ফ্রান্সগামী উড়োজাহাজে চড়ে ইসরায়েল ছাড়লেন গ্রেটা থুনবার্গ
Published: 10th, June 2025 GMT
ত্রাণবাহী জাহাজ থেকে আটক হওয়া সুইডিশ অধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ ফ্রান্সগামী একটি ফ্লাইটে ইসরায়েল ছেড়েছেন। আজ মঙ্গলবার ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, গ্রেটা থুনবার্গ ফ্রান্স হয়ে সুইডেনগামী একটি ফ্লাইটে করে ইসরায়েল ছেড়েছেন। ওই পোস্টের সঙ্গে থুনবার্গের দুটি ছবিও প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে থুনবার্গকে উড়োজাহাজে উঠতে দেখা গেছে।
২২ বছর বয়সী গ্রেটা থুনবার্গ একজন সুপরিচিত পরিবেশকর্মী। তিনি দীর্ঘদিন ধরে উড়োজাহাজে ভ্রমণ এড়িয়ে চলেছেন। ২০১৯ সালে নিউইয়র্কে একটি জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নেওয়ার জন্য সমুদ্রপথে যাত্রা করার মধ্য দিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন গ্রেটা।
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জঁ-নোয়েল বাহো আজ মঙ্গলবার বলেন, সোমবার ম্যাডলিন নামের জাহাজটি থেকে গ্রেটা থুনবার্গের সঙ্গে আটক হওয়া অন্তত পাঁচজন অধিকারকর্মী স্বেচ্ছায় ইসরায়েল ছাড়তে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তাঁদের বিতাড়িত করা হবে।
আরও পড়ুনত্রাণবাহী জাহাজ ‘ম্যাডলিন’ দখলে নিয়েছে ইসরায়েল, আছেন গ্রেটাসহ ১২ মানবাধিকারকর্মী ০৯ জুন ২০২৫সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিখেছেন, ‘গত রাতে আমাদের কনসাল ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের হাতে আটক ছয়জন ফরাসি নাগরিকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে সক্ষম হন। তাঁদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে একজন স্বেচ্ছায় ইসরায়েল ছাড়তে সম্মত হয়েছেন এবং আজই দেশে ফিরবেন বলে আশা করা হচ্ছে। অপর পাঁচজনকে বিতাড়িত করা হবে।’
সোমবার ইসরায়েলে আটক হওয়া ফরাসি নাগরিকদের মধ্যে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য রিমা হাসানও আছেন।
গতকাল সোমবার ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মুখপাত্র ডেলফিন কলার্ড বলেন, ‘গত কয়েক দিন ও কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছেন। ম্যাডলিন জাহাজে থাকা রিমা হাসান ও তাঁর সঙ্গীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এ যোগাযোগ রাখেন তিনি।
এর আগে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছিল, যাঁরা বিতাড়নসংক্রান্ত কাগজপত্রে স্বাক্ষর করতে রাজি হবেন না এবং ইসরায়েল ছাড়তে চাইবেন না, তাঁদের বিতাড়িত করার অনুমতি পেতে বিচারিক কর্তৃপক্ষের সামনে হাজির করা হবে।
গ্রেটাসহ ১২ জন অধিকারকর্মী গাজা অভিমুখী একটি ত্রাণবাহী জাহাজে ছিলেন। আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থা ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি) পরিচালিত জাহাজটি ফিলিস্তিনের গাজার ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের জন্য ত্রাণ নিয়ে ইতালি থেকে রওনা করেছিল। স্থানীয় সময় গত রোববার মধ্যরাতে গাজা থেকে প্রায় ১৮৫ কিলোমিটার দূরে আন্তর্জাতিক জলসীমায় জাহাজটি আটকে দেয় ইসরায়েলের নৌবাহিনী। জাহাজে থাকা অধিকারকর্মীদেরও আটক করা হয়। পরে গ্রেটা থুনবার্গকে ইসরায়েল থেকে বিতাড়িত করতে তেল আবিব বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়।
আরও পড়ুনম্যাডলিন জাহাজ থেকে ভিডিওতে কী বার্তা দিলেন গ্রেটা থুনবার্গ ০৯ জুন ২০২৫‘ম্যাডলিন’ জাহাজে থুনবার্গ ছাড়াও যে ১১ জন অধিকারকর্মী ছিলেন তাঁরা হলেন ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত ফরাসি নাগরিক ও ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য রিমা হাসান, জার্মানির ইয়াসেমিন আচার, ফ্রান্সের ব্যাপতিস্ত আন্দ্রে, ব্রাজিলের থিয়াগো আভিলা, ফ্রান্সের ওমর ফায়াদ, পাস্কাল মৌরিয়েরাস, ইয়ানিস মোহামদি, তুরস্কের সুলাইব ওর্দু, স্পেনের সার্জিও তোরিবিও, নেদারল্যান্ডসের মার্কো ফন রেনেস ও ফ্রান্সের রিভা ভিয়া।
২ মার্চ থেকে গাজায় ত্রাণ প্রবেশ পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় ইসরায়েল। এমন অবস্থায় অনাহারে ভুগে বেশ কয়েকটি শিশু মারা যায়। ত্রাণ প্রবেশে বাধা দেওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে ‘ম্যাডলিন’ নামের এ জাহাজ ১ জুন ইতালির সিসিলির কাতানিয়া শহর থেকে যাত্রা শুরু করে।
ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, গাজার মানুষের জন্য অত্যন্ত জরুরি ভিত্তিতে যেসব সহায়তা দরকার, সেগুলো জাহাজটিতে ছিল। এর মধ্যে আছে চিকিৎসার সরঞ্জাম, ময়দা, চাল, শিশুদের দুধ, ডায়াপার, নারীদের স্যানিটারি পণ্য, পানি বিশুদ্ধকরণ কিট, ক্রাচ ও শিশুদের কৃত্রিম অঙ্গ।
আরও পড়ুনত্রাণবাহী জাহাজ ‘ম্যাডলিন’ নিজেদের বন্দরে নিয়ে গেছে ইসরায়েল১৪ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ত ড় ত কর ধ ক রকর ম পরর ষ ট র ইসর য় ল জ হ জট ইউর প ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ