সড়ক নির্মাণে রেলওয়ে ও এলজিইডির ঠেলাঠেলি
Published: 10th, May 2025 GMT
সাতকানিয়ায় নান্দনিক রেলস্টেশন চালুর দেড় বছর পার হলেও নির্মিত হয়নি সংযোগ সড়ক। ফলে গ্রামীণ আলপথ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীদের স্টেশনে আসা-যাওয়া করতে হয়। ট্রেন থেকে স্টেশনে নামলে কোনো গাড়ি পাওয়া যায় না। হেঁটে অন্তত অর্ধ কিলোমিটার গিয়ে সাতকানিয়া-বাঁশখালী সড়কে উঠতে হয়। সেখানে গেলে গাড়ি মেলে। বর্তমানে সংযোগ সড়ক নির্মাণ নিয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) মধ্যে চলছে ঠেলাঠেলি। রেলওয়ে বলছে তারা সড়ক নির্মাণে এলজিইডিকে চিঠি দিয়েছে, এলজিইডি বলছে তারা জানে না।
২০২৩ সালের ১২ নভেম্বর চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন উদ্বোধন করা হয়। তবে ২০১৮ সালে সাতকানিয়া রেলওয়ে স্টেশনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্মাণকাজ শেষ হয়। এখনও নির্মাণ করা হয়নি সংযোগ সড়ক।
এ ব্যাপারে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনের সাবেক প্রকল্প পরিচালক (পিডি) আবুল কালাম আজাদ চৌধুরী বলেন, ‘সরকারের অধিগ্রহণকৃত জায়গায় সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য স্টেশনের পূর্ব পাশে শিডিউল অনুযায়ী কয়েক ফুট জায়গায় কাজ করেছি। প্রকল্পের বাইরে কাজ করার সুযোগ আমাদের নেই। যাত্রীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে যাতে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়, সেজন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরকে (এলজিইডি) চিঠি দেওয়া হয়েছে।’
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপজেলা প্রকৌশলী সবুজ কুমার দে বলেন, ‘সাতকানিয়া রেলস্টেশনে সংযোগ সড়ক নির্মাণের ব্যাপারে আমি কোনো চিঠি পাইনি এবং এ বিষয়ে আমি অবগত নই। তবে, রেলস্টেশনের পাশের জমি যদি এলজিইডির হয় এবং রেল কর্তৃপক্ষ যদি সড়ক নির্মাণের বিষয়টি আমাদের জানায় তাহলে সড়ক নির্মাণে উদ্যোগ গ্রহণ করব।’
বাংলাদেশ রেলওয়ে চট্টগ্রাম পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো.
সরেজমিন দেখা যায়, সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য রেলস্টেশনের পূর্ব পাশে গ্রামীণ আলপথে অধিগ্রহণকৃত কয়েক ফুট জায়গায় পিচঢালাই দেওয়া দেওয়া হয়েছে। সড়কের দুই পাশে দেওয়া
হয়েছে গাইড ওয়ালও। স্টেশনের পশ্চিম পাশে প্ল্যাটফর্মের সাথে লাগোয়া কয়েকটি সিঁড়ি দিয়ে যাত্রীরা যাতায়াত করেন। তবে সেই জায়গা ব্যক্তি মালিকানাধীন। স্টেশনের দুই পাশে আর কোন রাস্তা নেই।
রেল স্টেশনের সাথে লোগোয়া সাতকানিয়া পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের খলিফা পাড়ার বাসিন্দা ইকবাল মুন্না বলেন, ‘স্টেশনের পশ্চিম পাশের জমি ব্যক্তি মালিকানাধীন। এখানে আমাদের পৈত্রিক জমিও রয়েছে। বর্তমানে যে সড়ক দিয়ে ট্রেনের যাত্রীরা যাতায়াত করেন তা হচ্ছে আলপথ। কোনমতে রিকশাও চলাচল করতে পারে। স্টেশনের পূর্ব পাশে যে সড়ক তৈরি করা হচ্ছে তাও পরিকল্পিত নয়। বর্ষাকালে বিলে পানি পূর্ণ থাকে। বর্ষায় এই সড়ক ডুবে গেলে যাত্রীরা চলাচল করতে পারবেন না।’
সাতকানিয়া কেরানিহাট এলাকার ব্যবসায়ী মো. শাহেদ ও মোর্শেদ আলম বলেন, ‘বাড়ির কাছাকাছি এলাকায় রেললাইন হওয়ায় আমরা খুব খুশি। নানা কাজে কাজে ট্রেনেই চট্টগ্রাম শহরে আসা–যাওয়ার চেষ্টা করি। তবে, ট্রেন থেকে স্টেশনে নামলে কোন গাড়ি পাওয়া যায় না। আলপথ দিয়ে পায়ে হেঁটে অন্তত অর্ধ কিলোমিটার গিয়ে সাতকানিয়া-বাঁশখালী সড়কে উঠতে হয়।’
সাতকানিয়া পৌরসভার ছিটুয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. জাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যবসায়িক কাজে আমি প্রায়ই কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম শহরে যাতায়াত করি। আমার বাড়ি থেকে রেল স্টেশনের দূরত্ব পৌণে এক কিলোমিটার। কয়েকবার ট্রেনে যাতায়াতও করেছি। তবে স্টেশনের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো নয়।’
উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো.জসিম উদ্দিন বলেন, ‘ট্রেনের যাত্রীরা কষ্ট করে যাতায়াত করলেও কোন ধরনের মালামাল উঠা-নামা করা যায় না। যার কারণে ব্যবসায়িক এলাকা হিসেবে পরিচিত সাতকানিয়ার ব্যবসায়ীরা ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও ট্রেন দিয়ে কোন মালামাল আনানেয়া করতে পারছেন না। সংযোগ সড়ক নির্মাণে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া দরকার।’
সহকারী স্টেশন মাষ্টার মং ইউ মারমা বলেন, ‘ঢাকা-কক্সবাজার দুই জোড়া এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার লাইনের দুই জোড়াসহ দৈনিক মোট চার জোড়া ট্রেন আসা যাওয়া করে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারগামী দুই জোড়া ট্রেন সাতকানিয়া স্টেশনে দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠা-নামা করে। দৈনিক গড়ে ৭০-৮০ জন যাত্রী হয়। সংযোগ সড়ক না থাকায় যাত্রী কম।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন বিশ্বাস বলেন, ‘ট্রেনের যাত্রীদের জন্য সংযোগ সড়ক থাকা জরুরি। এ বিষয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও এলজিইডির সাথে আলাপ করে অতিদ্রুত কিভাবে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা যায় সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সড়ক স য গ সড়ক ন র ম ণ সড়ক ন র ম ণ র য ত য় ত কর ব যবস য় আম দ র র লওয় সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ইসির প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ ২২ দল, আছে ‘বাংলাদেশ বেকার সমাজ’ও
রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রাথমিক যাচাই–বাছাইয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) অন্তত ২২টি দল উত্তীর্ণ হয়েছে। দ্রুত এসব দলের কার্যক্রম মাঠপর্যায়ে তদন্তের জন্য পাঠানো হবে বলে ইসি সূত্রে জানা গেছে। এরপর নিবন্ধনের জন্য ইসি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
আজ সোমবার ইসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এর আগে গতকাল রোববার মাঠপর্যায়ের যাচাই–বাছাই শেষে তদন্তের জন্য প্রাথমিকভাবে ১৬টি দলের তালিকা করে কমিশন। আরও একদিনের যাচাইয়ে সোমবার এ সংখ্যা বেড়ে ২২টি হয়েছে।
গত ২২ জুন পর্যন্ত নিবন্ধন পেতে ইসিতে আবেদন করে দলগুলো। তখন প্রাথমিক বাছাইয়ে কোনো দলই শর্ত পূরণ করতে পারেনি। এরপর সবগুলো দলকে প্রয়োজনীয় ঘাটতি পূরণে ১৫ দিন সময় দেয় ইসি। ৩ আগস্ট শেষ সময় পর্যন্ত এনসিপিসহ ৮৪টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের শর্ত পূরণের তথ্য ইসিতে জমা দেয়। এরপর যাচাইয়ে ২২টি দল প্রাথমিকভাবে উত্তীর্ণ হয়।
যাচাই–বাছাই শেষে উত্তীর্ণ হওয়া ২২টি দল হলো– ‘ফরওয়ার্ড পার্টি, আমজনতার দল, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি (বিজিপি), বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টি (বিআরপি), বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), মৌলিক বাংলা, বাংলাদেশ জাস্টিস এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি, জাতীয় জনতা পার্টি, জনতার দল, জনতা পার্টি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ জাতীয় লীগ, ভাসানী জনশক্তি পার্টি, বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদ, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)–সিপিবি (এম), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ–শাহজাহান সিরাজ), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ বেকার সমাজ (বাবেস), বাংলাদেশ সলুশন পার্টি এবং নতুন বাংলাদেশ পার্টি।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘১৪৩টির মধ্যে ৮৪টি দল তথ্য ঘাটতি পূরণ করে জমা দেয়, ৫৯টি দল কোনো ধরনের সাড়া দেয়নি। এ ৮৪টি দলের মধ্যে ২২টি দলের তথ্য সঠিক রয়েছে বলে আপাতত পাওয়া গেছে। যেগুলোর মাঠ পর্যায়ে ভেরিফিকেশনের (যাচাই-বাছাই) জন্য চলে যাবে। বাকি ১২১টি দল অযোগ্য বিবেচিত হয়েছে। তাদেরকে কারণ দর্শানো নোটিশসহ আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ফেরত দেওয়া হবে।’
আইন অনুযায়ী, কোনো রাজনৈতিক দল ইসির নিবন্ধন পেতে চাইলে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটি, দেশের এক-তৃতীয়াংশ জেলা ও ১০০টি উপজেলা কমিটি এবং প্রতিটি কমিটিতে ২০০ জন ভোটারের সমর্থনের প্রমাণ থাকতে হয়। এ ছাড়া কোনো দলের কেউ অতীতে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে থাকলে বা আগের নির্বাচনের পাঁচ শতাংশ ভোট পেলেও নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্যতা হিসেবে ধরা হয়। প্রধান এ শর্তগুলো ছাড়াও বেশ কিছু নিয়মকানুন মেনে আবেদন করতে হয় দলগুলোকে।
নিবন্ধনপ্রক্রিয়ায় দলগুলোর আবেদন পাওয়ার পর প্রাথমিক বাছাই করে কমিশন। এরপর সেই দলগুলোর তথ্যাবলি মাঠপর্যায়ে সরেজমিন তদন্ত শেষে কমিশনের কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয়। এরপর নির্বাচন কমিশন যদি নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন কারও দাবি বা আপত্তি আছে কি না, সে জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। কোনো আপত্তি এলে শুনানি করে তা নিষ্পত্তি করা হয়। আর কোনো আপত্তি না থাকলে সংশ্লিষ্ট দলগুলোকে নিবন্ধন সনদ প্রদান করা হয়। নিবন্ধন ছাড়া কোনো দলের পক্ষে নিজ প্রতীকে ভোটে প্রার্থী দেওয়ার সুযোগ থাকে না। ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনের আগে এই নিবন্ধন প্রথা চালু করে ইসি। দেশে বর্তমানে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৫১টি (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগসহ)।
আরও পড়ুন‘বাংলাদেশ বেকার সমাজের’ কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছেলের বাসার ‘ড্রয়িংরুম’২৪ জুন ২০২৫