গাজীপুরে আতঙ্কজনিত রোগে অসুস্থ ২৯ পোশাক শ্রমিক
Published: 26th, May 2025 GMT
একটি পোশাক কারখানায় আতঙ্কজনিত রোগে (প্যানিক ডিসঅর্ডার) আক্রান্ত হয়েছেন ২৯ জন শ্রমিক। কর্তৃপক্ষ কারখানাটি এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। গাজীপুরের কাশিমপুর থানার দক্ষিণ পানিশাইল এলাকায় সোমবার সকালে ডরিন অ্যাপারেলস নামের পোশাক কারখানায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় আক্রান্ত শ্রমিকের সহকর্মীরা তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় ল্যাব ওয়ান হাসপাতালে ভর্তি করেন। আক্রান্ত শ্রমিকরা চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে চলে গেছেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন।
শ্রমিক ও কারখানা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকাল ৮টার দিকে শ্রমিকরা কর্মস্থলে যোগ দেন। এর এক ঘণ্টা পর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে প্রথমে কারখানার সুইং সেকশনের ৩ নম্বর লাইনের ৯ জন শ্রমিক হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। সহকর্মীরা তাদের উদ্ধার করে ল্যাব ওয়ান হাসপাতালে ভর্তি করেন। এর পরই কারখানাটির আরও ২০ জন শ্রমিক অজ্ঞান হয়ে মেঝেতে পড়ে যান। তাদের উদ্ধার করে একই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শ্রমিক অজ্ঞান ও অসুস্থ হওয়ার খবর সহকর্মী শ্রমিকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে দুপুর দেড়টার দিকে কারখানা কর্তৃপক্ষ এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেন। অসুস্থ শ্রমিকের বেশির ভাগই নারী।
এ কারখানার শ্রমিক মিলন মিয়া ও লিঠু সরদার জানান, সকাল সাড়ে ৯টার পর হঠাৎ কয়েকজন নারী শ্রমিক অজ্ঞান হয়ে মেঝেতে পড়ে যান। তাদের পাশের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
শ্রমিকরা আরও জানান, এ ঘটনায় আরও শ্রমিক অসুস্থ হওয়ার খবর পান। পরে জানতে পারেন সুইং শাখার রিপন আহমেদ, তাছলিমা বেগম, সিমা আক্তারসহ ২৯ জন শ্রমিক অসুস্থ হয়েছেন।
কারখানার ওয়েল ফেয়ার অফিসার মরিয়ম খাতুন বলেন, শ্রমিকরা কী কারণে অসুস্থ হয়েছেন, এর তদন্ত শুরু করেছেন। কারখানার পানি পরীক্ষা করতে ঢাকার ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।
কারখানার পরিচালক (প্রশাসন) তানভীর মণ্ডল বাপ্পি বলেন, এত শ্রমিক হঠাৎ কেন অসুস্থ হয়ে পড়লেন, তা তিনি বুঝতে পারছেন না।
ল্যাব ওয়ান হাসপাতালের সহকারী ব্যবস্থাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, অসুস্থ শ্রমিকরা প্যানিক ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ছিলেন। চিকিৎসা দেওয়ার পর তারা সুস্থ হয়ে চলে গেছেন।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
আবেগঘন পরিবেশে আড্ডা’র মোড়ক উন্মোন ও অভয়কে স্মরণ
আবেগঘন পরিবেশে, বন্ধু, স্বজন, সহকর্মী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতির মাধ্যমে মোড়ক উন্মোচন হলো প্রয়াত লেখক অভয় বিশ্বাস রচিত "আড্ডা" উপ্যনাসের।
মঙ্গলবার (২৭ মে) বিকালে ৫ টায় আলী আহাম্মদ চুনকা পাঠাগারের ৫ম তলায় এক্সপ্রেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে আলোচনা, স্মৃতিচারণ, গান, আবৃত্তি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মোড়ক উন্মোচন ও অভয় স্মরন সভা হয়।
সাংস্কৃতিক সংগঠন বটতলার আয়োজনে ও রাকিবুল হাসান জেমস'র সঞ্চালনায় আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন অভয় বিশ্বাসের মা রিনা বিশ্বাস, কবি মজিবুল হক কবীর, কবি আরিফ বুলবুল, সাংস্কৃতিক সংগঠক প্রদীপ ঘোষ বাবু, কবি পলল পরাগ, বিশ্বজিৎ বসাক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বীসহ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বগন।
এ সময়ে লেখক অভয় বিশ্বাসকে স্মরন করে স্মৃতিচারণকালে এক আবেগ প্রবণ পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এবং প্রয়াত লেখকের উপন্যাসের মোড়ক উন্মোচন করতে পরে তার পরিবার, স্বজন, সহকর্মী ও বন্ধুরা আবেগাপ্লুত হয়ে পরেন।
উলেখ্য, প্রয়াত অভয় বিশ্বাস সংক্ষিপ্ত জীবনী অভয় বিশ্বাস, জন্ম: ২৭ মে ১৯৮৫, বাংলা ১৩ জৈষ্ঠ ১৯৩২ বঙ্গাব্দ। গ্রাম: বন্দর থানার অর্ন্তগত ১নং ঢাকেশ্বরীতে। ছেলেবেলা তার শীতলক্ষা নদীর পাশে সবুজে ঘেরা ঢাকেশ্বরীতেই কাটে।
শিক্ষাজীবনের হাতেখড়ি শুরু হয় ঢাকেশ্বরী মিলস্ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের খুব পছন্দের ছাত্র ছিলেন সদা হাস্যজ্বল অভয়। ২০০০ সালে ঢাকেশ্বরী মিলস্ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি পাশ করে বানিজ্য বিভাগে ভর্তি হন নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে।
কলেজেও অভয় বিশ্বাস ছিলেন খুবই দুরন্ত। তার মায়াভরা মুখ, সরল কথাবার্তা আর সদাহাস্যজ্বল মুখ বন্ধুদের কাছে অন্যরকম এক গ্রহনযোগ্যতা তৈরি করে। তোলারাম কলেজে পড়া অবস্থয়ায় বেশিরভাগ সময় থাকতেন টানবাজার মামার বাড়িতে। নারায়ণগঞ্জে থাকার সুবাদে তিনি উন্মেষ সাংস্কৃতিক সংসদে যুক্ত হন।
নাটকে এবং সংগীতে সমানভাবে পারদর্শী ছিলেন তিনি। উন্মেষ সাংস্কৃতিক সংসদ থেকে তিনি এই দেশে এই বেশে, ১৯৭১, অনুকুল ঠাকুরের নাটক সহ বেশ কিছু নাটকে অভিনয় করেন।
পরবর্তিতে তিনি খেলাঘর, ঐকিক থিয়েটার, বটতলা সহ বেশ কিছু সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনে যুক্ত হন। ২০০২ সালে এইচ. এস.সি পাশ করে তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে ইংরেজী সাহিত্যে অনার্স এবং মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।
দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ অভয় বিশ্বাসকে পারিবারিক ও আর্থিক কোনো সংকটই তার লেখাপড়ায় বাধা সৃষ্টি করতে পারেনি। ২০০৯ সালে তার বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে সংসারের সম্পূর্ন দায়-দায়িত্ব গ্রহন করেন অভয় বিশ্বাস। তার বেশ কিছুদিন পরেই ২০০৯ সালেই নারায়ণগঞ্জ হাইস্কুল এন্ড কলেজে তার শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন।
২০১৩ সালে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। শিক্ষকতার পাশাপাশি বাংলাদেশ সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ড থেকে সংস্কৃত মধ্য পরীক্ষায় উর্ত্তীন হয়ে পন্ডিত ডিগ্রি অর্জন করেন। তিন ভাই বোনের মধ্যে অভয় বিশ্বাস ছিলেন সকলের বড়। ছোটবেলা থেকেই সবুজের কাছাকাছি এবং নদীর তীড়ে বেড়ে ওঠা অভয় ভালোবাসতেন গ্রাম্য পরিবেশ, বন্ধুদের সাথে আড্ডা ছিলো তার জীবনের সঞ্জীবনী।
আড্ডার মঝে অট্ট হাসি আর গান গাওয়া ছিলো তার প্রধান আকর্ষন। শিক্ষকতা শুরুর পরে বন্ধুরা তাকে ডাকতো “মাষ্টর” বলে। বই পড়ার প্রতি ছিলো তার বিশেষ ঝোঁক, ক্লাসের ব্রেক বা টিউশোন সব সময় তার সাথে বই থাকতো, স্কুলের শিক্ষকদের বই পড়া জড়িপে অভয়ের নাম ছিলো এক নম্বারে।
শিক্ষকতা কালীন সময় থেকেই লেখালেখির প্রতি তার ঝোঁক তৈরী হয়। সিনিয়র শিক্ষক কবি মুজিবুল হক কবীরের উৎসাহে ও সহযোগীতায় ২০১৫ সালের ১৬ জুলাই প্রথম উপন্যাস “অশনি স্রোত” প্রকাশিত হয়।
এছাড়া নতুন নতুন স্থানে ভ্রমন করা, ক্রিকেট, বেডমিন্টন খেলা ছিলো তার খুব পছন্দের। ২০১৭ সালের বই মেলায় প্রকাশিত হওয়ার কথা ছিলো তার ২য় উপন্যাস “আড্ডা” কিন্তু ২০১৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অনন্তকালের পথে যাত্রা করেন এই সম্ভাবনাময় মানুষটি। মৃত্যুকালে তিনি এক পুত্র সন্তান সহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।