একদিকে মানবতা অন্যদিকে সংক্রমণ ঝুঁকি, এইচআইভি আক্রান্ত প্রসূতির অস্ত্রোপচার নিয়ে দ্বিধা
Published: 30th, May 2025 GMT
যশোর জেনারেল হাসপাতালে এইচআইভি আক্রান্ত এক প্রসূতির সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। একদিকে প্রসূতি নারীর চিকিৎসা দেওয়া মানবিক চাহিদা; অন্যদিকে রোগী থেকে স্বাস্থ্যকর্মীদের সংক্রমণ ঝুঁকি। এমন পরিস্থিতিতে আগামী রোববার তাঁর অস্ত্রোপচার নিয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের চিকিৎসকেরা জানান, মাস তিনেক আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ওই নারীর শরীরে এইচআইভি ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। তখন তিনি ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এখন তাঁর অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। কিন্তু এইচআইভি আক্রান্ত রোগীর অস্ত্রোপচার হাসপাতালে করা হলে পরবর্তী তিন দিন অপারেশন থিয়েটারের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হবে। এ নিয়ে অন্যান্য বিভাগের চিকিৎসকদের সঙ্গে মতভিন্নতা দেখা দিয়েছে। অন্যান্য বিভাগের চিকিৎসকদের দাবি, একজন রোগীর জন্য হাসপাতালের অন্য রোগীর সমস্যা হবে, এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া কর্তৃপক্ষের উচিত হবে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন চিকিৎসক বলেন, হাসপাতালে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ জন প্রসূতি নারী সন্তানের জন্ম দেন। এ ছাড়া অন্যান্য সার্জারি হয় আরও অন্তত ২০টি। এ অবস্থায় হাসপাতালে তিন দিন অস্ত্রোপচার বন্ধ থাকলে রোগীরা কোথায় যাবেন? এমতাবস্থায় হাসপাতালের চিকিৎসকসহ একাংশের দাবি, এইচআইভি আক্রান্ত প্রসূতিকে বিশেষায়িত হাসপাতালে স্থানান্তর করে উন্নত সেবার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। ঢাকায় সে ধরনের হাসপাতাল আছে।
হাসপাতালের প্রশাসনিক ও প্রসূতি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, যশোরের গর্ভবতী ওই নারীর শরীরে এইচআইভি শনাক্তের পর থেকে তাঁকে হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হয়। সন্তান জন্মদানের সময় হয়ে আসায় হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের চিকিৎসক ইয়াসমিন আক্তার ২৮ মে ওই নারীর অস্ত্রোপচারের দিন নির্ধারণ করেন। কিন্তু স্বাস্থ্যঝুঁকি ও নিরাপত্তার অভাবে তিনি করতে পারেননি। পরে আগামী রোববার নতুন দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এর মধ্যে অস্ত্রোপচার নিয়ে চিকিৎসকদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। ফলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নারীর সেবাদান নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতার মধ্যে পড়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রসূতি চিকিৎসক বলেন, রোগীর অস্ত্রোপচার কোনো বিষয় না। বিষয়টি হচ্ছে শরীর থেকে বের হওয়া রক্ত ও তরল নিয়ে ব্যবস্থাপনা কী হবে। সে বিষয়ে হাসপাতালে নির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা নেই। শতভাগ প্রস্তুতি ছাড়া এমন রোগীর অস্ত্রোপচার করা হলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও কর্মচারীদের মধ্যে সংক্রমণের ঝুঁকি আছে। এ ছাড়া অন্য প্রসূতিরাও আতঙ্কে থাকবেন।
জানতে চাইলে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) বজলুর রশিদ বলেন, অস্ত্রোপচারটি বিশেষায়িত হাসপাতালে করতে পারলে বেশি ভালো হতো। কিন্তু প্রসূতি নারী আর্থিকভাবে দরিদ্র। তাঁর চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করার সামর্থ্য নেই। যে কারণে মানবিক দিক বিবেচনায় নিয়ে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তা ছাড়া হাসপাতালে আগে এমন একজন রোগীর অস্ত্রোপচার হয়েছে। হাসপাতালে সেই ধরনের সুরক্ষা ব্যবস্থা আছে। বিষয়টি নিয়ে ঢাকায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা রোগীকে ২৮ মে অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত দিয়েছিল। কিন্তু কিছু সমস্যা দেখা দেওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। এই অস্ত্রোপচার নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। এখন প্রসূতি বিভাগই সিদ্ধান্ত নেবে তারা অস্ত্রোপচার করবে নাকি স্থানান্তর করবে।
প্রসূতি বিভাগের চিকিৎসক ইয়াসমিন আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, ‘কোনো রোগী চিকিৎসকের কাছে এলে তাঁর চিকিৎসা করা চিকিৎসকের দায়িত্ব। আর সেই রোগীকে নিরাপদ রাখার দায়িত্ব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। প্রসূতি বিভাগ আগামী রোববার ওই রোগীর অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বাকিটা নিশ্চিত করবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।’
এ বিষয়ে যশোরের সিভিল সার্জন মাসুদ রানা বলেন, এইডসে আক্রান্ত রোগীর সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ঢাকার চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। মানবিক দিক বিবেচনায় নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ভ গ র চ ক ৎসক চ ক ৎসকদ র স ক রমণ ব যবস থ প রস ত
এছাড়াও পড়ুন:
‘নতুন একটি দলের কয়েকজন মহারথী’ বলার পর বক্তব্য বদলালেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম
ফেসবুক পোস্টে দেওয়া বক্তব্যের কিছু অংশ পরিবর্তন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত তিনটার কিছু আগে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেওয়ার প্রায় দেড় ঘণ্টা পর দুর্নীতি নিয়ে একটি অংশের লেখা কিছুটা পরিবর্তন করেন তিনি।
মাহফুজ আলম নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গতকাল রাত ২টা ৫১ মিনিটে দেওয়া পোস্টের এক জায়গায় লিখেছিলেন, ‘আজকাল অনেকের লেজ কাটা যাচ্ছে বলে, আমার বিরুদ্ধে লেগেছেন। নতুন একটি দলের কয়েকজন মহারথী এতে জড়িত। সবই প্রকাশ পাবে। একটা সার্কেলে প্রায় সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত, কিন্তু একজন কোনো টাকা ধরছেন না, এটা কার সহ্য হবে!’
এই পোস্ট দেওয়ার প্রায় দেড় ঘণ্টা পর ভোররাত ৪টা ২৮ মিনিটে পোস্টের এই অংশে পরিবর্তন আনেন মাহফুজ আলম। সংশোধিত পোস্টে এই অনুচ্ছেদ পরিবর্তন করে তিনি লেখেন, ‘আজকাল অনেকের লেজ কাটা যাচ্ছে বলে, আমার বিরুদ্ধে লেগেছেন। বিভিন্ন দলের কয়েকজন মহারথী এতে জড়িত। সব ষড়যন্ত্রই প্রকাশ পাবে।’
প্রথমে দেওয়া পোস্টের এই অনুচ্ছেদের শেষ বাক্য ‘একটা সার্কেলে প্রায় সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত, কিন্তু একজন কোনো টাকা ধরছেন না, এটা কার সহ্য হবে’ সংশোধিত পোস্টে তিনি রাখেননি।
প্রথম পোস্টে মাহফুজ আলম তদবির চেষ্টার কথা উল্লেখ করে দুর্নীতির প্রস্তাব পাওয়ার একটি ঘটনা তুলে ধরেন। তিনি লেখেন, ‘তদবিরের কথা উঠল যখন, একটা ঘটনা বলি। আমাদের এক বন্ধু একজন ব্যক্তিকে আমার ভাইয়ার সঙ্গে দেখা করায়। বিটিভির একটা টেন্ডারের কাজ করে দিলে তারা পার্সেন্টেজ দেবে এবং জুলাই নিয়ে কয়েকটা দেশে প্রোগ্রামের জন্য হেল্প করবে। আমি জানার পর এটা নিষেধ করে দেই। সদুদ্দেশ্যে হলেও রাষ্ট্রের আমানতের খেয়ানত করা যাবে না। পরবর্তীতে সে টেন্ডারের কাজও স্থগিত হয়।’
কথোপকথন রেকর্ড করে ফাঁসানোর চেষ্টার অভিযোগ করে মাহফুজ আলম আরও লেখেন, ‘সে ব্যক্তি কনভারসেশন (কথোপকথন) রেকর্ড করে একজন সাংবাদিককে পাঠায়। সে সাংবাদিক যোগাযোগ করলে আমি বলে দিই, ভাই, আমরা এ কাজ করতে দেইনি। আর ওই লোক ফাঁসানোর উদ্দেশ্যেই জুলাইয়ের প্রোগ্রামের কথা বলে এ কাজ করেছে। উনি আমার কথা বিশ্বাস করে আর রেকর্ডটি পাবলিক করেননি।’
এরপরই নিজের পোস্টে দুর্নীতির বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়ে মাহফুজ আলম লেখেন, ‘আজকাল অনেকের লেজ কাটা যাচ্ছে বলে, আমার বিরুদ্ধে লেগেছেন। নূতন একটি দলের কয়েকজন মহারথী এতে জড়িত। সবই প্রকাশ পাবে। একটা সার্কেলে প্রায় সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত কিন্তু একজন কোনো টাকা ধরছেন না, এটা কার সহ্য হবে!’
পোস্টের শেষে ‘পুনশ্চ’ দিয়ে মাহফুজ আলম যোগ করেন, ‘আমার নিকৃষ্ট শত্রুরাও গত ১২ মাসে আমার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ করলেও দুর্নীতি বা আর্থিক অসঙ্গতির অভিযোগ করেনি। একটি নূতন দলের মহারথীদের অনেক অসুবিধা হচ্ছে তাতে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব পবিত্র আমানত। হাজার কোটি টাকার চাইতেও ইজ্জত ও রাষ্ট্রের আমানত আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’
সংশোধিত পোস্টে এই অংশেও পরিবর্তন এনেছেন মাহফুজ আলম। তাতে তিনি দুর্নীতির বিষয়ে করা তাঁর বক্তব্য পরিবর্তন এবং ‘নূতন দলের মহারথী’র জায়গায় ‘বিভিন্ন দলের মহারথী’দের কথা উল্লেখ করেন। আর শেষের বাক্যটি বাদ দেন।
সংশোধিত পোস্টে বিশেষ দ্রষ্টব্য দিয়ে মাহফুজ আলম লেখেন, ‘কয়েকটা বাক্য নিয়ে অযথাই জল ঘোলা হচ্ছে, তাই এডিট করে দিলাম। জুলাই কতিপয় লোকের কাছে পলিটিক্যাল মবিলিটির ল্যাডার। একটা না, কয়েকটা দলের মহারথীরাই আমার/আমাদের বিরুদ্ধে কাজ করছেন। কিন্তু, সবার এখন গুজববাজ আর সুবিধাবাদীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকা দরকার।’ উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এই পোস্ট দিয়ে তাঁর ভাই মাহবুব আলমের ফেসবুক পোস্ট শেয়ার করেছিলেন।
‘মিথ্যা অভিযোগের জবাব!!’ শিরোনামে ওই ফেসবুক পোস্ট দিয়েছিলেন মাহবুব আলম। গুজব ছড়ানো হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে আমার বিরুদ্ধে আর্থিক অস্বচ্ছতার গুজব ছড়ানো হচ্ছে। আমার অ্যাকাউন্টে গত ৬ মাসের বিবরণী এখানে দেওয়া হলো। আমার অ্যাকাউন্টটি এখনো সচল আছে। বনি আমিন নামক ব্যক্তি ও কিছু মিডিয়ার প্রচারিত তথ্য আসলে মিথ্যা বৈ কিছু নয়। আমি অস্ট্রেলিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ছিলাম। অস্ট্রেলিয়ার অ্যাকাউন্টটি ২৩ সাল থেকে খোলা।’
ভাইয়ের তদবিরের কোনো কাজ করেননি দাবি করে মাহবুব আলম লেখেন, ‘আমার ভাই মাহফুজ আলমের পক্ষ থেকে কোনো তদবিরের কাজ আমি করিনি। কাউকে সে আজ পর্যন্ত করতেও দেয়নি। আমার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ব্যবসা বাদে আমার কিংবা আমাদের পরিবারের কোনো আর্থিক লেনদেনের ইতিহাস নেই। আমাদের পরিবার গত ৩০ বছর ধরে ব্যবসায় জড়িত। আমার বাবা গত ১৬ বছর লীগের নিপীড়নের কারণে ঠিকমতো ব্যবসায় করতেই পারেননি।
‘আমার বাবার ও মাহফুজের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়িক উদ্যোগগুলো আমি ও আমার বাবা পরিচালনা করছি। এখানে কোনো অস্পষ্টতা নাই। সবই বাংলাদেশের আইন দ্বারা সিদ্ধ এবং পাবলিক ইনফরমেশন।’
ফেসবুক পোস্টে মাহবুব আলম আরও লিখেছেন, ‘গত নভেম্বরে দেশে ফিরে আসার পর থেকে অনেক তদবির এলেও মাহফুজ কোনো কাজই করেনি। বরং, আমাদের পরিবারের সকল সদস্যদের স্পষ্ট নিষেধ করা আছে, যাতে কোনো তদবির তাকে না করা হয়। তার বা আমার বিরুদ্ধে আর্থিক অসংগতি কিংবা তদবির বাণিজ্যের কোনো প্রমাণ আজও কেউ দিতে পারেনি, পারবেও না। কারণ, আমরা করিনি।’
পোস্টের বিশেষ দ্রষ্টব্যে মাহবুব আলম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বনি আমিনকে ক্ষমা চাইতে বলেছেন। তিনি বলেছেন, তিনি অস্ট্রেলিয়ায় আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থা নেবেন।
এর আগে ১৭ জুলাই রাজধানীর গুলশানে সাবেক নারী সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের পরিবারের কাছ থেকে চাঁদার টাকা নিতে গিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চার নেতাসহ পাঁচজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। এ ঘটনায় গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা শিক্ষার্থীদের এই প্ল্যাটফর্মের সদস্যদের চাঁদাবাজি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা–সমালোচনা হচ্ছে। জুলাই অভ্যুত্থানকে দুঃখজনকভাবে ‘মানি মেকিং মেশিনে’ পরিণত করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা।