Prothomalo:
2025-11-02@01:13:53 GMT

গুহার ভেতর ৩০৯ বছরের এক ঘুম

Published: 30th, May 2025 GMT

পবিত্র কোরআনের ১৮তম সুরা কাহাফ মক্কায় অবতীর্ণ, যার আয়াত সংখ্যা ১১০। এই সুরায় ‘আসহাবে কাহাফ ওয়ার রাকিম’ নামে পরিচিত সাত যুবকের গল্প বর্ণিত হয়েছে। ‘কাহাফ’ অর্থ গুহা, আর ‘রাকিম’ অর্থ পর্বতের নাম বা ফলক। সুরার ৯ থেকে ২৬ নম্বর আয়াতে এই যুবকদের ইমান গ্রহণ, ইমান রক্ষায় শহর ত্যাগ এবং গুহায় আশ্রয় নেওয়ার ঘটনা বিবৃত হয়েছে। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যুবকেরা গুহায় আশ্রয় নিয়ে বলল, হে আমাদের প্রতিপালক, তুমি তোমার কাছ থেকে আমাদের রহমত দান করো এবং আমাদের ব্যাপারটি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করো। অতঃপর আমি তাদের গুহায় ঘুমন্ত অবস্থায় কয়েক বছর রেখে দিলাম।’ (সুরা কাহাফ, আয়াত: ১০-১১)

এ ঘটনার সময়কাল সম্পর্কে নির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না। কেউ কেউ মনে করেন, এটি হজরত ঈসা (আ.

)-এর সময়ের কিছু পরে ঘটেছিল। এটি আনবাত (নাবত) সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। ঐতিহাসিক সূত্র, তাওরাতের ভাষ্য এবং রোমান ও গ্রিক ইতিহাস থেকে জানা যায়, নাবতিরা খাঁটি আরব এবং ইসমাইল (আ.)-এর বংশধর। ইসমাইল (আ.)-এর ১২ জন পুত্রের মধ্যে জ্যেষ্ঠ ছিলেন নাবিত বা নাবত। (কাসাসুল কোরআন, মাওলানা হিফজুর রহমান, অনুবাদ: আব্দুস সাত্তার আইনী, ৯/১৩-১৪)

ঘুম ভাঙার পর যুবকেরা জানতে চাইলেন, তাঁরা কতক্ষণ ঘুমিয়েছিলেন। একজন বললেন, ‘এক দিন’, আরেকজন বললেন, ‘এক দিনের কিছু অংশ।’ খাবার কিনতে একজনকে মুদ্রা দিয়ে শহরে পাঠানো হলো।আরও পড়ুনসুরা হাশরের শেষ তিন আয়াতের ফজিলত০৭ মার্চ ২০২৫

ঘটনার সময় খ্রিষ্টধর্মের প্রাথমিক যুগ। নাবতিদের শাসনাধীন শাম ও অন্যান্য অঞ্চলে খ্রিষ্টধর্মের প্রভাব ছিল। কিন্তু রাকিম (বর্তমান পেত্রা) নগরীর সবাই ছিল মুশরিক, এমনকি বাদশাহও ছিলেন মূর্তিপূজক। সাত যুবক মূর্তিপূজা মেনে নিতে পারেননি। তাঁরা পৃথিবীর সৃষ্টি, আকাশের সৌন্দর্য, বাতাসের গতি, জীবন-মরণের রহস্য পর্যবেক্ষণ করে প্রকৃত সৃষ্টিকর্তার সন্ধান করছিলেন। অবশেষে তাঁদের হৃদয় তাওহিদের আলোয় উদ্ভাসিত হলো এবং তাঁরা খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করলেন।

এই খবর বাদশাহর কাছে পৌঁছালে তিনি যুবকদের ডেকে পাঠান। যুবকেরা নির্ভয়ে আল্লাহর বাণী প্রচার করেন। বাদশাহ এটি অপছন্দ করলেও তাঁদের পুনর্বিবেচনার জন্য কিছু সময় দেন। কিন্তু যুবকেরা সিদ্ধান্ত নেন পাহাড়ের গুহায় আত্মগোপন করার। (কাসাসুল কোরআন, ৯/২২)

বাদশাহ তাঁদের হত্যার নির্দেশ দিলে তাঁরা ইমান রক্ষায় গুহায় আশ্রয় নেন। তাঁদের সঙ্গে ছিল কিতমির নামের একটি কুকুর, যা গুহার মুখে পাহারায় বসে। বাদশাহর বাহিনী তাঁদের খুঁজে পায়নি।

গুহাটি ছিল প্রশস্ত, জীবন রক্ষার প্রাকৃতিক উপকরণে সমৃদ্ধ। একদিকে ছিল গুহার মুখ, অন্যদিকে বায়ু চলাচলের পথ, যার মাধ্যমে সতেজ বাতাস প্রবাহিত হতো। গুহাটি উত্তর-দক্ষিণে অবস্থিত ছিল, ফলে সূর্যের তীব্র আলো ভেতরে প্রবেশ করতে পারত না, তবে মৃদু আলো সব সময় উপস্থিত থাকত। (কাসাসুল কোরআন, ৯/২২-২৩)

আল্লাহ আসহাবে কাহাফকে গুহায় ঘুম পাড়িয়ে দেন, যা ৩০৯ বছর ধরে চলেছিল। এ সময়ে শহরে বিপ্লব ঘটে, অত্যাচারী বাদশাহর মৃত্যু হয় এবং রোমান খ্রিষ্টানরা নাবতিদের পরাজিত করে রাকিম (পেত্রা) দখল করে।

তাঁদের সঙ্গে ছিল কিতমির নামের একটি কুকুর, যা গুহার মুখে পাহারায় বসে। বাদশাহর বাহিনী তাঁদের খুঁজে পায়নি।আরও পড়ুনসুরা হুমাজাতে চারটি পাপের শাস্তির বর্ণনা০৬ মে ২০২৫

ঘুম ভাঙার পর যুবকেরা জানতে চাইলেন, তাঁরা কতক্ষণ ঘুমিয়েছিলেন। একজন বললেন, ‘এক দিন’, আরেকজন বললেন, ‘এক দিনের কিছু অংশ।’ খাবার কিনতে একজনকে মুদ্রা দিয়ে শহরে পাঠানো হলো। শহরে গিয়ে তিনি দেখলেন, সবকিছু বদলে গেছে—নতুন মানুষ, নতুন সংস্কৃতি। ভয়ে তিনি একটি দোকান থেকে খাবার ও পানি কিনলেন। দোকানি দেখলেন, মুদ্রাটি প্রাচীন। ঘটনা জানাজানি হলে শহরবাসী যুবককে অভ্যর্থনা জানান। খ্রিষ্টধর্মের বিস্তার দেখে তিনি আনন্দিত হন। গুহায় ফিরে তিনি সঙ্গীদের বিস্তারিত জানান। এদিকে বর্তমান বাদশাহ খবর পেয়ে গুহায় গিয়ে দেখেন, সবাই মারা গেছেন। তিনি গুহার মুখে তাঁদের স্মরণে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। (সুরা কাহাফ, আয়াত: ১৯-২৩)

গুহার অবস্থান সম্পর্কে কোরআনে স্পষ্ট বর্ণনা নেই। ইবনে আতিয়ার মতে, এটি সিরিয়ায়, অন্য মতে স্পেনের গ্রানাডায়। ইমাম কুরতুবি ও অধিকাংশ তাফসিরকারক মনে করেন, এটি তরসুস (এশিয়ার পশ্চিম উপকূলে) অবস্থিত। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, গুহাটি জর্ডানের আয়লা (আকাবা উপসাগরের কাছে) অবস্থিত (তাফসিরে তাবারি, ১৭/৬০২) গবেষকেরা জর্ডানের অবস্থানকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, নাবতিদের শাসন খ্রিষ্টপূর্ব ৭০০ সালে শুরু হয়ে ১০৬ খ্রিষ্টাব্দে শেষ হয়। খ্রিষ্টীয় প্রথম শতাব্দীতে রোমানরা নাবতিদের পরাজিত করে রাকিম দখল করে এবং এর নাম পরিবর্তন করে পেত্রা রাখে। এই পেত্রাই কোরআনে উল্লিখিত রাকিম, যেখানে আসহাবে কাহাফের ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল। (কাসাসুল কোরআন, ৯/১৯)

লেখক: আলেম

আরও পড়ুনইথিওপিয়া হিজরতের গল্প৩০ এপ্রিল ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক স স ল ক রআন ন বলল ন ব দশ হ এক দ ন য বক র অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

সম্পর্কের মতো জীবনঘনিষ্ঠ সিদ্ধান্ত নিতেও এআইয়ে ঝুঁকছে মানুষ, পরিণতি কী

চলতি বছরের এপ্রিলে কেটি মোরান প্রেমিকের সঙ্গে তাঁর ছয় মাসের সম্পর্কের ইতি টানার সিদ্ধান্ত নেন। এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি এমন এক সাহায্যকারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান, সচরাচর এমনটা দেখা যায় না। তাঁর কৃতজ্ঞতা পেয়েছে চ্যাটজিপিটি বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) চ্যাটবট।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির ৩৩ বছর বয়সী এই নারী চ্যাটবটটিকে স্নেহের সঙ্গে ‘চ্যাট’ নামে ডাকেন। তিনি বলেন, ‘এটি আমাকে কিছু বিষয়ে গভীরভাবে ভাবতে এবং নিজের সঙ্গে আলাপে বাধ্য করেছে, যা আমি এড়িয়ে যাচ্ছিলাম।’

মোরান তাঁর বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সদস্যদের কাছেও মনের কথা খুলে বলেছিলেন। এরপরও তিনি মনে করেন, চ্যাটজিপিটিই তাঁকে উপলব্ধি করতে সাহায্য করেছিল যে, তাঁর সম্পর্কের মধ্যেই লুকিয়ে আছে তাঁর দুশ্চিন্তার মূল কারণ। চ্যাটবটটির সঙ্গে এক সপ্তাহ কথা বলার পর, তিনি সম্পর্কটি ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআইয়ের সাম্প্রতিক এক গবেষণা অনুযায়ী, চ্যাটজিপিটিতে দেওয়া বার্তার প্রায় অর্ধেকই ‘জিজ্ঞাসা’ বিভাগে পড়ে। ওপেনএআই এটিকে ‘সিদ্ধান্ত নিতে তথ্য খোঁজা বা যাচাই’ বিভাগে রেখেছে।

বিচ্ছেদ, চাকরি পরিবর্তন বা অন্য দেশে চলে যাওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ জীবনঘনিষ্ঠ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ মানুষই সাধারণত বন্ধুবান্ধব, পরিবার বা থেরাপিস্টের পরামর্শ নিতে অভ্যস্ত। তবে এখন কিছু মানুষ নিজের অনুভূতির বিষয়ে তাৎক্ষণিক নির্মোহ মূল্যায়ন পেতে এআইয়ের দিকে ঝুঁকছেন।

মোরানের মতো কেউ কেউ কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় আত্মবিশ্বাস জোগানোর কৃতিত্ব এআইকে দিচ্ছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়ে বলছেন, এআইয়ের তোষামুদে স্বভাব কখনো কখনো ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার দিকে ঠেলে দিতে পারে।

নিখুঁত নয়

জুলি নাইসকে চ্যাটজিপিটির কাছে মনের কথা খুলে বলতে বাধ্য করেছিল মূলত অবসাদ। যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর প্রযুক্তি শিল্পে তিন বছর কাজ করার পর তিনি দুশ্চিন্তা, বিষণ্নতা এবং ক্রমাগত ক্লান্তিতে ভুগতে শুরু করেন।

গত বছরের শেষের দিকের সেই সময়টি সম্পর্কে জুলি বলেন, ‘অবশেষে আমি এমন একটা পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছি, যেখানে মনে হচ্ছিল— আমাকে কিছু একটা করতেই হবে, পরিবর্তন আনতেই হবে। আমি তখন একটা মানব-খোলস মাত্র ছিলাম (নিষ্প্রাণ)।’

জুলি সিদ্ধান্ত নিলেন— স্থান পরিবর্তন করবেন, বিশেষত ফ্রান্সে চলে যাবেন। আর এ বিষয়ে পরামর্শের জন্য তিনি দ্বারস্থ হন চ্যাটজিপিটির। তিনি তাঁর চাওয়াগুলো (একটি শান্ত শহর, যেখানে ভালো সংখ্যক প্রবাসীর বসবাস থাকবে) এবং তাঁর অপছন্দগুলো (প্যারিসের মতো ব্যস্ত শহর নয়) বিশদভাবে উল্লেখ করলেন। চ্যাটবটটি তাঁকে ফ্রান্সের দক্ষিণের একটি ছোট্ট শহর ইউজেস সুপারিশ করল। সেখানকার বাসিন্দা ৮ হাজার ৩০০ জনের মতো।

জুলি চলতি বছরের এপ্রিলে সেখানে চলে যান। তিনি বলেন, সিদ্ধান্ত গ্রহণের এই প্রক্রিয়াটি চ্যাটজিপিটির হাতে তুলে দেওয়ায় পুরো ব্যাপারটি নিয়ে তাঁর অতিরিক্ত চাপ অনেক কমে গিয়েছিল। যদিও তিনি এখন বলছেন, সিদ্ধান্তটি নিখুঁত ছিল না। ইউজেসে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে আসা প্রবাসীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আছে ঠিকই। তবে চ্যাটজিপিটি যে তথ্যটি দিতে ব্যর্থ হয়েছিল, সেটি হলো এই প্রবাসীদের বেশিরভাগই অবসরপ্রাপ্ত। আর জুলির বয়স ৪৪ বছর।

তরুণদের মধ্যে জিজ্ঞাসার প্রবণতা বেশি

চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআইয়ের সাম্প্রতিক এক গবেষণা অনুযায়ী, চ্যাটজিপিটিতে দেওয়া বার্তার প্রায় অর্ধেকই ‘জিজ্ঞাসা’ বিভাগে পড়ে। ওপেনএআই এটিকে ‘সিদ্ধান্ত নিতে তথ্য খোঁজা বা যাচাই’ বিভাগে রেখেছে। ওপেনএআইয়ের প্রধান নির্বাহী স্যাম অল্টম্যান উল্লেখ করেছেন, এই প্রবণতাটি তরুণ ব্যবহারকারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।

গত মে মাসে ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান সিকোইয়া ক্যাপিটালের ‘এআই অ্যাসেন্ট’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বয়সে ২০ থেকে ৩০ বছরের কোঠায় থাকা ব্যবহারকারীদের বিষয়ে অল্টম্যান বলেন, ‘তাঁরা চ্যাটজিপিটির কাছে জিজ্ঞাসা না করে আসলেই জীবনঘনিষ্ঠ সিদ্ধান্তগুলো নেন না।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘তাঁদের জীবনে আসা প্রতিটি ব্যক্তি এবং তাঁদের আলাপের সম্পূর্ণ প্রেক্ষাপট এআইয়ের কাছে আছে।’ (এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য ওপেনএআইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা সাড়া দেয়নি)।

আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা এআইয়ের হাতে ছেড়ে দিলে, সমস্যা সমাধানের আমাদের নিজস্ব দক্ষতা কমে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়অধ্যাপক লিওনার্ড বুসিও, ফস্টার স্কুল অব বিজনেস, ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন

তবে এভাবে তরুণেরাই শুধু এআইয়ের শরণাপন্ন হচ্ছেন, ব্যাপারটা তা নয়। যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের কানসাস সিটির বাসিন্দা মাইক ব্রাউন। ২০২৩ সালে ৫২ বছর বয়সে এসে নিজের ৩৬ বছরের বিবাহিত জীবন নিয়ে কী করা উচিত, সেই পরামর্শের জন্য একটি চ্যাটবটের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তিনি। তাঁর বন্ধু, যাজক এবং বিবাহ পরামর্শক সবাই তাঁকে বিচ্ছেদের পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে তিনি বলেন, ওই বছরই চালু হওয়া একটি ইন্টারেকটিভ চ্যাটবট ‘পাই.এআই’-এর সঙ্গে ৩০ মিনিটের কথোপকথনের পরই তিনি তাঁর সিদ্ধান্তের বিষয়ে নিশ্চিত হন।

ব্রাউন বলেন, ‘আমার এই ভাবনাগুলো যাচাই করে নেওয়া দরকার ছিল এবং এই পথে এগোনোই যে সঠিক, সেটির জন্য নিশ্চয়তা পাওয়াটা দরকার ছিল।’ তিনি বলেন, এই পরিস্থিতিতে একটি ‘বিশ্বাসযোগ্য’ দৃষ্টিভঙ্গি পেতে তিনি চ্যাটবটটির ওপর আস্থা রেখেছিলেন।

আরও পড়ুনচ্যাটবট কি মানুষের মতো বুদ্ধিমান হতে পারবে২৯ মে ২০২৪

কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা

ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের ফস্টার স্কুল অব বিজনেসের অধ্যাপক লিওনার্ড বুসিও কীভাবে মানুষ ও এআইয়ের মধ্যে সহযোগিতায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের যথার্থতা বাড়ানো যায়, তা নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি বুঝতে পারছেন, কেন মানুষ এভাবে এআইয়ের দিকে ঝুঁকছে। এর প্রধান কারণগুলো হলো সার্বক্ষণিক এটি হাতের কাছে পাওয়া যায়, বেশিরভাগ মানুষের চেয়ে অনেক দ্রুত উত্তর দিতে পারে এবং এটিকে তুলনামূলক বেশি নিরপেক্ষ বলেও মনে করা হয়।

বুসিও বলেন, ‘এআই সাধারণত অনেকটাই কূটনৈতিক ভাষায় অভ্যস্ত, পক্ষান্তরে মানুষ বিশেষত ব্যক্তিগত পরামর্শের ক্ষেত্রে নিজের চিন্তাভাবনা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মতামত দিয়ে থাকে।’

তবে বুসিও সতর্ক করে বলেন, বেশিরভাগ এআই মডেলের ‘তোষামোদী’ প্রবণতা থাকায় তারা ব্যবহারকারীকে খুশি করার বিষয়ে যতটা আগ্রহী, ততটা সেরা পরামর্শ দেওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহী নয়। তিনি আরও বলেন, ‘তাদের (চ্যাটবট) এমনভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা ব্যবহারকারীকে খুশি করতে পারে। কারণ, ব্যবহারকারী খুশি হলে, তারা আবার ফিরে আসে।’

কেটি মোরানের ক্ষেত্রেও এমনটাই হয়েছিল। চ্যাটজিপিটি বন্ধুর মতো করে কথা বলায় তিনি অবাক হয়েছিলেন বলে জানান। চ্যাটবটটি তাঁকে এ রকম বলেছিল, ‘আপনি এমন কাউকে পাওয়ার যোগ্য, যে আপনাকে আশ্বস্ত করবে; এমন কাউকে নয়, যার নীরবতা আপনাকে দুশ্চিন্তার গোলকধাঁধায় ফেলে দেবে।’

আরও পড়ুনকিশোরকে আত্মহত্যায় উৎসাহ দিয়েছে চ্যাটবট, নির্মাতার বিরুদ্ধে মায়ের মামলা২৪ অক্টোবর ২০২৪

রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলা ব্যক্তিদের কেউই এআইয়ের ওপর নির্ভর করার জন্য অনুতপ্ত নন বলে জানিয়েছেন। মাইক ব্রাউনের মতে, এআই ‘আবেগী, নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকের’ মতো কাজ করেছে। কেটি মোরানের কাছে এটি ছিল ‘সবচেয়ে কাছের বন্ধুর’ মতো। আর জুলি নাইস বলেন, এআই তাঁকে তিনি আসলে কী চান, তা উপলব্ধি করতে সাহায্য করেছে।

এরপরও, অধ্যাপক বুসিও একটি সতর্কবার্তা দিয়েছেন। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, ‘আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা এআইয়ের হাতে ছেড়ে দিলে, সমস্যা সমাধানের আমাদের নিজস্ব দক্ষতা কমে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।’

এই অধ্যাপক বলেন, ‘আমি বলব, একটু পিছিয়ে আসুন এবং নিজেদেরই সিদ্ধান্ত নেওয়ার মধ্যে যে সৌন্দর্য আছে, তা নিয়ে ভাবুন। একই সঙ্গে এটাও নিশ্চিত করার জন্য যে, আমরা নিজেরাও চিন্তাভাবনার কাজটা করছি।’

আরও পড়ুনচ্যাটজিপিটিসহ অন্য এআই চ্যাটবটকে যে ৭ তথ্য দেওয়া যাবে না৩১ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ