রাজধানীতে বাস-অটোরিকশার ধাক্কায় পড়ে আহত সমকাল সাংবাদিক, মোটরসাইকেল নিয়ে পালাল চোর
Published: 28th, May 2025 GMT
ব্যক্তিগত মোটরসাইকেলে করে অফিসের কাজে যাওয়ার সময় রাজধানীর মুগদায় বাস ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় আব্দুল হামিদ (২৮) নামে এক সাংবাদিক গুরুতর আহত হয়েছেন। বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুগদা বেঙ্গল গার্মেন্টসের সামনে সড়কে এই ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরে রাস্তায় পড়ে গেলে উৎসুক জনতার ভিড়ে সাংবাদিকের মোটরসাইকেলটি চুরি হয়ে গেছে। এ ঘটনার পর আহত সাংবাদিককে উদ্ধার করে মুগদা মেডিকেল কলেজ অ্যন্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহত আব্দুল হামিদ দৈনিক সমকালের ক্রাইম বিভাগে রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত। তার গ্রামের বাড়ি যশোরের চৌগাছা উপজেলায়।
হাসপাতালে ভর্তি সাংবাদিক আব্দুল হামিদ জানান, অফিসের কাজে ব্যক্তিগত মোটরসাইকেলে করে যাত্রাবাড়ী যাচ্ছিলেন তিনি। মুগদা বেঙ্গল গার্মেন্টসের সামনে সড়কে পৌঁছালে উল্টোপথে আসা একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এর পর পরই একটি বাস এসে পেছন থেকে সাংবাদিকের মোটরসাইকেলে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে হামিদ সড়কের এক পাশে ছিটকে পড়ে যান। তার ডান হাত এবং ডান পা গুরুতর জখম হয়। এ সময় আশপাশে উৎসুক জনতা ভিড় করলে তাদের সঙ্গে কথা বলার মাঝেই সাংবাদিকের মোটরসাইকেলটি উধাও হয়ে যায়। আশপাশে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও মোটরসাইকেলটির দেখা মেলেনি। পরে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে মুগদা মেডিকেল কলেজ অ্যন্ড হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। তার ডান হাতে এবং ডান পায়ে মারাত্মক জখম হয়েছে এবং কয়েকটি সেলাই দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এদিকে ঘটনার পর বাসচালক বাস নিয়ে পালিয়ে গেলেও ব্যাটারিচালিত রিকশাচালককে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেছে জনতা।
হামিদ বলেন, তার মোটরসাইকেলটি লাল রঙের ইয়ামাহা এফজেডএস ভার্সন-থ্রি ডিলাক্স মডেলের। মাত্র কয়েক মাস আগেই তিনি মোটরসাইকেলটি কিনেছেন। আজ এটির তৃতীয় সার্ভিসিংয়ের জন্য ইয়ামাহা সার্ভিস সেন্টারে দুপুর দেড়টার দিকে বুকিং দেওয়া ছিল। কিন্তু তার আগেই মোটরসাইকেলটি চুরি হয়ে গেল।
মুগদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুর রহমান সমকালকে বলেন, সাংবাদিক আহত হওয়ার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ। আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে দেখা হচ্ছে। কে বা কারা মোটরসাইকেল নিয়ে গেছে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হবে।
ওসি জানান, ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যাটারিচালিত রিকশাচালককে আটক করে থানায় নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় বাসচালক বা রিকশাচালকের কোনো চক্র আছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
গলায় ছুরি ধরা ফিলিস্তিনিদের হাতে ব্যান্ডেজ দরকার নেই
২৭ মে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি রাফাহতে একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের দিকে ছুটে যায়। তারা মাসের পর মাস অনাহারে থাকার পর খাবারের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। কিন্তু আতঙ্কিত বেসরকারি নিরাপত্তা ঠিকাদারদের ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। তাল আস-সুলতান ত্রাণকেন্দ্রে বিশ্ব যা দেখেছিল, তা কোনো ট্র্যাজেডি ছিল না। বরং এ ছিল উদ্ঘাটন। অর্থাৎ মানবিক সাহায্য সাম্রাজ্যের চেয়ে মানবতার সেবার জন্য টিকে আছে– এই ভ্রান্ত ধারণার চূড়ান্ত ও সহিংস উন্মোচন।
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক মর্যাদা ও নিরপেক্ষতার মডেল হিসেবে প্রচার করা গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশনের নতুন বিতরণ কেন্দ্রটি উদ্বোধনের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বিশৃঙ্খলায় পরিণত হয়। কিন্তু এটি কোনো দুর্ঘটনা ছিল না। ছিল সাজানো ব্যবস্থা অনুযায়ী এক ধরনের সমাপ্তি, যা ক্ষুধার্তদের পুষ্টি জোগাতে কাজ করে না; বরং তাদের নিয়ন্ত্রণ ও চার দেয়ালে আবদ্ধ করার জন্য তৈরি হয়েছিল।
গাজার ক্ষুধার্ত মানুষ প্রচণ্ড রোদের নিচে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে। খাবারের একটি ছোট বাক্স পেতে তারা ধাতব পদার্থবেষ্টিত গলিতে আটকে থাকতে বাধ্য হয়। অবশেষে হতাশা নিয়ে এগিয়ে যায় এবং বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। মার্কিন সমর্থিত ঠিকাদার নিযুক্ত নিরাপত্তাকর্মীরা পদদলিত হওয়া ঠেকাতে ব্যর্থ গুলি চালায়। তৎক্ষণাৎ মার্কিন কর্মীদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য ইসরায়েলি হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয় এবং জনতার ওপর সতর্কীকরণ গুলিবর্ষণ শুরু করে। বহুল প্রচারিত সাহায্য কেন্দ্রটি মাত্র কয়েক ঘণ্টা কাজ করার পরই সম্পূর্ণরূপে ধসে পড়ে।
মানুষকে যা দেওয়া হয়েছিল, তা বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ট ছিল না; মানবিক মর্যাদা পুনরুদ্ধার তো দূরের কথা। বিতরণ করা বাক্সগুলোতে তাৎক্ষণিক মৃত্যু ঠেকাতে পর্যাপ্ত ক্যালোরি ছিল। এগুলো পরিকল্পিত নিষ্ঠুরতা, যা মানুষকে কোনোমতে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সাজানো ঘটনা, যেখানে তাদের শরীর ধীরে ধীরে নিজেদের গ্রাস করে। এখানে পুষ্টির জন্য কোনো শাকসবজি নেই। রোপণের জন্য কোনো বীজ নেই। পুনর্নির্মাণের জন্য কোনো সরঞ্জাম নেই। শুধু প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, স্থায়ী সংকট বহালের জন্য জনসমাগম বজায় রাখতে তৈরি করা হয়েছিল। এভাবে চিরকাল তাদের ধ্বংসকারীদের করুণার ওপর নির্ভরশীল করে রাখা হয়েছে।
বিতরণ কেন্দ্রের ছবিগুলোতে ক্ষুধা, রোগ ও অবিরাম যুদ্ধের কারণে দৃশ্যত ক্লান্ত মানুষদের দেখানো হয়েছে। তারা গবাদি পশুর মতো ধাতব গলিতে আটকে আছে এবং বন্দুকের নলের দিকে তাকিয়ে থাকা অবশিষ্টাংশের জন্য অপেক্ষা করছে, যা গত শতাব্দীর কনসেনট্রেশন ক্যাম্প থেকে আসা দুর্ভোগ ও মৃত্যুর সুপরিচিত চিত্রগুলোর সঙ্গে তুলনা করা যায়।
এই সাদৃশ্য আকস্মিক কোনো ঘটনা নয়। গাজার ‘সহায়তা বিতরণ কেন্দ্রগুলো’ আমাদের সময়ের কনসেনট্রেশন ক্যাম্প, যা ইউরোপীয় পূর্বসূরিদের মতোই; অবাঞ্ছিত জনগোষ্ঠীকে বেঁচে থাকতে
সাহায্য করার পরিবর্তে নিয়ন্ত্রণ করা, চালিত হতে বাধ্য করা এবং গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ করার জন্য সাজানো হয়েছে।
অবশ্যই ফিলিস্তিনিদের ইতোমধ্যে কারামাহ বা মর্যাদা রয়েছে। এটি তাদের নির্মূল হতে অস্বীকৃতি জানানোর মধ্যেই টিকে আছে; তাদের মানুষ হিসেবে লড়াই করা ও তাদের জেদের মধ্যেই এটি বেঁচে আছে। যতক্ষণ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই সহজ সত্যটি বুঝতে না পারবে, ততক্ষণ পর্যন্ত ইসরায়েল এবং তার মিত্ররা আধিপত্যের হাতিয়ারকে ত্রাণ হিসেবে ব্যবহার করতে থাকবে। আর আমরা বছরের পর বছর রাফাহতে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক দৃশ্যের সাক্ষী থাকব। সেখানে যা ঘটেছে তা সহায়তা প্রদানে ব্যর্থতা ছিল না। এটি ছিল এমন একটি ব্যবস্থার সাফল্য, যা অমানবিক করে তোলা, নিয়ন্ত্রণ করা এবং মুছে ফেলার জন্য তৈরি করার নকশা। যারা ফিলিস্তিনিদের গলায় ছুরি ধরেছে, তাদের হাতে আর ব্যান্ডেজের প্রয়োজন নেই।
আহমদ ইবসাইস: যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী প্রথম প্রজন্মের ফিলিস্তিনি; আলজাজিরা থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম