মুরগির খোপেই দিন কাটে শতবর্ষী লালবড়ুর
Published: 1st, June 2025 GMT
পটুয়াখালী সদর উপজেলার দক্ষিণ লাউকাঠি গ্রামের শতবর্ষী লালবড়ু। দুই যুগ আগে স্বামী চাঁন খা মারা যাওয়ার পরই শুরু হয় তার জীবন সংগ্রাম। ভিক্ষার টাকায় দুই ছেলেকে কোলে পিঠে মানুষ করেছেন তিনি।
বর্তমানে কানে শোনেন না, চোখেও দেখেন না ঠিকমতো। ছেলেরা কাজে বের হলে দিনের বেলায় তার ঠাঁই হয় মুরগির খোপে। এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আলোচনায় আসেন তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, লালবড়ুর দুই ছেলে মোস্তফা ও নাসির। তারা দুইজনই সংসার নিয়ে ব্যস্ত। ২০২২ সালে জেলার লোহালিয়া ও লাউকাঠি নদীর পাড়ে দখল করে গড়ে ওঠা অনেক অবৈধ ঘর উচ্ছেদ করে দেয় প্রশাসন। এরপর থেকে বড় ছলে মোস্তফা তার পরিবার নিয়ে আশ্রয় নেন দক্ষিণ লাউকাঠী গ্রামের নদীর পাড়ে অন্যের জমিতে। একটি টিনশেড ঘর তৈরি করেন তিনি। সে বাড়িতেই থাকেন লালবড়ু।
মোস্তফা পেশায় একজন অটোরিকশা চালক। তার স্ত্রী অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় বেশ কয়েকদিন আগে মোস্তফার ঘর চুরি হয়। তাই কাজে যাওয়ার সময় তারা দুজন ঘরে তালা লাগিয়ে যান। লালবড়ুকে ফেলে যান ঘরের সামনের উঠানে।
একা চলাচল করতে না পারা লালবড়ু দিনের বেলায় রোদ-বৃষ্টি থেকে বাঁচতে আশ্রয় নেন মুরগির খোপে। সেখানে একটি পুরনো মাদুর, একটি ছেঁড়া কাঁথা আর কিছু কাপড় রয়েছে তার। বর্ষার দিনে বৃষ্টির পানি গড়িয়ে পড়ে ভেতরে, আবার গরমে দমবন্ধ হয়ে আসে। তারপরও বাধ্য হয়ে তিনি ওই খোপেই থাকছেন।
লালবড়ু বলেন, “আমি সারাদিন খোপে থাকি। সন্ধ্যায় ছেলে আর বউ আসলে ঘরে যাই। কয়েকদিন আগে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পেয়েছি। হাতও ভেঙে গেছে। কেউ ডাক্তারও দেখায়নি। দিনে ছেলে এসে খাবার দিয়ে গেলে খাই আবার অনেক সময় না আসতে পারলে না খেয়ে থাবি। অনেক সময় আবার প্রতিবেশিদের বাড়িতে ভিক্ষা করে খাই। এখন শুধু আল্লাহর দয়া চাই।”
স্থানীয় ইটভাটা ম্যানেজার মাসুদ হাওলাদার বলেন, “এই পরিবারটি একেবারে ভূমিহীন। তারা কোন ধরনের সরকারি সাহায্য সহযোগীতা পায় না। সমাজে যারা সামর্থ্যবান আছে তারা এগিয়ে এলে এই মা শেষ বয়সে একটু শান্তি পেতো।”
একই এলাকার ফয়েজ হোসেন বলেন, ‘সরকারীভাবে তাদের একটা ঘরের ব্যবস্থা করলে এবং কিছু আর্থিক সহায়তা পেলে এই মা একটু ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারতো।”
লালবড়ু বেগমের বড় ছেলে মোস্তফা বলেন, “আমার মা আমাদের সাথেই থাকেন। গত কয়েকদিন আগে আমাদের ঘর চুরি হয়েছে। ঘরে যেসব মূল্যবান মালামাল ছিলো তা চোরে নিয়ে গেছে। তাই কাজে যাওয়ার সময় আমরা ঘর তালা মেরে যাই। এসময় মাকে অন্য বাড়িতে আশ্রয় নিতে বলি। কিন্তু মা অন্যের বাড়িতে না গিয়ে বৃষ্টির সময় ওই মুরগির খোপে ছিল।”
পটুয়াখালী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইফফাত জামান উর্মি বলেন, “বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমি নিজেই ঘটনাস্থলে যাব। এছাড়া এই পরিবারটিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
ঢাকা/ইমরান/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম রগ র খ প
এছাড়াও পড়ুন:
শতবর্ষী পাঠাগারে তালা
পাঠাগার জ্ঞানের আলো ছড়ায়। বইয়ের সঙ্গে পাঠকের মেলবন্ধন সৃষ্টি করে। এ কাজটি করে আসছিল গোপালগঞ্জের শতবর্ষী আলোকবর্তিকা ‘নজরুল পাবলিক লাইব্রেরি’। কিন্তু এটি দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে। ফলে বই-পাঠক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছে। ইতিহাস ও গৌরব হারাতে বসেছে গ্রন্থাগারটি।
গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের পাশে অবস্থিত এ লাইব্রেরি প্রাঙ্গণে রয়েছে কদমগাছসহ বিভিন্ন গাছের সমাহার। ছায়ার ঘেরা লাইব্রেরির দরজায় ঝুলছে কয়েকটি তালা। দীর্ঘ তিন বছর ধরে এটি রয়েছে বন্ধ। ছয় বছর ধরে নেই লাইব্রেরিয়ান।
১৯২০ সালে গ্রন্থাগারটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। দেশভাগের আগে ঢাকা ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরাও বিভিন্ন রেফারেন্সের বইয়ের জন্য এখানে আসতেন। কালের সাক্ষী এই লাইব্রেরিটি সংস্কার করে আধুনিকায়নের দাবি জানিয়েছেন পাঠকরা।
লাইব্রেরিতে এখন দেশি-বিদেশি প্রায় ১৪ হাজার বই রয়েছে। এখানে ধ্রুপদি সাহিত্যের বইয়ের মধ্যে রয়েছে– হোমারের ইলিয়াড, ওডিসি, দান্তে রচনাবলির বাংলা অনুবাদ। আছে পারস্যের কবি ফেরদৌস রচিত শাহনামা। আছে পুরাণ, রবীন্দ্র ও নজরুল রচনাবলিসহ মূল্যবান অনেক বই।
বহু বছর ধরে লাইব্রেরিতে নতুন বই সংযোজন না করায় পুরোনো বইগুলো পাঠককে আকৃষ্ট করতে পারছে না। দৈনিক পত্রিকা না রাখায় ঐতিহ্যবাহী এ গ্রন্থাগার থেকে অনেক আগেই মুখ ফিরিয়ে নেন পাঠক। এমনকি বিচ্ছিন্ন রয়েছে এর বিদ্যুৎ সংযোগ। জানালা ভেঙে ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে।
গোপালগঞ্জ সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক হাবিবুর রহমান বলেন, দেশভাগের পর পাঠাগারটির কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়ে। লাইব্রেরিয়ান প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাসও ভারতে চলে যান। ১৯৫৬ সালে পাঠাগারের দায়িত্ব বুঝে নেন শিক্ষক মঈন উদ্দিন। ১৯৫৮ সালে মুসলিম লীগ নেতারা করোনেশন পাবলিক লাইব্রেরির নাম পরিবর্তন করে উর্দু কবি আল্লামা ইকবালের নামে নামকরণের উদ্যোগ নিলে মঈন উদ্দিন স্থানীয় ছাত্র-জনতাকে ঐক্যবদ্ধ করেন। আন্দোলনের মুখে কাজী নজরুলের নামে লাইব্রেরিটির নামকরণ করা হয়। এখন এটি বন্ধ। জ্ঞানপিপাসুদের কাছে যা খুবই কষ্টের।
পাঠক সজীব বিশ্বাস জানান, প্রায়ই অবসর সময়ে জ্ঞানচর্চার জন্য এই পাঠাগারে আসতেন। এখন নতুন বইয়ের সংগ্রহ নেই। তাই আর এখানে আসা হয় না।
পাঠক রেজওয়ান আহমেদ চৌধুরী বলেন, এ গ্রন্থাগারে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। লাইব্রেরিযান নিয়োগ করে প্রতিদিন এটি খোলার ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এখানে আবার প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসবে।
শিক্ষার্থী সোমা হালদার বলেন, জেলার সবচেয়ে সমৃদ্ধ লাইব্রেরি বন্ধ থাকায় পড়াশোনার পাশাপাশি জ্ঞানচর্চায় বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি দ্রুত এটি খুলে দেওয়ার দাবি জানান।
উদীচী গোপালগঞ্জ জেলা সংসদের সভাপতি নাজমুল ইসলাম বলেন, লাইব্রেরিটি এক সময় গোপালগঞ্জবাসীর জ্ঞান ও সাহিত্যচর্চার কেন্দ্রবিন্দু ছিল। এখানে দুষ্প্রাপ্য অনেক বই রয়েছে। শতবর্ষী এ আলোকবর্তিকাকে সচল করতে জেলা প্রশাসককে উদ্যোগ নিতে হবে।
জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান জানান, তারা আর্কাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এ লাইব্রেরিতে বিদ্যুৎ সংযোগ ও জানালাসহ প্রয়োজনীয় সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এখানে একজন লাইব্রেরিয়ান ও কর্মচারী দেওয়া হবে। লাইব্রেরিটি প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে।