চট্টগ্রামে ১৯৮১ সালের ৩০ মে একদল সৈন্যের গুলিতে প্রাণ হারান রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। এ ঘটনার পর পুলিশের হাতে আটক হন সেনাবাহিনীর ২৪তম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মোহাম্মদ আবুল মঞ্জুর। পরে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানা হেফাজত থেকে তাঁকে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে নিয়ে যান মেজর (অব.) কাজী এমদাদুল হক। ১ জুন ওই সেনানিবাসেই গুলিতে নিহত হন মোহাম্মদ আবুল মঞ্জুর। রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড হিসেবেই এটি বহুল আলোচিত। এ ঘটনায় করা হত্যা মামলা নিষ্পত্তি হয়নি ৪৪ বছরেও।

মামলাটি বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত (অস্থায়ী) ঢাকার ১ম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। মামলার চার্জশিটভুক্ত দুই আসামি সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ এবং ডিজিএফআইর সাবেক প্রধান আবদুল লতিফ মারা গেছেন। অপর তিন অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি মেজর (অব.

) কাজী এমদাদুল হক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) শামসুর রহমান শামস ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মোস্তফা কামাল উদ্দিন বর্তমানে জামিনে আছেন। বিচারের দীর্ঘসূত্রতায় মঞ্জুর হত্যাকাণ্ডের বিচার অদৌ শেষ হবে কিনা– এমন প্রশ্ন রাজনৈতিক মহলে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন সমকালকে বলেন, রাজনৈতিক বোঝাপড়ার অভাবে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের বিচারগুলো হয় না। মঞ্জুর হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রেও এটা হয়েছে। এরশাদের সম্পৃক্ততা ছিল তথ্যপ্রমাণে এটি বিভিন্নভাবে এসেছে। তিনি আরও বলেন, ‘খুনের বিচারের জন্য খুনির বিচার হতে হয়–এটাই আইনের শাসন। যতদিন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত না হবে, ততদিন রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের বিচার কার্যকর হবে– এমনটা আশা করা বৃথা হবে।’

মঞ্জুর হত্যা মামলার বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে ঢাকার ১ম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আবু সেলিম চৌধুরী সমকালকে বলেন, গত ১৭ এপ্রিল মামলার সর্বশেষ শুনানি হয়েছে। পরে ওই আদালতের বিচারক অন্যত্র বদলি হন। নতুন বিচারক যোগদানের পর শুনানি পুনরায় শুরু হবে। সেলিম চৌধুরী জানান, বর্তমানে মামলাটি ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারা অনুযায়ী আসামিদের জেরাসহ পরীক্ষার জন্য রয়েছে। মামলার একজন আসামি লে. কর্নেল (অব.) শামসুর রহমান ওরফে শামস উচ্চ আদালত থেকে মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ নিয়েছেন। সেটি প্রত্যাহারের জন্য রাষ্ট্রপক্ষ উদ্যোগ নিয়েছে। 

মামলার নথি অনুযায়ী, জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর আত্মগোপনে যাওয়ার পথে পুলিশ ১৯৮১ সালের ১ জুন মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আবুল মঞ্জুরকে আটক করে। পরে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে নিয়ে তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ১৯৯৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মঞ্জুরের ভাই আইনজীবী আবুল মনসুর আহমেদ চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, মঞ্জুরকে পুলিশের কাছ থেকে মেজর কাজী এমদাদুল হক সেনা হেফাজতে নেন। পরে ঠান্ডামাথায় গুলি করে হত্যা করা হয় তাঁকে। ১৯৯৫ সালের ২৭ জুন এরশাদসহ পাঁচজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। অভিযোগপত্রে বলা হয়, এরশাদের নির্দেশে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে মঞ্জুরকে হত্যা করেন এবং লাশ গোপন করার চেষ্টা করেন। 

২০১৪ সালের ২২ জানুয়ারি এ মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে তৎকালীন বিচারক হোসনে আরা আকতার ওই বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন। মামলায় মোট ৪৯ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। কিন্তু রায়ের মাত্র ১৩ দিন আগে ২৯ জানুয়ারি বিচারক পরিবর্তন হওয়ায় মামলাটির বিচারের দায়িত্ব পান দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা জজ হাসান মাহমুদ ফিরোজ। এর আগে বিভিন্ন সময়ে একইভাবে ২২ জন বিচারক এ মামলাটিতে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। পরে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি এই মামলা অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। তৎকালীন পিপি আসাদুজ্জামান খান অধিকতর তদন্ত চেয়ে আবেদনটি করেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘মামলার সাক্ষ্য-প্রমাণ ও অভিযোগপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, তদন্তে ত্রুটি রয়েছে। তা ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এখন গণমাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তদন্তকারী কর্মকর্তার তদন্তে অসম্পূর্ণতা থাকায় ন্যায়বিচারের স্বার্থে ঘটনার অধিকতর তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।’

মামলায় এরশাদসহ পাঁচজনের বিচার চলছিল। এরশাদ ছিলেন অভিযোগপত্রভুক্ত প্রধান আসামি। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যার ঘটনা ভিন্ন খাতে নিতে এরশাদের নির্দেশে কিছু সামরিক কর্মকর্তা মঞ্জুরকে পুলিশ হেফাজত থেকে নিয়ে গুলি করে হত্যা করেছেন। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হত য ক ণ ড র ম হ ম মদ র জন ত ক র তদন ত র রহম ন ব চ রক র জন য এরশ দ

এছাড়াও পড়ুন:

২২ অনাথ কাশ্মীরি শিশুর পড়াশোনার দায়িত্ব নিলেন রাহুল গান্ধী

অপারেশন সিঁদুর চলাকালীন পাকিস্তানি গোলায় ভারত–নিয়ন্ত্রিত জম্মু–কাশ্মীরে যাঁরা নিহত হয়েছিলেন, তাঁদের পরিবারের ২২ অনাথ শিশুর লেখাপড়ার পুরো দায়িত্ব নিয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। ওই শিশুরা পুঞ্চ জেলার সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দা।

স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে উঠে স্নাতক হওয়া পর্যন্ত ওই শিশুদের পড়াশোনার সব খরচ রাহুল গান্ধী বহন করবেন। সেই খরচের প্রথম কিস্তির টাকা বুধবার ওই পড়ুয়াদের স্কুলে পৌঁছে যাবে বলে জানিয়েছেন জম্মু–কাশ্মীরের কংগ্রেস সভাপতি তারিক হামিদ কাররা।

পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল পর্যটকদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়েছিল কয়েকজন জঙ্গি। সেই হামলায় নিহত হয়েছিলেন মোট ২৬ জন পর্যটক। প্রত্যাঘাতের জন্য ভারত শুরু করে অপারেশন সিঁদুর। চার দিনের সেই লড়াইয়ের সময় জম্মুর সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রবল গোলাবর্ষণ করে পাকিস্তান। সেই হামলায় মারা গিয়েছিলেন ২৭ জন গ্রামবাসী। আহত হয়েছিলেন ৭০ জনের বেশি। যাঁরা নিহত হয়েছিলেন, ওই ২২ শিশু ওইসব পরিবারেরই সন্তান। তাদের কেউ বাবা, কেউ মা, কেউ–বা দুজনকেই হারিয়েছে। কারও পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।

রাহুল গত মে মাসে ওইসব এলাকায় গিয়েছিলেন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। অনাথ শিশুদের স্কুলেও গিয়েছিলেন। ওই সময় তিনি দলীয় নেতাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন অনাথ শিশুদের তালিকা তৈরি করতে। সরকারি নথির সঙ্গে সেই নাম মিলিয়ে ২২ জনের চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত হয়। পুঞ্চ জেলা সফরের সময় রাহুল তাঁর ইচ্ছার কথা জানিয়ে বলেছিলেন, ওই শিশুদের স্নাতক স্তর পর্যন্ত পড়াশোনার সব খরচ তিনি দেবেন।

পাকিস্তানের গোলার আঘাতে মারা গিয়েছিলেন ১২ বছরের দুই যমজ ভাই–বোন জাইন আলি ও উরবা ফতিমা। রাহুল তাঁদের স্কুলে গিয়েছিলেন। সেই স্কুলের পড়ুয়াদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তাঁদের বলেছিলেন, তোমরা তোমাদের বন্ধুদের হারিয়েছ। সে জন্য তোমাদের মন খারাপ। ওই মৃত্যু আমাকেও দুঃখ দিয়েছে। তোমাদের দুঃখ আমি বুঝি। কিন্তু তোমাদের জন্য আমি গর্বিত। তোমরা ভয়কে জয় করেছ। রাহুল ওই শিশুদের বলেছিলেন, ভয়কে জয় করতে হবে। সুদিন আসবে। সব আবার স্বাভাবিক হবে।

ওই ২২ জনের জন্য বছরে কত খরচ হবে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব তা জানাননি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ