তিতুমীর কলেজে বৈষম্যবিরোধীসহ সাংবাদিকদের ওপর ছাত্রদলের হামলা
Published: 26th, May 2025 GMT
সরকারি তিতুমীর কলেজে হল খুলে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনরত বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছেন শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে সাংবাদিকদের ওপরও হামলা করেন তারা।
সোমবার (২৬ মে) দুপুর ১২টার দিকে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীদের ওপর এ হামলার ঘটনা ঘটে। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক আহত হন।
অভিযুক্তরা হলেন, তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক আরিফুর রহমান মোল্লা, রিমু, সুমন বাশার, সোহাগ মিয়া, খাজা মাইনুদ্দিন, মেহেদী চৌধুরী, হারুনর রশীদ, ইমাম উদ্দিন, নুর উদ্দিন জিসান, তোফায়েল আহমেদ, আহ্বায়ক কমিটি সদস্য বাইজিদ হাসান সাকিব, আল আমিন, রাশেদুজ্জামান হৃদয়, আক্কাসুর রহমান আঁখি হলের সভাপতি তোহাসহ দেড় শতাধিক নেতাকর্মী।
আরো পড়ুন:
টাঙ্গাইলে সন্ত্রাসীদের হামলায় ঠিকাদার আহত, ফাঁকা গুলি
নরসিংদীতে ডিবি পুলিশের ওপর হামলা, আহত ৬
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মেধার ভিত্তিতে হোস্টেলে হলের সিট বরাদ্দ ও হল খোলার দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। এরই অংশ হিসেবে সোমবার কলেজের হল খোলার বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা কলেজের মূল ফটকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলেন। এ সময় ছাত্রদলে নেতাকর্মীরা এসে তাদের ব্যানার, প্ল্যাকার্ড ছিঁড়ে ফেলেন এবং মারধর করেন। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হন।
এর মধ্যে কলেজের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক হেলাল উদ্দিন নাইম ও নায়েক নূর মোহাম্মদ নামে এক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছেন। আহত হেলালকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং নূর মোহাম্মদকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী রিফাত বলেন, “আমি ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এমন সময় দেখি, হল নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের সামনে জড়ো হয়েছেন। এর কিছুক্ষণ পর ছাত্রদলের অসংখ্য নেতাকর্মী এসে তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এতে অনেকে গুরুতর আহত হয়েছেন।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা ছাত্রলীগকে এমন হামলা করতে দেখতাম। কিন্তু জুলাই আন্দোলনের পর এটিই প্রথম, যা ফ্যাসিস্ট সময়ের ঘটনা মনে করিয়ে দেয়।”
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আলি আহমেদ বলেন, “গতকাল (রবিবার) হলের শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রকাশ করার কথা ছিল, কিন্তু তা করেনি কলেজ প্রশাসন। এ নিয়ে আমরা অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলতে যায়। কিন্তু তাকে না পেয়ে তার কক্ষের সামনে অবস্থান করি। এ সময় সদস্য সচিব সেলিম রেজাসহ কলেজ শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা আমাদের হুমকি দেয়। আজ (সোমবার) পুনরায় এ বিষয়ে আন্দোলন করতে গেলে ছাত্রদলের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের নেতৃত্বে আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়।”
তিনি আরো বলেন, “অধ্যক্ষ স্যার আমাদের বিশৃঙ্খলাকারী বলে ছাত্রদলের হাতে তুলে দিয়েছেন। তিনি আজ আমাদের ওপর হামলা করিয়েছেন। আগে হল ছাত্রলীগের অধীনে থাকত, এখন ছাত্রদলের অধীনে।”
এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুগ্ম-আহ্বায়ক হেলাল উদ্দিন নাইম আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে গেলে হামলা চালান ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনার ভিডিও করতে গেলে সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেন তারা। এ সময় সাংবাদিকদের মোবাইল কেড়ে নিয়ে ভিডিও মুছে ফেলার পাশাপাশি বিভিন্ন হুমকিও দেন হামলাকারীরা।
হামলায় আহত সাংবাদিকরা হলেন, ডেইলি ক্যাম্পাসের নিজস্ব প্রতিবেদক ও সরকারি তিতুমীর কলেজ সাংবাদিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক আমান উল্লাহ আলভি, সারাবাংলা ডটনেটের সাত কলেজ প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ মজুমদার রাব্বি, ডেইলি ক্যাম্পাসের তিতুমীর কলেজ প্রতিনিধি আল-আমিন মৃধা, এশিয়ান টিভি অনলাইনের তিতুমীর কলেজ প্রতিনিধি মাহমুদা আক্তার, রাইজিংবিডি ডটকমের তিতুমীর কলেজ সংবাদদাতা উম্মে হাফসাসহ বেশ কয়েকজন। আহত সাংবাদিকদের সবাই সরকারি তিতুমীর কলেজ সাংবাদিক সমিতির সদস্য।
হামলায় গুরুতর আহত সাংবাদিক আমান উল্লাহ আলভী বলেন, “হামলায় আহত নায়েক নূরকে ছাত্রদলের একটি পক্ষ রিকশায় করে তুলে নিয়ে যাচ্ছিল। এ সময় ভিডিও ধারণ করতে গেলে আমার ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে বেধড়ক মারপিট করে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। আমি গুরতর আহত হয়েছি।”
তিনি বলেন, “আমার সঙ্গে থাকা ফোন ছিনিয়ে নিয়ে ভিডিও ডিলিট করে দেয়। ওইসময় আমার পাশে থাকা এশিয়ান টেলিভিশনের কলেজ প্রতিনিধি মাহমুদা আক্তার ও রাইজিংবিডি ডটকমের উম্মে হাফছারও ফোন ছিনিয়ে নিয়ে ভিডিও ডিলিট করে এবং তাদের হেনস্তা করে।”
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সরকারি তিতুমীর কলেজ শাখার আহ্বায়ক আলাউদ্দিন মিনহাজ বলেন, “মুক্ত গণতন্ত্র চর্চা ও মানুষের বাক স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতেই আমরা জুলাই আন্দোলন করেছি। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা মানে শিক্ষার্থীদের বাক স্বাধীনতা হরণ করা। নাইমের অবস্থা খুব খারাপ। আমরা খুব দ্রুতই এর বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেব।”
তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ইমাম হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, “হামলার ঘটনা নিন্দনীয়। হামলাকারীদের মধ্যে কয়েকজনের নামের তালিকা কেন্দ্রে পাঠিয়ে তাদের বাহিষ্কার করার বার্তা দেওয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সরকারি তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ ড.
ঢাকা/হাফছা/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ত রদল ত ত ম র কল জ কল জ শ খ কল জ র আম দ র সদস য আহত হ র আহত অবস থ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
পশুর হাটে চাঁদাবাজির অভিযোগে বিএনপি ও বৈষম্যবিরোধীর দুই নেতা গ্রেপ্তার
চাঁদাবাজির অভিযোগে কুড়িগ্রামের যাত্রাপুর পশুর হাটের ‘বৈধ’ ইজারাদার মাহাবুব রহমান ও তাঁর সহযোগী মো. আলমগীর গ্রেপ্তার হয়েছেন। গত মঙ্গলবার রসিদ ছাড়া চাঁদা তোলার সময় যৌথ বাহিনীর হাতে তারা আটক হন। গতকাল বুধবার সকালে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হলে পুলিশ গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায়। সেখানে বৈধতার কাগজপত্র দেখালে শুনানি শেষে বিচারক জামিন মঞ্জুর করেন।
গ্রেপ্তার মাহাবুব রহমান কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও বেলগাছা ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান। মো. আলমগীর কুড়িগ্রাম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক। গত মঙ্গলবার তাদের বিরুদ্ধে যাত্রাপুর গরুর হাটে রসিদ ছাড়া চাঁদা তোলার অভিযোগ ওঠে। পরে ফেনী জেলার মহিষ ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন আজাদ হাটে টহলরত যৌথ বাহিনীর কাছে অভিযোগ করলে তাদের আটক করা হয়। আলমগীর পুরো ঘটনাকে ‘ষড়যন্ত্র’ বলে মন্তব্য করেছেন।
এজাহারে বলা হয়, ফেনীর ছাগলনাইয়ার মহিষ ব্যবসায়ী আনোয়ার মঙ্গলবার যাত্রাপুর হাট থেকে ১৭টি মহিষ কেনেন। পরে অভিযুক্তরা তাঁকে (আনোয়ার) গরু-মহিষ বিক্রির রসিদ শেডঘরে নিয়ে যান এবং প্রত্যেক মহিষের জন্য ৫০০ টাকা করে ৮ হাজার ৫০০ টাকা চাঁদা আদায় করেন। এ সময় আনোয়ার তাদের কাছে রসিদ চাইলে তারা তা দেখাতে পারেননি। আনোয়ার বিষয়টি যৌথ বাহিনীকে জানালে এ দু’জনকে আটক করা হয়।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুড়িগ্রাম জেলা কমিটির আহ্বায়ক আব্দুল আজিজ নাহিদ বলেন, ‘মাহাবুব রহমান ওই হাটের ইজারাদার। তিনি চাঁদাবাজ নন। আমার সঙ্গে মাহাবুব রহমানের কথা হয়েছে। তারা কাগজ প্রদর্শনের সময় পাননি। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের আটক করে যৌথ বাহিনী। সকালে কাগজপত্র দেখালে তাদের জামিন হয়।’
কুড়িগ্রাম সদর থানার ওসি মো. হাবিবুল্লাহ জানান, মাহাবুব রহমান যাত্রাপুর হাটের বৈধ ইজারা মালিক। তবে ওই সময়ে তাঁর কাছে কাগজপত্র না থাকায় চাঁদাবাজির অভিযোগে আটক করা হয়। সকালে থানায় চাঁদাবাজির মামলা করেন ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন। ওই মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
অভিযুক্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা মো. আলমগীর বলেন, দুপুরে যথাযথ কাগজ আদালতে দাখিল করে জামিনে মুক্ত হয়েছি। এটি সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্র ছিল।