চকরিয়া, লামা ও আলীকদম উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত মাতামুহুরী নদীতে শুষ্ক মৌসুমে জেগে ওঠা চরে এবার তামাকের বদলে বোরো ধান চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন ভূমিহীন কৃষকরা। এতে প্রায় ১৫ হাজার টন ধান উৎপাদন হতে পারে।
জানা গেছে, শুষ্ক মৌসুম শুরু হওয়ার পর মাতামুহুরী নদীসহ অন্তত ৫০টি শাখা খাল ও ছড়ায় পানি কমে যায়। জেগে ওঠে বালুময় চর। একসময় নদীর পাড়ের লোকজন বালুচরে তামাক, বাদাম, শিম, মিষ্টি লাউ, আলু চাষ করতেন। কিন্তু নদীর পানিযুক্ত অংশে তেমন কোনো চাষ হতো না। এবার নদী পাড়ের দরিদ্র কৃষকরা বোরো ধান চাষ করে সফলতা পেয়েছেন।
স্থানীয় প্রশাসন কয়েক বছর ধরে মাতামুহুরী নদীর চরে তামাক চাষ বন্ধে তৎপরতা চালালেও এখন অনেকটা নীরব। ফলে মাতামুহুরীর চরে আবার ব্যাপকভাবে তামাক চাষ হচ্ছে। তামাকের বর্জ্যে নদী ও চিংড়ি ঘেরের পানিতে মিশে যাচ্ছে। এতে মাছের মড়ক দেখা দিচ্ছে। যে কারণে চকরিয়া সুন্দরবন এলাকার চিংড়ি ঘের ও নদীতে আগের মতো মাছ মিলছে না।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, ‘আমি যদি আগামী মৌসুম পর্যন্ত বর্তমান কর্মস্থলে থাকি কোনোভাবেই মাতামুহুরী নদীর বালুচরে তামাক চাষ করতে দেব না।’
চকরিয়া উপজেলার কৃষি বিভাগের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মহিউদ্দিন জানান, চলতি মৌসুমে কৃষকরা মাতামুহুরীসহ শাখা খালের চরে চকরিয়া অংশে ১০০ হেক্টরে বোরো ধান চাষ করেছেন। একইভাবে লামা ও আলীকদম কুরুপকাতা ঝিরি অংশে আরও ২০০ হেক্টর চরে সাথি ফসলের সঙ্গে বোরো চাষ হয়েছে। এবার অনাবৃষ্টির কারণে নদীতে পানি না বাড়ায় ভালো ফলন হয়েছে।
দক্ষিণ কাকারা গ্রামের চাষি ওমর আলী জানান, তিনি প্রায় ৪০ শতক চরে বোরো চাষ করে ১ হাজার কেজি ধান পেয়েছেন। এ ধানে তার মৌসুমের চাহিদা মেটে যাবে। কৃষক নুর মোহাম্মদ বলেন, বালু চরে তামাক আবাদ বন্ধ করে সাথি ফসল চাষ করা দরকার।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ধ নক ষ ত চ ষ কর চকর য়
এছাড়াও পড়ুন:
বিশ্ব খাদ্য পুরস্কার পাচ্ছেন আবদুল আউয়াল মিন্টু
বাংলাদেশের কৃষি ও খাদ্যখাতে দীর্ঘদিনের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ ফাউন্ডেশন ২০২৫ সালের জন্য পুরস্কৃত করেছে দেশের শীর্ষ কৃষি উদ্যোক্তা আবদুল আউয়াল মিন্টুকে।
প্রতিষ্ঠানটি গত মঙ্গলবার রাতে এক ঘোষণায় ২৭ দেশের ৩৯ জনকে ‘টপ এগ্রি ফুড পাইওনিয়ার’ হিসেবে মনোনীত করে। সেই তালিকায় রয়েছেন লাল তীর সীডস লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিশিষ্ট রাজনীতিক আবদুল আউয়াল মিন্টু।
চার দশকেরও বেশি সময় ধরে বীজ, সবজি ও প্রাণিসম্পদ খাতসহ কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তায় কাজ করছেন মিন্টু। ১৯৯৪ সালে মাত্র ২৫ একর জমির ওপর তিনি ‘লাল তীর সীডস লিমিটেড’ প্রতিষ্ঠা করেন, যা আজ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শীর্ষ বেসরকারি কৃষি প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম। বর্তমানে এটি জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থাগুলোর পর্যবেক্ষণে আঞ্চলিকভাবে সপ্তম স্থানে রয়েছে।
এছাড়া বাংলাদেশে তিনিই প্রথম আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন (আইএসটিএ স্বীকৃত) বীজ পরীক্ষাগার প্রতিষ্ঠা করেন, যা দেশে একমাত্র। মিন্টুর উদ্যোগে দেশে হাইব্রিড ও উন্নত বীজের ব্যবহার জনপ্রিয় হয় এবং সবজি উৎপাদনে বিপুল সাফল্য আসে।
উদ্যোক্তা হিসেবে সফলতার পাশাপাশি কৃষি অর্থনীতি, উন্নত কৃষি প্রযুক্তি ও প্রাণিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় উচ্চতর ডিগ্রি ও গবেষণার মাধ্যমে দেশের কৃষি উন্নয়নে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। তার গবেষণার মাধ্যমে দেশে প্রথমবারের মতো মহিষের জীবন রহস্য উন্মোচন হয়। পাশাপাশি উন্নত জাতের গরু মোটাতাজাকরণে সীমেন প্রযুক্তির প্রচলনও তারই হাত ধরে শুরু হয়।
পুরস্কার প্রসঙ্গে আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘আমি সবসময় কৃষকের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করার চেষ্টা করেছি। কৃষি, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় প্রযুক্তি ও গবেষণার মাধ্যমে অবদান রাখতে চাই। এই সম্মান আমাকে ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে কাজ করতে অনুপ্রাণিত করবে।’
ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, চলতি বছর ৩৯তম বার্ষিকী উপলক্ষে আগামী ২১–২৩ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া অঙ্গরাজ্যের ডেস মইনসে আয়োজিত নরম্যান ই. বোরলাগ আন্তর্জাতিক সংলাপে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।
ফাউন্ডেশনের সভাপতি মাশাল হোসেন বলেন, ‘বিশ্ব এখন খাদ্য, পুষ্টি ও জলবায়ুভিত্তিক সংকটের সম্মুখীন। এই ৩৯ জন সম্মানিত ব্যক্তি সাহসী পরিবর্তনকারী, যারা বৈশ্বিক খাদ্য ব্যবস্থায় মৌলিক পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছেন।’
এ বছর মনোনীতদের মধ্যে রয়েছেন বিজ্ঞানী, কৃষক, নীতিনির্ধারক, উদ্যোক্তা ও মানবতাবাদীরা। যারা বৈশ্বিক খাদ্য ব্যবস্থার টেকসই উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন।