আজমেরী হক বাঁধন। অভিনেত্রী ও মডেল। ঈদে মুক্তি পেতে যাচ্ছে তাঁর অভিনীত সিনেমা ‘এশা মার্ডার’। সানী সানোয়ার পরিচালিত এ সিনমো ও অন্যান্য প্রসঙ্গে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন বুলবুল ফাহিম

আপনার অভিনীত সিনেমা ‘এশা মার্ডার’ আসছে ঈদে...
হ্যাঁ। এটার শুটিং হয়েছিল আগেই। কয়েক দফায় হয়েছে এর দৃশ্যধারণ। বর্তমানে সিনেমাটি সেন্সর সার্টিফিকেশন বোর্ডে জমা পড়েছে। কয়েকটি সিনেমার সঙ্গে যেহেতু সিনেমাটি ঈদে মুক্তি পাবে তাই একটু এক্সাইটেড। আশা করি, দর্শক সিনেমাটি হলে গিয়ে দেখবেন।

এখানে আপনাকে দর্শক কীভাবে পাচ্ছে?
এত বছরের ক্যারিয়ারে কখনও পুলিশ অফিসারের চরিত্রে আমি অভিনয় করিনি। এখানে আমি সেই চরিত্রেই অভিনয় করেছি। এটা মূলত নারীপ্রধান গল্প– এটা আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও বটে। নারীপ্রধান গল্প বলেই এই সিনেমায় অভিনয়ের জন্য রাজি হয়েছি। কারণ, আমাদের মধ্যে একটা ধারণা আছে পুলিশ অফিসার মানেই ছেলে। এই জায়গা থেকে বের হয়ে এসে আমাকে কাস্ট করার জন্য নির্মাতা সানী সানোয়ার ভাইয়ের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।

পুলিশ অফিসার চরিত্রটি কতটা চ্যালেঞ্জিং মনে হয়েছে?
চ্যালেঞ্জ তো ছিলই। বিশেষ করে বডি ল্যাঙ্গুয়েজ। কীভাবে অস্ত্র চালাল, ফাইটসহ বেশকিছু বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছে। সব মিলিয়ে এটা বেশ চ্যালেঞ্জিং চরিত্র ছিল।

ঈদে সিনেমা হলে প্রথম আপনার সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে, প্রচারণা নিয়ে বাড়তি পরিকল্পনা আছে?
ঈদের মতো বড় উৎসবে এর আগে আমার কোনো সিনেমা আসেনি। এবারই প্রথম। আমি জানি না, ঈদে সিনেমা মুক্তির জন্য কী পরিকল্পনা করতে হয়। যেভাবে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ সিনেমার প্রচার করেছি সেভাবেই করব। প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে দর্শকের সঙ্গে সিনেমা দেখার আনন্দ ভাগ করে নেব।   

রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিতের ‘মাস্টার’ নামে একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন, সেটার কী খবর?
এই সিনেমার শুটিং শেষ করেছি। যতদূর জানি এই সিনেমাটা চলতি বছরেই মুক্তি পাবে।

২০১০ সালে ‘নিঝুম অরণ্যে’ থেকে শুরু করে ‘এশা মার্ডার’, এই ১৫ বছর বাঁধনকে দর্শক সিনেমায় পায়নি.

..
সত্যি কথা বলতে আমি তো সিনেমা সেভাবে করি। আর আমি তো নাটকের মানুষ। বলতে গেলে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ করার পর আমার সিনেমার জার্নিটা শুরু। এরপর বলিউডের ‘খুফিয়া’ সিনেমাসহ বেশকিছু সিরিজ করেছি। আমি এখন যে ধরনের চরিত্র চাই সেগুলো তো আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে খুব একটা হয় না।

ভারতের নতুন প্রজেক্ট নিয়ে আলোচনা?
‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেনি’ ও ‘খুফিয়া’ সিরিজের পর প্রস্তাব অনেক পেয়েছি। কিন্তু ভিসা পাইনি বলে আমি অনেকগুলো কাজ করতে পারিনি। এটা আমি কখনও বলিনি।

কান চলচ্চিত্র ‘আলী’ সিনেমা বিশেষ পুরস্কার পেয়েছে...
এটা নিয়ে আমি খুবই আনন্দিত এবং গর্বিত। পুরো টিমকে আমি শুভ কামনা জানিয়েছি। আশা করি, আমাদের দেশ থেকে প্রত্যেক বারই দাপ্তরিকভাবে প্রতিযোগিতা বিভাগে চলচ্চিত্র যাবে। 

ইন্ডাস্ট্রিতে অনেকেই সিন্ডিকেট নিয়ে প্রশ্ন তোলে, আপনার কাছে বিষয়টি কী মনে হয়?
ইন্ডাস্ট্রিতে সিন্ডিকেট আছে, এটা নিয়ে সন্দেহের কিছু নেই। তবে আমি যে কাজ চাই সেটা সিন্ডিকেটের মধ্যে পড়ে না। তাই এটা নিয়ে আমার সঙ্গে কারও দ্বন্দ্ব হয় না। তবে এটা নিয়ে বলার কিছু নেই, কারণ আমাদের ইন্ডাস্ট্রিটাই এ রকম।

আপনি কম কাজ করেন... 
‘রেহানা মরিয়ম নূর’ সিনেমায় আমি আমি কাজের মাধ্যমে সামাজিক কিছু বার্তা দিতে চেয়েছি। কাজ করে সমাজকে যদি কিছু না দিতে পারি তাহলে সে কাজ করে লাভ কী? এজন্য বিনয়ের সঙ্গে অনেক কাজের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে। আমি চাই কম কাজ করতে, কিন্তু সেটা মনের মতো করে করতে চাই। 

বর্তমানে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে কী বলবেন?
জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও তার পরবর্তী সময়ে দেশ নিয়ে আমাদের উচ্চ আকাঙ্ক্ষাটা ছিল। অভ্যুত্থানের উত্তেজনায় আমরা হয়তো বেশি বেশি চিন্তা করেছি। কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন হয়তো আমাদের মনমতো হয়নি। আমি চাই দ্রুত দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। নির্বাচিত সরকার এসে দেশের হাল ধরুক। 

সম্প্রতি একটি গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট বলে প্রচার করা হয়েছে। এ বিষয়ে কী বলবেন?
দেখুন, জুলাই আন্দোলনে আমাকে বলা হলো সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (সিআইএ)-এর এজেন্ট। আমি নাকি ইউএসএআইডি থেকে টাকা নিয়ে আন্দোলন করেছি। তারপর হলাম জামায়াতের এজেন্ট। কদিন আগে আবারও ‘র’-এর এজেন্ট বানানো হলো! বর্তমান সরকারের ঘনিষ্ঠ একজন আমার কাছে সিরিয়াসভাবে জিজ্ঞেস করেছেন, “টাকা খাইছো নাকি?’ এগুলো  শুনে অবাক হয়েছে। না জেনে মানুষ কথা বলে কীভাবে– আমার বুঝে আসে না। আজব এক সমাজে আমাদের বসবাস! জেনে না জেনে একটা কথা বলে দিলেই হয়ে যায়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা আপনার ব্যক্তিজীবনে কতটা প্রভাব পড়ে?
সমালোচনা করা অধিকার তো সবার আছে। তবে সেটা হতে হবে গঠনমূলক। এটা হলে কোনো আপত্তি নেই। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমাকে নিয়ে সমালোচনা আমার ব্যক্তিজীবনের ওপর কোনোই প্রভাব ফেলে না।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইন ড স ট র চর ত র ক জ কর আম দ র আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টে সোনালী মিতুয়ার বাজিমাত

বাংলাদেশের মেকআপ আর্ট জগতে নীরবে নতুনত্ব যোগ করে যাচ্ছেন সোনালী মিতুয়া। তার শৈল্পিক ইলিউশন এবং বডি পেইন্টিংগুলো আন্তর্জাতিক মানের, যা দেখে চোখ ফেরানো দায়। বর্তমানে ফিনল্যান্ডে মেকআপের ওপর উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন এই শিল্পী, যার ক্যানভাসে শৈশবের প্রথম গন্ধ ছিল তেল রং আর থিনারের তীব্রতা। মেকআপ ব্যবহার করে তিনি যে ক্যানভাস তৈরি করেন-তা এক কথায় অনন্য, অসাধারণ। 

সোনালী মিতুয়া কখনও তার মুখে ফুটে ওঠে ফাটল ধরা পৃথিবী, যেখান থেকে গজিয়ে ওঠে সবুজ লতা। কখনও দেখা যায় তার মুখটাই এক অর্ধেক যন্ত্র, অর্ধেক প্রকৃতি, যেন মানুষ আর মেশিনের মাঝের এক অদ্ভুত, কাব্যময় দ্বন্দ্ব।আর কখনও সেই মুখটাই অন্ধকারে মিলিয়ে যায়, শুধু দেখা যায় এক ভয়ঙ্কর কালো গহ্বর — যেন মানুষের শূন্য আত্মা। এগুলো কোনো সিনেমার দৃশ্য না।এগুলো এক তরুণী মেকআপ আর্টিস্টের সৃষ্ট জীবন্ত শিল্পকর্ম।

আরো পড়ুন:

একা বাস করতে পারে যে পাখি

কেউ কটূক্তি করলে কী করবেন?

সোনালী মিতুয়ার মেকআপে একটা গল্প, একটা দর্শন, একটা গভীর বার্তা লুকিয়ে থাকে। যেখানে অধিকাংশ মানুষ মেকআপকে শুধু প্রসাধনের জগতে দেখে, সে সেখানে মেকআপকে তুলেছে এক উচ্চমাত্রার শিল্প হিসেবে। তার হাতে রঙ মানে—চামড়ার ওপরে নয়, বরং আত্মার ভাষা প্রকাশের এক মাধ্যম।

তার কাজে দেখা যায় প্রস্থেটিক মেকআপের প্রভাব— যেখানে মুখ বদলে যায়, গড়ে ওঠে নতুন রূপ, নতুন চরিত্র। এমন কৌশল একদিন তাকে সিনেমার পর্দায় প্রস্থেটিক আর্টিস্ট হিসেবে বড় জায়গায় নিয়ে যাবে—
এ কথা বলার জন্য বিশেষজ্ঞও হতে হয় না। 

এই মেয়েটির সবচেয়ে বড় শক্তি তার কল্পনাশক্তি। সে মুখের ভেতরেই ফুটিয়ে তোলে গল্প—একদিকে প্রকৃতি, ফুল, প্রজাপতি; অন্যদিকে প্রযুক্তি, ধ্বংস আর শূন্যতা। দেখলে মনে হয়, এই দুইয়ের টানাপোড়েনেই গড়ে উঠেছে তার শিল্পজগৎ।

বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য এই মেয়েটি এক অনুপ্রেরণা। সে প্রমাণ করছে—শিল্পের ভাষা যদি শক্ত হয়, তাহলে দেশের সীমা পেরিয়ে বিশ্বেও পৌঁছানো যায়। যেখানে মেকআপকে এখনো অনেকেই কেবল সাজের কাজ মনে করেন, এই মেয়েটি সেখানে দেখিয়েছে — মেকআপও হতে পারে দর্শন, প্রতিবাদ আর সৃষ্টির ক্যানভাস। 

তিনি জানেন,  প্রস্থেটিক আর্টে (বিশেষত কৃত্রিম অঙ্গ, ক্ষত বা ফ্যান্টাসি চরিত্র তৈরি) করা যায় দক্ষতার সাথে।  বর্তমানে বাংলাদেশের সিনেমায় যেখানে প্রস্থেটিকের ব্যবহার খুবই সীমিত, সেখানে সোনালী মিতুয়ার মতো একজন আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিল্পী আছেন, তার হাতেই তৈরি হতে পারে বাংলাদেশের ইতিহাসের চরিত্রদের নিখুঁত রূপ, অথবা আমাদের ফ্যান্টাসি সিনেমার ভিনগ্রহের প্রাণী।

সোনালী মিতুয়ার কাজগুলো দেখলেই বোঝা যায়, তিনি মেকআপকে স্রেফ সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যম হিসেবে দেখেন না, বরং এটিকে একটি শক্তিশালী গল্প বলার হাতিয়ার মনে করেন। 

একটা ছবিতে দেখা যাচ্ছে একজন মানুষ প্রকৃতির মাঝে ফাটল ধরা পাথরের মতো এক রূপ ধারণ করেছেন। সবুজ, হলুদ ও লালের মিশ্রণে চোখের অংশটি গভীর এবং রহস্যময়, আর ফাটলের ভেতর দিয়ে বেরিয়ে আসা লতা-পাতা জীবনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটি তার পরিবেশ-সচেতনতা এবং ফ্যান্টাসি আর্টের দক্ষতা প্রমাণ করে।

সাদাকালো স্কেচের মতো দেখতে এই মেকআপটি অত্যন্ত কঠিন এবং চোখে পড়ার মতো। মুখের প্রতিটি অংশে পেন্সিল বা চারকোল দিয়ে আঁকা হ্যাচিংয়ের মতো স্ট্রোকগুলো ত্রিমাত্রিক চেহারাটিকে দ্বিমাত্রিক কমিক-বুক বা নয়ার চলচ্চিত্রের চরিত্র হিসেবে ফুটিয়ে তুলেছে।

চোখ ও মুখের চারপাশে মাকড়সার জাল এবং ফুলা, রক্তবর্ণ চোখের পাপড়ি ভীতি ও কষ্টের এক শক্তিশালী অনুভূতি জাগায়। এটি বিশেষ করে হ্যালোইন বা হরর থিমের জন্য পারফেক্ট।

গভীর অন্ধকারে তোলা এই ছবিটি ‘অন্ধকার গহ্বর’ বা ‘কৃষ্ঞগহ্বর’ থিমের একটি চমকপ্রদ ইলিউশন মেকআপ। নিখুঁত কনট্যুরিং এবং রঙের ব্যবহারে মুখের এক অংশে যেন সত্যিই একটি ফাঁকা, গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বর্তমান সংকটের জন্য সরকার দায়ী, দলগুলোর চাপে সিদ্ধান্ত বদল
  • প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টে সোনালী মিতুয়ার বাজিমাত