ঢাকা থেকে দর্শনাগামী একটি এসি বাসে যাত্রাপথেই ওমেদুল ইসলাম মাসুদ (৬০) নামে এক যাত্রীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। যাত্রীদের অভিযোগ বাস সার্ভিসের অব্যবস্থাপনা, এসি নষ্ট ও কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে গরমে এ ঘটনা ঘটেছে।

ঈদের পরদিন রোববার এ ঘটনাটি ঘটেছে। মাসুদের বাড়ি ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার এলাঙ্গী ইউনিয়নের রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রামে। নিহতের পরিবারের দাবি দীর্ঘপথ বাসে এসি না চলায় তীব্র গরমে তার মৃত্যু হয়।

নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানান, ওমেদুল ইসলাম মাসুদ ঢাকার উত্তরা ১১নং সেক্টরের একটি বাসায় স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে বসবাস করতেন। পারিবারিক একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঈদের পরদিন মাজার রোড থেকে ঢাকা-দর্শনাগামী একটি এসি বাসে ওঠেন তিনি। বাসটি যাত্রা শুরু করে সকাল ১০টায়।

পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করে জানান, যাত্রার পর থেকেই মুহূর্তের জন্যও কাজ করেনি বাসের এসি (শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা)। ফলে সৃষ্টি হয় দম বন্ধ হওয়া পরিস্থিতি। পরিস্থিতি আরও খারাপ হয় পদ্মা নদী পার হওয়ার সময় ফেরিতে ওঠার পর বাসের ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গেলে। প্রায় আড়াই ঘণ্টা তীব্র রোদে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় যাত্রীদের। এই সময়ে বাসের ভেতরে আবদ্ধ অবস্থায় ছিলেন সবাই, যেখানে বাতাস প্রবেশের কোনো সুযোগ ছিল না। ফেরি থেকে নামার পর আবার বাসে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়।

যাত্রীরা জানান, মৃত্যুর আগে বারবার সহায়তা চেয়েছিলেন তিনি, অনুরোধ করেছিলেন এসি চালানোর। কিন্তু বাসটির এসি নষ্ট থাকায় এবং যথাযথ সহায়তা না পাওয়ায় তিনি ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। আনুমানিক বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ঝিনাইদহ-কালীগঞ্জ সড়কের কোনো একটি স্থানে তার মৃত্যু হয়। 

নিহতের ছোট ভাই আসাদুজ্জামান বলেন, গোটা রাস্তায় তীব্র কষ্ট পেয়েছে বাসের যাত্রীরা। আমার বড় ভাই এই গরমে কষ্ট পেয়ে মারা গেল। সবশেষ ঝিনাইদহ শহর পার হওয়ার পর মোবাইলে কথা হয়েছিল ভাইয়ের সঙ্গে। কথা বলতে বলতে তার ফোনের লাইন কেটে যায়। এর কিছুক্ষণ পরেই শুনি ভাই মারা গেছে। পরদিন সোমবার সকালে ভাইয়ের মৃতদেহ দাফন করি। আমি থানায় কোনো অভিযোগ করবো না। শুধু সৃষ্টি কর্তার কাছে ভাইয়ের মৃত্যুর বিচার চাই।

ওই বাসের যাত্রী কাজী মিনহা ইসলাম ফেসবুকে লিখেছেন, ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা, একটি যাত্রা, যার মূল্য ছিল একটি প্রাণ। ঢাকা থেকে ঝিনাইদহ, কালীগঞ্জ পর্যন্ত এসি বাসের টিকিট কেটেছিলাম জনপ্রতি ১৪০০ টাকা দিয়ে-নিরাপদ ও স্বস্তি দায়ক যাত্রার আশায়। কিন্তু যা পেলাম তা ছিল নিছক প্রতারণা, চরম অব্যবস্থাপনা আর এক মর্মান্তিক ট্রাজেডি।

পোস্টের শেষাংশে তিনি লিখেন, এটা শুধু একটা ব্যর্থ যাত্রা নয়-এটা ছিল এক ভয়াবহ বিপর্যয়, যা তৈরি হয়েছে লোভ, অব্যবস্থাপনা আর মানুষের জীবনের প্রতি সম্পূর্ণ উদাসীনতার ফলাফল হিসেবে।

এ বিষয়ে ওই পরিবহনের ম্যানেজার রানা বলেন, শুরুতে বাসের এসিতে কোনো সমস্যা ছিল না। বাসে উঠার পর বা কিছু দূর এগোনোর পর যাত্রীরা অভিযোগ দিলে গাড়ি পরিবর্তন করা যেত। কিন্তু ফেরি পার হওয়ার পরেই গাড়ির পাওয়ার সেকশনে সমস্যার কারণে এসি কাজ করেনি। তখন যাত্রীরা অভিযোগ করেছে। কিন্তু ঈদের পরদিন মিস্ত্রী না পাওয়ার কারণে সেটা ঠিক করা যায়নি। যারা বাসের লোক ছিল তারাও পাওয়ার সেকশন ঠিক করতে পারেনি। আর সময় মেইনটেন করার জন্য ওভাবেই গন্তব্যের উদ্দেশ্যে বাস রান করে। একজন মারা গেছে এটা দুঃখজনক। অন্যদের কোনো সমস্যা হল না, কিন্তু ওই ব্যক্তিটাই মারা গেল। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ঝ ন ইদহ ব যবস থ র পর ব পরদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

২২ অনাথ কাশ্মীরি শিশুর পড়াশোনার দায়িত্ব নিলেন রাহুল গান্ধী

অপারেশন সিঁদুর চলাকালীন পাকিস্তানি গোলায় ভারত–নিয়ন্ত্রিত জম্মু–কাশ্মীরে যাঁরা নিহত হয়েছিলেন, তাঁদের পরিবারের ২২ অনাথ শিশুর লেখাপড়ার পুরো দায়িত্ব নিয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। ওই শিশুরা পুঞ্চ জেলার সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দা।

স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে উঠে স্নাতক হওয়া পর্যন্ত ওই শিশুদের পড়াশোনার সব খরচ রাহুল গান্ধী বহন করবেন। সেই খরচের প্রথম কিস্তির টাকা বুধবার ওই পড়ুয়াদের স্কুলে পৌঁছে যাবে বলে জানিয়েছেন জম্মু–কাশ্মীরের কংগ্রেস সভাপতি তারিক হামিদ কাররা।

পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল পর্যটকদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়েছিল কয়েকজন জঙ্গি। সেই হামলায় নিহত হয়েছিলেন মোট ২৬ জন পর্যটক। প্রত্যাঘাতের জন্য ভারত শুরু করে অপারেশন সিঁদুর। চার দিনের সেই লড়াইয়ের সময় জম্মুর সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রবল গোলাবর্ষণ করে পাকিস্তান। সেই হামলায় মারা গিয়েছিলেন ২৭ জন গ্রামবাসী। আহত হয়েছিলেন ৭০ জনের বেশি। যাঁরা নিহত হয়েছিলেন, ওই ২২ শিশু ওইসব পরিবারেরই সন্তান। তাদের কেউ বাবা, কেউ মা, কেউ–বা দুজনকেই হারিয়েছে। কারও পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।

রাহুল গত মে মাসে ওইসব এলাকায় গিয়েছিলেন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। অনাথ শিশুদের স্কুলেও গিয়েছিলেন। ওই সময় তিনি দলীয় নেতাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন অনাথ শিশুদের তালিকা তৈরি করতে। সরকারি নথির সঙ্গে সেই নাম মিলিয়ে ২২ জনের চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত হয়। পুঞ্চ জেলা সফরের সময় রাহুল তাঁর ইচ্ছার কথা জানিয়ে বলেছিলেন, ওই শিশুদের স্নাতক স্তর পর্যন্ত পড়াশোনার সব খরচ তিনি দেবেন।

পাকিস্তানের গোলার আঘাতে মারা গিয়েছিলেন ১২ বছরের দুই যমজ ভাই–বোন জাইন আলি ও উরবা ফতিমা। রাহুল তাঁদের স্কুলে গিয়েছিলেন। সেই স্কুলের পড়ুয়াদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তাঁদের বলেছিলেন, তোমরা তোমাদের বন্ধুদের হারিয়েছ। সে জন্য তোমাদের মন খারাপ। ওই মৃত্যু আমাকেও দুঃখ দিয়েছে। তোমাদের দুঃখ আমি বুঝি। কিন্তু তোমাদের জন্য আমি গর্বিত। তোমরা ভয়কে জয় করেছ। রাহুল ওই শিশুদের বলেছিলেন, ভয়কে জয় করতে হবে। সুদিন আসবে। সব আবার স্বাভাবিক হবে।

ওই ২২ জনের জন্য বছরে কত খরচ হবে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব তা জানাননি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ