প্রেক্ষাগৃহে শাকিব খানের ‘তাণ্ডব’ ঝড়, মুক্তির তিন দিনে রেকর্ড আয়!
Published: 10th, June 2025 GMT
ঢাকাই সিনেমার পোস্টার বয় শাকিব খানের ‘তাণ্ডব’ সিনেমাটি মুক্তির পর থেকে শোবিজ অঙ্গনে রীতিমতো ঝড় তুলেছে। দর্শক থেকে সমালোচক সব মহলেই দারুণ প্রশংসা কুড়িয়েছে। রায়হান রাফী পরিচালিত এই সিনেমায় ভরপুর অ্যাকশন এবং টানটান উত্তেজনাপূর্ণ গল্পের কারণে প্রথম থেকেই দর্শকদের পছন্দের শীর্ষে ছিল ‘তাণ্ডব’।
এমন অবস্থায় স্বাভাবিকভাবে ভক্ত-অনুরাগীদের কৌতূহলের অন্যতম জায়গা হয়ে উঠেছে বিগ বাজেটের এই সিনেমা এখনো পর্যন্ত কত আয় করেছে?
বাংলাদেশে যেহেতু কোনো বক্স অফিস কালেকশনের রেকর্ড নেই, সে হিসেবে সিঙ্গেল স্ক্রিন থেকে ঈদে মুক্তির ৪র্থ দিন পর্যন্ত কোন সিনেমা কত টাকা আয় করেছে তা সহজে জানার খুব একটা সুযোগ নেই। তবে, মাল্টিপ্লেক্স থেকে মুক্তির ৩ দিনে শাকিব খানের এই সিনেমা কত আয় করেছে সে বিষয়ে একটা তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
আরো পড়ুন:
শাকিব খান সম্পর্কে এই চমকপ্রদ তথ্যগুলো জানেন?
শাকিবের ‘তাণ্ডব’-এ বাজিমাৎ করলেন নিশো-সিয়াম!
ঈদে দেশজুড়ে প্রায় ১৩৩টি সিনেমা হলে মুক্তি পেয়েছিল শাকিব খানের তাণ্ডব। শুরুর দিন থেকেই অধিকাংশ প্রেক্ষাগৃহে হাউজফুল যাচ্ছে সিনেমাটি। প্রথম দিনে সিনেপ্লেক্সে ২৮টি শো ছিল তাণ্ডবের। যেখান থেকে আয় হয়েছিল ৩৬ লাখ ৭৪ হাজার। এর আগে, গত বছর মুক্তিপ্রাপ্ত প্যান ইন্ডিয়া সিনেমা ‘দরদ’ মুক্তির প্রথম দিনে মাল্টিপ্লেক্স থেকে আয় করেছিল ৩০ লাখ ৬৮ হাজার। সে হিসেবে ‘তাণ্ডব’ দরদেরও রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়।
ঈদের দ্বিতীয় দিনে মাল্টিপ্লেক্সে দ্বিগুণ পরিমাণে বেড়ে যায় তাণ্ডবের শো। আয়টাও বেড়ে হয় প্রায় দ্বিগুণ। এদিন স্টার সিনেপ্লেক্স, লায়ন সিনেমাস, গ্র্যান্ড সিলেট মুভি থিয়েটার, মম ইন, গ্র্যান্ড রিভার ভিউ সিনেপ্লেক্স, মণিহার সিনেপ্লেক্স, মধুবন সিনেপ্লেক্স, স্বপ্নিল সিনেপ্লেক্স মিলিয়ে তাণ্ডবের মোট শো চলেছে ৮১টি। যেখানে প্রায় ৭৪ লাখ টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে। ফলে ঈদের দুই দিন শেষে ‘তাণ্ডব’ সিনেমার মোট মাল্টিপ্লেক্স গ্রস কালেকশন ১ কোটি ১০ লাখ টাকা।
ঈদের তৃতীয় দিনেও তাণ্ডব ঝড় অব্যাহত ছিল। এদিন দেশের বিভিন্ন মাল্টিপ্লেক্সে প্রায় ৭৫ লাখ টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে। তিন দিন শেষে ‘তাণ্ডব’-এর মোট মাল্টিপ্লেক্স গ্রস কালেকশন দাঁড়ায় ১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। যা চতুর্থ দিনে ২ কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলেই অনুমান করা যাচ্ছে।
এছাড়া, তাণ্ডব আরো একটি রেকর্ড গড়েছে। স্টার সিনেপ্লেক্সে এখনো পর্যন্ত ৩ দিনে তাণ্ডবের ১০৬টি শো হাউজফুল গেছে। দর্শকেরাও সিনেমার টিকিট না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে। দেশের ১৩২টি প্রেক্ষাগৃহে সিঙ্গেল স্ক্রিনে সর্বোচ্চ রেন্টাল নিয়ে ‘তাণ্ডব’ মুক্তি পেয়েছে। ফলে সেখান থেকেও একটি বড় পরিমাণের অর্থ আয় করেছে তাণ্ডব টিম।
নির্মাতা রাফী বলেন, ‘‘এত রেন্টাল দিয়ে এর আগে বাংলাদেশে কোনো সিনেমা মুক্তি পায়নি। আমি আশাবাদী, আরো একটি ইতিহাস গড়ে দেশের সর্বোচ্চ আয়ের সিনেমা হতে যাচ্ছে ‘তাণ্ডব’। কারণ, দর্শক হলে গেলে এক মিনিটের জন্যও পর্দা থেকে চোখ ফেরাতে পারবে না। আর দর্শক সিনেমাটি বারবার দেখবে।’’
‘তাণ্ডব’ এর প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিল গণমাধ্যমে বলেন, ‘‘আমার বিশ্বাস, দর্শকের যে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে, তাতে তাণ্ডব সিনেপ্লেক্স ইতিহাসের অন্যতম সর্বোচ্চ সংখ্যক শো-এর ছবি হয়ে উঠবে। ১৩৯টি হলের মধ্যে ১৩৩টি হলে ছবিটি মুক্তি পেয়েছে। প্রত্যেক জায়গা থেকেই অভাবনীয় সাড়া পাচ্ছি।"
উল্লেখ্য, ‘তাণ্ডব’ রায়হান রাফীর সপ্তম সিনেমা। শাকিব খানের সঙ্গে এটি তার দ্বিতীয় কাজ। এর আগে এই জুটিকে ‘তুফান’ সিনেমায় দেখা যায়, যেটি দর্শকমহলে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছিল।
‘তাণ্ডব’ সিনেমায় শাকিব খান ছাড়াও আরও অভিনয় করেছেন জয়া আহসান, সিয়াম আহমেদ, আফরান নিশো, আফজাল হোসেন, সাবিলা নূর, রোজী সিদ্দিকী, ডা.
ঢাকা/রাহাত
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্র নেই, ইউরোপ কি একা পুতিনকে রুখতে পারবে
ট্রাম্প ইউক্রেন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। ইউরোপকে এখনই ঠিক করতে হবে, সে কি লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেবে, না রাশিয়ার জয়ের মূল্য দেবে।
কিছুদিন আগেও ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় মিত্র ছিল যুক্তরাষ্ট্র। তারা অস্ত্র, অর্থ ও কূটনৈতিক সহায়তা দিয়ে ইউক্রেনকে সাহায্য করত। কিন্তু এখন যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। ইউক্রেন যুদ্ধ ট্রাম্পকে আর তেমন ভাবায় না। তিনি রাশিয়ার কথাই বারবার বলছেন। ন্যাটোকে তুচ্ছ করেছেন। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা নিয়ে রসিকতা করেছেন। যদিও পুতিন সম্প্রতি বলেছেন ‘পুরোপুরি পাগল হয়ে গেছে’।
ট্রাম্প আর ইউক্রেনের সমর্থক নন। তিনি কোনো গ্রহণযোগ্য শান্তি-উদ্যোক্তা হয়ে ওঠেননি। সব মিলিয়ে ইউক্রেন বিষয়ে তাঁর কথার এখন তেমন মূল্য নেই। তবে এসবের খেসারত দিচ্ছে ইউক্রেন। দুই সপ্তাহ আগে ইউক্রেন শুরু করেছে ‘অপারেশন স্পাইডারওয়েব’। রাশিয়ার ভেতরে ড্রোন হামলার মাধ্যমে ডজনখানেক বিমানঘাঁটি ও সামরিক স্থাপনা ধ্বংস করা হয়েছে। হোয়াইট হাউস দ্রুতই জানায় যে এতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ট্রাম্প আবার বললেন, তিনি যুদ্ধ থেকে ‘সরে যাবেন’।
এই ঘটনার পর ইস্তাম্বুলে দ্বিতীয় দফা শান্তি আলোচনা ভেঙে পড়ে। একমাত্র চুক্তি হয়, ছয় হাজার মৃত সেনার মরদেহ বিনিময়। এর মধ্যেই ট্রাম্পের তরফে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জানালেন, তিনি চান জেলেনস্কি ও পুতিন সরাসরি কথা বলুন। তবে তখন সময় পেরিয়ে গেছে।
২০২২ সালে রাশিয়ার আগ্রাসনের পরও বহুবার দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে চাপ দিয়েছে, রাশিয়াকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করেছে। ইউরোপীয় নেতারা কিছুটা প্রতিবাদ করেছেন। কিন্তু ইউরোপের নিরাপত্তার পুরো দায় কাঁধে তোলেননি। এখন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা কমছে। ট্রাম্প নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন। ইউরোপ পড়েছে ইতিহাসের এক ক্রান্তিলগ্নে। ইউরোপ এখন একা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তৈরি হওয়া ন্যাটো জোটের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। রুশ আগ্রাসন ঠেকাতে ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় ভিত্তি ইউরোপের প্রতিশ্রুতি।
প্রশ্ন হলো, এই সময়ের দাবি কি ইউরোপ পূরণ করতে পারবে? ইউরোপের দেশগুলো কি যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াই একটি কার্যকর নিরাপত্তা জোট গড়তে পারবে? তা কি সম্ভব?
২০২৫ সালের শুরুতে ইউক্রেন নিজে প্রায় ৪০ শতাংশ সামরিক চাহিদা পূরণ করছিল। বাকি ৩০ শতাংশ দিচ্ছিল ইউরোপ, ৩০ শতাংশ আসছিল যুক্তরাষ্ট্র থেকে। আগে ইউক্রেনের প্রয়োজনীয় গোলাবারুদ যুক্তরাষ্ট্র জোগাত। ইউরোপ মরিয়া হয়ে ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করছে। কিন্তু ইউরোপের অস্ত্রশিল্প অনেক দিন ধরে পিছিয়ে আছে। ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ ২০ লাখ কামান গোলা তৈরি করবে ইউরোপ; যা ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রের সর্বনিম্ন চাহিদা মাত্র। রাশিয়া যদি ইউক্রেন দখল করে, তবে কেবল জার্মানিরই খরচ হবে বর্তমান সহায়তার ১০ থেকে ২০ গুণ বেশি। কারণ হবে শরণার্থী স্রোত, জ্বালানিসংকট, অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও নিরাপত্তা হুমকি। একটি বড় উদ্যোগ নিচ্ছে চেক প্রজাতন্ত্র।
২০২৬ সালের শেষ নাগাদ তারা ইউক্রেনকে ১৮ লাখ কামান গোলা সরবরাহ করবে। এই প্রকল্পে কানাডা, নরওয়ে, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্কসহ বেশ কিছু দেশ অংশ নিচ্ছে। এটি সময়মতো পৌঁছালে যুদ্ধের গতিপথে প্রকৃত পরিবর্তন আনতে পারে। মে মাসের শেষ দিকে জার্মানি আর ইউক্রেন এক চুক্তি করেছে। এর মাধ্যমে ইউক্রেনেই দীর্ঘ পাল্লার অস্ত্র তৈরি করা হবে স্থানীয় শিল্প ও প্রকৌশল দক্ষতা কাজে লাগিয়ে। ইউক্রেনের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মিত্র ব্রিটেন ঘোষণা করেছে ৩৫০ মিলিয়ন পাউন্ডের নতুন ড্রোন প্যাকেজ। এই প্যাকেজ ২০২৬ সালের মধ্যে ১ লাখ ড্রোন সরবরাহ করবে।
সম্প্রতি ট্রাম্প ফক্স নিউজে বলেন, ইউক্রেনে আমেরিকানদের করের টাকা ‘অপচয়’ হচ্ছে। মন্তব্যটা বিভ্রান্তিকর। যুক্তরাষ্ট্র ২০২২ সাল থেকে ইউক্রেনকে প্রায় ১২৮ বিলিয়ন ডলার সাহায্য দিয়েছে। এর মধ্যে ৬৬.৫ বিলিয়ন সামরিক সহায়তা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও সদস্যদেশগুলো ১৩৫ বিলিয়ন ইউরো দিয়েছে—৫০ বিলিয়ন সামরিক, ৬৭ বিলিয়ন আর্থিক ও মানবিক, ১৭ বিলিয়ন ইউরো শরণার্থী সহায়তা। যুক্তরাজ্য দিয়েছে আরও ১২.৮ বিলিয়ন পাউন্ড। এসব কোনো দান নয়। এগুলো কৌশলগত বিনিয়োগ। রাশিয়া যুদ্ধে জিতলে এই দেশগুলোর লোকসান হবে আরও বেশি।
ইউরোপ নেতৃত্ব দিচ্ছে নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রেও। ২০১৪ সাল থেকে, বিশেষ করে ২০২২-এর পর রাশিয়ার অর্থনীতিকে লক্ষ্য করে ১৭ দফা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এতে যুদ্ধ না থামলেও রাশিয়ার ওপর চাপ বেড়েছে। ২০ মে ট্রাম্প ও পুতিনের ফোনালাপের পরদিনই ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্য সবচেয়ে বিস্তৃত নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজ ঘোষণা করে।
বিশ্লেষণ বলছে, এই নিষেধাজ্ঞা যদি কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা যায়, তবে রাশিয়ার বার্ষিক ক্ষতি হবে ১০ থেকে ২০ বিলিয়ন ডলার। এমনকি এর আংশিক প্রয়োগেও যুদ্ধের অর্থনীতিতে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে।
ইইউর পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কাইজা কাল্লাস বলেছেন, ‘যত দিন রাশিয়া যুদ্ধ চালাবে, তত কঠিন হবে আমাদের জবাব।’ এখন ইউরোপকে শুধু কথায় নয়, কাজে তা প্রমাণ করতে হবে। ড্রোন থেকে কামান, নিষেধাজ্ঞা থেকে অস্ত্র উৎপাদন—ইউরোপ এখন ধীরে ধীরে বক্তব্য থেকে কৌশলে রূপ নিচ্ছে। কিন্তু এই গতি থামা চলবে না। এটি আর শুধু ইউক্রেনের যুদ্ধ নয়।
যুক্তরাষ্ট্র সরে গেছে। ইউরোপ আর যুক্তরাষ্ট্রের বিকল্প নয়। সেই এখন শেষ প্রতিরক্ষা। যদি ইউরোপ ব্যর্থ হয়, ইউক্রেনও ব্যর্থ হবে। আর সেই সঙ্গে ধূলিসাৎ হবে স্বাধীন ও নিরাপদ ইউরোপের স্বপ্ন।
● সের্হেই মাইডুকোভ ইউক্রেনীয় লেখক
আল–জাজিরা থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ