রাবার হাতের ভাইরাল এমাদাৎসির রেসিপি, সঙ্গে রান্না নিয়ে আলাপ
Published: 4th, June 2025 GMT
রান্নাঘরে হাতের কাছে যে মসলাগুলো থাকে, সাধারণত সেগুলোই ব্যবহার করেন রাবা। মূল রেসিপি হয়তো একই থাকে, তবে ব্যবহৃত মসলাগুলো হয় সহজলভ্য।
শুধু রাঁধতেই নয়, খেতেও খুব ভালোবাসেন রাবা। আর পছন্দ করেন বাজার করতে। খুব দামি বা বিশেষ খাবার নয়, রাবার পছন্দ দেশি খাবার। নানা ধরনের শাকসবজি খান রাবা। ঢ্যাঁড়স ও ফুলকপির যেকোনো রান্নাই তাঁর পছন্দ। আর সব খাবারের মধ্যে বিশেষ পছন্দ পাঙাশ মাছ। মজা করে রাবা বলছিলেন, ‘পাঙাশ মাছ শুনলে বেশির ভাগ মানুষই নাক সিঁটকান। কিন্তু এই মাছই আমার অনেক পছন্দ।’ কথায়–কথায় বললেন, তাঁর স্বামী আরাফাত মহসীনও মাছটি পছন্দ করেন। ‘মসলা দিয়ে কষিয়ে ভুনা ভুনা পাঙাশ মাছ রান্না করি, যেটা একদম মাংসের মতো স্বাদ হয়। এর কাছে অন্য খাবারের স্বাদ একেবারেই নগণ্য,’ বলছিলেন রাবা খান। মিষ্টিজাতীয় খাবার খেতেও ভালোবাসেন রাবা। কুমিল্লা–ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চলের ছানামুখী তাঁর বিশেষ পছন্দ। ভালোবাসেন চিনি দেওয়া খাবার।
রাবা জানালেন, সাত–আট বছর বয়স থেকেই রান্নার প্রতি তাঁর আগ্রহ। তবে বাবার শর্ত ছিল, ১০ বছর বয়সের আগে রান্নাঘরে যাওয়া যাবে না। সেই কথা মেনে দশম জন্মদিনের পর রান্নাঘরে ঢোকেন রাবা। তখন বেকিং আইটেমের প্রতিই আগ্রহ ছিল বেশি। এরপর নানা রকম পানীয় বানাতেন। জানালেন, মা রান্নায় পারদর্শী হলেও কখনো তাঁর কাছে রান্না শেখেননি। মা চাইতেন, নিজের মতো করে রান্না শিখুক রাবা। স্বাদের বিষয়েও মা নাকি বেশ খুঁতখুঁতে। যখন কোনো রেসিপি তৈরি করেন, মাকে পরখ করতে দিলে খুব কম সময়ই তিনি সন্তুষ্ট হন। মা চান, রান্নায় যেন আরও নিখুঁত হয় মেয়ে। ‘তবে বাবা একেবারেই অন্য রকম। যা–ই রান্না করি, খুব মজা করে খান বাবা,’ বলেছিলেন রাবা।
আরও পড়ুনকবির বাড়ির রান্নাঘর ১৯ জুন ২০২৪এমা দাৎসি রান্না করে ভিডিও আপলোডের পর সেটা ভাইরাল হয়েছিল.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
৬৬ বছর আগে প্রয়াত আব্বার জন্য ফেরদৌসী রহমান কেন চোখ মোছেন
ফেরদৌসী রহমানের বনানীর বাড়িতে গিয়েছিলাম ৪ জুন ২০২৫। সঙ্গে ছিলেন প্রতিবেদক মনজুর কাদের। গিয়েছিলাম গল্প করতে, আর ভিডিওতে কিছু কথা ধারণ করে রাখতে। একদিন আমি থাকব না, একদিন তিনি থাকবেন না; কিন্তু কথাগুলো হয়তো প্রযুক্তি ধরে রাখবে, অনন্তের ইথারে। ফেরদৌসী রহমানের বয়স এখন ৮৪।
ফেরদৌসী আপার দুই ছেলে, রুবাইয়াত আর রাজিন, দেশের বাইরে থাকেন। গত বছর তাঁর স্বামী প্রকৌশলী শিল্পোদ্যোক্তা রেজাউর রহমানও চলে গেছেন সংসারের মায়া ছেড়ে, পরপারে।
ফেরদৌসী রহমান এখন একাই থাকেন। কিংবদন্তি বললে কম বলা হয় তাঁকে। সারা ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী প্রবাদপ্রতিম আব্বাসউদ্দীন আহমদের মেয়ে। স্কুলে পড়ার আগে আব্বার সঙ্গে মঞ্চে গান করেছেন, রেডিওতে বড়দের গান গাওয়ার জন্য ১৮ বছর বয়স হওয়া বাধ্যতামূলক ছিল, তিনি গেয়েছেন ১৫ বছর বয়সে, গ্রামোফোন রেকর্ড বেরিয়েছে তাঁর কৈশোরে। আধুনিক গান গেয়ে বাংলা সিনেমার স্বর্ণযুগে ছিলেন দেশজোড়া প্রিয়তম কণ্ঠশিল্পী। ভাওয়াইয়া গান জনপ্রিয় হয়েছে তাঁরই কণ্ঠে। ‘ও কি গাড়িয়াল ভাই’, কিংবা ‘ওকি ও বন্ধু কাজলভোমরা রে’-- আহা, সেই সব গান, এখনো বুকের মধ্যে যেন ছুরি চালিয়ে দেয়, চোখ ভিজে আসে-- যখন ইউটিউবে শুনি ফেরদৌসী রহমানের কণ্ঠে ‘নোলক’ সিনেমার গান। ম্যাট্রিকে মেয়েদের মধ্যে ফার্স্ট।
এখন এই নিঃসঙ্গ বয়স্বী জীবনে ফেরদৌসী রহমান কার কথা ভেবে সবচেয়ে বেশি দীর্ঘশ্বাস ফেলেন, আপনারা আন্দাজ করুন তো! স্বামী চলে গেছেন গত বছর, ছেলেরা থাকে দূর পরবাসে, দুই ভাই বিচারপতি মোস্তাফা কামাল আর মুস্তাফা জামান আব্বাসীও চলে গেছেন পৃথিবী ছেড়ে। তারপরেও ফেরদৌসী রহমান তাঁর ৮৪ বছর বয়সে সবচেয়ে বেশি মিস করেন তাঁর আব্বাকে। যে আব্বাকে তিনি হারিয়েছেন ১৯৫৯ সালে, মানে ফেরদৌসীর ১৮ বছর বয়সে। ৬৬ বছর আগে মৃত্যুবরণ করেছিলেন আব্বাসউদ্দীন, তখন তাঁর বয়স ৫৮, কেন তিনি এত আগে চলে গিয়েছিলেন, তা নিয়ে আফসোস করেন ফেরদৌসী রহমান। তাঁর চোখ ভিজে যায়, কণ্ঠ ধরে আসে!
আমরা গল্প করি। কাজী নজরুল ইসলাম আর আব্বাসউদ্দীন আহমদ, অবিভক্ত ভারতে গানের হিল্লোল বয়ে দিয়েছিলেন। মুসলমানেরা তো বটেই, হিন্দু–মুসলিম–বৌদ্ধ–খ্রিষ্টান সবাই কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা আর আব্বাসউদ্দীন আহমদের কণ্ঠের গানে পাগল হয়ে গিয়েছিল। সে যে কী উন্মাদনা, তা আমরা বিভিন্ন স্মৃতিকথায় পড়ে কল্পনা করে নিতে পারি। ‘তোরা দেখে যা আমিনা মায়ের কোলে’, কিংবা ‘আল্লাহ মেঘ দে পানি দে’, ‘ফান্দে পড়িয়া বড়া কান্দে রে’-- প্রত্যেকের মুখে মুখে ছিল সেই গান।
আব্বাসউদ্দীন আহমদের সঙ্গে কাজী নজরুল ইসলামের পরিচয় হয়েছিল কোচবিহারে। আব্বাসউদ্দীন নজরুল ইসলামকে বলেছিলেন ইসলামী গান লিখতে, আব্বাস গাইবেন আর গ্রামোফোন রেকর্ড বের হবে। কিন্তু রেকর্ড কোম্পানি এই গান চলবে কি না, সন্দিগ্ধ ছিল। মালিকের মন ভালো দেখে একদিন আব্বাসউদ্দীন গ্রামোফোন কোম্পানির মালিককে বলে-কয়ে রাজি করালেন। নজরুল লিখে ফেললেন, ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশীর ঈদ’। সেই গান যখন বেরোল, ছড়িয়ে পড়ল মুখে মুখে। আজও বাংলাদেশের চানরাতে এই গান যখন বেজে ওঠে, তখনই সব হৃদয়ে আনন্দের হিল্লোল বয়ে যায়।
ম্যাট্রিক পরীক্ষার পর পল্টনের বাসায় আব্বার সঙ্গে ফেরদৌসী রহমান