্ষেত্রে মূল সমস্যা হলো রাজনৈতিক দলগুলোর অনাগ্রহ। দেখা যায়, রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষুদ্র পরিসরের কিছু সংস্কারে আগ্রহী হলেও বৃহৎ বা কাঠামোগত সংস্কারে রাজি থাকে না। এ প্রবণতা গত দুই দশক বা তারও বেশি সময় ধরে চলমান। এটি কোনো একক রাজনৈতিক দলের সমস্যা নয়, বরং প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলেরই বৈশিষ্ট্য। এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নাগরিক সমাজ কিংবা সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকেও জোরালো দাবি তোলা হয়নি। তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময় গঠিত শ্বেতপত্র ও টাস্কফোর্সের সুপারিশগুলোও বাস্তবায়ন হচ্ছে না, যা অত্যন্ত হতাশাজনক।
এপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, দেশে করব্যবস্থার সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার হয়েছিল ২০১১ সালের দিকে। উচ্চ শুল্ক ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে অন্যতম বড় বাধা। আমরা এখন মুক্তবাণিজ্য চুক্তির কথা বলছি। কিন্তু এর জন্য অন্যতম বড় বাধা উচ্চ করহার।
আইএফসির কান্ট্রি ম্যানেজার মার্টিন হল্টম্যান বলেন, মানবসম্পদ উন্নয়নে গুণগত শিক্ষা এবং কর্মমুখী শিক্ষায় গুরুত্ব দিতে হবে বাংলাদেশকে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক ঠ ম গত স স ক র র জন ত ক ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
যেদিকে তাকাই, ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট দেখি: লুৎফে সিদ্দিকী
প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বলেছেন, ‘যেদিকে তাকাই, ব্যবসায়ীদের কোনো না কোনো সিন্ডিকেট সক্রিয় দেখি। আমরা যেসব কাঠামোগত পরিবর্তন আনতে পারছি না, তার অন্যতম কারণ হলো ব্যবসায়ী মহলের অনেকেই সরকারের সঙ্গে নিজেদের স্বার্থে গোপনে সমঝোতায় যান।’
আজ শনিবার রাজধানীর বনানীতে একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশ ২০৩০: অংশীদারত্বমূলক অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে’ শীর্ষক বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআরআই) ও নিমফিয়া পাবলিকেশন।
অনুষ্ঠানে লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে ব্যবসায়ের পক্ষে, কারণ আমি আমার পেশাগত জীবনের বেশির ভাগ সময়ই বেসরকারি খাতে কাটিয়েছি। কিন্তু সত্যিটা হচ্ছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) হোক বা অন্য কোনো খাত, আমরা যেসব কাঠামোগত পরিবর্তন আনতে পারছি না, তার অন্যতম কারণ হলো ব্যবসায়ী মহলের অনেকেই সরকারের সঙ্গে নিজেদের স্বার্থে গোপনে সমঝোতায় যান।’
সিন্ডিকেট প্রসঙ্গে লুৎফে সিদ্দিকী আরও বলেন, অনেকে সেমিনারে এসে বড় বড় কথা বলেন, বলেন কীভাবে কাঠামোগত পরিবর্তন দরকার। অথচ পরে দেখা যায়, তাঁরা নিজেরাই কোনো মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে গোপনে চুক্তিতে গেছেন, যা পুরো পরিবর্তনের প্রয়াসকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে।
অনুষ্ঠানে বই নিয়ে আলোচনা করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি কামরান টি রহমান, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর এবং ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপাল অঞ্চলের কান্ট্রি ম্যানেজার মার্টিন হল্টম্যান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন পিআরআই চেয়ারম্যান জাইদী সাত্তার।
এর আগে পিআরআই ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ বইটি পরিচয় করিয়ে দেন। তিনি জানান, এই বইয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্ভাব্য পথ নিয়ে বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, কয়েক মাস আগে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে অর্থনীতি নিয়ে শ্বেতপত্র প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শ্বেতপত্রের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, ‘শ্বেতপত্র প্রকাশের পর হয়তো অনেকের কাছে মনে হতে পারে, এর ফলাফলগুলো হারিয়ে গেছে বা থেমে গেছে। তবে আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, আমি নিজে এবং আমার অনেক সহকর্মী প্রতিদিন আমাদের কাজ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে শ্বেতপত্র প্রতিবেদনের সুপারিশগুলো বিবেচনায় আনছি। প্রধান উপদেষ্টাও তা করছেন।’
লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, ‘জনসমক্ষে তেমন অগ্রগতি দেখা না গেলেও শ্বেতপত্র বা হোয়াইট পেপারের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। কীভাবে সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা যায়, সেদিকেই আমাদের মূল মনোযোগ রয়েছে।’