ঈদে কোন দেশে কোন পশু কোরবানি দেওয়া হয়?
Published: 6th, June 2025 GMT
সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া এবং তুরস্কতে বিশ্বের বেশিরভাগ মুসলিম বসবাস করেন। ইসলামী রীতি অনুযায়ী এসব দেশে পশু কোরবানি দেওয়ার চল রয়েছে। তবে স্থান ভেদে কোথাও দুম্বা বেশি কুরবানি দেওয়া হয় আবার কোথাও গরু বেশি কোরবা দেওয়া হয়। আবার কোথাও কোথাও আইনী জটিলতা থাকায় মুসলিমরা ইচ্ছা থাকার পরেও গরু কোরবানি করতে পারেন না। চলুন বিস্তারিত জানা যাক।
সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরানের মতো দেশগুলোতে বিশ্বের বেশিরভাগ মুসলিম বসবাস করেন। বিশেষত বিশ্বের লাখ লাখ মুসলিম নারী-পুরুষ প্রতিবছর হজ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে সমবেত হন। নিয়ম অনুযায়ী হজের শেষদিনে কোরবানি দেওয়া বাধ্যতামূলক হওয়ায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় সৌদি আরবেই কোরবানি দেওয়ার পরিমাণ তুলনামূলক বেশি। এই দেশে মধ্যপ্রাচ্যের প্রাণী হিসেবে উট বেশি পরিচিত হলেও দেশটিতে দুম্বা, ভেড়া, গরু এবং ছাগলও কুরবানি দেওয়া হয়। অল্প কিছু অভিজাত পরিবার উট কোরবানি দিয়ে থাকেন।
পাকিস্তান: প্রায় ২৪ কোটি মুসলিমের দেশ পাকিস্তানে কোরবানির সময় গরু, ষাঁড় এবং ছাগলকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। সবচেয়ে বেশি কোরবানি করা হয় ছাগল, তারপর-ই হল গরু। এ ছাড়া কেউ কেউ মহিষ, দুম্বা, ভেড়া ও উটও কোরবানি দেন। দুম্বার মাংস চর্বিযুক্ত হওয়ায় শীতপ্রধান অঞ্চলগুলোতে দুম্বা বেশি কোরবানি করা হয়। পাকিস্তানের বেশ কিছু অঞ্চলে কোরবানির পশু হিসেবে কালো মাথার ভেড়া বেশি জনপ্রিয়। দেশটিতে ঐতিহ্যগত পদ্ধতি অনুযায়ী বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাড়ির সামনে রাস্তার ওপরেই কোরবানি করা হয়ে থাকে।
আরো পড়ুন:
টাঙ্গাইলে যমুনা সেতু সড়কে যানবাহন চলছে থেমে থেমে
ঈদের আগের দিন আরেকটি ঈদ হয়ে যেত
ভারত: প্রায় ২০ কোটি মুসলিমের দেশ ভারতে কোরবানি দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ আছে। কারণ, ভারতের সিংহভাগ মানুষ হিন্দু। আর এই ধর্মে গোহত্যা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সুতরাং, ভারতের মুসলিমরা কোরবানির ক্ষেত্রে মূলত ছাগল ও মহিষকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। দেশটির যেসব রাজ্যে গরু জবাই করা আইনত বৈধ সেসব রাজ্যে কেউ কেউ গরু কোরবানি দেন। এই অঞ্চলগুলো হলো- অরুণাচল, গোয়া, কেরালা, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গ, দাদরা, নগর হাভেলি, দামান, দিউ এবং পন্ডিচেরি। এই রাজ্যগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মুসলিম বসবাস করেন কেরালা এবং পশ্চিমবঙ্গে। এর বাইরে গুজরাট, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থানে গরু কোরবানি দেওয়া সম্পূর্ণ আইন বহির্ভূত। এসব এলাকায় কেউ গরু কোরবানি দিলে তার জেলও হতে পারে। তবে নাগাল্যান্ডের মতো কিছু রাজ্য মুসলিমপ্রধান না হওয়া সত্ত্বেও সে সব স্থানে গরু জবাই করা যায়।তার কারণ, পূর্বদিকের ওইসব এলাকার বেশিরভাগ মানুষই খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী আর খ্রিষ্টানরা ঐতিহ্যগতভাবেই গরুর মাংস খান। তাই ভারত সরকার সেখানে বাধা দেয় না।উল্লেখ্য, ১০-১৫ বছর আগেও ভারতের কিছু কিছু প্রদেশে গরু, বিশেষ করে বৃদ্ধ গরু জবাই করা যেত। কিন্তু ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে গত ১০ বছরে সেটি বন্ধ হয়ে গেছে।এখন মানুষ কোরবানির জন্য ছাগল ও মহিষ বেশি কেনেন। বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর হরিয়ানা, রাজস্থান ইত্যাদি জায়গায় ‘গোরক্ষক বাহিনী’ নামে প্রাইভেট মিলিশিয়ার মতো গ্রুপ তৈরি হয়েছে। কেউ ট্রাকে করে গরু, এমনকি মহিষ নিয়ে গেলেও তারা তাদেরকে ধাওয়া করে, মারে, লুটপাট করে।
ইন্দোনেশিয়া: ২৩ কোটি মুসলিমের দেশ ইন্দোনেশিয়াতে গরু ও ছাগলই বেশি কোরবানি দেওয়া হয়।ইন্দোনেশিয়ার মুসলিমরা বিশ্বাস করেন, হজে যেদিন কোরবানি দেওয়া হয়, ওইদিনই কোরবানি দেওয়া উচিত। ইন্দোনেশিয়ায় মাংসের বিতরণ প্রক্রিয়া এলাকাভেদে আলাদা হয়। কিছু এলাকায় কোরবানির পশুর একটি বড় অংশ নিকটাত্মীয়দের জন্য বরাদ্দ করা হয়।কিছু এলাকায় প্রতিবেশী ও হতদরিদ্রদের সাথে ভাগ করে নেওয়াকে বেশি অগ্রাধিকার দেয়া হয়।
তুরস্ক: এই দেশের ৯৯ শতাংশ মানুষ ইসলাম ধর্মাবলম্বী। তাই, স্বভাবতই দেশটির অনেকে মানুষ প্রতি বছর ধর্মীয় রীতি মেনে কোরবানি দেন।দেশটিতে ইদ-উল-আজহাকে ‘কুরবান বায়রামি’ বলা হয়।দেশটিতে সাধারণত গরু, ছাগল ও ভেড়া কোরবানি দেওয়া হয়। তবে বাড়িতে নয়, বরং সুযোগ-সুবিধার কথা বিবেচনা করে কসাইখানায় গিয়ে কোরবানি দেন। কোরবানির পর প্রাপ্ত মাংসকে তারা সমান তিন ভাগে ভাগ করেন।একভাগ নিজেদের জন্য, আরেকভাগ আত্মীয়, বন্ধু ও প্রতিবেশীদের মাঝে এবং আরেকভাগ দরিদ্র ও অসচ্ছলদের মাঝে বিতরণ করে দেওয়া দেন। তুরস্কে কিছু দাতব্য সংস্থা আছে, যারা সমন্বিতভাবে চেষ্টা করে যাতে সকল দরিদ্র পরিবারের ঘরে কোরবানির মাংস পৌঁছে যায়।
বাংলাদেশ: আমাদের এই দেশে মোট জনসংখ্যার ৮৬ শতাংশেরও বেশি মুসলিম। অর্থাৎ ১৫ কোটির বেশি মানুষ মুসলিম।এখানে কোরবানির জন্য বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয় গরুকে। এরপরে আছে ছাগল। কোথাও কোথাও মহিষও কোরবানি দেওয়া হয়। কিন্তু উট বা ভেড়া কোরবানি দেওয়ার হার খুবই কম। কোরবানির জন্য বাংলাদেশে শহরাঞ্চলে প্রতি বছরই নির্দিষ্ট জায়গা বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাড়ির সামনে পথের ওপরেই অথবা আঙ্গিনায় কোরবানি দেয় মানুষ। বাংলাদেশেও কোরবানির পর সেটিকে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী তিন ভাগে ভাগ করা হয়।
সূত্র: বিবিসি
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইন দ ন শ য় ক রব ন র ব স কর ন ও ক রব ন র জন য দ শট ত অন য য়
এছাড়াও পড়ুন:
পবিত্র ঈদুল আজহা আজ
ত্যাগ আর উৎসর্গের আদর্শে মহিমান্বিত পবিত্র ঈদুল আজহা আজ। আরবি মাসের ১০ জিলহজ তারিখে এই ঈদ উদ্যাপিত হয়। যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে রাজধানীসহ সারাদেশে মুসলিম সম্প্রদায় দিনটি উদযাপন করবে। মহান আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের আশায় ঈদের জামাত শেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি করবেন।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা দেশবাসীসহ বিশ্বের সকল মুসলমানদের আন্তরিক অভিনন্দন ও মোবারকবাদ জানিয়েছেন।
ঈদুল আজহা মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। যুগ যুগ ধরে এই ঈদ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর হয়ে আসছে। সকালে মুসল্লিরা কাছাকাছি ঈদগাহ বা মসজিদে ঈদুল আজহার দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করবেন। খতিব নামাজের খুতবায় তুলে ধরবেন কোরবানির তাৎপর্য। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই একত্রে নামাজ আদায় ও শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
ঈদের নামাজ শেষে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করবেন সামর্থ্যবান মুসলমানরা। ঈদুল আজহার সঙ্গে পবিত্র হজের সম্পর্ক রয়েছে। মক্কার অদূরে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হওয়ার মধ্য দিয়ে বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলিম সম্প্রদায় হজ পালন করেছেন।
স্থানীয় হিজরি মাস গণনা অনুযায়ী শুক্রবার সৌদি আরবে ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়েছে। সকালে মুজদালিফা থেকে ফিরে হাজিরা মিনায় অবস্থান করে পশু কোরবানিসহ হজের অন্য কার্যাদি সম্পাদন করেছেন। সৌদি আরবের সঙ্গে মিলিয়ে পৃথিবীর বহু দেশ আজ ঈদুল আজহা উদযাপন করছে।
ঈদুল আজহা হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও তার পুত্র হজরত ইসমাইলের (আ.) সঙ্গে সম্পর্কিত। হজরত ইব্রাহিম (আ.) স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে পুত্র ইসমাইলকে আল্লাহর উদ্দেশে কোরবানি করতে গিয়েছিলেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে এই আদেশ ছিল হজরত ইব্রাহিমের জন্য পরীক্ষা। তিনি পুত্রকে আল্লাহর নির্দেশে জবাই করার সব প্রস্তুতি নিয়ে সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ইসলামে বর্ণিত আছে, নিজের চোখ বেঁধে পুত্র ইসমাইলকে ভেবে যখন জবেহ সম্পন্ন করেন, তখন চোখ খুলে দেখেন ইসমাইলের পরিবর্তে পশু কোরবানি হয়েছে, যা এসেছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে।
সেই ঐতিহাসিক ঘটনার স্মৃতি ধারণ করেই হজরত ইব্রাহিমের (আ.) সুন্নত হিসেবে পশু জবাইয়ের মধ্য দিয়ে কোরবানির বিধান এসেছে ইসলামি শরিয়তে। সেই মোতাবেক প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য পশু কোরবানি করা ওয়াজিব। ইসলামে কোরবানি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে আজ দেশের প্রতিটি শহর, গ্রাম ও পাড়া-মহল্লায় পশু কোরবানির দৃশ্য দেখা যাবে। রাস্তাঘাটে দেখা যাবে ঈদ আনন্দে ভাসমান মানুষের মুখ। এদিকে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো প্রচার করবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা, আর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরিবেশন করা হবে উন্নতমানের খাবার।
এবার ঈদের ছুটি সরকারি কর্মীদের জন্য চলবে ১৪ জুন পর্যন্ত— সব মিলিয়ে এবারের ঈদে মিলেছে ১০ দিনের ছুটি। প্রসঙ্গত, ঈদে শহর থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ গ্রামের বাড়িতে গেছেন প্রিয়জনের সঙ্গে উৎসব উদযাপন করতে। ফলে রাজধানী এখন কিছুটা ফাঁকা।