৩৮ দপ্তরের শীর্ষপদ খালি, কেন নিয়োগ দিচ্ছে না সরকার
Published: 28th, May 2025 GMT
সারা দেশের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে থাকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন। রাজধানীর মিরপুর ১৪ নম্বরে অবস্থিত এই দপ্তরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদ খালি গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে দপ্তরটির শীর্ষপদ সামলাচ্ছেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের (প্রতিষ্ঠান ও প্রতিবন্ধিতা অনুবিভাগ) অতিরিক্ত সচিব বিজয় কৃষ্ণ দেবনাথ।
প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়মিত ফাউন্ডেশনে আসেন না। মন্ত্রণালয়ে তাঁর অনেক কাজ রয়েছে। তাঁদের মত হলো, প্রতিবন্ধীদের উন্নয়ন ও মাঠপর্যায়ে প্রতিবন্ধীদের জন্য নেওয়া বিভিন্ন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে তদারকির জন্য নিয়মিত ব্যবস্থাপনা পরিচালক জরুরি।
অনেকেই হয়তো নিজের পছন্দের লোককে সরকারের শীর্ষপদে বসাতে চায়। সে কারণে নিয়োগে দেরি হচ্ছে। ফাঁকা থাকা সরকারের শীর্ষপদে দ্রুত নিয়োগ দিতে হবে।মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া, সাবেক অতিরিক্ত সচিবসমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদও কয়েক মাস ধরে ফাঁকা।
সরকারের এমন অন্তত ২৫টি বিভাগ ও অধিদপ্তরের প্রধান পদ ফাঁকা। এর বাইরে তিনটি মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে কেউ নেই—মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এসব পদে নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বাইরে আরও অন্তত ১০টি দপ্তরপ্রধানের পদ ফাঁকা রয়েছে। এসব পদে নিয়োগ দেয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। সব মিলিয়ে সরকারের অন্তত ৩৮টি দপ্তরের শীর্ষপদ ফাঁকা।
কোনো কোনো দপ্তরপ্রধানের পদ আট মাস, কোথাও পাঁচ মাস, কোথাও তিন মাস ধরে খালি। সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, বারবার তাগিদ দেওয়ার পরও শীর্ষপদে কাউকে দেওয়া হচ্ছে না। সচিব, চেয়ারম্যান ও মহাপরিচালক পদে রুটিন দায়িত্ব বা ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চালানো হচ্ছে। এ কারণে গুরুত্বপূর্ণ ও নীতিনির্ধারণী কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না।
কোনো কোনো দপ্তরপ্রধানের পদ আট মাস, কোথাও পাঁচ মাস, কোথাও তিন মাস ধরে খালি। সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, বারবার তাগিদ দেওয়ার পরও শীর্ষপদে কাউকে দেওয়া হচ্ছে না।এসব পদে মূলত নিয়োগ হয় অতিরিক্ত সচিব পদ থেকে। প্রশাসনে বর্তমানে অতিরিক্ত সচিবের সংখ্যা ৪২৪ বলে জানা গেছে। বিপরীতে পদ রয়েছে ২২২টি। প্রেষণসহ পদ ৩৯৫টি। মানে হলো, যথেষ্ট জনবল থাকার পরও বিভিন্ন সংস্থার শীর্ষপদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ ও অধিদপ্তরের শীর্ষপদ খালি থাকা মানে জনস্বার্থ ক্ষুণ্ন হচ্ছে। জনসেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। দীর্ঘদিন গুরুত্বপূর্ণ পদ খালি পড়ে থাকার মাধ্যমে প্রশাসনের অদক্ষতা ফুটে উঠেছে বলে তাঁরা মনে করেন।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগের (এপিডি) অতিরিক্ত সচিব এরফানুল হক ১৯ মে প্রথম আলোকে বলেন, ফাঁকা পদে যোগ্য কর্মকর্তাকে নিয়োগের চেষ্টা চলছে। এ জন্য সময় কিছুটা বেশি লাগছে।
সাধারণত সরকারের যেকোনো দপ্তরের শীর্ষপদে যেতে কর্মকর্তাদের মধ্যে রীতিমতো প্রতিযোগিতা থাকে। তবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সরকারের শীর্ষপদে নিয়োগ দেওয়া নিয়ে জটিলতা দেখা দিচ্ছে।খালি যেসব সংস্থার শীর্ষপদমৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব পদ প্রায় পাঁচ মাস ধরে ফাঁকা। এর পাশাপাশি ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব পদে দীর্ঘদিন ধরে কেউ নেই।
মহিলা অধিদপ্তর, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো, শিশু একাডেমি, ডাক অধিদপ্তর, বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেড (মিল্ক ভিটা), গণযোগাযোগ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ রাবার বোর্ড, জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, পল্লী উন্নয়ন একাডেমি গোপালগঞ্জ, টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা), বাংলাদেশ ওয়াক্ফ প্রশাসকের কার্যালয় এবং বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের শীর্ষপদ অনেক দিন ধরে খালি পড়ে আছে।
এর বাইরে বাংলাদেশ কেব্ল শিল্প লিমিটেড, টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর, টেলিফোন শিল্প সংস্থা লিমিটেড, বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট, মৎস্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল ও বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের শীর্ষপদ অনেক দিন ধরে ফাঁকা।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এখন সরকার বিসিএস ২০তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের যুগ্ম সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দিতে তোড়জোড় শুরু করেছে। যাতে এই ব্যাচ থেকে যোগ্যদের ফাঁকা থাকা পদে নিয়োগ দেওয়া যায়।শীর্ষপদ ফাঁকা থাকার যত কারণসাধারণত সরকারের যেকোনো দপ্তরের শীর্ষপদে যেতে কর্মকর্তাদের মধ্যে রীতিমতো প্রতিযোগিতা থাকে। তবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সরকারের শীর্ষপদে নিয়োগ দেওয়া নিয়ে জটিলতা দেখা দিচ্ছে।
এ বিষয়ে কথা হয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শীর্ষস্থানীয় দুই কর্মকর্তা ও সরকারের তিনজন নীতিনির্ধারকের সঙ্গে। তাঁরা মোটাদাগে তিনটি কারণের কথা উল্লেখ করেন।
প্রথমত, সরকারি দপ্তরের শীর্ষপদে নিয়োগে বিভিন্ন মহল থেকে তদবির আসছে। সব মহলই প্রভাবশালী। এতে কারও নামে সুপারিশ গেলে অন্যের আপত্তির কারণে ফাইল অনুমোদন না হয়ে ফেরত আসে। আবার নিয়োগের পর বিভিন্ন মহলের তীব্র সমালোচনার মুখে নিয়োগ বাতিল করতে হচ্ছে। এ কারণে কাউকে নিয়োগ না দিয়ে সেখানে কাউকে রুটিন দায়িত্ব দিয়ে ফেলে রাখা হচ্ছে।
যেমন অতিরিক্ত সচিব মতিউর রহমানকে পদোন্নতি দিয়ে নৌসচিব করার পর বিভিন্ন মহলের আপত্তির কারণে তাঁকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করে সরকার। আবার আরেক অতিরিক্ত সচিব মো.
দ্বিতীয়ত, গত ৮ জানুয়ারি অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদকে প্রধান করে জনপ্রশাসনবিষয়ক একটি কমিটি করা হয়েছে। জনপ্রশাসনে যুগ্ম সচিব থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বদলি, শৃঙ্খলা ও নিয়োগের ক্ষেত্রে এ কমিটির পরামর্শ নিতে হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হচ্ছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও জনপ্রশাসন সচিব। কমিটির সদস্যসচিব তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কমিটির সুপারিশ নিতে গিয়ে অনেক সময় চলে যাচ্ছে।
তৃতীয়ত, সরকারি দপ্তরে শীর্ষপদে নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্য অতিরিক্ত সচিব পাওয়া যাচ্ছে না। যাঁদের নাম সামনে আসে, তাঁদের অন্য পক্ষ অনেক ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী হিসেবে তুলে ধরে। আবার অনেকেই আছেন, যাঁদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এখন সরকার বিসিএস ২০তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের যুগ্ম সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দিতে তোড়জোড় শুরু করেছে। যাতে এই ব্যাচ থেকে যোগ্যদের ফাঁকা থাকা পদে নিয়োগ দেওয়া যায়।
একজনকে একাধিক দায়িত্বশীর্ষপদ ফাঁকা থাকা একাধিক দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক কর্মকর্তাকে দিয়ে একাধিক দায়িত্ব পালন করানো হচ্ছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. শাহজাহান মিয়া একসঙ্গে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বর্তমান প্রশাসক। একই সঙ্গে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবেও অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। আবার স্থানীয় সরকার বিভাগের উন্নয়ন অনুবিভাগের দায়িত্বও পালন করছেন।
ঢাকা ওয়াসার পাশাপাশি রাজশাহী ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদেও কাউকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। সরকারের দুজন কর্মকর্তাকে দিয়ে ঢাকা ও রাজশাহী ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করানো হচ্ছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, একজন কর্মকর্তার পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি দপ্তরের দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়।
পূর্ণকালীন ও রুটিন সচিবের দায়িত্ব পালনে বেশ পার্থক্য রয়েছে। রুটিন সচিব, মহাপরিচালক বা চেয়ারম্যান তাঁদের মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধিদপ্তরের শুধু দৈনন্দিন কাজ করবেন। এর বাইরে কোনো আইন সংশোধন, নতুন আইন প্রণয়ন, প্রকল্প গ্রহণ, অনুমোদন, আরেক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ, অন্য দেশের সঙ্গে যোগাযোগ—এসব গুরুত্বপূর্ণ কাজ রুটিন দায়িত্বে থাকা সচিব করতে পারেন না। এককথায় রুটিন দায়িত্বে থাকলে সচিব রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না।
পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার (ওয়ারপো) মহাপরিচালকের পদটি গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে খালি। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান নিজ দায়িত্বের বাইরে ওয়ারপোর মহাপরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন আট মাস ধরে। ২০ মে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ওয়ারপোর মতো প্রতিষ্ঠানে একজন নিয়মিত মহাপরিচালক থাকলে ভালো। তা ছাড়া দুই জায়গায় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে চাপও বেড়েছে।
‘দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতি হবে ভয়াবহ’সরকারি চাকরির বিধিবিধানের বিশেষজ্ঞ ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া ২০ মে প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের শীর্ষপদ খালি থাকলে জনস্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়। জনসেবা ব্যাহত হয়। এসব পদ শূন্য থাকার তাৎক্ষণিক ক্ষতি হয়তো দেখা যাবে না। তবে দীর্ঘ মেয়াদে এর ক্ষতি হবে ভয়াবহ।
ফিরোজ মিয়া বলেন, অনেকেই হয়তো নিজের পছন্দের লোককে সরকারের শীর্ষপদে বসাতে চায়। সে কারণে নিয়োগে দেরি হচ্ছে। ফাঁকা থাকা সরকারের শীর্ষপদে দ্রুত নিয়োগ দিতে হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর মকর ত দ র র কর মকর ত ক কর মকর ত কর মকর ত ক প রথম আল ক এক ধ ক দ ন মন ত র উপদ ষ ট সরক র ব এসব পদ পদ খ ল কম ট র জনস ব বলছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
সাদপন্থীদের ইজতেমা আয়োজন করতে না দেওয়ার দাবি
টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে মাওলানা সাদ কান্ধলভী অনুসারীদের (সাদপন্থী) ইজতেমা আয়োজন করতে না দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাবলিগ জামাতের শুরায়ে নেজাম (জুবায়েরপন্থী) অনুসারীরা। পাশাপাশি তাঁরা সরকারের প্রস্তাবে রাজি হয়ে আগামী বছরের মার্চ মাসে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা করার কথাও বলেছেন। গত আয়োজনে ইজতেমা মাঠে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও সাজা নিশ্চিতের দাবিও জানান তাঁরা।
আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। ‘হযরত ওলামায়ে কেরাম ও দাওয়াত ও তাবলিগের সাথীবৃন্দের’ উদ্যোগে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
এর আগে গত রোববার সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের পর বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তাবলিগের শুরায়ে নেজামের সাথী মুফতি আমানুল হক বলেন, ‘কোরআন ও হাদিসের কথা যারা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে, তাদের ইসলামি দাওয়াতের এই ময়দানে জায়গা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। রাসুল (সা.)-এর তরিকা, সুন্নাহ ও হাদিসের অনুসরণে যারা তাবলিগি কার্যক্রম পরিচালনা করে, কেবল তারাই ইজতেমা করার অধিকার রাখে।’
মুফতি আমানুল হক আরও বলেন, ‘সরকারের ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে জারি করা প্রজ্ঞাপনে সাদপন্থীরা শেষবারের মতো টঙ্গী ময়দানে ইজতেমা করার অনুমতি পেয়েছিল। সেই প্রজ্ঞাপনে তাদের স্বাক্ষরও রয়েছে। সরকার তখনই বুঝেছিল—একই মাঠে দুই পক্ষের ইজতেমা আয়োজন দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।’
২০২৪ সালের ডিসেম্বরের ইজতেমা মাঠে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে মুফতি আমানুল হক বলেন, ‘গত বছরের ১৮ ডিসেম্বরের রাতে সাদপন্থীদের অনুসারীরা অতর্কিত হামলা চালায়। তাদের বাংলাদেশি নেতা ওয়াসিফ সাহেবের চিঠিতে উল্লেখ ছিল, “যুগটা ব্যতিক্রমী, সবাই প্রস্তুতি নিয়ে আসবে”—এই প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই তারা হামলার পরিকল্পনা করেছিল। ঘুমন্ত মুসল্লিদের ওপর টর্চলাইট নিয়ে হামলা চালানো হয়, যা একতরফা সন্ত্রাসী কার্যক্রম ছিল।’ তিনি দাবি করেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠকেও প্রমাণিত হয়েছে, ‘এ হামলা একতরফাভাবে সাদপন্থীদের পক্ষ থেকেই হয়েছিল।’
মুফতি কেফায়েত উল্লাহ আজহারী তাঁর লিখিত বক্তব্যে বলেন, কিছু স্বার্থান্বেষী ও ইসলামবিরোধী মহলের প্ররোচনায় তাবলিগ জামাতে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের মাওলানা সাদ সাহেবের অনুসারীরা বেআইনি পথে টঙ্গী ইজতেমা মাঠ ও কাকরাইল মসজিদে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এমনকি তাঁরা সরকারকে বিব্রত করতে ‘যমুনা ভবন ঘেরাও’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর বিশৃঙ্খলাকারীদের কাকরাইল মসজিদে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় এবং শুরায়ে নেজামপন্থীদের কাকরাইলে দাওয়াত কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দেয় বলে জানান মুফতি কেফায়েত উল্লাহ আজহারী। তিনি বলেন, ২০২৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারির ৬৩ নম্বর স্মারকে বলা হয়, সাদপন্থীরা শেষবারের মতো ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে টঙ্গীতে ইজতেমা করতে পারবে, এরপর আর নয়। তারা স্বাক্ষর দিয়ে সেই শর্ত মেনে নিয়েছিল।
শুরায়ে নেজামপন্থীরা বলেন, ‘আমরা সরকারের সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করছি। আগামী বছরের মার্চে ইজতেমা আয়োজনের জন্য প্রস্তুতি শুরু করা হবে।’
সংবাদ সম্মেলন থেকে সরকারের কাছে ৪ দফা দাবি পেশ করেন তাবলিগ জামাতের শুরায়ে নেজাম (জুবায়েরপন্থী) অনুসারীরা। তাঁদের দাবিগুলো হলো ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ইজতেমার তারিখ ঘোষণা, টঙ্গী ইজতেমা মাঠকে অস্থায়ীভাবে ‘কেপিআই’ হিসেবে ঘোষণা, বিদেশি মেহমানদের ভিসা সহজীকরণের পরিপত্র নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রকাশ ও গত বছরের ইজতেমা মাঠে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা শাহরিয়ার মাহমুদ, মতিন উদ্দিন আনোয়ার, রুহুল আমিন এবং তাবলিগ জামাত বাংলাদেশের (শুরায়ে নেজাম) মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান।