কর্মবিরতির প্রভাব/চট্টগ্রাম বন্দরে ২৪ হাজার কনটেইনার নিয়ে ভাসছে ১৭ জাহাজ
Published: 24th, May 2025 GMT
কনটেইনার পরিবহনকারী গাড়িচালকদের কয়েক দফা কর্মসূচির কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজজট তৈরি হয়েছিল আগেই। এরপর কাস্টমস কর্মকর্তা–কর্মচারীদের কলমবিরতির কর্মসূচির প্রভাবে এই জট এখন বড় হচ্ছে। তাতে পণ্য হাতে পেতে অপেক্ষা বাড়ছে ব্যবসায়ীদের। কারণ, বন্দর জলসীমায় পৌঁছানোর পরও একেকটি জাহাজ জেটিতে ভিড়তে পাঁচ থেকে ছয় দিন সময় লাগছে।
বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, আজ শনিবার সকালে বন্দর জেটিতে ভেড়ানোর অপেক্ষায় ছিল কনটেইনার বোঝাই ২২টি জাহাজ। এরপর জোয়ারের সময় পাঁচটি জাহাজ জেটিতে ভেড়ানো হয়। তাতে অপেক্ষায় থাকা জাহাজের সংখ্যা কমে ১৭তে নেমে আসে। এই ১৭ জাহাজে রয়েছে প্রায় ২৪ হাজার একক কনটেইনার। বন্দর–সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই ১৭ জাহাজের কনটেইনার খুব দ্রুত জেটিতে নামিয়ে রাখার জায়গা নেই। কারণ, বন্দর চত্বরে বড়জোর ১০ হাজার একক কনটেইনারের স্থানসংকুলান হতে পারে। কলমবিরতির কারণে শুল্কায়ন কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় জাহাজ থেকে কনটেইনার খালাসের গতি কমে গেছে। তাতে এই অবস্থা তৈরি হয়েছে।
জানা যায়, বন্দরের এই জটের কারণে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হচ্ছেন পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা। কারণ, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের স্থগিতাদেশ শেষ হওয়ার আগে যেসব পণ্য রপ্তানি হবে, তার কাঁচামাল আসছে এখন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশ জারির পর সংস্থাটির কর্মকর্তা–কর্মচারীরা কর্মবিরতি কর্মসূচি শুরু করায় এসব কাঁচামাল বন্দরে আটকে গেছে। এ কারণে কাঁচামাল হাতে পেতে আগের তুলনায় অন্তত ছয় দিন বেশি অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
জানতে চাইলে পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি এস এম আবু তৈয়ব প্রথম আলোকে বলেন, বন্দরকেন্দ্রিক কোনো কর্মসূচি না হলেও এনবিআরের কর্মকর্তাদের কর্মবিরতির প্রভাব পড়ছে বন্দরে। এতে পোশাকশিল্পে বড় ক্ষতি হচ্ছে। ট্রাম্পের শুল্ক স্থগিতাদেশের মধ্যে রপ্তানি করতে হলে দ্রুত পণ্য উৎপাদন করতে হবে। কিন্তু কর্মসূচির কারণে পণ্য হাতে পেতে অনেক সময় লাগছে। আবার সামনে ঈদের ছুটি রয়েছে। এখন যেসব কাঁচামাল আসছে, সেগুলো দিয়ে পণ্য উৎপাদন করে স্থগিতাদেশের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রপ্তানির ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
এদিকে গত তিন মাসে কনটেইনারবাহী গাড়িচালক–শ্রমিকেরা কয়েক দফা কর্মসূচি পালন করেছেন। সর্বশেষ ১৫ মে তাঁরা ১২ ঘণ্টার কর্মসূচি পালন করেন। কনটেইনারবাহী গাড়িশ্রমিকেরা কর্মবিরতিতে গেলে জাহাজ থেকে কনটেইনার নামানো যায় না। আবার ডিপো থেকে রপ্তানির কনটেইনার এনে জাহাজেও তুলে দেওয়া যায় না; অর্থাৎ জাহাজে কনটেইনার ওঠানো–নামানোসহ সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ থাকে। আর এক দিনের কর্মসূচিতে বন্দরে অন্তত চারটি জাহাজের জট লেগে যায়।
এই কর্মসূচি ছাড়াও এনবিআর বিলুপ্ত করার প্রতিবাদে ১৪ মে থেকে কাস্টমস কর্মকর্তা–কর্মচারীদের কলমবিরতি কর্মসূচি চলছে। অর্ধবেলা কর্মসূচির পর গতকাল সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস শনিবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত কোনো কাজ হয়নি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে। শনিবার বেলা তিনটায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে গিয়ে দেখা যায়, কর্মকর্তাদের কক্ষে তালা। শুল্কায়নের কক্ষগুলোতে কাস্টমসের কর্মকর্তা–কর্মচারী কাউকে দেখা যায়নি। পণ্য খালাসে নিয়োজিত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের দেখা গেলেও তাঁদের নথিপত্র নিয়ে অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়।
কাস্টমস কর্মকর্তা–কর্মচারীদের কর্মসূচিতে শুধু আমদানি কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার কথা বলা হলেও বাস্তবে সব কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। কারণ, শুল্কায়ন, পরীক্ষণসহ আমদানি কার্যক্রম না হলে বন্দর থেকে কনটেইনার খালাস করা যায় না। কনটেইনার খালাস না হলে জাহাজ থেকে কনটেইনার নামানোর কার্যক্রমেও ধীরগতি দেখা দেয়। সব মিলিয়ে প্রভাব পড়ে বন্দরে।
বন্দরের তথ্যে দেখা যায়, কাস্টমস কর্মকর্তা–কর্মচারীদের কলমবিরতির আগে বন্দরে প্রায় ৩৭ হাজার একক কনটেইনার খালাসের অপেক্ষায় ছিল। গত বৃহস্পতিবার সকালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৩ হাজার। কর্মসূচি না থাকায় শুক্রবার কনটেইনার খালাস হয়। তাতে কনটেইনারের সংখ্যা কমে ৪১ হাজারে নেমে আসে। তবে শনিবারের কর্মসূচির কারণে এই সংখ্যা আবার বাড়বে। তাতে রোববার দিন শেষে কনটেইনারজট ভয়াবহ আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দরের মুখপাত্র মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
কর্মবিরতির প্রভাব/চট্টগ্রাম বন্দরে ২৪ হাজার কনটেইনার নিয়ে ভাসছে ১৭ জাহাজ
কনটেইনার পরিবহনকারী গাড়িচালকদের কয়েক দফা কর্মসূচির কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজজট তৈরি হয়েছিল আগেই। এরপর কাস্টমস কর্মকর্তা–কর্মচারীদের কলমবিরতির কর্মসূচির প্রভাবে এই জট এখন বড় হচ্ছে। তাতে পণ্য হাতে পেতে অপেক্ষা বাড়ছে ব্যবসায়ীদের। কারণ, বন্দর জলসীমায় পৌঁছানোর পরও একেকটি জাহাজ জেটিতে ভিড়তে পাঁচ থেকে ছয় দিন সময় লাগছে।
বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, আজ শনিবার সকালে বন্দর জেটিতে ভেড়ানোর অপেক্ষায় ছিল কনটেইনার বোঝাই ২২টি জাহাজ। এরপর জোয়ারের সময় পাঁচটি জাহাজ জেটিতে ভেড়ানো হয়। তাতে অপেক্ষায় থাকা জাহাজের সংখ্যা কমে ১৭তে নেমে আসে। এই ১৭ জাহাজে রয়েছে প্রায় ২৪ হাজার একক কনটেইনার। বন্দর–সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই ১৭ জাহাজের কনটেইনার খুব দ্রুত জেটিতে নামিয়ে রাখার জায়গা নেই। কারণ, বন্দর চত্বরে বড়জোর ১০ হাজার একক কনটেইনারের স্থানসংকুলান হতে পারে। কলমবিরতির কারণে শুল্কায়ন কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় জাহাজ থেকে কনটেইনার খালাসের গতি কমে গেছে। তাতে এই অবস্থা তৈরি হয়েছে।
জানা যায়, বন্দরের এই জটের কারণে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হচ্ছেন পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা। কারণ, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের স্থগিতাদেশ শেষ হওয়ার আগে যেসব পণ্য রপ্তানি হবে, তার কাঁচামাল আসছে এখন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশ জারির পর সংস্থাটির কর্মকর্তা–কর্মচারীরা কর্মবিরতি কর্মসূচি শুরু করায় এসব কাঁচামাল বন্দরে আটকে গেছে। এ কারণে কাঁচামাল হাতে পেতে আগের তুলনায় অন্তত ছয় দিন বেশি অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
জানতে চাইলে পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি এস এম আবু তৈয়ব প্রথম আলোকে বলেন, বন্দরকেন্দ্রিক কোনো কর্মসূচি না হলেও এনবিআরের কর্মকর্তাদের কর্মবিরতির প্রভাব পড়ছে বন্দরে। এতে পোশাকশিল্পে বড় ক্ষতি হচ্ছে। ট্রাম্পের শুল্ক স্থগিতাদেশের মধ্যে রপ্তানি করতে হলে দ্রুত পণ্য উৎপাদন করতে হবে। কিন্তু কর্মসূচির কারণে পণ্য হাতে পেতে অনেক সময় লাগছে। আবার সামনে ঈদের ছুটি রয়েছে। এখন যেসব কাঁচামাল আসছে, সেগুলো দিয়ে পণ্য উৎপাদন করে স্থগিতাদেশের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রপ্তানির ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
এদিকে গত তিন মাসে কনটেইনারবাহী গাড়িচালক–শ্রমিকেরা কয়েক দফা কর্মসূচি পালন করেছেন। সর্বশেষ ১৫ মে তাঁরা ১২ ঘণ্টার কর্মসূচি পালন করেন। কনটেইনারবাহী গাড়িশ্রমিকেরা কর্মবিরতিতে গেলে জাহাজ থেকে কনটেইনার নামানো যায় না। আবার ডিপো থেকে রপ্তানির কনটেইনার এনে জাহাজেও তুলে দেওয়া যায় না; অর্থাৎ জাহাজে কনটেইনার ওঠানো–নামানোসহ সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ থাকে। আর এক দিনের কর্মসূচিতে বন্দরে অন্তত চারটি জাহাজের জট লেগে যায়।
এই কর্মসূচি ছাড়াও এনবিআর বিলুপ্ত করার প্রতিবাদে ১৪ মে থেকে কাস্টমস কর্মকর্তা–কর্মচারীদের কলমবিরতি কর্মসূচি চলছে। অর্ধবেলা কর্মসূচির পর গতকাল সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস শনিবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত কোনো কাজ হয়নি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে। শনিবার বেলা তিনটায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে গিয়ে দেখা যায়, কর্মকর্তাদের কক্ষে তালা। শুল্কায়নের কক্ষগুলোতে কাস্টমসের কর্মকর্তা–কর্মচারী কাউকে দেখা যায়নি। পণ্য খালাসে নিয়োজিত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের দেখা গেলেও তাঁদের নথিপত্র নিয়ে অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়।
কাস্টমস কর্মকর্তা–কর্মচারীদের কর্মসূচিতে শুধু আমদানি কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার কথা বলা হলেও বাস্তবে সব কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। কারণ, শুল্কায়ন, পরীক্ষণসহ আমদানি কার্যক্রম না হলে বন্দর থেকে কনটেইনার খালাস করা যায় না। কনটেইনার খালাস না হলে জাহাজ থেকে কনটেইনার নামানোর কার্যক্রমেও ধীরগতি দেখা দেয়। সব মিলিয়ে প্রভাব পড়ে বন্দরে।
বন্দরের তথ্যে দেখা যায়, কাস্টমস কর্মকর্তা–কর্মচারীদের কলমবিরতির আগে বন্দরে প্রায় ৩৭ হাজার একক কনটেইনার খালাসের অপেক্ষায় ছিল। গত বৃহস্পতিবার সকালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৩ হাজার। কর্মসূচি না থাকায় শুক্রবার কনটেইনার খালাস হয়। তাতে কনটেইনারের সংখ্যা কমে ৪১ হাজারে নেমে আসে। তবে শনিবারের কর্মসূচির কারণে এই সংখ্যা আবার বাড়বে। তাতে রোববার দিন শেষে কনটেইনারজট ভয়াবহ আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দরের মুখপাত্র মো. নাসির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর দিন–রাত ২৪ ঘণ্টা সচল রয়েছে। বন্দরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না হলেও নানা কর্মসূচির কারণে বন্দরের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বন্দরের দিক থেকে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি, যাতে জট না হয়।’