কোরবানি কেবল গবাদি পশুর বেচাকেনার অর্থনীতি নয় বরং তা হলো বহুমাত্রিক অর্থনৈতিক তৎপরতা, যা আমাদের জাতীয় অর্থনীতির চাকায় আরও গতি সঞ্চার করে। কোরবানি হলে একদিকে যেমন গবাদি পশু ক্রয় করেন কোরবানিদাতারা, অন্যদিকে খামারি বা প্রান্তিক কৃষকরা গবাদি পশু বিক্রি করে তাদের প্রয়োজনীয় সওদা করেন। এর সঙ্গে যুক্ত হয় মসলার বিরাট বাজার, পশুর খাবার, জবাই করা ছুরি, মাংস কাটার সরঞ্জাম, মাংস কাটা ও বণ্টনে নিযুক্ত কর্মীদের আয়-রোজগার ও চামড়া ক্রয়-বিক্রয়। সব মিলিয়ে এক বিরাট অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞ সমাজের সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়ে কোরবানিকেন্দ্রিক অর্থনীতির প্রভাব। কোরবানির আগে ও পরে এ ঈদকে উপলক্ষ করে হাজার হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়। এই মহাকর্মযজ্ঞকে কেন্দ্র করে লাখো-কোটি মানুষের অস্থায়ী কর্মসংস্থান এবং আয়-রোজগারের ব্যবস্থা হয়। এর মাধ্যমে দেশের জিডিপিও সমৃদ্ধ হয়।

প্রতিবছরের মতো এ বছরও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় দেশে কোরবানিযোগ্য গবাদি পশুর সংখ্যা নিরূপণ করেছে। এ বছর কোরবানিযোগ্য সর্বমোট ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৭টি গবাদি পশুর প্রাপ্যতা আশা করা যাচ্ছে। এবার হৃষ্টপুষ্টকৃত গবাদি পশুর মধ্যে ৫৬ লাখ ২ হাজার ৯০৫টি গরু-মহিষ, ৬৮ লাখ ৩৮ হাজার ৯২০টি ছাগল-ভেড়া এবং ৫ হাজার ৫১২টি অন্যান্য প্রজাতি রয়েছে। অন্যান্য বছরের মতো এবারও ২০ লাখ ৬৮ হাজার ১৩৫টি গবাদি পশু উদ্বৃত্ত থাকবে বলে আশা করছে মন্ত্রণালয়। 

সরকারি নিয়ম অনুসারে, প্রতিটি গরু-মহিষ, দুম্বা, ছাগল, ভেড়া ও উটের জন্য বিক্রয়মূল্যের ৫% হারে  রাজস্ব দিতে হবে (সূত্র: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন)। এবার শুধু ৫৬ লাখ ২ হাজার ৯০৫টি গরু-মহিষ থেকেই সরকারের রাজস্ব পাওয়ার কথা প্রায় ৩০ কোটি টাকা। অন্যান্য পশু মিলিয়ে প্রায় ৬০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হওয়ার কথা। এ ছাড়া এ বছর কোরবানি হতে যাওয়া ৫৬ লাখ ২ হাজার ৯০৫টি গরু-মহিষ প্রতিটি চামড়ার মূল্য গড়ে ১ হাজার টাকা ধরলে এর মূল্য হয় প্রায় ৫৬১ কোটি টাকা। আবার ৬৮ লাখ ৩৮ হাজার ৯২০টি ছাগল-ভেড়ার প্রতিটির চামড়ার মূল্য ১০০ টাকা ধরলেও এ বাবদ হয় ৬৮.

৫ কোটি টাকা। কোরবানি উপলক্ষে গরু এবং ছাগলের চামড়া মিলিয়ে এই পুরো টাকা যাচ্ছে সরাসরি গরিবদের হাতে। 
অন্যদিকে প্রতি ঈদুল আজহায় বছরে উৎপাদিত মোট চামড়ার প্রায় ৬০ শতাংশ সংগৃহীত হয়। চামড়াশিল্প দেশের প্রধান রপ্তানি খাতগুলোর অন্যতম। আয়ের দিক থেকে দেশে তৈরি পোশাক খাতের পর দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানি পণ্য হলো চামড়া। কোরবানি উপলক্ষে লবণের ব্যবসাও চাঙ্গা হয়। চামড়া সংরক্ষণে প্রয়োজন হয় বিপুল জনবলের। এ সময় শ্রমিকরা পান তাদের শ্রমের চড়া মূল্য। দেশের বিভিন্ন স্থানে চামড়া সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণেও লাখ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়।

কোরবানির চামড়ার দাম নিয়ে এবারও শঙ্কা আছে। যদিও কোরবানির পশুর চামড়ার ক্ষেত্রে তথাকথিত সিন্ডিকেট ভাঙতে দেশের এতিমখানা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং প্রান্তিক পর্যায়ে ৩০ হাজার টন লবণ সরবরাহ করা হবে। উপযুক্ত মূল্য না পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্টরা যেন চামড়া মজুত রাখতে পারে, সে জন্য এ উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা।
সর্বোপরি, সরকারের নানামুখী উদ্যোগে বাংলাদেশ এখন গরু-ছাগল তথা মাংস উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। চামড়ার সংকট দূর করতে পারলে কোরবানি গরিবের জন্য আরও স্বাচ্ছন্দ্যের বিষয় হবে বলে বিশ্বাস।

মো. সামছুল আলম: গণযোগাযোগ কর্মকর্তা, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তর,
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়
 [email protected] 
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সমক ল ন প রসঙ গ ক রব ন র

এছাড়াও পড়ুন:

২৯ জুলাই-৮ আগস্ট ‘ফ্যাসিবাদী শক্তির’ নৈরাজ্যের আশঙ্কায় এসবির সতর্কতা

শেখ হাসিনা সরকার পতনের বছর পূর্তি উপলক্ষে সরকার ও বিভিন্ন সংগঠনের কর্মসূচি ঘিরে ‘ফ্যাসিবাদী শক্তি’ নৈরাজ্য করতে পারে-এমন আশঙ্কার কথা জানিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব ইউনিটকে সতর্ক করে চিঠি দিয়েছে পুলিশের বিশেষ শাখা। সেই চিঠিতে ২৯ জুলাই হতে ৮ আগস্ট পর্যন্ত সময়কালকে ‘বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ’ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।

সোমবার (২৮ জুলাই) পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) ডিআইজি (রাজনীতিক উইং) এ সংক্রান্ত চিঠিতে এ সময়ে বিশেষ অভিযান পরিচালনাসহ যানবাহন তল্লাশির পরামর্শও দিয়েছেন।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) এসবি প্রধান গোলাম রসুল গণমাধ্যমকে বলেন, “এটা কোনো এক মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। তবে আমরা কোনো বিশেষ দিন-অনুষ্ঠান ঘিরে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ-নির্দেশনা দিয়ে থাকি, এটা আমাদের নিয়মিত কাজের অংশ।”

আরো পড়ুন:

সিজু নিহতের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন

অধ্যাপক জওহরলাল বসাকের উপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ঐতিহাসিক জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ফ্যাসিবাদবিরোধী সামাজিক সংগঠনগুলো ১ জুলাই থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। এই ধারাবাহিকতায় ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত কর্মসূচি পালনের সময়কাল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে কর্মসূচি পালনকে কেন্দ্র করে বিতাড়িত ফ্যাসিবাদী শক্তি অনলাইন-অফলাইনে প্রচারণা চালিয়ে দেশব্যাপী নৈরাজ্য সৃষ্টি, ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির কর্মসূচিতে বাধা প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর অপচেষ্টা চালাতে পারে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাসহ সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তি ও জানমাল রক্ষায় পুলিশের বিভিন্ন বিভাগকে কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছে এসবি। নির্দেশনাগুলো হলো ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা। ৮ আগস্ট পর্যন্ত নিয়মিত সন্দেহজনক ব্যক্তিসহ মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস ও অন্যান্য যানবাহন তল্লাশি করা। বাস টার্মিনাল, লঞ্চঘাট, রেলস্টেশন ও বিমানবন্দরের পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল অভিযান পরিচালনা করা। মোবাইল প্যাট্রোল জোরদার করা। গুজব রোধে সাইবার পেট্রোলিং কার্যক্রম অব্যাহত রাখাসহ গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করা। এছাড়া কোনো অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকলে তা তাৎক্ষণিকভাবে এসবিকে অবহিত করার কথাও বলা হয়েছে।

ঢাকা/এমআর/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে জেলা আইনজীবী ফোরামের পদযাত্রা
  • রাবি উপাচার্যের চেয়ার টেনে পদ্মায় ফেলার আহ্বান ছাত্রদল সভাপতির
  • জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা
  • গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ঢাবি শিবিরের ৩ দিনব্যাপী কর্মসূচি
  • ২৯ জুলাই-৮ আগস্ট ‘ফ্যাসিবাদী শক্তির’ নৈরাজ্যের আশঙ্কায় এসবির সতর্কতা