কনটেইনার পরিবহনকারী গাড়িচালকদের কয়েক দফা কর্মসূচির কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজজট তৈরি হয়েছিল আগেই। এরপর কাস্টমস কর্মকর্তা–কর্মচারীদের কলমবিরতির কর্মসূচির প্রভাবে এই জট এখন বড় হচ্ছে। তাতে পণ্য হাতে পেতে অপেক্ষা বাড়ছে ব্যবসায়ীদের। কারণ, বন্দর জলসীমায় পৌঁছানোর পরও একেকটি জাহাজ জেটিতে ভিড়তে পাঁচ থেকে ছয় দিন সময় লাগছে।

বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, আজ শনিবার সকালে বন্দর জেটিতে ভেড়ানোর অপেক্ষায় ছিল কনটেইনার বোঝাই ২২টি জাহাজ। এরপর জোয়ারের সময় পাঁচটি জাহাজ জেটিতে ভেড়ানো হয়। তাতে অপেক্ষায় থাকা জাহাজের সংখ্যা কমে ১৭তে নেমে আসে। এই ১৭ জাহাজে রয়েছে প্রায় ২৪ হাজার একক কনটেইনার। বন্দর–সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই ১৭ জাহাজের কনটেইনার খুব দ্রুত জেটিতে নামিয়ে রাখার জায়গা নেই। কারণ, বন্দর চত্বরে বড়জোর ১০ হাজার একক কনটেইনারের স্থানসংকুলান হতে পারে। কলমবিরতির কারণে শুল্কায়ন কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় জাহাজ থেকে কনটেইনার খালাসের গতি কমে গেছে। তাতে এই অবস্থা তৈরি হয়েছে।

জানা যায়, বন্দরের এই জটের কারণে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হচ্ছেন পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা। কারণ, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের স্থগিতাদেশ শেষ হওয়ার আগে যেসব পণ্য রপ্তানি হবে, তার কাঁচামাল আসছে এখন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশ জারির পর সংস্থাটির কর্মকর্তা–কর্মচারীরা কর্মবিরতি কর্মসূচি শুরু করায় এসব কাঁচামাল বন্দরে আটকে গেছে। এ কারণে কাঁচামাল হাতে পেতে আগের তুলনায় অন্তত ছয় দিন বেশি অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

জানতে চাইলে পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি এস এম আবু তৈয়ব প্রথম আলোকে বলেন, বন্দরকেন্দ্রিক কোনো কর্মসূচি না হলেও এনবিআরের কর্মকর্তাদের কর্মবিরতির প্রভাব পড়ছে বন্দরে। এতে পোশাকশিল্পে বড় ক্ষতি হচ্ছে। ট্রাম্পের শুল্ক স্থগিতাদেশের মধ্যে রপ্তানি করতে হলে দ্রুত পণ্য উৎপাদন করতে হবে। কিন্তু কর্মসূচির কারণে পণ্য হাতে পেতে অনেক সময় লাগছে। আবার সামনে ঈদের ছুটি রয়েছে। এখন যেসব কাঁচামাল আসছে, সেগুলো দিয়ে পণ্য উৎপাদন করে স্থগিতাদেশের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রপ্তানির ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

এদিকে গত তিন মাসে কনটেইনারবাহী গাড়িচালক–শ্রমিকেরা কয়েক দফা কর্মসূচি পালন করেছেন। সর্বশেষ ১৫ মে তাঁরা ১২ ঘণ্টার কর্মসূচি পালন করেন। কনটেইনারবাহী গাড়িশ্রমিকেরা কর্মবিরতিতে গেলে জাহাজ থেকে কনটেইনার নামানো যায় না। আবার ডিপো থেকে রপ্তানির কনটেইনার এনে জাহাজেও তুলে দেওয়া যায় না; অর্থাৎ জাহাজে কনটেইনার ওঠানো–নামানোসহ সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ থাকে। আর এক দিনের কর্মসূচিতে বন্দরে অন্তত চারটি জাহাজের জট লেগে যায়।

এই কর্মসূচি ছাড়াও এনবিআর বিলুপ্ত করার প্রতিবাদে ১৪ মে থেকে কাস্টমস কর্মকর্তা–কর্মচারীদের কলমবিরতি কর্মসূচি চলছে। অর্ধবেলা কর্মসূচির পর গতকাল সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস শনিবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত কোনো কাজ হয়নি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে। শনিবার বেলা তিনটায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে গিয়ে দেখা যায়, কর্মকর্তাদের কক্ষে তালা। শুল্কায়নের কক্ষগুলোতে কাস্টমসের কর্মকর্তা–কর্মচারী কাউকে দেখা যায়নি। পণ্য খালাসে নিয়োজিত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের দেখা গেলেও তাঁদের নথিপত্র নিয়ে অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়।

কাস্টমস কর্মকর্তা–কর্মচারীদের কর্মসূচিতে শুধু আমদানি কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার কথা বলা হলেও বাস্তবে সব কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। কারণ, শুল্কায়ন, পরীক্ষণসহ আমদানি কার্যক্রম না হলে বন্দর থেকে কনটেইনার খালাস করা যায় না। কনটেইনার খালাস না হলে জাহাজ থেকে কনটেইনার নামানোর কার্যক্রমেও ধীরগতি দেখা দেয়। সব মিলিয়ে প্রভাব পড়ে বন্দরে।

বন্দরের তথ্যে দেখা যায়, কাস্টমস কর্মকর্তা–কর্মচারীদের কলমবিরতির আগে বন্দরে প্রায় ৩৭ হাজার একক কনটেইনার খালাসের অপেক্ষায় ছিল। গত বৃহস্পতিবার সকালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৩ হাজার। কর্মসূচি না থাকায় শুক্রবার কনটেইনার খালাস হয়। তাতে কনটেইনারের সংখ্যা কমে ৪১ হাজারে নেমে আসে। তবে শনিবারের কর্মসূচির কারণে এই সংখ্যা আবার বাড়বে। তাতে রোববার দিন শেষে কনটেইনারজট ভয়াবহ আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দরের মুখপাত্র মো.

নাসির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর দিন–রাত ২৪ ঘণ্টা সচল রয়েছে। বন্দরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না হলেও নানা কর্মসূচির কারণে বন্দরের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বন্দরের দিক থেকে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি, যাতে জট না হয়।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে বইমেলায় বিক্রি কম, এখনো আশায় আছেন প্রকাশকেরা

রাজশাহী বিভাগীয় বইমেলার প্রথম তিন দিনে লোকজনের ভিড় থাকলেও বেচাকেনা তেমন হয়নি। এতে অনেক প্রকাশকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। তবে আগামী কয়েক দিনে বেচাকেনা বাড়বে বলে আশা করছেন প্রকাশকেরা ও আয়োজক কর্তৃপক্ষ।

গত শুক্রবার রাজশাহী জেলা কালেক্টরেট মাঠে ৯ দিনব্যাপী এই বইমেলার উদ্বোধন করা হয়। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায়, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের উদ্যোগে এবং রাজশাহী বিভাগীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত এ মেলা চলবে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত। মেলায় ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ৭০টি বেসরকারি প্রকাশনাসহ মোট ৮১টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাদে মেলা চলছে বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। আর ছুটির দিনে মেলা শুরু হয় বেলা ১১টায়।

উদ্বোধনের আগের দিন বৃষ্টিতে মেলার মাঠ কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায়। সেই কর্দমাক্ত পরিবেশেই মেলার উদ্বোধন হয়। দর্শনার্থীদের ভোগান্তি কমাতে পরে প্রতিটি স্টলের সামনে ইট বিছিয়ে দেওয়া হয়। এতে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও বিক্রির খরা কাটেনি বলে জানালেন বিক্রেতারা।

গতকাল রোববার সন্ধ্যায় মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের বিভিন্ন অংশে তখনো পানি জমে আছে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য নির্ধারিত মঞ্চের সামনের প্যান্ডেলেও কাদা। সেখানেই কাজী নজরুল ইসলামের জীবন ও সাহিত্য নিয়ে আলোচনা চলছিল, তবে দর্শক-শ্রোতার উপস্থিতি ছিল নগণ্য। স্টলের সামনে ইটের সলিংয়ের তৈরি রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন অনেকে। অনেকে বই দেখছেন।

সূর্যোদয় প্রকাশনীর বিক্রেতা রিপন আলী বলেন, প্রথম দিন তো কাদাপানির মধ্যেই দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। তখনো মানুষ ছিলেন। এখন ইট বিছানোর পর আরও বেশি মানুষ আসছেন, ভিড়ও করছেন, কিন্তু বই কিনছেন খুব কম।

ঐতিহ্য প্রকাশনীর স্টলে কাদার ওপর চেয়ার পেতে বসে থাকতে দেখা গেল বিক্রয়কর্মী ও চিত্রশিল্পী অর্ণব পাল সন্তুকে। তিনি বলেন, মানুষ আসছেন, ঘুরে দেখছেন, কিন্তু বিক্রি নেই বললেই চলে। মেলার ব্যবস্থাপনা আরও ভালো হতে পারত। আরেক বিক্রেতা আবদুল্লাহ হীল বাকি জানালেন, এমনও স্টল আছে, যেখানে সারা দিনে ২০০ থেকে ৩০০ টাকার বইও বিক্রি হচ্ছে না।

তবে হতাশার ভিড়ে আশার কথাও শোনালেন কেউ কেউ। চট্টগ্রাম থেকে আসা নন্দন বইঘর প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী সুব্রত কান্তি চৌধুরী বলেন, বেচাবিক্রি আজ না হোক কাল হবে। মানুষ যে মেলায় এসে বই হাতে নিয়ে দেখছেন, এটাই বড় পাওয়া। এতে তাঁদের মধ্যে বই কেনার আগ্রহ তৈরি হবে।

মেলায় আসা পাঠকদের মধ্যে অবশ্য ভিন্ন চিত্র। দুই সন্তানের জন্য শিশুতোষ বই কিনে এক অভিভাবক বলেন, বাচ্চাদের হাতে বই তুলে দেওয়ার আনন্দটাই অন্য রকম।
মেলা থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম ও তারাশঙ্কর বন্দ্যোপ্যাধ্যায়ের বই কিনেছেন মনির হোসেন। তিনি বলেন, মেলায় একসঙ্গে অনেক বই পাওয়া যায়, যা বই কেনার জন্য দারুণ সুযোগ।

রাজশাহী কালেক্টরেট মাঠে বইমেলা উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছে আলোচনা সভা। গতকাল রোববার সন্ধ্যায়

সম্পর্কিত নিবন্ধ