বাবার লাশ দাফন করেই হাটে আসা আরিফুলের তিনটি গরুই বিক্রি হয়েছে
Published: 5th, June 2025 GMT
বাবাকে দাফন করার পরদিনই রাজধানীর পশুর হাটে ছুটতে হয়েছে নবম শ্রেণির ছাত্র আরিফুল ইসলামকে। গত সোমবার থেকে তিনটি গরু নিয়ে বছিলা পশুর হাটে খোলা আকাশের নিচে বিক্রির অপেক্ষায় ছিল সে। আজ বৃহস্পতিবার তার তিনটি গরুই বিক্রি হয়েছে।
আরিফুলের বাড়ি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পদ্মার চর পলাশী ফতেপুরে। গরু নিয়ে ঢাকায় আসার পথে গত শনিবার দিবাগত রাতে টাঙ্গাইলে সড়ক দুর্ঘটনায় তার বাবা কোহিনূর শেখ (৫৭) মারা যান। এ নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার প্রথম আলোয় ‘বাবার লাশ রেখে কোরবানির হাটে’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। আজই তার তিনটি গরু বিক্রি হয়েছে।
পরিবারের সদস্যরা জানান, কোহিনূর শেখের ছয়-সাত বিঘা আবাদি জমি ছিল। সব নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। তিনি পদ্মায় মাছ ধরতেন। শুধু মাছ ধরে সংসার চলে না। তাই কোহিনূর জমি বর্গা নিয়ে সাড়ে চার বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছিলেন। এবার পেঁয়াজের দাম ছিল না। প্রায় তিন লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। সব ঋণের টাকা। ঋণ শোধ করতে হলে গরু তিনটি বিক্রি করতেই হবে। বাধ্য হয়ে এই গুরুদায়িত্ব কাঁধে নিতে হয়েছিল স্কুলপড়ুয়া আরিফুলকে।
বছিলা হাটে আরিফুলের সঙ্গে ছিলেন তার বড় ভগ্নিপতি দুলাল হোসেন। বিকেলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিকেল সাড়ে চারটার দিকে তাঁদের শেষ গরুটি বিক্রি হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকায়। দুপুরের আগে দুটি গরু বিক্রি হয় ২ লাখ ৬৫ হাজার টাকায়।
সন্তোষজনক দাম পেয়েছেন কি না, জানতে চাইলে দুলাল হোসেন বলেন, বাজার মন্দা। সেই হিসেবে তাঁরা ভালো দাম পেয়েছেন। মানুষ পত্রিকায় খবরটি পড়ে এসেছিলেন। তাঁরা কিছু আর্থিক সহযোগিতাও করেছেন।
দুলাল হোসেন প্রথম আলোকে জানান, তিনি কোহিনূর শেখের বড় জামাতা। ১০ বছর ধরে ঢাকায় থাকেন। পোশাক কারখানায় কাজ করেন। সোমবার স্ত্রীর একমাত্র ছোট ভাই আরিফুলকে নিয়ে এই গরু হাটে আসেন। তিনি বলেন, গরুর মাথার ওপরে একটা পলিথিন ঝুলিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু তাঁদের মাথার ওপরে খোলা আকাশ ছাড়া কিছু ছিল না। সোমবার থেকে আজ পর্যন্ত আরিফুলকে নিয়ে তিনি খোলা আকাশের নিচেই আছেন।
গত শনিবার রাতে আরিফুলের বাবা কোহিনূর শেখ গরুর সঙ্গে ট্রাকের ওপরে বসে ঢাকা আসছিলেন। আর ছেলে আরিফুল ছিল চালকের পাশে। কথা ছিল বছিলা পশুর হাটে বাবা গরু বিক্রি করে বাড়ি চলে যাবেন। আর আরিফুল যাবে বিমানবন্দরে, প্রবাসী খালাকে রিসিভ করতে। রাত একটার দিকে গাড়ি টাঙ্গাইলে দাঁড়ানো ছিল। এ সময় পেছন থেকে একটি সবজির ট্রাক এসে ট্রাকে ধাক্কা দেয়। কোহিনূর শেখের কাঁধে আঘাত লাগে। তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।
‘সে কি একটা বোঝা নিবার পারব, এই বয়সে আমিই বা কী করমু?’
গতকাল বুধবার রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পদ্মার চর পলাশী ফতেপুরে গিয়ে দেখা যায়, কোহিনূর শেখের বাড়িতে টিনের চালের তিনটি ছোট ছোট ঘর। বলতে গেলে কোনো উঠান নেই। তাঁর মেয়ে আমেনা খাতুন দেখালেন বাবার এক টিনের তৈরি মাছ ধরার ডোঙা। এই টিনের নৌকায় চড়ে তাঁর বাবা পদ্মায় মাছ ধরতেন।
আমেনা জানালেন, তাঁদের আবাদি জমি সব পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। তাঁদের বাড়ি ছিল চক রাজাপুর গ্রামে। চারবার নদীভাঙনের পর এই পলাশী ফতেপুর গ্রামে এসে থিতু হয়েছেন তাঁরা। কিন্তু আবারও নদী ভাঙছে। আর পাঁচটা বাড়ির পরেই পদ্মা নদী। তিনি বলেন, বাবা সাড়ে চার বিঘা জমি বর্গা নিয়ে পেঁয়াজ চাষ করেছিলেন। দাম না পেয়ে প্রায় তিন লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। এখন সবই ঋণ। এ নিয়ে তাঁরা ভীষণ দুশ্চিন্তায়। গরু তিনটা ভালো দামে বিক্রি হলে হয়তো ঋণ শোধ করা যাবে। কিন্তু তাঁদের চলার আর কোনো উপায় থাকবে না।
কোহিনূর শেখের প্রতিবেশী শফিকুল ইসলাম বলেন, এই বর্ষাতেই নদী আবার ভাঙবে। ভাঙলে পরিবারটির যাওয়ার কোনো জায়গা থাকবে না।
নদীর ঘাটে গিয়ে মনে হলো যেকোনো সময় কোহিনূর শেখের বাড়িটি নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
একটি দুর্ঘটনা বদলে দিয়েছে কোহিনূর শেখের পরিবারের হিসাব-নিকাশ। তিনি বেঁচে থাকলে ঋণ নিয়ে হয়তো এত চিন্তা করতে হতো না পরিবারকে। কিন্তু বাবা নেই। নবম শ্রেণির ছাত্র আরিফুলের কাঁধে হঠাৎ পুরো সংসারের বোঝা এসে পড়েছে।
স্বামী হারানোর শোক, পাশাপাশি সংসার নিয়ে দুশ্চিন্তায় কাঁদতে কাঁদতে গলা ভেঙে গেছে আরিফুলের মা হাফেজা বেগমের। তিনি পরিষ্কার করে কথাও বলতে পারছেন না। ভাঙা গলায় বললেন, ‘আমার ব্যাটার এখন কী হইব। সে কিচ্ছু জানে না। সে কি একটা বোঝা নিবার পারব, এই বয়সে আমিই বা কী করমু?’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আর ফ ল র র ত নট পর ব র
এছাড়াও পড়ুন:
নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনায় বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির চলমান প্রক্রিয়া প্রশ্নে রুল
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির চলমান প্রক্রিয়া কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি হাবিবুল গনি ও বিচারপতি শেখ তাহসিন আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বুধবার এ রুল দেন। একই সঙ্গে যেকোনো অপারেটরকে এনসিটি পরিচালনার দায়িত্ব (নিযুক্ত) দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট আইন ও নীতি অনুসারে ন্যায্য ও প্রতিযোগিতামূলক পাবলিক বিডিং (দরপত্র আহ্বান) নিশ্চিত করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
আরও পড়ুননতুন ব্যবস্থাপনায় নিউমুরিং টার্মিনাল পরিচালনা শুরু০৭ জুলাই ২০২৫নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে বাংলাদেশ যুব অর্থনীতিবিদ ফোরামের পক্ষে সংগঠনটির সভাপতি মির্জা ওয়ালিদ হোসাইন রিটটি করেন। রিটে নৌসচিব, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও পিপিপি কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিবাদী করা হয়।
‘নিউমুরিং টার্মিনালে সবই আছে, তবু কেন বিদেশির হাতে যাচ্ছে’ শিরোনামে গত ২৬ এপ্রিল প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। এ প্রতিবেদনসহ এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে এনসিটি পরিচালনায় ন্যায্য ও প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র আহ্বান করার নির্দেশনা চেয়ে রিটটি করা হয়।
আগের ধারাবাহিকতায় ৯ জুলাই রিটের ওপর শুনানি শেষ হয়। সেদিন আদালত ২৩ জুলাই আদেশের জন্য দিন রাখেন। ধার্য তারিখে আদালত আদেশের জন্য ৩০ জুলাই দিন রাখেন। এ অনুসারে আজ বিষয়টি আদেশের জন্য আদালতের কার্যতালিকার ৭ নম্বর ক্রমিকে ওঠে।
আজ মধ্যাহ্নবিরতির পর আদালত আদেশ দেন। আদালত বলেন, শুধু রুল দেওয়া হলো।
আদেশের সময় রিটের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও আহসানুল করিম এবং আইনজীবী কায়সার কামাল ও আনোয়ার হোসেন উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মহাদ্দেস-উল-ইসলাম।
পরে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার নতুন দায়িত্ব নিয়েছে নৌবাহিনীর প্রতিষ্ঠান চিটাগং ড্রাইডক লিমিটেড। টার্মিনালটি পরিচালনার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সাইফ পাওয়ারটেকের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ৬ জুলাই দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে এ দায়িত্ব নেয় জাহাজ মেরামতের এ প্রতিষ্ঠান। প্রথমবারের মতো বন্দরে টার্মিনাল পরিচালনায় যুক্ত হলো চিটাগং ড্রাইডক।
চট্টগ্রাম বন্দরের বৃহৎ এই টার্মিনাল নির্মিত হয় ২০০৭ সালে। টার্মিনালটি নির্মাণ ও যন্ত্রপাতি সংযোজনে বন্দর কর্তৃপক্ষ ধাপে ধাপে মোট ২ হাজার ৭১২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কনটেইনারের সিংহভাগ এই টার্মিনাল দিয়ে পরিবহন হয়।