কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা ঢাকামুখী পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেন ধাক্কা দিয়েছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও কয়েকটি মোটরসাইকেলকে। এ ঘটনায় শিশুসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ছয়জন। তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৫ জুন) রাত সাড়ে ১০টার দিকে চট্টগ্রামের কালুরঘাট রেল সেতুর ওপর ঘটনাটি ঘটে। চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার ওসি শহীদুল ইসলাম দুর্ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

ট্রেন চালক সিগনাল অমান্য করে দ্রুত গতিতে সেতুতে উঠে যাওয়ায় এই দুর্ঘটনা বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের একাধিক কর্মকর্তা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা। 

আরো পড়ুন:

রাশিয়ায় সেতু ধসে পড়ে লাইনচ্যুত ট্রেন, নিহত ৭

ময়মনসিংহে ধসে পড়েছে গহুর মোল্লার ব্রিজ, যোগাযোগ বন্ধ

নিহতরা হলেন- সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক তুষার (৩২) ও যাত্রী মেহেরিমা নুর আয়শা (২)। অপর নিহতের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।  

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কক্সবাজার থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছেড়ে আসে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে কালুরঘাট সেতুর অদূরে পৌঁছায় ট্রেনটি। এ সময় রেলের সিগন্যালম্যান সব যানবাহন থামিয়ে দেন। তবে, একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা নষ্ট হওয়ায় কয়েকটি যানবাহন সেতুর ওপর আটকে থাকে। দুর্ঘটনার আশঙ্কায় সেতুতে উঠার আগেই ট্রেন থামাতে লাইনম্যানসহ অনেকেই সংকেত দেন। ট্রেন চালক সংকেত অমান্য করেন। 

ট্রেনটি সেতুতে উঠে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও কয়েকটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই অটোরিকশার চালক তুষার ও যাত্রী মেহেরিমা নুর আয়শাসহ তিনজন মারা যান। অন্তত ৬ জন আহত হন। আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

জালানিহাট স্টেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত গার্ড মো.

মাহবুব বলেন, “আমি সিগন্যাল অমান্য হওয়ার সম্ভাবনা বুঝতে পেরে নিজেই সেতুর মুখে গিয়ে ট্রেন থামাতে লাল পতাকা নাড়িয়ে সংকেত দেই। তবুও ট্রেন চালক সেটি উপেক্ষা করেন।”

কালুরঘাট ফায়ার স্টেশনের ফায়ার ফাইটার আমিনুল ইসলাম বলেন, “রাত পৌনে ১১টার দিকে আমরা খবর পেয়ে উদ্ধার অভিযান শুরু করি।” 

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নুরুল আলম আশেক বলেন, “কালুরঘাট সেতুতে একটি ট্রেন বিভিন্ন যানবাহনকে ধাক্কা দেয়। পাঁচজনকে ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।”

রেলওয়ে জালানিহাট স্টেশন মাস্টার মো. নেজাম উদ্দিন বলেন, “পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনটি কক্সবাজার থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ছেড়ে আসে। রাত ১০টা ১০ মিনিটে এটি কালুরঘাট রেলসেতুর অদূরে পৌঁছায়। ওই সময় সেতুর ওপরে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা নষ্ট হয়ে গেলে যানজট তৈরি হয়। আমরা তখনই লাল সিগন্যাল দেই। গার্ডও হাতে লাল পতাকা নিয়ে সিগন্যাল দেন। ট্রেন চালক সিগন্যাল মানেননি।”

তিনি আরো বলেন, ‘কালুরঘাট ব্রিজটি ডেড স্টেপেজ হিসেবে চিহ্নিত। এখানে ট্রেন থামিয়ে ধীরে ব্রিজে ওঠার নিয়ম। চালক তা মানেননি।”

শত বছরের পুরনো কালুরঘাট রেল সেতুটি সংকীর্ণ হওয়ায় উভয় দিক থেকে একইসঙ্গে যানবাহন চলাচল করতে পারে না। ট্রেন আসার পূর্বে উভয় দিক থেকে যানবাহন পারাপার বন্ধ করে দেওয়া হয়। ট্রেন না আসলেও স্বাভাবিক সময়ে একদিক বন্ধ রেখে অপর একদিক থেকে যানবাহন চলাচল করাতে হয়।

ঢাকা/রেজাউল/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন হত দ র ঘটন আহত ট র ন চ লক স ট র নট র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

পবিত্র ঈদুল আজহা আজ

ত্যাগ আর উৎসর্গের আদর্শে মহিমান্বিত পবিত্র ঈদুল আজহা আজ। আরবি মাসের ১০ জিলহজ তারিখে এই ঈদ উদ্‌যাপিত হয়। যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে রাজধানীসহ সারাদেশে মুসলিম সম্প্রদায় দিনটি উদযাপন করবে। মহান আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের আশায় ঈদের জামাত শেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি করবেন।

ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা দেশবাসীসহ বিশ্বের সকল মুসলমানদের আন্তরিক অভিনন্দন ও মোবারকবাদ জানিয়েছেন।

ঈদুল আজহা মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। যুগ যুগ ধরে এই ঈদ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর হয়ে আসছে। সকালে মুসল্লিরা কাছাকাছি ঈদগাহ বা মসজিদে ঈদুল আজহার দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করবেন। খতিব নামাজের খুতবায় তুলে ধরবেন কোরবানির তাৎপর্য। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই একত্রে নামাজ আদায় ও শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।

ঈদের নামাজ শেষে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করবেন সামর্থ্যবান মুসলমানরা। ঈদুল আজহার সঙ্গে পবিত্র হজের সম্পর্ক রয়েছে। মক্কার অদূরে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হওয়ার মধ্য দিয়ে বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলিম সম্প্রদায় হজ পালন করেছেন।

স্থানীয় হিজরি মাস গণনা অনুযায়ী শুক্রবার সৌদি আরবে ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়েছে। সকালে মুজদালিফা থেকে ফিরে হাজিরা মিনায় অবস্থান করে পশু কোরবানিসহ হজের অন্য কার্যাদি সম্পাদন করেছেন। সৌদি আরবের সঙ্গে মিলিয়ে পৃথিবীর বহু দেশ আজ ঈদুল আজহা উদযাপন করছে।

ঈদুল আজহা হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও তার পুত্র হজরত ইসমাইলের (আ.) সঙ্গে সম্পর্কিত। হজরত ইব্রাহিম (আ.) স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে পুত্র ইসমাইলকে আল্লাহর উদ্দেশে কোরবানি করতে গিয়েছিলেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে এই আদেশ ছিল হজরত ইব্রাহিমের জন্য পরীক্ষা। তিনি পুত্রকে আল্লাহর নির্দেশে জবাই করার সব প্রস্তুতি নিয়ে সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ইসলামে বর্ণিত আছে, নিজের চোখ বেঁধে পুত্র ইসমাইলকে ভেবে যখন জবেহ সম্পন্ন করেন, তখন চোখ খুলে দেখেন ইসমাইলের পরিবর্তে পশু কোরবানি হয়েছে, যা এসেছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে।

সেই ঐতিহাসিক ঘটনার স্মৃতি ধারণ করেই হজরত ইব্রাহিমের (আ.) সুন্নত হিসেবে পশু জবাইয়ের মধ্য দিয়ে কোরবানির বিধান এসেছে ইসলামি শরিয়তে। সেই মোতাবেক প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য পশু কোরবানি করা ওয়াজিব। ইসলামে কোরবানি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।

মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে আজ দেশের প্রতিটি শহর, গ্রাম ও পাড়া-মহল্লায় পশু কোরবানির দৃশ্য দেখা যাবে। রাস্তাঘাটে দেখা যাবে ঈদ আনন্দে ভাসমান মানুষের মুখ। এদিকে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো প্রচার করবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা, আর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরিবেশন করা হবে উন্নতমানের খাবার।

এবার ঈদের ছুটি সরকারি কর্মীদের জন্য চলবে ১৪ জুন পর্যন্ত— সব মিলিয়ে এবারের ঈদে মিলেছে ১০ দিনের ছুটি। প্রসঙ্গত, ঈদে শহর থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ গ্রামের বাড়িতে গেছেন প্রিয়জনের সঙ্গে উৎসব উদযাপন করতে। ফলে রাজধানী এখন কিছুটা ফাঁকা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ