আগামী বাজেটে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জকে গুরুত্ব দিতে হবে। মূল্যস্ফীতির কারণে যেন বাজেটে চাপ না পড়ে। কর্মসংস্থানের গুরুত্ব যেন পিছিয়ে না পড়ে। কাঠামোগত দুর্বলতা কাটাতে যেন উদ্যোগ থাকে। এ ছাড়া বৈদেশিক বাণিজ্যে এখন যে স্থিতিশীল অবস্থা আছে, তা যেন বজায় থাকে।
আগামী বাজেট সীমিত অভিলাষের বাজেট যেন হয়। অতীতে অর্থমন্ত্রীদের মধ্যে বাজেটের আকার বড় দেখানোর প্রবণতা ছিল।
বাজেটের দুটি দিক আছে। অর্থায়ন কীভাবে হবে, কীভাবে খরচ হবে।
বাজেটের অর্থায়নে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পাশাপাশি এনবিআর–বহির্ভূত খাত থেকে কর আদায় করা হয়। আগামী অর্থবছরে এই দুটি খাত থেকে ৫ লাখ কোটি টাকার বেশি আদায় করা মুশকিল। অতীতে কখনোই এত রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হয়নি। বাজেট–ঘাটতি দুই লাখ কোটি টাকার বেশি যেন না হয়। এই ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব। সব মিলিয়ে বাজেটের আয়ের পরিমাণ ৭ লাখ ২০ হাজার টাকার মতো হতে পারে। এর বেশি খরচের পরিকল্পনা করা হলে অভিলাষ বেশি হয়ে যাবে। এটা তখন ‘স্টেডিয়ামের’ বাইরে চলে যাবে, ‘স্টেডিয়ামের’ মধ্যে থাকতে হবে।
রাজস্ব আদায়ের কৌশল কী হবে, সেটা মূল বিষয়। আমার মতে, প্রত্যক্ষ করের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়াতে হবে এবং পরোক্ষ করের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। তবে আয়করের হার বাড়ানো যাবে না। করজাল বাড়ানোর তত্ত্বকথা বলা সহজ। কিন্তু বাস্তবে করজাল বাড়ানো অনেক কঠিন। এমন বাস্তবতার ওপর নির্ভর আয়কর বাড়ানো কঠিন হবে। তাই কর ফাঁকি বন্ধ করতে হবে। অর্থ উপদেষ্টার এক সাক্ষাৎকারে উনি বলেছেন, এক করদাতার ১০০ কোটি টাকার কর ফাঁকি ধরা পড়েছে। কমিশনারকে ৬০ কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে মাত্র ১০ কোটি টাকা কর দিয়ে পার পান। করদাতার সাশ্রয় ৩০ কোটি টাকা। এভাবে ফাঁকি কমাতে হলে দুর্নীতি কমাতে হবে। করনীতির ফাঁকফোকর বন্ধ করতে হবে। কারণ, করনীতির ফাঁকফোকর দিয়ে কর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যোগসাজশ করেন। বলা যায়, করহার ও করজাল না বাড়িয়েও কর আদায় বাড়ানো যায়। করনীতি সরল করতে হবে। তাই কর দেওয়ার ব্যবস্থা অনলাইন করতে হবে।
এদিকে কর অব্যাহতি তুলে দেওয়া হচ্ছে। এত দিন ব্যবসায়ীরা রাস্তায় নামেননি। বাজেটের পর কী হয়, তাই দেখার বিষয়।
এবার দেখা যাক, ব্যয়ের কী অবস্থা। বাজেটে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া অনেক খরচ কমানো যাবে না। যেমন সুদ খরচ ও সরকারি কর্মচারীদের বেতন–ভাতা। এদিকে মহার্ঘ ভাতার আগামী বাজেটে সাত হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। যেখানে ব্যয় সাশ্রয়ী হতে হবে, তখন এই জাতীয় খরচ বৃদ্ধি পোষায় না। ব্যয় বাজেটের ৮০ শতাংশ কমানোর সুযোগ নেই। ২০ শতাংশ খরচ পুনর্বিন্যাস করা যেতে পারে। বিশেষ করে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ও ভর্তুকি খরচ পুনর্বিন্যাস করার সুযোগ আছে। হয়তো এসব খাতের মোট ব্যয় কমানো যাবে না। তবে খাতের বরাদ্দ পরিবর্তন করা যেতে পারে। যেমন কৃষি যন্ত্রপাতিতে ভর্তুকি দেওয়ার উদ্দেশ্য মহৎ, কিন্তু কার্যকারিতা নেই। মধ্যস্বত্বভোগীরা সব সুবিধা নিয়ে যায়। এডিপিতে অনেক ছোট ছোট অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প আছে। সব মিলিয়ে ব্যয়ের উৎকর্ষ বাড়াতে হবে।
আবার বাজেটের ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক খাত থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হচ্ছে। এত অর্থ সরকার ঋণ নিলে বেসরকারি খাত কি ঋণ পাবে? এ ছাড়া ট্রেজারি বিলের সুদের হার ১১-১২ শতাংশ। ব্যাংকগুলো যদি সরকারি খাতে টাকা রেখে এত সুদ পায়, তবে ঝুঁকি নিয়ে কেন বেসরকারি খাতকে ঋণ দেবে।
জাহিদ হোসেন
সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
রাজধানীর ২২ পশুর হাট ক্রেতার অপেক্ষায়
গরু ব্যাপারী মাহতাব লিমন পাবনার আতাইকুলা থেকে ট্রাকে চেপে ১৪টি গরু নিয়ে এসেছেন রাজধানীর শাহজাহানপুর হাটে। বললেন, ‘ভোররাতে গরু নিয়া হাটে এসেছি। দুপুর পর্যন্ত তেমন ক্রেতা আসেননি। দু্-একজন এলেও গরু দেখে চলে গেছেন।’
মাহতাব লিমনের কথাতে স্পষ্ট, কোরবানি ঈদের আর ক’দিন দিন থাকলেও রাজধানীর পশুর হাটে এখনও ক্রেতার আনাগোনা নেই। খামারি, ব্যাপারী আর ইজারাদাররা হাটের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করলেও শুরু হয়নি তেমন কেনাবেচা। তবে আজ মঙ্গলবার থেকে অস্থায়ী পশুর হাটে শুরু হচ্ছে আনুষ্ঠানিক বেচাকেনা। এবার ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের আওতায় গাবতলী আর সারুলিয়ার দুটি স্থায়ীসহ মোট ২২টি পশুর হাট বসেছে।
গতকাল সোমবার অন্তত তিনটি বড় পশুর হাট সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, দেশের নানা প্রান্ত থেকে ট্রাকবোঝাই পশু নিয়ে আসছেন ব্যাপারীরা। খামারি আর হাটের ইজারাদাররা আশা করছেন, কাল বুধবার সরকারি অফিসের শেষ কর্মদিবস। ওই দিন রাত থেকেই জমে উঠতে পারে হাট। আর খামারিদের প্রত্যাশা, শেষ মুহূর্তে ভারতীয় গরু হাটে না ঢুকলে এবার ভালো দাম পাবেন তারা। বৈরী আবহাওয়ার কারণে পশু নিয়ে হাটে থাকা-খাওয়ায় কিছুটা সমস্যা হলেও এ নিয়ে অভিযোগ নেই তাদের।
উত্তর শাহজাহানপুরের অস্থায়ী পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রাকে করে কোরবানির পশু নিয়ে আসছেন বিক্রেতারা। স্থানীয় কিছু লোকজনও হাটে আসছেন। এর মধ্যে দুয়েকটা গরু বিক্রিও হয়েছে।
মেরুল বাড্ডার শাহনেওয়াজ সুমন বলেন, ‘একটি খামারে আগেই গরু কিনে রেখেছি। তবু হাটে এসেছি গরু দেখতে। মেরুল বাড্ডা হাটেও গিয়েছি। আজ এসেছি শাহজাহানপুরে, এর পর কমলাপুর হাটে যাব।’ আল মাহমুদুল হাসান বাসাবো থেকে দুই ছেলেকে নিয়ে হাটে এসে একটি গরু ও একটি ছাগল কিনেছেন। মাহমুদুল বলেন, ‘শাহজাহানপুরের হাট বাড়ির কাছে। পরিবেশ ভালো, ভালো গরু ওঠে। এখন পর্যন্ত বাজার ভালোই আছে। দাম খুব বেশি মনে হচ্ছে না।’
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থেকে গরু নিয়ে আসা রাশেদুল হাসান বলেন, ‘১৪টি গরু আনছিলাম; দুটি বিক্রি হয়ছে। এইবার ভারত থেকে গরু আসবে না বলে শুনছি। এইডা নিয়া ব্যাপারীরা একটু টেনশনে আছে। অনেকে গরু কিনে নাই, যে গতবার ১০টা কিনছে, হে এইবার পাঁচটাও কিনে নাই।’
হাটের ইজারাদার আনিসুর রহমান টিপু বলেন, ‘হাটে পশু আসতে শুরু করেছে। কিছু ক্রেতাও আছে। তবে মূল বিক্রি শুরু হবে ঈদের দুই দিন আগে।’
পোস্তগোলা শ্মশানঘাটের ইজারাদার মোহাম্মদ আলী মিলন বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে গত দুই দিন হাটে গরু এসেছে কম। তবে রোববার থেকে আসা শুরু হয়েছে। এই হাটে কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মাদারীপুর, ফরিদপুর এলাকার গরু নদীপথেও আসছে। আজও ব্যাপারীরা গরু নিয়ে আসছেন। আমাদের হাটে মঙ্গলবার থেকে বেচাকেনা শুরু হবে।’
ঢাকার প্রধান হাট গাবতলীতেও আসতে শুরু করেছে পশু। তবে সোমবার সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, কোরবানির পশুতে হাট ভরে গেছে। গরুর পাশাপাশি উট, মহিষ, ভেড়াও এসেছে। গাবতলী হাটে এদিন কিছু গরু বিক্রি হয়েছে।
মিরপুরের পীরেরবাগ থেকে আসা আবদুল্লাহ আল মামুন গাবতলী হাট থেকে একটি গরু কিনেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি দেশি গরু কিনতে এসেছি। বাজেটের মধ্যে একটা গরু পছন্দ হয়েছে। এ কারণে ৭০ হাজার টাকা দিয়ে কিনে ফেলেছি।’
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা থেকে বিশাল আকৃতির কয়েকটি গরু গাবতলী হাটে তুলেছেন উজ্জ্বল হোসেন। ধূসর কালো রঙের একটি গরুর দাম হাঁকছেন ৩০ লাখ টাকা। তবে এখনও ক্রেতা পাননি তিনি। উজ্জ্বল জানান, পাকিস্তানি শাহিওয়াল জাতের এই গরুর ওজন ৮ থেকে ১০ মণ।
ওই হাটের ঝিনাইদহ থেকে আসা ইমরান হোসেন বলেন, ‘এলাকায় এবার গরু কম। গো-খাদ্যের দাম বেশি বলে কৃষক গরু পালনের দিকে মনোযোগ দেয়নি।