কোরবানির পশুতে স্বয়ংসম্পূর্ণতার অর্থনৈতিক তাৎপর্য
Published: 26th, May 2025 GMT
কোরবানি কেবল গবাদি পশুর বেচাকেনার অর্থনীতি নয় বরং তা হলো বহুমাত্রিক অর্থনৈতিক তৎপরতা, যা আমাদের জাতীয় অর্থনীতির চাকায় আরও গতি সঞ্চার করে। কোরবানি হলে একদিকে যেমন গবাদি পশু ক্রয় করেন কোরবানিদাতারা, অন্যদিকে খামারি বা প্রান্তিক কৃষকরা গবাদি পশু বিক্রি করে তাদের প্রয়োজনীয় সওদা করেন। এর সঙ্গে যুক্ত হয় মসলার বিরাট বাজার, পশুর খাবার, জবাই করা ছুরি, মাংস কাটার সরঞ্জাম, মাংস কাটা ও বণ্টনে নিযুক্ত কর্মীদের আয়-রোজগার ও চামড়া ক্রয়-বিক্রয়। সব মিলিয়ে এক বিরাট অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞ সমাজের সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়ে কোরবানিকেন্দ্রিক অর্থনীতির প্রভাব। কোরবানির আগে ও পরে এ ঈদকে উপলক্ষ করে হাজার হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়। এই মহাকর্মযজ্ঞকে কেন্দ্র করে লাখো-কোটি মানুষের অস্থায়ী কর্মসংস্থান এবং আয়-রোজগারের ব্যবস্থা হয়। এর মাধ্যমে দেশের জিডিপিও সমৃদ্ধ হয়।
প্রতিবছরের মতো এ বছরও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় দেশে কোরবানিযোগ্য গবাদি পশুর সংখ্যা নিরূপণ করেছে। এ বছর কোরবানিযোগ্য সর্বমোট ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৭টি গবাদি পশুর প্রাপ্যতা আশা করা যাচ্ছে। এবার হৃষ্টপুষ্টকৃত গবাদি পশুর মধ্যে ৫৬ লাখ ২ হাজার ৯০৫টি গরু-মহিষ, ৬৮ লাখ ৩৮ হাজার ৯২০টি ছাগল-ভেড়া এবং ৫ হাজার ৫১২টি অন্যান্য প্রজাতি রয়েছে। অন্যান্য বছরের মতো এবারও ২০ লাখ ৬৮ হাজার ১৩৫টি গবাদি পশু উদ্বৃত্ত থাকবে বলে আশা করছে মন্ত্রণালয়।
সরকারি নিয়ম অনুসারে, প্রতিটি গরু-মহিষ, দুম্বা, ছাগল, ভেড়া ও উটের জন্য বিক্রয়মূল্যের ৫% হারে রাজস্ব দিতে হবে (সূত্র: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন)। এবার শুধু ৫৬ লাখ ২ হাজার ৯০৫টি গরু-মহিষ থেকেই সরকারের রাজস্ব পাওয়ার কথা প্রায় ৩০ কোটি টাকা। অন্যান্য পশু মিলিয়ে প্রায় ৬০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হওয়ার কথা। এ ছাড়া এ বছর কোরবানি হতে যাওয়া ৫৬ লাখ ২ হাজার ৯০৫টি গরু-মহিষ প্রতিটি চামড়ার মূল্য গড়ে ১ হাজার টাকা ধরলে এর মূল্য হয় প্রায় ৫৬১ কোটি টাকা। আবার ৬৮ লাখ ৩৮ হাজার ৯২০টি ছাগল-ভেড়ার প্রতিটির চামড়ার মূল্য ১০০ টাকা ধরলেও এ বাবদ হয় ৬৮.
অন্যদিকে প্রতি ঈদুল আজহায় বছরে উৎপাদিত মোট চামড়ার প্রায় ৬০ শতাংশ সংগৃহীত হয়। চামড়াশিল্প দেশের প্রধান রপ্তানি খাতগুলোর অন্যতম। আয়ের দিক থেকে দেশে তৈরি পোশাক খাতের পর দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানি পণ্য হলো চামড়া। কোরবানি উপলক্ষে লবণের ব্যবসাও চাঙ্গা হয়। চামড়া সংরক্ষণে প্রয়োজন হয় বিপুল জনবলের। এ সময় শ্রমিকরা পান তাদের শ্রমের চড়া মূল্য। দেশের বিভিন্ন স্থানে চামড়া সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণেও লাখ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়।
কোরবানির চামড়ার দাম নিয়ে এবারও শঙ্কা আছে। যদিও কোরবানির পশুর চামড়ার ক্ষেত্রে তথাকথিত সিন্ডিকেট ভাঙতে দেশের এতিমখানা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং প্রান্তিক পর্যায়ে ৩০ হাজার টন লবণ সরবরাহ করা হবে। উপযুক্ত মূল্য না পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্টরা যেন চামড়া মজুত রাখতে পারে, সে জন্য এ উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা।
সর্বোপরি, সরকারের নানামুখী উদ্যোগে বাংলাদেশ এখন গরু-ছাগল তথা মাংস উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। চামড়ার সংকট দূর করতে পারলে কোরবানি গরিবের জন্য আরও স্বাচ্ছন্দ্যের বিষয় হবে বলে বিশ্বাস।
মো. সামছুল আলম: গণযোগাযোগ কর্মকর্তা, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তর,
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়
alam4162@gmail.com
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সমক ল ন প রসঙ গ ক রব ন র
এছাড়াও পড়ুন:
দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে হিন্দু নেতাদের সাক্ষাৎ
আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিভিন্ন পূজা উদ্যাপন পরিষদের নেতারা সাক্ষাৎ করেছেন। তাঁরা এ সময় প্রধান উপদেষ্টাকে পূজামণ্ডপ পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানান।
আজ সোমবার বিকেলে হিন্দু নেতারা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় যান। এ সময় তাঁদের কাছে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি ও সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি তাঁদের বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে সব সময় দেখা করার ইচ্ছা থাকলেও সুযোগ হয় না। পূজা উপলক্ষে বছরে একবার সামনাসামনি দেখা হয়, কথা বলার সুযোগ হয়।’
হিন্দুধর্মীয় নেতারা জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর এক হাজারের বেশি পূজামণ্ডপ বেড়েছে। সারা দেশে পূজামণ্ডপ তৈরির কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে।
নেতারা বলেন, ধর্ম উপদেষ্টা নিয়মিতভাবে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, মন্দির পরিদর্শন করেন। দুর্গাপূজা উৎসবমুখর করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হচ্ছে। গতবারের মতো এবারও নির্বিঘ্নে পূজা উদ্যাপন হবে বলে তাঁরা আশা করছি।
এ সময় স্থায়ী দুর্গামন্দিরের জন্য রেল মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জায়গা বরাদ্দ দেওয়ায় প্রধান উপদেষ্টাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান মহানগর পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব। তিনি বলেন, ‘এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এ জন্য আপনাকে বিশেষ ধন্যবাদ। আপনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নিয়মিত আমাদের খোঁজখবর রেখেছেন। গত বছরের মতো এ বছরও পূজায় আমরা দুই দিন ছুটি পেয়েছি। এ জন্যও আপনাকে বিশেষ ধন্যবাদ। গত বছর ৮ আগস্ট দেশে ফেরার পরপরই আপনি ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করে বলেছিলেন, আমরা সবাই এক পরিবার। আপনার বক্তব্য আমাদের মনে গভীরভাবে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।’
বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, ‘গত বছর দুর্গাপূজায় ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনে গিয়ে আপনি বলেছিলেন, নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে কড়া পাহারা বসিয়ে পূজা হবে এমন দেশ আমরা চাই না। আমরা প্রথমবারের মতো কোনো সরকারপ্রধানের কাছে এমন বক্তব্য শুনেছি। আমরাও আপনার বক্তব্যের সঙ্গে একমত, আমরাও চাই এ আয়োজনে সবাই সহযোগিতা করুক, দেশের সবার মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকুক।’
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের মহাসচিব এস এন তরুণ দে বলেন, ‘আপনি দায়িত্বে থাকাকালীন দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির স্থাপন করেছেন। আমরা লক্ষ করেছি, এক বছর ধরে, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচুর মিথ্যা কথা, ফেক নিউজ ছড়ানো হচ্ছে। আপনার নেতৃত্বে ধর্ম–বর্ণ–জাতিনির্বিশেষে বাংলাদেশের সব মানুষের কল্যাণ হবে, আমরা সেটাই কামনা করি।’
বৈঠকে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, ‘ধর্ম মন্ত্রণালয় সব ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করে। কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে আমরা কল্যাণকর কর্মসূচিগুলো নিশ্চিত করি।’ এ সময় তিনি বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সহযোগিতার কথা তুলে ধরেন।
প্রধান উপদেষ্টা সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও পূজার অগ্রিম শুভেচ্ছা জানান এবং দুর্গাপূজা ঘিরে যাতে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রের সুযোগ তৈরি না হয়, সে জন্য সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।
বৈঠকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান তপন চন্দ্র মজুমদার ও সচিব দেবেন্দ্র নাথ উঁরাও, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী পূর্ণানন্দ (একক), বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজসংস্কার সমিতির সভাপতি অধ্যাপক হীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, শ্রীশ্রী গীতা হরি সংঘ দেব মন্দিরের সভাপতি বিমান বিহারী তালুকদার, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন ফ্রন্টের আহ্বায়ক অপর্ণা রায় দাস, শ্রীশ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দিরের সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র দত্ত ও সিদ্ধেশ্বরী সর্বজনীন পূজা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রণীতা সরকার উপস্থিত ছিলেন।