বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে রাজধানীর মিরপুর মডেল থানা এলাকায় মো. সাগর নামে এক হকার নিহতের মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
মঙ্গলবার (১৩ মে) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল রানার আদালত শুনানি শেষে রিমান্ডের আদেশ দেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর মডেল থানার সাব-ইন্সপেক্টর মনিরুল ইসলাম তাকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। মমতাজের পক্ষে তার আইনজীবী রেজাউল করিম রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। তবে তিনি এদিন শুনানি করেননি।
আরো পড়ুন:
মাগুরার সেই শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন
মুন্সীগঞ্জে লঞ্চে দুই তরুণীকে মারধরের ঘটনায় মামলা
শুনানি শেষে আদালত তার চার দিনের রিমান্ডে আদেশ দেন। এর আগে মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে মমতাজ বেগমকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
মামলার সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯ জুলাই মিরপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেন হকার মো.
ঢাকা/এম/এসবি
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
কবরের ৩ প্রশ্ন ও ইসলামের ৩ মূলনীতি
আমরা মুসলিম। ইসলাম আমাদের ধর্ম, এটি আমরা সবাই জানি। কিন্তু আমাদের ধর্মের তিনটি মূলনীতি, যেগুলো কবরে আমাদের প্রশ্ন করা হবে, সেগুলো কি আমরা সবাই ভালোভাবে জানি?
এই তিন মূলনীতি জানা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য আবশ্যকীয়। কবরে ফেরেশতা মুনকার ও নাকিরের প্রশ্নগুলোই আমাদের ধর্মের অন্যতম ভিত্তি।
কবরের তিনটি প্রশ্নমৃত্যুর পর কবরে প্রশ্নকারী ফেরেশতা মুনকার ও নাকির তিনটি মৌলিক প্রশ্ন করবেন—
১. তোমার প্রতিপালক কে?
২. তোমার ধর্ম কী?
৩. তোমার নবী কে?
বারা ইবনে আজিব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘দুজন ফেরেশতা এসে মৃত ব্যক্তিকে বসিয়ে প্রশ্ন করেন, “তোমার প্রতিপালক কে?” সে বলে, “আমার প্রতিপালক আল্লাহ।” তাঁরা প্রশ্ন করেন, “তোমার ধর্ম কী?” বলে, “আমার ধর্ম ইসলাম।” তাঁরা আবার প্রশ্ন করেন, “তোমাদের মধ্যে প্রেরিত এই ব্যক্তি কে?” সে বলে, “তিনি আল্লাহর রাসুল মুহাম্মদ (সা.)।” তারপর তাঁরা বলেন, “তুমি কীভাবে জানলে?” সে বলে, “আমি আল্লাহর কিতাব পড়েছি, তাঁর ওপর ইমান এনেছি এবং সত্য বলে স্বীকার করেছি।”’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪৭৫৩)
যে বান্দা এই প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর দিতে পারবে, সে কবরে শান্তি পাবে। আর যে ভুল উত্তর দেবে, সে কবরের কঠিন শাস্তি ভোগ করবে। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে কবরের আজাব থেকে রক্ষা করুন।
ইসলামের তিনটি মূলনীতিইসলামের তিনটি মূলনীতি হলো—
১. আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলাকে জানা ও চেনা।
২. ইসলাম সম্পর্কে বিশদভাবে জানা।
৩. আমাদের নবী মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে জানা।
আরও পড়ুনকবর জিয়ারতে কী করব, কী করব না১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫১. প্রথম মূলনীতি: রব সম্পর্কে জানাইসলামের প্রথম মূলনীতি হলো আমাদের রব, আল্লাহ তাআলাকে সঠিকভাবে জানা ও চেনা। ‘রব’ অর্থ সবকিছুর মালিক, স্রষ্টা ও পূর্ণ ক্ষমতার অধিকারী উপাস্য। আল্লাহই আমাদের ও সমগ্র বিশ্বকে তাঁর দয়ায় সৃষ্টি করেছেন এবং প্রতিপালন করছেন। আল্লাহ বলেন, ‘যাবতীয় প্রশংসা কেবল আল্লাহরই জন্য, যিনি বিশ্বচরাচরের পালনকর্তা।’ (সুরা ফাতিহা, আয়াত: ১)
আল্লাহকে কীভাবে চিনব
আমরা আল্লাহকে তাঁর নিদর্শন ও সৃষ্টিরাজির মাধ্যমে চিনতে পারি। কোরআনে আকাশ, পৃথিবী, সূর্য, চাঁদ, দিন-রাতের মতো অটল ও পরিবর্তনশীল সৃষ্টির কথা বারবার উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, যিনি নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা আরাফ, আয়াত: ৫৪)
তিনি আরও বলেন, ‘তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে রয়েছে দিবস, রজনী, সূর্য ও চন্দ্র।’ (সুরা ফুসসিলাত, আয়াত: ৩৭)
আল্লাহ আমাদের কেন সৃষ্টি করেছেন
আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন কেবল তাঁর ইবাদত ও দাসত্বের জন্য। তিনি বলেন, ‘আমি জিন ও মানুষকে কেবল আমার দাসত্ব করার জন্য সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা জারিয়াত, আয়াত: ৫৬)
এ দাসত্বের মূল ভিত্তি হলো তাওহিদ, অর্থাৎ আল্লাহর একত্ববাদ প্রতিষ্ঠা ও তাঁর আনুগত্য করা।
প্রথম ফরজ
আল্লাহর ওপর ইমান আনা ও তাগুত (আল্লাহবিরোধী শক্তি) অস্বীকার করা আমাদের ওপর প্রথম ফরজ। আল্লাহ বলেন, ‘যে তাগুতকে অস্বীকার করবে এবং আল্লাহর ওপর ইমান আনবে, সে সুদৃঢ় হাতল ধরেছে, যা ভাঙার নয়।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৫৬)
এখানে ‘সুদৃঢ় হাতল’ বলতে কালিমা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।’ (আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই) বোঝানো হয়েছে।
দ্বিতীয় মূলনীতি: নবী সম্পর্কে জানাইসলামের দ্বিতীয় মূলনীতি হলো আমাদের নবী মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে বিশদভাবে জানা। তিনি কুরাইশ গোত্রের বংশোদ্ভূত, তাঁর বাবা আবদুল্লাহ ও দাদা আবদুল মুত্তালিব। তিনি মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন এবং মদিনায় হিজরত করেন।
তিনি ৬৩ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। এর মধ্যে ৪০ বছর ছিল নবুয়ত–পূর্ব সময়। তিনি তাঁর আমলকে শিরকের কলুষতা থেকে পবিত্র রাখতে এবং প্রতিমা ও তার পূজারীদের থেকে সম্পর্কচ্ছেদ করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
আরও পড়ুননেতৃত্ব গঠনে মহানবী (সা.)–র ৫ মূলনীতি২৮ আগস্ট ২০২৩রাসুল (সা.) ‘পড়ো’ শব্দের মাধ্যমে নবুওয়তপ্রাপ্ত হন। (সুরা আলাক, আয়াত: ১) এবং ‘হে চাদরাবৃত, উঠুন’ শব্দের মাধ্যমে রিসালাতপ্রাপ্ত হন। (সুরা মুদ্দাসসির, আয়াত: ১ থেকে ৭)
আল্লাহ তাঁকে মানুষকে শিরক থেকে ভীতি প্রদর্শন এবং তাওহিদের দিকে আহ্বানের দায়িত্ব দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘হে চাদরাবৃত, উঠুন, সতর্ক করুন। আপনার প্রভুর মহত্ত্ব ঘোষণা করুন। আপনার পোশাক পবিত্র করুন এবং অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকুন।’ (সুরা মুদ্দাসসির, আয়াত: ১ থেকে ৭)
এই আয়াতের তাফসিরে বলা হয়েছে—
‘উঠুন, সতর্ক করুন’—শিরক থেকে মানুষকে ভয় দেখান এবং তাওহিদের দিকে আহ্বান করুন।
‘আপনার প্রভুর মহত্ত্ব ঘোষণা করুন’—তাওহিদ প্রচার করুন।
‘আপনার পোশাক পবিত্র করুন’—আপনার আমলকে শিরকের কলুষতা থেকে মুক্ত রাখুন।
‘অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকুন’—প্রতিমা ও তার পূজারীদের থেকে সম্পর্কচ্ছেদ করুন।
তিনি প্রথম ১০ বছর মক্কায় তাওহিদ প্রচার করেন। মিরাজের রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ হওয়ার পর তিনি মদিনায় হিজরত করেন।
তৃতীয় মূলনীতি: ধর্ম সম্পর্কে জানাইসলাম আমাদের দ্বীন। আল্লাহ মুহাম্মদ (সা.)-কে ইসলাম নিয়ে সমগ্র মানবজাতির কাছে প্রেরণ করেছেন। তাঁর প্রতিটি নির্দেশ কথায় ও কাজে পালন করা এবং নিষিদ্ধ বিষয় থেকে বিরত থাকা মুসলিমের কর্তব্য।
ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লাহ বলেন, ‘যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম তালাশ করে, তা কখনো গ্রহণ করা হবে না এবং আখিরাতে সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৮৫)
তিনি আরও বলেন, ‘রাসুল তোমাদের যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক।’ (সুরা হাশর, আয়াত: ৭)
আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ আদেশ হলো এককভাবে তাঁর ইবাদত করা, যাঁর কোনো শরিক নেই।
আল্লাহর পক্ষ থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিষেধ হলো তাঁর ইবাদতে কাউকে শরিক করা। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সঙ্গে শরিক করাকে ক্ষমা করেন না। তবে এর নিম্নপর্যায়ের গুনাহ ক্ষমা করেন, যার জন্য তিনি জান।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ৪৮, ১১৬)
শেষ কথাইসলামের তিনটি মূলনীতি—আল্লাহকে জানা, নবী মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে জানা ও ইসলাম সম্পর্কে জানা আমাদের জীবনের ভিত্তি। এই মূলনীতিগুলো ভালোভাবে জানলে আমরা আল্লাহর ইবাদত সঠিকভাবে করতে পারব, রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহ যথাযথভাবে পালন করতে আগ্রহী হব ও কবরের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া আমাদের জন্য সহজ হবে, ইনশাআল্লাহ।
আমাদের প্রতিনিয়ত এই দোয়া পড়া উচিত।
উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবিল কবর।’
অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে কবরের আজাব থেকে আশ্রয় চাই।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১,৩৭৭)
আরও পড়ুনকেন শিরক সবচেয়ে বড় পাপ১৮ জুন ২০২৫