ঝালকাঠির নলছিটিতে একটি সড়ক ও কয়েকটি কালভার্ট-বক্স কালভার্ট নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার কুশঙ্গল ইউনিয়নের ফয়রা গ্রামের বাসিন্দাদের ভাষ্য, ছয় বছর আগের প্রকল্পের আওতায় সড়কের কাজ হয়েছে দায়সারা। একমাত্র সেতুটি করা হয়েছে বিলের মাঝখানে। দুটি কালভার্টের অর্ধেক সড়কে, বাকি অর্ধেক পাশের খালে পড়েছে। এ কারণে এগুলো তাদের কোনো কাজেই আসছে না। 
উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে বরিশাল-ঝালকাঠি (বিঝেপি) প্রকল্পের আওতায় ৪ কোটি ৪৭ লাখ ৯৮ হাজার টাকা ব্যয়ে একই প্যাকেজে উপজেলার চারটি সড়কসহ কয়েকটি কালভার্ট ও বক্স কালভার্টের দরপত্র দেওয়া হয়। কয়েক দিন কর্মকর্তাদের কাছে ঘোরাঘুরি করেও কালভার্ট ও বক্স কালভার্টের সংখ্যা জানা যায়নি। প্রকল্পের মধ্যে ছিল কুশঙ্গল ইউনিয়নের মনপাশা বাজার থেকে উকিলবাড়ি পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার সড়ক, একটি কালভার্ট ও আটটি বক্স কালভার্ট নির্মাণ। 
ওই প্রকল্পের কাজ পান ঠিকাদার মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি ঝালকাঠি জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সৈয়দ হাদিসুর রহমান মিলনকে সাব-ঠিকাদার হিসেবে কাজ দেন। ২০২০ সালের জুনে ওই কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে ছয়টি বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। দুটির কাজ হয়নি। একমাত্র কালভার্টটি করা হয়েছে ফয়রা গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য সোহরাব হোসেনের বাড়ির পূর্ব পাশের বিলে।
সরেজমিন দেখা গেছে, কালভার্টটির পূর্বপাশের সড়কটি খানাখন্দে ভরা। বহু বছর আগের ইটের সলিং সরে এটি এখন চলাচলের অযোগ্য। প্রতিদিন হাজারো মানুষ চলাচল করলেও তাদের কাজে আসছে না বিলের কালভার্টটি। 
এলাকাবাসীর অভিযোগ, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে কালভার্টটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু এখনও উদ্বোধন হয়নি। অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে শ্যাওলাধরা কালভার্টটি। প্রকল্পের প্রায় সাত বছর হতে চললেও পাশে সড়ক নির্মিত হয়নি। 
ফয়রা গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম, মো.

দুলাল ও শামীম হোসেনের ভাষ্য, ওই জায়গায় সেতুটির কোনো প্রয়োজন ছিল না। আটটি কালভার্টের মধ্যে ছয়টি নির্মিত হয়েছে। এগুলোর অবস্থাও নাজুক। এই রাস্তাটি দিয়ে ১০ গ্রামের মানুষ চলাচল করে। কিন্তু সেটির কাজই হয়নি। ঠিকাদারের লোকজন এলজিইডি কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে প্রয়োজনীয় রাস্তা নির্মাণ না করে বিলে কালভার্টটি নির্মাণ করেন। 
এমন অভিযোগের বিষয়ে ঠিকাদার মহিউদ্দিন আহমেদ ও সাব-ঠিকাদার সৈয়দ হাদিসুর রহমান মিলনের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দু’জনই ৫ আগস্টের পর থেকে লাপাত্তা। 
এলজিইডির নলছিটি উপজেলা প্রকৌশলী ইকবাল কবিরের ভাষ্য, তিনি যোগ দেওয়ার আগেই এই কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এই সড়ক নির্মাণের জন্য আরেকটি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন এলেই দ্রুত সেটি নির্মাণের চেষ্টা করবেন। এতে জনগণের দুর্ভোগ লাঘব হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সড়ক প রকল প র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

শেখ হাসিনাকে কোনো অবস্থাতেই ফেরত পাঠাবে না ভারত: রাজনৈতিক বিশ্লেষ

২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় ক্ষমতাচ্যুত পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। মামলার অপর আসামি সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে দেওয়া হয়েছে পাঁচ বছরের সাজা।

গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ২০২৪ সালের আগস্টে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা এবং এরপর থেকে তিনি ভারত সরকারের আশ্রয়েই রয়েছেন। ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ শেখ হাসিনার অনুপস্থিতি তার বিচার পরিচালনা করে। আজ সোমবার রায় ঘোষণার সময় আসামিদের মধ্যে কেবল সাবেক পুলিশ প্রধান আবদুল্লাহ আল-মামুন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় নিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন ভারতের জিন্দাল গ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়ান স্টাডিজের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত। তিনি বলেন, “হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আদালতের এই রায় প্রত্যাশিত ছিল, কিন্তু সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবে না ভারত।” 

আলজাজিরাকে দেওয়া মন্তব্যে দত্ত আরো বলেন, “কোনো অবস্থাতেই ভারত তাকে প্রত্যর্পণ করবে না। গত দেড় বছরে আমরা দেখেছি যে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক সবচেয়ে ভালো অবস্থায় নেই এবং অনেক সময়ই ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে।”

দত্ত বলেন, “হাসিনার মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশিত ছিল।”

তিনি বলেন, “সবাই বাংলাদেশের পরিস্থিতি দেখেছেন। সবাই আশা করেছিলেন যে হাসিনার বিচার হবে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষকরা একমত যে, বাংলাদেশে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম দেশের আইনি ব্যবস্থা অনুসরণ করেছে।”

দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক এই রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, “নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ সম্পর্কে কারো সন্দেহ নেই। স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে যে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সরাসরি গুলি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।”

দত্তের ভাষ্যমতে, “আওয়ামী লীগ এখন একটি পাল্টা ব্যাখ্যা তৈরির তৈরি করার চেষ্টা করবে। কিন্তু বাংলাদেশিরা মূলত বিশ্বাস করেন যে- হাসিনা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন।”

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ