ব্যক্তিগত মোটরসাইকেলে করে অফিসের কাজে যাওয়ার সময় রাজধানীর মুগদায় বাস ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় আব্দুল হামিদ (২৮) নামে এক সাংবাদিক গুরুতর আহত হয়েছেন। বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুগদা বেঙ্গল গার্মেন্টসের সামনে সড়কে এই ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরে রাস্তায় পড়ে গেলে উৎসুক জনতার ভিড়ে সাংবাদিকের মোটরসাইকেলটি চুরি হয়ে গেছে। এ ঘটনার পর আহত সাংবাদিককে উদ্ধার করে মুগদা মেডিকেল কলেজ অ্যন্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আহত আব্দুল হামিদ দৈনিক সমকালের ক্রাইম বিভাগে রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত। তার গ্রামের বাড়ি যশোরের চৌগাছা উপজেলায়।

হাসপাতালে ভর্তি সাংবাদিক আব্দুল হামিদ জানান, অফিসের কাজে ব্যক্তিগত মোটরসাইকেলে করে যাত্রাবাড়ী যাচ্ছিলেন তিনি। মুগদা বেঙ্গল গার্মেন্টসের সামনে সড়কে পৌঁছালে উল্টোপথে আসা একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এর পর পরই একটি বাস এসে পেছন থেকে সাংবাদিকের মোটরসাইকেলে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে হামিদ সড়কের এক পাশে ছিটকে পড়ে যান। তার ডান হাত এবং ডান পা গুরুতর জখম হয়। এ সময় আশপাশে উৎসুক জনতা ভিড় করলে তাদের সঙ্গে কথা বলার মাঝেই সাংবাদিকের মোটরসাইকেলটি উধাও হয়ে যায়। আশপাশে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও মোটরসাইকেলটির দেখা মেলেনি। পরে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে মুগদা মেডিকেল কলেজ অ্যন্ড হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। তার ডান হাতে এবং ডান পায়ে মারাত্মক জখম হয়েছে এবং কয়েকটি সেলাই দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এদিকে ঘটনার পর বাসচালক বাস নিয়ে পালিয়ে গেলেও ব্যাটারিচালিত রিকশাচালককে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেছে জনতা।

হামিদ বলেন, তার মোটরসাইকেলটি লাল রঙের ইয়ামাহা এফজেডএস ভার্সন-থ্রি ডিলাক্স মডেলের। মাত্র কয়েক মাস আগেই তিনি মোটরসাইকেলটি কিনেছেন। আজ এটির তৃতীয় সার্ভিসিংয়ের জন্য ইয়ামাহা সার্ভিস সেন্টারে দুপুর দেড়টার দিকে বুকিং দেওয়া ছিল। কিন্তু তার আগেই মোটরসাইকেলটি চুরি হয়ে গেল।

মুগদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুর রহমান সমকালকে বলেন, সাংবাদিক আহত হওয়ার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ। আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে দেখা হচ্ছে। কে বা কারা মোটরসাইকেল নিয়ে গেছে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হবে।

ওসি জানান, ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যাটারিচালিত রিকশাচালককে আটক করে থানায় নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় বাসচালক বা রিকশাচালকের কোনো চক্র আছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আহত ঘটন র

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচনে জোট গঠনে সতর্ক থাকার পরামর্শ হেফাজত আমিরের

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোট গঠনের ক্ষেত্রে সঙ্গে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী।

মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেছেন, আগামী নির্বাচনে এমন কোনো দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার চিন্তা করা যাবে না, যাদের ভ্রান্ত বিশ্বাস সম্পর্কে বুজুর্গানে দ্বীন ও পূর্বপুরুষেরা আগেই সতর্ক করেছেন।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘জাতীয় উলামা মাশায়েখ সম্মেলন ২০২৫’–এ লিখিত বক্তব্যে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী এ কথা বলেন। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের উদ্যোগে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন হেফাজত আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও অসুস্থ থাকায় তিনি কথা বলেননি। তাঁর লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা তোফাজ্জল হক আজিজ।

ইসলামের মূলধারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এমন কোনো সিদ্ধান্ত না নিতে দলগুলোকে অনুরোধ জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে হেফাজত আমির বলেন, সহিহ আকিদার সব ইসলামি দলকে এক হওয়ার জন্য আগেও তিনি আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর আহ্বানে সাড়া দেওয়ার মতো তেমন পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি। যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।

শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, একদিকে যেমন ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকার ষড়যন্ত্র চলছে, অন্যদিকে তেমনি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে বহু রকম চক্রান্ত লক্ষ করা যাচ্ছে। গণ–অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাংলাদেশে এ রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, তা তিনি কল্পনাও করেননি।

অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে উদ্দেশ করে বাবুনগরী বলেন, ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিস স্থাপনের চুক্তি দেশের স্বাধীনতার অখণ্ডতার জন্য এবং ধর্মীয় কৃষ্টির জন্য এক অশনিসংকেত। এ চুক্তির তীব্র নিন্দা জানিয়ে তা বাতিল করার দাবিও জানান তিনি।

সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা খলিল আহমদ কুরাইশী। দেশের সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, সামনে কালো তুফান দেখা যাচ্ছে। কালো তুফানের সঙ্গে মোলাকাত নয়, মোকাবিলা করতে হবে। জনগণকে ওলামাদের নেতৃত্ব কবুল করতে হবে। তখনই তুফানকে মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহসভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, যারা ফ্যাসিবাদী আমলে পাখা দিয়ে নৌকাকে বাতাস করেছে, তাদের সঙ্গে কোনো ঐক্য হবে না। জুলাই আন্দোলন ছিল ভোটের অধিকার বাস্তবায়নের জন্য। সামনে নির্বাচন। সেই নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা শুরু হয়েছে। সেই পাঁয়তারা রুখে দিতে হবে।

হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ইসলামের বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আলেমদের মতামত উপেক্ষা করলে হাসিনার মতো পরিণতি হবে।

সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক। এ সময় আরও বক্তব্য দেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আলেম এবং ওলামারা।

১৫ দফা প্রস্তাবনা

সম্মেলনে জমিয়তে উলামায়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ১৫ দফা প্রস্তাবনা পেশ করা হয়। প্রস্তাবনা পাঠ করেন সংগঠনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া।

১৫ দফার মধ্যে আছে—ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয় স্থাপনের চুক্তি বাতিল করা, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা, জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় ধর্মশিক্ষা বাধ্যতামূলক করা এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীতের শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত বাতিল করা, ঘোষিত সময়ে নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা; নির্বাচনে কালোটাকা ও পেশিশক্তির মহড়া বন্ধ করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা; বিতর্কিত নারী কমিশনের সুপারিশ বাতিল ও শরিয়ার সীমারেখার আলোকে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ