ঢাকায় অপহরণের পর নগ্ন ভিডিও পাঠিয়ে মুক্তিপণ দাবি, কলেজছাত্রী উদ্ধার
Published: 30th, May 2025 GMT
ঢাকার এক কলেজছাত্রীকে তাঁর পূর্বপরিচিত মাসুম পারভেজ নামের এক যুবক গত সোমবার উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের একটি ফ্ল্যাটে ডেকে নেন। এরপর সহযোগীদের নিয়ে মেয়েটিকে সেখানে আটকে রেখে নগ্ন ভিডিও করেন ও ছবি তোলেন। পরে অপহরণকারীরা ওই ভিডিও তাঁর মায়ের কাছে পাঠিয়ে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ চান। কলেজছাত্রীর মা ঘটনাটি উত্তরা পশ্চিম থানায় জানালে পুলিশ গত বুধবার বিকেলে ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় জড়িত মাসুম পারভেজসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে। তাঁদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় প্রায় দেড় কোটি টাকা।
গত বুধবার কলেজছাত্রীকে উদ্ধার করা হলেও আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপির) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
ডিএমপির উত্তরা বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, অভিযানে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে শুধু ওই ছাত্রীই নন, এখানে বায়িং হাউসের আড়ালে মেয়েদের অপহরণের পর নগ্ন করে ভিডিও এবং ছবি তুলে তাঁদের পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করে আসছিল চক্রটি। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় মুক্তিপণ বাবদ আদায় করা এক কোটি ৪১ লাখ টাকা, ৬০টি ইয়াবা বড়ি, দুটি সিসি (ক্লোজড সার্কিট) ক্যামেরা এবং তিনটি মুঠোফোন ফোন উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন মো.
কলেজছাত্রীকে উদ্ধার অভিযান তত্ত্বাবধান করেন ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার মো. মুহিদুল ইসলাম। তিনি আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, অপহৃত মেয়েটি রাজধানীর একটি কলেজে পড়েন। গত সোমবার বিকেলে তাঁকে উত্তরার ১১ নম্বরে সেক্টরের ১০/বি সড়কের একটি ভবনের দোতলার একটি ফ্ল্যাটে ডেকে নিয়ে যান তার পূর্বপরিচিত মাসুম পারভেজ। এরপর সেখানে আটকে রেখে মেয়েটির নগ্ন ভিডিও ও ছবি তোলা হয়। পরদিন মঙ্গলবার গভীর রাতে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা ওই ভিডিও কলেজছাত্রীর মায়ের মুঠোফোনে পাঠিয়ে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখান এবং মেয়ের জন্য ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ চান।
এরপর কলেজছাত্রীর মা ঘটনাটি পুলিশকে জানান উল্লেখ করে তিনি বলেন, উত্তরা পশ্চিম থানার একদল পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অপহরণকারী চক্রটির অবস্থান শনাক্ত করে। বুধবার বিকেলে পুলিশ উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে কলেজছাত্রীকে উদ্ধার করে।
পুলিশ কর্মকর্তা মুহিদুল ইসলাম বলেন, এখানে অপহৃতদের মাদক সেবনে বাধ্য করা হতো। এ ছাড়া বায়িং হাউসে নিয়োগ দেওয়া মেয়েদের দিয়েও আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও করতেন চক্রের সদস্যরা। এসব ভিডিও দিয়ে তাদের ‘ব্ল্যাকমেল’ করা হতো।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তার ব৵ক্তিদের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইন, মাদকদ্রব্য ও পর্নোগ্রাফি আইনে পৃথক তিনটি মামলা করা হয়েছে। গ্রেপ্তার সবাইকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তারা বায়িং হাউসের কর্মী। অপহরণ চক্রে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র একট
এছাড়াও পড়ুন:
বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলতে চান রিকশাচালক শফিকুল
বাঁশির সঙ্গে সখ্য সেই শৈশবে। গ্রামে যাত্রাপালায় গান করতেন আর বাঁশির সুরে ছড়াতেন মুগ্ধতা। জীবন-জীবিকার তাগিদে একসময় বেছে নেন রিকশাচালকের পেশা। গ্রাম ছেড়ে থিতু হন ব্যস্ত শহরে। তবে বাঁশের বাঁশিকে হাতছাড়া করেননি শফিকুল ইসলাম (৪৫)।
যানজটে গতি থামতেই রিকশার হ্যান্ডেল ছেড়ে শফিকুল কোমর থেকে হাতে নেন প্রিয় বাঁশি। হর্নের কর্কশ ধ্বনি এড়িয়ে তখন বাতাসে ভাসে সুরের মূর্ছনা। বেখেয়ালি যাত্রী আর পথচারীরা হঠাৎ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকেন বাঁশিওয়ালার দিকে।
দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বাঁশির সঙ্গে মিতালি গড়েছেন শফিকুল। সেই বাঁশির সুরেই যেন তাঁর জীবন বাঁধা। অভাব, দুর্দশা আর দারিদ্র্যও এ বন্ধন থেকে তাঁকে আলাদা করতে পারেনি। রিকশার প্যাডেলের ছন্দে তাঁর ঠোঁটে বিমূর্ত হয়ে বাঁশির করুণ সুর। বগুড়া শহরের পথচারীদের কাছে তিনি ‘বাঁশিওয়ালা রিকশাওয়ালা’ হিসেবে পরিচিত।
শফিকুলের পৈতৃক ভিটা বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার শালিখা গ্রামে। তবে জীবিকার তাগিদে থাকেন বগুড়া শহরের মালতীনগর এলাকার একটি গ্যারেজে। গত রোববার বিকেলে তাঁর দেখা মেলে বগুড়া শহরের কোর্ট হাউস স্ট্রিটের ব্যস্ত সড়কে। শেষ বিকেলে যানজটে যখন পথচারীরা বিরক্ত, তখন বাতাসে ভেসে আসে ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই’ ভাওয়াইয়া গানটির সুর।
দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বাঁশির সঙ্গে মিতালি গড়েছেন শফিকুল। রিকশার প্যাডেলের ছন্দে তাঁর ঠোঁটে বিমূর্ত হয়ে বাঁশির করুণ সুর। বগুড়া শহরের পথচারীদের কাছে তিনি ‘বাঁশিওয়ালা রিকশাওয়ালা’ হিসেবে পরিচিত।এরই একফাঁকে আলাপ হয় শফিকুল ইসলামের সঙ্গে। কথায় কথায় তিনি জানান, দারিদ্র্যের কারণে পঞ্চম শ্রেণির গণ্ডি পেরোতে না পেরোতেই পড়ালেখা বন্ধ করতে হয়। এরপর জড়িয়ে পড়েন গ্রামের একটি যাত্রাপালার দলে। ‘কাজলরেখা’, ‘সাগরভাসা’, ‘গুনাইবিবি’, ‘রাখালবন্ধু’, ‘রূপবান’সহ নানা লোককাহিনিনির্ভর যাত্রাপালায় অভিনয় ও গান করেছেন। শুধু তা–ই নয়, গানের সুরে হারমোনিয়ামও বাজাতেন। এসবের ফাঁকে ফাঁকে টুকটাক রিকশা চালাতেন তখন।
পরিবারের বিষয়ে জানতে চাইলে শফিকুল বলেন, ২০০০ সালে বিয়ে করেন। স্ত্রী মোর্শেদা গৃহিণী। তাঁদের তিন মেয়ে—শরীফা, শম্পা ও শাকিলা। এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। স্ত্রী ও দুই মেয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকেন। মাসে দুবার তিনি বাড়িতে যান। শফিকুলের দাবি, বগুড়া শহরে রিকশা চালিয়ে দিনে পান ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। থাকা-খাওয়া ও রিকশার জমা খরচ ছাড়া ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা থেকে যায়। সেই টাকায় চলে সংসার।
শুরুতে শহুরে জীবন শফিকুলের একদম ভালো লাগত না, মন পড়ে থাকত সেই গ্রামে। মন ভালো রাখতে রিকশা চালানোর সময় গুনগুন করে গাইতেন। এর মধ্যে শহরের রাস্তায় একদিন এক বাঁশিওয়ালার সঙ্গে তাঁর দেখা। তাঁর কাছ থেকে উপার্জনের ৮০ টাকা দিয়ে একটি বাঁশি কেনেন তিনি। এরপর রাতে গ্যারেজে শুয়ে সেই বাঁশিতে সুর তোলেন। এখন বাঁশি তাঁর নিত্যসঙ্গী।
বাঁশি বাজাতে বাজাতে রিকশা চালানো অভ্যাস হয়ে গেছে জানিয়ে শফিকুল বলেন, যানজটে আটকা পড়লে বাঁশিতে সুর তোলেন। যাত্রী না পেলে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে একমনে বাঁশি বাজান। সুর শুনে যাত্রীরা ১০-২০ টাকা বেশি ভাড়া দেন কখনো কখনো।
গরিব হওয়ার কারণে মেয়ের পরিবারের লোকজন প্রেমে বাধা হয়। বড়লোকের ছলের লগে বিয়ে হয় মেয়েটার। সেই থাকে গান আর সুর সঙ্গী।শফিকুল ইসলামস্মৃতি হাতড়ে শফিকুল বলেন, একবার ঢাকায় রিকশা চালাতে গিয়েছিলেন। দৈনিক বাংলার মোড়ে রিকশা থামিয়ে একমনে বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। হঠাৎ একটি ২০ তলা ভবন থেকে মধ্যবয়সী এক ব্যক্তির চিৎকার শুনতে পান। ওপরে তাকাতেই ৫০ টাকার একটা নোট নিচে ফেলে দেন ওই ব্যক্তি। প্রশংসা করেন বাঁশির সুরের।
আলাপচারিতা একসময় আনমনে হয়ে পড়েন শফিকুল। বলেন, ‘মন তো (মনে) না পাওয়ার কষ্ট আচে। ১৬ বছর বয়সে এলাকার এক মেয়ের প্রেমে পড়চিনু। ৬ মাস ভালোই চলিচ্চিল সেই প্রেম। গরিব হওয়ার কারণে মেয়ের পরিবারের লোকজন প্রেমে বাধা হয়। বড়লোকের ছলের লগে বিয়ে হয় মেয়েটার। সেই থাকে গান আর সুর সঙ্গী। আরও পরে সঙ্গী হয় বাঁশি। এহন বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলে থাকপার চেষ্টা করি।’