বম সম্প্রদায়ের দুজনের মৃত্যুর ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের আহ্বান ১৯ নাগরিকের
Published: 4th, June 2025 GMT
কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হওয়ার দুই দিন পর লালসাংময় বমের মৃত্যু এবং কারা হেফাজতে লালত্লেং কিম বমের মৃত্যুর ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন ১৯ বিশিষ্ট নাগরিক। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তাঁরা এ দাবি জানান।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বম জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে চলমান রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার লালসাংময় বমের মৃত্যুতে আমরা তীব্রভাবে ক্ষুব্ধ। “সন্ত্রাস দমনে”র নামে বান্দরবানে নির্বিচার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সাধারণ মানুষকে আটক, বিশেষ করে বম জনগোষ্ঠীর নারী, শিশুসহ সাধারণ নাগরিকদের বছরের পর বছর কারাবন্দী রাখার তীব্র নিন্দা জানাই।’
লালসাংময় বম ও লালত্লেং কিমের মৃত্যুর বিচার বিভাগীয় তদন্তের পাশাপাশি নিরপরাধ বম নাগরিকদের মুক্তির আহ্বান জানিয়ে ১৯ বিশিষ্ট নাগরিক বলেন, কুকি-চীন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সদস্য সন্দেহে বম জাতিগোষ্ঠীর যে কাউকে যখন-তখন গ্রেপ্তার বা হয়রানির নিপীড়নমূলক রাষ্ট্রীয় নীতির শিকার লালসাংময় বমকে ২০২৩ সালে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
বিবৃতিতে পরিবারের অভিযোগ তুলে ধরে বলা হয়, মিথ্যা মামলায় কারাবন্দী নিরপরাধ লালসাংময় বম প্রায় দুই মাস ধরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাঁর শারীরিক অবস্থার গুরুতর অবনতি হলেও যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। দীর্ঘ অবহেলার কারণে তাঁর শারীরিক অবস্থার চূড়ান্ত অবনতি ঘটলে গত ২৯ মে তড়িঘড়ি করে তাঁকে জামিন দেওয়া হয়। ৩১ মে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে ছাড়া পেয়ে নিজ গ্রামে ফেরার আগেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
লালসাংময় বমের পরিবারের অভিযোগ অমূলক নয় উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, মাত্র দুই সপ্তাহ আগে আরও একজন বম তরুণ জেল হেফাজতে মৃত্যুবরণ করেন। গত ১৫ মে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী তরুণ লালত্লেং কিম বম বিনা চিকিৎসায় প্রাণ হারিয়েছেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই লালত্লেং কিম বমের হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়।
বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, ২০২৪ সালের ২ এপ্রিল বান্দরবানের রুমা ও থানচিতে কেএনএফের দুর্বৃত্ত কর্তৃক ব্যাংক ডাকাতির জের ধরে রাষ্ট্রীয় বাহিনী যৌথ অভিযানের নামে বম জাতিগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়ন শুরু করে।
বিবৃতিতে সরকারের কাছে পাঁচটি দাবি জানানো হয়। সেগুলো হলো লালসাংময় বম ও লালত্লেং কিম বমের মৃত্যুর বিচার বিভাগীয় তদন্ত সাপেক্ষে দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা; অবিলম্বে বম জাতিগোষ্ঠীকে ‘কালেকটিভ শাস্তি প্রদানের’ কৌশল প্রত্যাহার; বম জাতিগোষ্ঠীর মানুষের স্বাভাবিক চলাফেরা, হাটবাজারে পণ্য ক্রয়-বিক্রয়, ব্যবসায়িক কাজের ওপর রাষ্ট্রীয় নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করা; সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য তদন্তের মাধ্যমে ব্যাংক ডাকাতি ঘটনার সঙ্গে কেএনএফসহ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে তাদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় আনা এবং পাহাড় ও সমতলের সব নাগরিকের সমান অধিকার, মর্যাদা, নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।
আরও পড়ুনচট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী কেএনএফ সদস্যের মৃত্যু১৫ মে ২০২৫বিবৃতিদাতারা হলেন আনু মুহাম্মদ, জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, রেহনুমা আহমেদ, সারা হোসেন, সায়দিয়া গুলরুখ, সায়েমা খাতুন, স্বাধীন সেন, মাহা মির্জা, হানা শামস আহমেদ, কল্লোল মোস্তফা, মির্জা তাসলিমা সুলতানা, গীতি আরা নাসরীন, শহিদুল আলম, খুশী কবির, সামিনা লুৎফা, কামাল চৌধুরী, ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান, রানী ইয়েন ইয়েন ও পাভেল পার্থ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব চ র ব ভ গ য় তদন ত বম জ ত গ ষ ঠ বম র ম ত য তদন ত র ক ম বম
এছাড়াও পড়ুন:
মাদারীপুরে কারা হেফাজতে চিকিৎসাধীন আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু
মাদারীপুরে কারা হেফাজতে থাকা আওয়ামী লীগ নেতা ইউসুফ আলী মিয়া (৭০) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। আজ সোমবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, গতকাল রোববার দুপুরে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে ইউসুফ আলী মিয়াকে মাদারীপুর জেলা কারাগার থেকে প্রথমে মাদারীপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ঢাকা মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়।
ইউসুফ আলী মিয়া রাজৈর উপজেলার কানাইপুর এলাকার বাসিন্দা, তিনি টেকেরহাট আবাসিক এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। ওষুধ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ছাড়াও তিনি রাজৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন।
মাদারীপুর কারাগারের চিকিৎসা কর্মকর্তা অখিল সরকার বলেন, ‘হঠাৎই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। অবস্থার অবনতি হলে আমরা তাঁকে দ্রুত সদর হাসপাতালে পাঠাই। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, হৃদ্রোগে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তাঁর লাশ এখন ঢাকা মেডিকেলে রয়েছে। ময়নাতদন্তের পর লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ২৮ নভেম্বর রাজৈর থানায় হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও বোমা বিস্ফোরণের একটি মামলা করেন ইশিবপুর ইউনিয়নের পাঠানকান্দি গ্রামের শাহ আলম শেখ ওরফে কোব্বাস শেখ। এতে ইউসুফ আলী মিয়াকে ৬৪ নম্বর আসামি করা হয়। তিনি উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেলেও পরে রাজৈর থানার একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। প্রায় তিন মাস ধরে তিনি কারাবন্দী ছিলেন এবং সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
মাদারীপুর জেলা কারাগারের জেল সুপার শাহ রফিকুল ইসলাম বলেন, গতকাল দুপুরে হঠাৎ ইউসুফ মিয়া অসুস্থ হয়ে পড়েন। কারাগারের চিকিৎসক তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে পাঠান। পরে সেখান থেকে ইউসুফ আলী মিয়াকে ঢাকা মেডিকেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়। এরপর আজ সকালে তিনি মারা গেছেন। ময়নাতদন্তের পর লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।