সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া এবং তুরস্কতে বিশ্বের বেশিরভাগ মুসলিম বসবাস করেন। ইসলামী রীতি অনুযায়ী এসব দেশে পশু কোরবানি দেওয়ার চল রয়েছে। তবে স্থান ভেদে কোথাও দুম্বা বেশি কুরবানি দেওয়া হয় আবার কোথাও গরু বেশি কোরবা দেওয়া  হয়। আবার কোথাও কোথাও আইনী জটিলতা থাকায় মুসলিমরা ইচ্ছা থাকার পরেও গরু কোরবানি করতে পারেন না। চলুন বিস্তারিত জানা যাক।

সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরানের মতো দেশগুলোতে বিশ্বের বেশিরভাগ মুসলিম বসবাস করেন। বিশেষত বিশ্বের লাখ লাখ মুসলিম নারী-পুরুষ প্রতিবছর হজ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে সমবেত হন। নিয়ম অনুযায়ী হজের শেষদিনে কোরবানি দেওয়া বাধ্যতামূলক হওয়ায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় সৌদি আরবেই কোরবানি দেওয়ার পরিমাণ তুলনামূলক বেশি। এই দেশে মধ্যপ্রাচ্যের প্রাণী হিসেবে উট বেশি পরিচিত হলেও দেশটিতে দুম্বা, ভেড়া, গরু এবং ছাগলও কুরবানি দেওয়া হয়। অল্প কিছু অভিজাত পরিবার উট কোরবানি দিয়ে থাকেন। 

পাকিস্তান:  প্রায় ২৪ কোটি মুসলিমের দেশ পাকিস্তানে কোরবানির সময় গরু, ষাঁড় এবং ছাগলকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। সবচেয়ে বেশি কোরবানি করা হয় ছাগল, তারপর-ই হল গরু। এ ছাড়া কেউ কেউ মহিষ, দুম্বা, ভেড়া ও উটও কোরবানি দেন। দুম্বার মাংস চর্বিযুক্ত হওয়ায় শীতপ্রধান অঞ্চলগুলোতে দুম্বা বেশি কোরবানি করা হয়। পাকিস্তানের বেশ কিছু অঞ্চলে কোরবানির পশু হিসেবে কালো মাথার ভেড়া বেশি জনপ্রিয়। দেশটিতে ঐতিহ্যগত পদ্ধতি অনুযায়ী বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাড়ির সামনে রাস্তার ওপরেই কোরবানি করা হয়ে থাকে। 

আরো পড়ুন:

টাঙ্গাইলে যমুনা সেতু সড়‌কে যানবাহন চলছে থেমে থেমে

ঈদের আগের দিন আরেকটি ঈদ হয়ে যেত

ভারত: প্রায় ২০ কোটি মুসলিমের দেশ ভারতে কোরবানি দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ আছে। কারণ, ভারতের সিংহভাগ মানুষ হিন্দু। আর এই  ধর্মে গোহত্যা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সুতরাং, ভারতের মুসলিমরা কোরবানির ক্ষেত্রে মূলত ছাগল ও মহিষকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।  দেশটির যেসব রাজ্যে গরু জবাই করা আইনত বৈধ সেসব রাজ্যে  কেউ কেউ গরু কোরবানি দেন।  এই অঞ্চলগুলো হলো- অরুণাচল, গোয়া, কেরালা, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গ, দাদরা, নগর হাভেলি, দামান, দিউ এবং পন্ডিচেরি। এই রাজ্যগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মুসলিম বসবাস করেন কেরালা এবং পশ্চিমবঙ্গে। এর বাইরে গুজরাট, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থানে গরু কোরবানি দেওয়া সম্পূর্ণ আইন বহির্ভূত। এসব এলাকায় কেউ গরু কোরবানি দিলে তার জেলও হতে পারে। তবে নাগাল্যান্ডের মতো কিছু রাজ্য মুসলিমপ্রধান না হওয়া সত্ত্বেও সে সব স্থানে গরু জবাই করা যায়।তার কারণ, পূর্বদিকের ওইসব এলাকার বেশিরভাগ মানুষই খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী আর খ্রিষ্টানরা ঐতিহ্যগতভাবেই গরুর মাংস খান। তাই ভারত সরকার সেখানে বাধা দেয় না।উল্লেখ্য,  ১০-১৫ বছর আগেও ভারতের কিছু কিছু প্রদেশে গরু, বিশেষ করে বৃদ্ধ গরু জবাই করা যেত। কিন্তু ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে গত ১০ বছরে সেটি বন্ধ হয়ে গেছে।এখন মানুষ কোরবানির জন্য ছাগল ও মহিষ বেশি কেনেন। বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর হরিয়ানা, রাজস্থান ইত্যাদি জায়গায় ‘গোরক্ষক বাহিনী’ নামে প্রাইভেট মিলিশিয়ার মতো গ্রুপ তৈরি হয়েছে। কেউ ট্রাকে করে গরু, এমনকি মহিষ নিয়ে গেলেও তারা তাদেরকে ধাওয়া করে, মারে, লুটপাট করে। 

ইন্দোনেশিয়া: ২৩ কোটি মুসলিমের দেশ ইন্দোনেশিয়াতে গরু ও ছাগলই বেশি কোরবানি দেওয়া হয়।ইন্দোনেশিয়ার মুসলিমরা বিশ্বাস করেন, হজে যেদিন কোরবানি দেওয়া হয়, ওইদিনই কোরবানি দেওয়া উচিত। ইন্দোনেশিয়ায় মাংসের বিতরণ প্রক্রিয়া এলাকাভেদে আলাদা হয়। কিছু এলাকায় কোরবানির পশুর একটি বড় অংশ নিকটাত্মীয়দের জন্য বরাদ্দ করা হয়।কিছু এলাকায় প্রতিবেশী ও হতদরিদ্রদের সাথে ভাগ করে নেওয়াকে বেশি অগ্রাধিকার দেয়া হয়।

তুরস্ক:  এই দেশের ৯৯ শতাংশ মানুষ ইসলাম ধর্মাবলম্বী। তাই, স্বভাবতই দেশটির অনেকে মানুষ প্রতি বছর ধর্মীয় রীতি মেনে কোরবানি দেন।দেশটিতে ইদ-উল-আজহাকে ‘কুরবান বায়রামি’ বলা হয়।দেশটিতে সাধারণত গরু, ছাগল ও ভেড়া কোরবানি দেওয়া হয়। তবে বাড়িতে নয়, বরং সুযোগ-সুবিধার কথা বিবেচনা করে কসাইখানায় গিয়ে কোরবানি দেন। কোরবানির পর প্রাপ্ত মাংসকে তারা সমান তিন ভাগে ভাগ করেন।একভাগ নিজেদের জন্য, আরেকভাগ আত্মীয়, বন্ধু ও প্রতিবেশীদের মাঝে এবং আরেকভাগ দরিদ্র ও অসচ্ছলদের মাঝে বিতরণ করে দেওয়া দেন। তুরস্কে কিছু দাতব্য সংস্থা আছে, যারা সমন্বিতভাবে চেষ্টা করে যাতে সকল দরিদ্র পরিবারের ঘরে কোরবানির মাংস পৌঁছে যায়।

বাংলাদেশ: আমাদের এই দেশে মোট জনসংখ্যার ৮৬ শতাংশেরও বেশি মুসলিম। অর্থাৎ ১৫ কোটির বেশি মানুষ মুসলিম।এখানে কোরবানির জন্য বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয় গরুকে। এরপরে আছে ছাগল। কোথাও কোথাও মহিষও কোরবানি দেওয়া হয়। কিন্তু উট বা ভেড়া কোরবানি দেওয়ার হার খুবই কম। কোরবানির জন্য বাংলাদেশে শহরাঞ্চলে প্রতি বছরই নির্দিষ্ট জায়গা বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাড়ির সামনে পথের ওপরেই অথবা আঙ্গিনায় কোরবানি দেয় মানুষ। বাংলাদেশেও কোরবানির পর সেটিকে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী তিন ভাগে ভাগ করা হয়।

সূত্র: বিবিসি

ঢাকা/লিপি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইন দ ন শ য় ক রব ন র ব স কর ন ও ক রব ন র জন য দ শট ত অন য য়

এছাড়াও পড়ুন:

ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে অংশ নেবেন খালেদা জিয়া: আবদুল আউয়াল মিন্টু

এ বছরের ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে তাতে অংশ নেবেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। আজ বুধবার ফেনীতে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু।

আজ দুপুরে ফেনী শহরের একটি মিলনায়তনে ‘বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্পের পুনর্বাসন’ শীর্ষক প্রকল্পের অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথাগুলো বলেন মিন্টু। তিনি বলেন, ‘বিশ্বাস করতে চাই, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন হবে। দেশে এখন যে অবস্থা ফেব্রুয়ারি আগেই নির্বাচন হতে পারে। হয়তো জানুয়ারিতেও হয়ে যেতে পারে। কেয়ারটেকার সরকার নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে একটা ডেট পেন্ডিং আছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রবর্তন হলে তার অধীনে ৯০ দিনে নির্বাচন হবে। সে ক্ষেত্রে ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন।’

আবদুল আউয়াল মিন্টু আরও বলেন, দেশে যদি এক যুগ, দুই যুগ ধরে নির্বাচিত সরকার না থাকে, তবে মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, জানমালের উন্নয়ন হবে না। একটি দেশের সরকার যদি জনগণের কাছে দায়বদ্ধ না থাকে তাহলে তারা কখনো ভালো কাজ করবে না।

আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘২০০৬ সাল থেকে আমরা নির্বাচন চেয়ে আসছি। ১৯ বছর ধরে আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আন্দোলন–সংগ্রাম করে যাচ্ছি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন লন্ডনে যোগাযোগ করেছেন। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যৌথ বিবৃতি দিয়েছিল। প্রধান উপদেষ্টা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমরা সেটিতে আস্থা রাখতে চাই। আমরা চাচ্ছি, দ্রুত নির্বাচনটি হোক।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘নির্বাচনে ফেনীর অতীত ইতিহাস সবাই জানে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এখানে বিএনপি জয়লাভ করবে। আমাদের দলের নেত্রীও (খালেদা জিয়া) নির্বাচন করবেন। তিনি এখন সুস্থ আছেন।’

পরে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু ফেনীর মুহুরী-কহুয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্পের পুনর্বাসন (১ম পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন।

ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলামের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন ওরফে ভিপি জয়নাল, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ রেহানা আক্তার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম, পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ