মাসের শেষের দিকে নিম্নচাপের আশঙ্কা; ঘূর্ণিঝড় হতে পারে কি না, জানাল আবহাওয়া অফিস
Published: 12th, May 2025 GMT
চলতি মে মাসের ২৪ অথবা ২৫ তারিখে বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে কি না, তা এখনই নিশ্চিত নয়।
ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ জ্যেষ্ঠ অধিদপ্তরের মো. বজলুর রশিদ। তিনি আজ সোমবার প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমরা একটি সম্ভাব্য নিম্নচাপের পূর্বাভাস পাচ্ছি। ২৪ থেকে ২৫ মের মধ্যে এটি দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে তৈরি হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে কি না, তা এখন বলা যাচ্ছে না। তবে আশঙ্কা রয়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ।’
মে মাস সাধারণত ঘূর্ণিঝড়প্রবণ মাস হিসেবে পরিচিত। গত বছরের মে মাসেই ঘূর্ণিঝড় রিমাল সৃষ্টি হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছিল। গত বছরের ২৬ মে এ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে বাংলাদেশের উপকূলে। এবারও নিম্নচাপ ও সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের সময় কাছাকাছি। এর আগেও একাধিক বড় ধরনের ঘূর্ণিঝড় এ মাসে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়েছে। তাই আবহাওয়াবিদেরা এ সময় সতর্ক থাকতে বলছেন।
বজলুর রশিদ বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যা দেখা যাচ্ছে, তাতে নিম্নচাপের আশঙ্কা আছে মোটামুটি ৭০ শতাংশ। আর এটি ঘূর্ণিঝড় হবে, এমন আশঙ্কা ৩০ শতাংশ। সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ার উপযোগী রয়েছে। তবে নিম্নচাপ তৈরি হলে সেটি কোথায় যাবে, কীভাবে শক্তি সঞ্চয় করবে, এসব বিষয় আরও কিছুদিন পর জানা যাবে।’
এবার যদি ঘূর্ণিঝড় হয়, তবে এর নাম হবে ‘শক্তি’। নামটি শ্রীলঙ্কার দেওয়া।
আবহাওয়া অধিদপ্তর নিয়মিতভাবে স্যাটেলাইট চিত্র পর্যবেক্ষণ করছে এবং নৌপরিবহন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আগাম সতর্কবার্তা পাঠানো হচ্ছে বলে জানানো হয়।
আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই নিম্নচাপের গঠন ও সম্ভাব্য গতিপথ সম্পর্কে আরও স্পষ্ট তথ্য জানা যাবে। আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, তবে সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে এখনই যা করা দরকার
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের লন্ডন বৈঠকের মাধ্যমে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রধান রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে বিএনপির সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের চলতে থাকা সংকট আপাতত কাটল।
অন্তর্বর্তী সরকার এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ঘোষণা করলেও এই লন্ডন বৈঠকের মাধ্যমে নির্বাচন এখন ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে হবে বলে একটি ঐকমত্যে পৌঁছা সম্ভব হয়েছে।
এখন অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতির পাশাপাশি জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার ও ন্যূনতম সংস্কার বিষয়ে তাদের প্রতিশ্রুত কাজ চালিয়ে যাবে—সেই প্রত্যাশাও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ব্যক্ত করেছেন। এ বিষয়ে দৃশ্যমান সাফল্য অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য হিসেবেও বিবেচিত হবে।
এমতাবস্থায় সংস্কার, জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার ও নির্বাচন নিয়ে একটি বিস্তারিত রূপরেখা প্রণয়ন জরুরি। কেননা ফেব্রুয়ারিতে যদি নির্বাচন করতে হয়, তাহলে হাতে খুব বেশি সময় নেই। তাই সঠিক পরিকল্পনা জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার, ন্যূনতম সংস্কারের মাধ্যমে নির্বাচন—এই তিনটি ক্ষেত্রে সাফল্য নিয়ে আসতে পারে।
আমরা জানি, জুলাই ২০২৪ সালে সংঘটিত নির্বিচার হত্যাকাণ্ড ও বিগত সময়ের কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার বিচারপ্রক্রিয়া চলমান। এই চলমান প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরকারের সংস্কার নিয়ে একটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কর্মপরিকল্পনা সাজানো প্রয়োজন। এর মধ্যে দেখতে হবে কোন কোন সংস্কার অতি জরুরি এবং নির্বাচনের আগেই তার বাস্তবায়ন প্রয়োজন। সেসব সংস্কারকে চিহ্নিত করতে হবে। কেননা ন্যূনতম সংস্কার ব্যতীত নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় গেলে সেটাও একটা বড় প্রশ্ন হিসেবে থেকে যাবে।
সংস্কার নিয়ে ইতিমধ্যেই জনমনে একধরনের হতাশা বিদ্যমান। এটি দূর করার জন্য সরকারকে দৃশ্যমান কিছু পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সংস্কারকে দুই ধাপে বাস্তবায়নের রূপরেখা প্রণয়নের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া যেতে পারে এবং সেটি একটি যুক্তিযুক্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে। সেটি হলো নির্বাচন–পূর্ব এবং নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে সংস্কার।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চলমান সংলাপের মাধ্যমে যদি একমত হওয়া যায় এবং তাদের প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়, তাহলেই এসব বাস্তবায়ন করা সম্ভব। মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমানের লন্ডন বৈঠকের মাধ্যমে আমরা সেই ঐকমত্যের ইঙ্গিত পাই। বর্তমান বাস্তবতায় একে আরও বৃহত্তর ঐকমত্যে রূপান্তর করা অসম্ভব কিছু নয়।
নির্বাচন-পূর্ব সংস্কারগুলো চিহ্নিত করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলো এবং অংশীজনদের সঙ্গে অতিদ্রুত সংলাপে বসা এখনকার প্রধান অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।
এখানে মৌলিক কিছু সংস্কারের ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর একমত হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। সেটা যদি করা না হয়, তাহলে নির্বাচনের জন্য নির্ধারিত তারিখ ঠিক রাখাও কঠিন হয়ে পড়তে পারে। সেটি হলে দেশ আবারও রাজনৈতিকভাবে একটি সংকটের মুখে পড়বে।
তাই অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত হবে সংস্কার এবং নির্বাচন প্রশ্নে একটি সৌহার্দ্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সংলাপ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যৌক্তিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোকেও একটি ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
সংস্কার প্রসঙ্গে জুলাই সনদ, সংবিধান, ইলেকশন কমিশন এবং নির্বাচনব্যবস্থা, সংসদীয় ব্যবস্থা, রাজনৈতিক দলের মধ্যকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, প্রশাসনিক ও বিচারব্যবস্থাসহ আরও যে বিষয়গুলোর সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হতে পারে, সেগুলো চিহ্নিত করে বাস্তবায়নের জন্য পদক্ষেপ হাতে নিতে হবে।
যাতে করে নির্বাচনের আগে অন্তত কিছু জরুরি ও ন্যূনতম সংস্কারের মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা যায়।
নির্বাচন-পূর্ব সংস্কারপ্রক্রিয়া বাস্তবায়নের শুরু হয় অন্তর্বর্তী সরকারের হাত ধরে যা চলমান এবং নির্বাচন-পরবর্তী সরকারের দায়িত্ব হবে সংস্কারের বাকি প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়ন করা।
এ জায়গায় অবশ্য অনেকের দ্বিধা থাকতে পারে, আদৌ কি নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে সংস্কার চলমান থাকবে?
যদিও বাংলাদেশের অতীত ও বর্তমান বাস্তবতায় নির্বাচিত সরকারের সংস্কারপ্রক্রিয়ার প্রতি জনগণের আস্থার অভাব ঐতিহাসিক হলেও এবারের বাস্তবতায় রাজনৈতিক দলগুলোকে সেই প্রতিশ্রুতি দিতে হবে যেন তারা যৌক্তিক, প্রয়োজনীয় ও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বাস্তবায়নযোগ্য সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের জন্য যথাযথ ইতিবাচক পদক্ষেপ হাতে নেয়।
জনগণ যেন এবার উপেক্ষিত থেকে না যায়, সেই বিষয়গুলোও আমাদের সংস্কার প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসতে হবে এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে জনগণের স্বার্থকে সামনে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে সত্যিকার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।এর সঙ্গে আমরা এটাও দেখছি যে রাজনৈতিক দলগুলো বারবারই বলছে যে নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমেও অনেক সংস্কার করা সম্ভব এবং তারা সংস্কারকে এগিয়ে নিয়ে যেতে যথেষ্ট আগ্রহী। রাজনৈতিক দলগুলোকে কীভাবে এই প্রতিশ্রুতির বিষয়ে একটি জবাবদিহির আওতায় আনা যায় সে বিষয় নিয়ে কাজ করা প্রয়োজন। এর সঙ্গে একমত হওয়া সংস্কারগুলো যেন দীর্ঘ মেয়াদে টেকসই হয়, সে বিষয়টিও মাথায় রাখা প্রয়োজন।
তাই রাজনৈতিক দলগুলোকে একটি জবাবদিহির আওতায় আনার একটি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যেন তারা জনগণের কাছে কেবল প্রতিশ্রুতি দিয়েই তাদের দায়িত্ব শেষ না করে বরং তারা যেন সেটি বাস্তবায়ন করতে পারে।
একটি গ্রহণযোগ্য জুলাই সনদের মাধ্যমে এর শুরু হতে পারে। আমরা দেখছি যে জুলাই সনদের আলোচনা চলমান এবং ঐকমত্য কমিশন সেটি নিয়েও কাজ করছে। জুলাই সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণের মাধ্যমে নির্বাচন–পরবর্তী সংস্কার বাস্তবায়নের দিকনির্দেশনা তৈরি করা যেতে পারে।
রাজনৈতিক দলগুলো যদি তাদের নির্বাচনের ইশতেহারে সংস্কার প্রস্তাবনাগুলোকে তাদের প্রস্তাবিত নিজ নিজ কার্যাবলির সঙ্গে সমন্বয় করার মাধ্যমে একটি ঐকমত্যে আসতে পারে, তাহলে তাদের ওপর জনগণের আস্থা আরও বৃদ্ধি পাবে।
কিছু মৌলিক বিষয়ে একমত হওয়ার রাজনৈতিক সদিচ্ছা রাজনৈতিক দলগুলোর যে রয়েছে, তা দৃশ্যমান। যে কারণে নির্বাচন–পরবর্তী সংস্কারের একটি বিস্তারিত দিকনির্দেশনা ও রূপরেখা তৈরি করে জনসাধারণের সম্মুখে উত্থাপন করা রাজনৈতিক দলগুলোর জন্যও একটি ইতিবাচক বিষয় হবে।
পাশাপাশি এটি নির্বাচিত সরকারের জন্য জনগণের প্রত্যাশা পূরণের একটি প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকারের দলিল হিসেবেও থেকে যাবে। সেটি করা গেলে সংস্কারবিষয়ক সেই প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকারকে পরবর্তী নির্বাচিত সরকার চাইলেই খুব সহজেই উপেক্ষা করতে পারবে না।
এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোরও ইতিবাচকভাবে দেশের স্বার্থে একমত হতে হবে এবং এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে। একে অপরকে দোষারোপ করা ও সহিংসতার যে ঐতিহাসিক রাজনৈতিক চর্চা আমাদের রয়েছে, তা থেকে বের হয়ে আসার এখনই সময়। জনগণকে স্বস্তিময় একটি ভবিষ্যৎ উপহার দেওয়ার মাধ্যমে তারাও একটি ইতিবাচক ও গণবান্ধব এবং স্থায়ী রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে।
এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের একটি বৃহৎ ও জনপ্রিয় দল হিসেবে বিএনপি সেই নেতৃত্বের দায়িত্ব নিতে পারে।
রাজনৈতিক দলগুলোকে সব সময় মনে রাখতে হবে, যৌক্তিক ও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রস্তাবিত সংস্কার বিষয়ে যেন রাজনীতি কোনো বাধা হয়ে না দাঁড়ায় এবং সে বিষয়ে নিশ্চয়তা দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে কাজ করে যেতে হবে।
রাজনৈতিক দলগুলো দেশ পুনর্গঠনের যে ঐতিহাসিক সময়ের দ্বারপ্রান্তে, সেই সুযোগ তারা যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারলে দেশ, জনগণ ও তারাই লাভবান হবে। যদিও রাজনৈতিক দলগুলো সব সময় জনগণের স্বার্থে কাজ করার কথা বলে থাকে কিন্তু দিন শেষে তাদের স্বার্থ অনেকাংশেই উপেক্ষিত থেকে যায়।
জনগণ যেন এবার উপেক্ষিত থেকে না যায়, সেই বিষয়গুলোও আমাদের সংস্কার প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসতে হবে এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে জনগণের স্বার্থকে সামনে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে সত্যিকার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।
তাই সবাইকে ছাড় দেওয়ার মনমানসিকতার মধ্য দিয়ে দেশের স্বার্থে সংস্কার, জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার ও নির্বাচন নিয়ে ঐক্যে পৌঁছানো প্রয়োজন এবং সবাই মিলে একমত হওয়া সংস্কার যেন দীর্ঘস্থায়ী ও টেকসই হয়, সে বিষয়ে সাংবিধানিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন।
বুলবুল সিদ্দিকী সহযোগী অধ্যাপক, রাজনীতি ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়