কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হওয়ার দুই দিন পর লালসাংময় বমের মৃত্যু এবং কারা হেফাজতে লালত্লেং কিম বমের মৃত্যুর ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন ১৯ বিশিষ্ট নাগরিক। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তাঁরা এ দাবি জানান।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বম জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে চলমান রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার লালসাংময় বমের মৃত্যুতে আমরা তীব্রভাবে ক্ষুব্ধ। “সন্ত্রাস দমনে”র নামে বান্দরবানে নির্বিচার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সাধারণ মানুষকে আটক, বিশেষ করে বম জনগোষ্ঠীর নারী, শিশুসহ সাধারণ নাগরিকদের বছরের পর বছর কারাবন্দী রাখার তীব্র নিন্দা জানাই।’

লালসাংময় বম ও লালত্লেং কিমের মৃত্যুর বিচার বিভাগীয় তদন্তের পাশাপাশি নিরপরাধ বম নাগরিকদের মুক্তির আহ্বান জানিয়ে ১৯ বিশিষ্ট নাগরিক বলেন, কুকি-চীন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সদস্য সন্দেহে বম জাতিগোষ্ঠীর যে কাউকে যখন-তখন গ্রেপ্তার বা হয়রানির নিপীড়নমূলক রাষ্ট্রীয় নীতির শিকার লালসাংময় বমকে ২০২৩ সালে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

বিবৃতিতে পরিবারের অভিযোগ তুলে ধরে বলা হয়, মিথ্যা মামলায় কারাবন্দী নিরপরাধ লালসাংময় বম প্রায় দুই মাস ধরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাঁর শারীরিক অবস্থার গুরুতর অবনতি হলেও যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। দীর্ঘ অবহেলার কারণে তাঁর শারীরিক অবস্থার চূড়ান্ত অবনতি ঘটলে গত ২৯ মে তড়িঘড়ি করে তাঁকে জামিন দেওয়া হয়। ৩১ মে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে ছাড়া পেয়ে নিজ গ্রামে ফেরার আগেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

লালসাংময় বমের পরিবারের অভিযোগ অমূলক নয় উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, মাত্র দুই সপ্তাহ আগে আরও একজন বম তরুণ জেল হেফাজতে মৃত্যুবরণ করেন। গত ১৫ মে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী তরুণ লালত্লেং কিম বম বিনা চিকিৎসায় প্রাণ হারিয়েছেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই লালত্লেং কিম বমের হৃদ্‌যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়।

বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, ২০২৪ সালের ২ এপ্রিল বান্দরবানের রুমা ও থানচিতে কেএনএফের দুর্বৃত্ত কর্তৃক ব্যাংক ডাকাতির জের ধরে রাষ্ট্রীয় বাহিনী যৌথ অভিযানের নামে বম জাতিগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়ন শুরু করে।

বিবৃতিতে সরকারের কাছে পাঁচটি দাবি জানানো হয়। সেগুলো হলো লালসাংময় বম ও লালত্লেং কিম বমের মৃত্যুর বিচার বিভাগীয় তদন্ত সাপেক্ষে দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা; অবিলম্বে বম জাতিগোষ্ঠীকে ‘কালেকটিভ শাস্তি প্রদানের’ কৌশল প্রত্যাহার; বম জাতিগোষ্ঠীর মানুষের স্বাভাবিক চলাফেরা, হাটবাজারে পণ্য ক্রয়-বিক্রয়, ব্যবসায়িক কাজের ওপর রাষ্ট্রীয় নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করা; সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য তদন্তের মাধ্যমে ব্যাংক ডাকাতি ঘটনার সঙ্গে কেএনএফসহ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে তাদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় আনা এবং পাহাড় ও সমতলের সব নাগরিকের সমান অধিকার, মর্যাদা, নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।

আরও পড়ুনচট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী কেএনএফ সদস্যের মৃত্যু১৫ মে ২০২৫

বিবৃতিদাতারা হলেন আনু মুহাম্মদ, জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, রেহনুমা আহমেদ, সারা হোসেন, সায়দিয়া গুলরুখ, সায়েমা খাতুন, স্বাধীন সেন, মাহা মির্জা, হানা শামস আহমেদ, কল্লোল মোস্তফা, মির্জা তাসলিমা সুলতানা, গীতি আরা নাসরীন, শহিদুল আলম, খুশী কবির, সামিনা লুৎফা, কামাল চৌধুরী, ফার‍জানা ওয়াহিদ সায়ান, রানী ইয়েন ইয়েন ও পাভেল পার্থ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব চ র ব ভ গ য় তদন ত বম জ ত গ ষ ঠ বম র ম ত য তদন ত র ক ম বম

এছাড়াও পড়ুন:

‘কেএনএফের পোশাক তৈরি’, আ.লীগ নেতার ভাইসহ গ্রেপ্তার তিন আসামির রিমান্ড

পাহাড়ি সশস্ত্র সংগঠন কুকি–চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সন্দেহজনক পোশাক (ইউনিফর্ম) তৈরিতে কাপড় (ফেব্রিকস) সরবরাহের অভিযোগে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ নেতার ভাইসহ গ্রেপ্তার তিন আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন তারিকুল ইসলাম, তৌহিদুল ইসলাম ও আতিকুর রহমান। আজ মঙ্গলবার পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইব্রাহিম খলিল শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।

আসামিদের মধ্যে তারিকুল ইসলাম আওয়ামী লীগ নেতা, সাবেক সংসদ সদস্য ও সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের ছোট ভাই ও তাঁদের পারিবারিক মালিকানাধীন ‘অয়েল কমপোজিট নিট কেমিক্যাল ফেব্রিকস ডাইং’ কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

গতকাল সোমবার রাতে নগরের চান্দগাঁও কালুরঘাট এলাকা থেকে ওই তিন আসামিসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জামালুল ইসলাম নামের আরেক আসামির রিমান্ড আবেদন করেনি পুলিশ। চার আসামিকে বায়েজিদ বোস্তামী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, বায়েজিদ বোস্তামী থানা-পুলিশ গ্রেপ্তার তিন আসামির ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করে। শুনানি শেষে আদালত ৫ দিন করে মঞ্জুর করেন।

আদালত সূত্র জানায়, রিমান্ডের আবেদনে বলা হয়, আসামিরা অয়েল কমপোজিট নিট কেমিক্যাল ফেব্রিকস ডাইং মালিক কর্মকর্তা হয়ে কেএনএফ পোশাক তৈরির জন্য বায়েজিদের রিংভো অ্যাপারেলস নামের একটি পোশাক কারখানায় ফেব্রিকস সরবরাহ করেছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে। তাঁদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনায় জড়িত বাকিদের শনাক্ত করা প্রয়োজন।

গত ২৭ মে রাতে পাহাড়তলী থানার ডিটি রোডের একটি কারখানায় অভিযান চালিয়ে ১৫ হাজার ইউনিফর্ম জব্দ করে পুলিশ। এই ঘটনায় বায়েজিদ বোস্তামী থানার এসআই আরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে পাহাড়তলী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেন।

এর আগে ২৬ মে রাতে নগরের অক্সিজেন নয়াহাট এলাকার একটি কারখানা থেকে ১১ হাজার ৭৮৫টি ইউনিফর্ম উদ্ধার করে পুলিশ।

১৭ মে রাতে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার নয়ারহাট এলাকার রিংভো অ্যাপারেলস থেকে ২০ হাজার ৩০০টি সন্দেহজনক পোশাক (ইউনিফর্ম) জব্দ করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে এ ঘটনায় করা মামলার এজাহারে পুলিশ বলেছে, ইউনিফর্মগুলো পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ)। দুই কোটি টাকার চুক্তিতে ইউনিফর্মগুলো প্রস্তুতের ফরমাশ নেওয়া হয়।

এ ঘটনায় পোশাক কারখানাটির মালিকসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার তিনজন হলেন সাহেদুল ইসলাম, গোলাম আজম ও নিয়াজ হায়দার। পুলিশ জানিয়েছে, সাহেদুল ইসলাম কারখানার মালিক। অন্য দুজন পোশাকগুলো তৈরির ফরমাশ এনেছিলেন।

ফেসবুকে পেজ খুলে দুই-তিন বছর আগে পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। পাহাড়ের দুই ব্যাংকের তিন শাখায় ডাকাতিও করে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। বান্দরবানের দুই উপজেলায় ১৭ ঘণ্টার ব্যবধানে দুই ব্যাংকের তিন শাখায় ডাকাতির ঘটনা চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কারাবন্দী ফারুক খান একা চলাফেরা করতে পারেন না
  • ঈশ্বরদীতে ডায়রিয়ায় আরও এক নারীর মৃত্যু, চার দিনে চিকিৎসা নিয়েছেন ২৪৭ জন
  • ওয়েল গ্রুপের পরিচালকসহ তিন আসামি রিমান্ডে
  • ‘কেএনএফের পোশাক তৈরি’, আ.লীগ নেতার ভাইসহ গ্রেপ্তার তিন আসামির রিমান্ড
  • লাইফ সাপোর্টে অভিনেত্রী তানিন সুবহা
  • কেএনএফের পোশাক জব্দ, আ.লীগ নেতার ভাইসহ চারজন আটক
  • 'কেএনএফের' ইউনিফর্ম জব্দ: সাবেক এমপির ভাইসহ গ্রেপ্তার ৪
  • কেএনএফের ইউনিফর্ম জব্দ: সাবেক এমপির ভাইসহ গ্রেপ্তার ৪
  • পাবনার ঈশ্বরদীতে ডায়রিয়া পরিস্থিতির অবনতি, এক নারীর মৃত্যু