গাজীপুর নগরের বোর্ডবাজার এলাকার বাসিন্দা আবুল হোসেন (৪২)। পেশায় ট্রাকচালক। ছয় মাস ধরে ড্রাইভিং লাইসেন্স করার জন্য গাজীপুরে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) অফিসে যাওয়া-আসা করছেন, কিন্তু লাইসেন্স করতে পারছেন না। গত সোমবার সকালে তাঁর সঙ্গে কথা হয় বিআরটিএ অফিসের সামনে। তিনি বলেন, ছবি ও আঙুলের ছাপ দিয়েছেন। অনেক দিন চেষ্টা করেও লাইসেন্স করতে পারছেন না। পরে সুমন স্যারকে (পরিদর্শক সায়েদুল ইসলাম ওরফে সুমন) পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে লাইসেন্স করে এনেছেন।

তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে বিআরটিএ অফিসের পরিদর্শক সায়েদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি কখনো কারও কাছ থেকে এক টাকা নিয়েছি, এমন প্রমাণ কেউ দিতে পারবেন না। এটি আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা।’

লাইসেন্স করতে আসা ১২ জনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাঁদের প্রায় সবার অভিযোগ, লাইসেন্স করতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে এবং সঙ্গে টাকা না দিলে কোনো কাজই হচ্ছে না। অভিযোগ করে তাঁরা বলেন, চাহিদামতো ঘুষ না দিলে কিংবা দালাল ছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে পদে পদে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে লাইসেন্স প্রত্যাশীদের। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা এবং ফিল্ড (মাঠ) টেস্টে পাস করার পর নির্ধারিত ফি জমা পর্যন্ত চলে ঘুষের কারবার। আবার লিখিত পরীক্ষায় ফেল করলেও কর্মকর্তাদের সুপারিশ হলে দিতে হয় না মৌখিক পরীক্ষা ও ফিল্ড টেস্ট।

বিআরটিএ অফিসের দ্বিতীয় তলায় গিয়ে এক দালালকে পেয়ে যাই। তাঁর সঙ্গে আট হাজার টাকা দিয়ে চুক্তি করেছি।কবির হোসেন, হোতাপাড়া, গাজীপুর সদর

বিআরটিএ গাজীপুর কার্যালয়ে ভোগান্তির শেষ নেই। ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে একাধিকবার ধরনা দিতে হয় বিআরটিএ অফিসে। টাকা ছাড়া মেলে না গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট। দালাল ধরে টাকা দিলে পরীক্ষা ছাড়াই মেলে ড্রাইভিং লাইসেন্স। ৭ মে ওই অফিসে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গাজীপুর জেলা কার্যালয়ের উদ্যোগে পরিচালিত এক অভিযানে লাইসেন্স, যানবাহন নিবন্ধন, মালিকানা পরিবর্তন ও ফিটনেস সনদ প্রদানে ঘুষ লেনদেনসহ নানা অনিয়মের প্রাথমিক প্রমাণ মিলে।

দুদকের অভিযানে উঠে আসা তথ্য অনুযায়ী, সহকারী পরিদর্শক মো.

গোলাম সরোয়ার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের আত্মীয় পরিচয়ে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর বিরুদ্ধে দালালদের মাধ্যমে বিভিন্ন খাত থেকে টাকা নেওয়ার তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে।

মহানগরের গাছা এলাকা থেকে পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে আসেন আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘টাকা দিয়ে মোমিন নামের এক দালালের সঙ্গে চুক্তি করেছি।’ তিনি বলেন, ‘আপনি আঙুলের ছাপ আর ছবি তুলে বাড়ি চলে যান, সময়মতো লাইসেন্স পেয়ে যাবেন। তাঁকে ১২ হাজার টাকা দিয়ে বাড়ি চলে যাচ্ছি।’

ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের অভিযোগ, বিআরটিএ গাজীপুর সার্কেলে সক্রিয় আছেন কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ জন দালাল।

গাজীপুর সদর উপজেলার হোতাপাড়া এলাকার বাসিন্দা কবির হোসেন বলেন, ‘আমি একটি অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স করার জন্য আসছিলাম। কিছু বুঝতেছিলাম না। পরে বিআরটিএ অফিসের দ্বিতীয় তলায় গিয়ে এক দালালকে পেয়ে যাই। তাঁর সঙ্গে আট হাজার টাকা দিয়ে চুক্তি করেছি।’

লাইসেন্স করার একটি আবেদন ফরম নিয়ে সোমবার গাজীপুর বিআরটিএ অফিসে গেলে রুহুল আমিন নামের এক দালাল প্রতিবেদকের কাছে এসে কথা বলতে শুরু করেন। কিছু সময় পর তিনি বলেন, ‘আপনি অপেশাদার লাইসেন্স করতে চাইলে ৮ হাজার টাকা দিয়ে ছবি ও আঙুলের ছাপ দিয়ে চলে যান। আপনার লাইসেন্স হয়ে যাবে।’ এরপর একে একে আরও বেশ কয়েকজন দালাল এসে ৭ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত চান লাইসেন্স করে দেওয়ার জন্য। তাঁদের কাছে জানতে চাইলে বলেন, অফিসের কর্মকর্তা সায়েদুল ইসলাম ওরফে সুমন, শাহ আলম ও কামরুজ্জামানের মাধ্যমে তাঁরা লাইসেন্স করে থাকেন। প্রতিটি লাইসেন্সের জন্য তাঁদের কমপক্ষে দুই থেকে তিন হাজার টাকা করে দিতে হয়।

ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের অভিযোগ, বিআরটিএ গাজীপুর সার্কেলে সক্রিয় আছেন কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ জন দালাল।

বিআরটিএ গাজীপুর সার্কেলের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার) মো. আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে সবকিছু অনলাইনে হয়। টাকা জমা হয় ব্যাংকে, ম্যানুয়ালি কিছু করা হয় না। যদি তাঁর অফিসের কেউ টাকা লেনদেন করে থাকেন, প্রমাণ পাওয়া গেলে তাঁর বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব আরট এ গ জ প র এক দ ল ল র জন য পর ক ষ স কর র

এছাড়াও পড়ুন:

বিজিবিতে সিপাহি পদে নিয়োগ, জিপিএ–২.৫ হলে আবেদন

ডিজিটাল পদ্ধতিতে ১০৪তম ব্যাচে (অতিরিক্ত) সিপাহি (জিডি) নিয়োগ করবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। অনলাইনে আবেদন শুরু হয়েছে ২৩ জুলাই থেকে। যেকোনো জেলার নারী ও পুরুষ প্রার্থী উভয়েই আবেদন করতে পারবেন। সিপাহী পদে আবেদনের শেষ তারিখ ১ আগস্ট ২০২৫।

শিক্ষাগত যোগ্যতা

এসএসসি বা সমমান পরীক্ষায় কমপক্ষে জিপিএ-৩ এবং এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় কমপক্ষে জিপিএ-২.৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে।

অন্যান্য যোগ্যতা

পুরুষ

উচ্চতা ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি, ওজন হতে হবে ৪৯.৮৯৫ কেজি। বুকের মাপ স্বাভাবিক অবস্থায় ৩২ ইঞ্চি ও স্ফীত অবস্থায় ৩৪ ইঞ্চি। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি, ওজন ৪৭.১৭৩ ও বুকের মাপ স্বাভাবিক অবস্থায় ৩০ ইঞ্চি ও স্ফীত অবস্থায় ৩২ ইঞ্চি। দৃষ্টিশক্তি ৬/৬।

প্রার্থীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময় ডোপ টেস্টে মাদকাসক্ত প্রমাণিত হলে চাকরির জন্য অযোগ্য হবে।

আরও পড়ুনইসলামিক ফাউন্ডেশনে বড় নিয়োগ, পদ ৩৬৩৩০ এপ্রিল ২০২৫

নারী

উচ্চতা ৫ ফুট ২ ইঞ্চি। ওজন ৪৭.১৭৩ কেজি এবং বুকের মাপ স্বাভাবিক অবস্থায় ২৮ ইঞ্চি ও স্ফীত অবস্থায় ৩০ ইঞ্চি থাকতে হবে। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে উচ্চতা ৫ ফুট, ওজন ৪৩.৫৪৪ ও বুকের মাপ স্বাভাবিক অবস্থায় ২৮ ইঞ্চি ও স্ফীত অবস্থায় ৩০ ইঞ্চি। দৃষ্টিশক্তি ৬/৬।

প্রার্থীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময় ডোপ টেস্টে মাদকাসক্ত প্রমাণিত হলে চাকরির জন্য অযোগ্য হবে।

বেতন

জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী ৯,০০০-২১,৮০০ টাকা এবং বিধি মোতাবেক রেশন, পোশাক-পরিচ্ছদ, বাড়িভাড়া/বাসস্থান, চিকিৎসা ও অন্যান্য সুবিধা।

আবেদনে বয়সসীমা

৫ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে পুরুষ ও নারী উভয় প্রার্থীদের বয়স হতে হবে ১৮ থেকে ২৩ বছরের মধ্যে। (জন্মতারিখ ৬/১০/২০০২ থেকে ৫/১০/২০০৭–এর মধ্যে হতে হবে)।

আরও পড়ুনবিদ্যুৎ কোম্পানিতে চাকরি, সংশোধিত বিজ্ঞপ্তিতে নেবে ১১৮ জন২৫ জুলাই ২০২৫বৈবাহিক অবস্থা

অবিবাহিত হতে হবে (বিবাহিত/তালাকপ্রাপ্ত গ্রহণযোগ্য নহে)

আবেদন ফি

আবেদন ফি বাবদ ডিজিটাল পদ্ধতিতে ৫৬ টাকা ব্যাংকিং কার্ড অথবা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পেমেন্ট করতে হবে।

আবেদন প্রক্রিয়া

বিজিবির ওয়েবসাইটে মিলবে আবেদনের প্রক্রিয়ার বিস্তারিত বিবরণ। ভর্তিসংক্রান্ত সব তথ্য ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।

বিস্তারিত জানতে কল করুন: ০১৬৬৯–৬০০৮০০ অথবা ০১৬৬৯–৬০০৮৮৮ নম্বরে কল করুন

আবেদনের শেষ তারিখ

১ আগস্ট ২০২৫

আরও পড়ুনকৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে নবমসহ বিভিন্ন গ্রেডে নিয়োগ, পদ ৯৭২৪ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুর্ভিক্ষের সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি গাজায়
  • চীনে ভারী বৃষ্টিপাতে ৪ জনের মৃত্যু, ১১টি প্রদেশে বন্যার সতর্কতা জ
  • বিজিবিতে সিপাহি পদে নিয়োগ, জিপিএ–২.৫ হলে আবেদন