ঢাকাই সিনেমার পোস্টার বয় শাকিব খানের ‘তাণ্ডব’ সিনেমাটি মুক্তির পর থেকে শোবিজ অঙ্গনে রীতিমতো ঝড় তুলেছে। দর্শক থেকে সমালোচক সব মহলেই দারুণ প্রশংসা কুড়িয়েছে। রায়হান রাফী পরিচালিত এই সিনেমায় ভরপুর অ্যাকশন এবং টানটান উত্তেজনাপূর্ণ গল্পের কারণে প্রথম থেকেই দর্শকদের পছন্দের শীর্ষে ছিল ‘তাণ্ডব’।

এমন অবস্থায় স্বাভাবিকভাবে ভক্ত-অনুরাগীদের কৌতূহলের অন্যতম জায়গা হয়ে উঠেছে বিগ বাজেটের এই সিনেমা এখনো পর্যন্ত কত আয় করেছে?

বাংলাদেশে যেহেতু কোনো বক্স অফিস কালেকশনের রেকর্ড নেই, সে হিসেবে সিঙ্গেল স্ক্রিন থেকে ঈদে মুক্তির ৪র্থ দিন পর্যন্ত কোন সিনেমা কত টাকা আয় করেছে তা সহজে জানার খুব একটা সুযোগ নেই। তবে, মাল্টিপ্লেক্স থেকে মুক্তির ৩ দিনে শাকিব খানের এই সিনেমা কত আয় করেছে সে বিষয়ে একটা তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

আরো পড়ুন:

শাকিব খান সম্পর্কে এই চমকপ্রদ তথ্যগুলো জানেন?

শাকিবের ‘তাণ্ডব’-এ বাজিমাৎ করলেন নিশো-সিয়াম!

ঈদে দেশজুড়ে প্রায় ১৩৩টি সিনেমা হলে মুক্তি পেয়েছিল শাকিব খানের তাণ্ডব। শুরুর দিন থেকেই অধিকাংশ প্রেক্ষাগৃহে হাউজফুল যাচ্ছে সিনেমাটি। প্রথম দিনে সিনেপ্লেক্সে ২৮টি শো ছিল তাণ্ডবের। যেখান থেকে আয় হয়েছিল ৩৬ লাখ ৭৪ হাজার। এর আগে, গত বছর মুক্তিপ্রাপ্ত প্যান ইন্ডিয়া সিনেমা ‘দরদ’ মুক্তির প্রথম দিনে মাল্টিপ্লেক্স থেকে আয় করেছিল ৩০ লাখ ৬৮ হাজার। সে হিসেবে ‘তাণ্ডব’ দরদেরও রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়।

ঈদের দ্বিতীয় দিনে মাল্টিপ্লেক্সে দ্বিগুণ পরিমাণে বেড়ে যায় তাণ্ডবের শো। আয়টাও বেড়ে হয় প্রায় দ্বিগুণ। এদিন স্টার সিনেপ্লেক্স, লায়ন সিনেমাস, গ্র্যান্ড সিলেট মুভি থিয়েটার, মম ইন, গ্র্যান্ড রিভার ভিউ সিনেপ্লেক্স, মণিহার সিনেপ্লেক্স, মধুবন সিনেপ্লেক্স, স্বপ্নিল সিনেপ্লেক্স মিলিয়ে তাণ্ডবের মোট শো চলেছে ৮১টি। যেখানে প্রায় ৭৪ লাখ টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে। ফলে ঈদের দুই দিন শেষে ‘তাণ্ডব’ সিনেমার মোট মাল্টিপ্লেক্স গ্রস কালেকশন ১ কোটি ১০ লাখ টাকা।

ঈদের তৃতীয় দিনেও তাণ্ডব ঝড় অব্যাহত ছিল। এদিন দেশের বিভিন্ন মাল্টিপ্লেক্সে প্রায় ৭৫ লাখ টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে। তিন দিন শেষে ‘তাণ্ডব’-এর মোট মাল্টিপ্লেক্স গ্রস কালেকশন দাঁড়ায় ১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। যা চতুর্থ দিনে ২ কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলেই অনুমান করা যাচ্ছে।

এছাড়া, তাণ্ডব আরো একটি রেকর্ড গড়েছে। স্টার সিনেপ্লেক্সে এখনো পর্যন্ত ৩ দিনে তাণ্ডবের ১০৬টি শো হাউজফুল গেছে। দর্শকেরাও সিনেমার টিকিট না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে। দেশের ১৩২টি প্রেক্ষাগৃহে সিঙ্গেল স্ক্রিনে সর্বোচ্চ রেন্টাল নিয়ে ‘তাণ্ডব’ মুক্তি পেয়েছে। ফলে সেখান থেকেও একটি বড় পরিমাণের অর্থ আয় করেছে তাণ্ডব টিম।

নির্মাতা রাফী বলেন, ‘‘এত রেন্টাল দিয়ে এর আগে বাংলাদেশে কোনো সিনেমা মুক্তি পায়নি। আমি আশাবাদী, আরো একটি ইতিহাস গড়ে দেশের সর্বোচ্চ আয়ের সিনেমা হতে যাচ্ছে ‘তাণ্ডব’। কারণ, দর্শক হলে গেলে এক মিনিটের জন্যও পর্দা থেকে চোখ ফেরাতে পারবে না। আর দর্শক সিনেমাটি বারবার দেখবে।’’

‘তাণ্ডব’ এর প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিল গণমাধ্যমে বলেন, ‘‘আমার বিশ্বাস, দর্শকের যে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে, তাতে তাণ্ডব সিনেপ্লেক্স ইতিহাসের অন্যতম সর্বোচ্চ সংখ্যক শো-এর ছবি হয়ে উঠবে। ১৩৯টি হলের মধ্যে ১৩৩টি হলে ছবিটি মুক্তি পেয়েছে। প্রত্যেক জায়গা থেকেই অভাবনীয় সাড়া পাচ্ছি।"

উল্লেখ্য, ‘তাণ্ডব’ রায়হান রাফীর সপ্তম সিনেমা। শাকিব খানের সঙ্গে এটি তার দ্বিতীয় কাজ। এর আগে এই জুটিকে ‘তুফান’ সিনেমায় দেখা যায়, যেটি দর্শকমহলে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছিল।

‘তাণ্ডব’ সিনেমায় শাকিব খান ছাড়াও আরও অভিনয় করেছেন জয়া আহসান, সিয়াম আহমেদ, আফরান নিশো, আফজাল হোসেন, সাবিলা নূর, রোজী সিদ্দিকী, ডা.

এজাজ, এফএস নাঈম, ফজলুর রহমান বাবু, কাজী রাকায়েতসহ আরো অনেকে।

ঢাকা/রাহাত

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র কর ড

এছাড়াও পড়ুন:

বাজারে আগাম সবজি আসতে দেরি, দাম চড়া

শীতের মৌসুম শুরু হলেও রাজধানীর বাজারে শীতের সবজির সরবরাহ এবার কম। এ কারণে দামও চড়া। বাজারে অধিকাংশ সবজির কেজি ৮০ টাকার বেশি। কিছু সবজির দাম ১০০ টাকার ওপরে।

বছরের এপ্রিল-অক্টোবর সময়টা মূলত গ্রীষ্ম ও বর্ষা মৌসুম। এ সময়ে প্রাণিজ আমিষ, অর্থাৎ মাছ, মাংস ও ডিমের দাম তুলনামূলকভাবে বেড়ে যায়। তাতে সবজির ওপর চাপ বাড়ে। ফলে সবজির সরবরাহ মোটামুটি থাকলেও দাম থাকে চড়া। শীতের আগাম সবজি বাজারে আসতে শুরু করলে দামও কমতে শুরু করে। শীতের আগাম সবজি বাজারে আসতে শুরু করে সেপ্টেম্বর–অক্টোবরে।

বিক্রেতারা বলছেন, এ বছর শীতের আগাম সবজি আসতে তুলনামূলক বেশি সময় লাগছে। এ কারণে দীর্ঘ সময় ধরে বাজারে চড়া দামে সবজি বিক্রি হচ্ছে। তবে গত কয়েক দিনে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ফুলকপি, শিমসহ শীতের আগাম কিছু সবজি আসতে শুরু করেছে। এতে এসব সবজির দামও কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে। বিক্রেতারা বলছেন, অক্টোবরের শুরুতেই আগাম শীতের সবজি বাজারে আসার কথা। কিন্তু এবার বেশ দেরিতেই এসব সবজি বাজারে এসেছে।

দেশে সবজির অন্যতম উৎপাদনস্থল যশোর। যশোরের সদর উপজেলার নোঙরপুর গ্রামের কৃষক বদরুল আলম এ বছর ৪০ শতক জমিতে আগাম মুলা চাষ করেছেন। ইতিমধ্যে ২৫ শতক জমির মুলা তিনি বিক্রি করেছেন। তিনি জানান, আবহাওয়াগত কারণে এবার আগাম সবজি একটু দেরিতে চাষ হয়েছে। এ জন্য খেত থেকে সবজি তুলতেও দেরি হয়।

এ বছর একটা লম্বা সময় ধরে বিভিন্ন অঞ্চলে টানা বৃষ্টি হয়েছে। ফলে বৃষ্টির সময়ে কেউ আগাম সবজি চাষের ঝুঁকি নেননি। এ কারণে আগাম শীতকালীন সবজি অক্টোবরের শেষে বাজারে আসা শুরু হয়েছে।আবু নোমান ফারুক আহম্মেদ, অধ্যাপক, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি ইমরান মাস্টার বলেন, এ বছর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে অনেক কৃষক ওই সময়ে আগাম সবজি চাষ করতে পারেননি। চাষাবাদ শুরু করতে দেরি হওয়ায় সবজি পেতেও দেরি হয়েছে। এতে বাজারেও প্রভাব পড়েছে।

কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা

কৃষিবিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলতি বছর আগাম সবজি চাষে দেরি হওয়ার পেছনে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের টানা বৃষ্টির একটি ভূমিকা ছিল। মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ সময়ে হঠাৎ টানা বৃষ্টি হয়। সামনের বছরগুলোতেও এমন পরিস্থিতি আসতে পারে বলে সতর্ক করেছেন তাঁরা।

এ বছর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে অনেক কৃষক ওই সময়ে আগাম সবজি চাষ করতে পারেননি। চাষাবাদ শুরু করতে দেরি হওয়ায় সবজি পেতেও দেরি হয়েছে। ইমরান মাস্টার, সভাপতি, কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতি

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু নোমান ফারুক আহম্মেদ জানান, দেশে ফসল উৎপাদন মূলত প্রকৃতিনির্ভর চাষাবাদ পদ্ধতিতে এবং খোলা মাঠে হয়। এ ক্ষেত্রে বৃষ্টি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে গত কয়েক বছরে দেশে বৃষ্টির ধরন পরিবর্তন হয়ে গেছে। কখনো খুব বেশি বৃষ্টি হয়, কখনো কম। এ বছর একটা লম্বা সময় ধরে বিভিন্ন অঞ্চলে টানা বৃষ্টি হয়েছে। ফলে বৃষ্টির সময়ে কেউ আগাম সবজি চাষের ঝুঁকি নেননি। এ কারণে অন্যান্য সময় যেখানে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে আগাম শীতকালীন সবজি বাজারে চলে আসে, সেখানে এবার তা অক্টোবরের শেষে আসা শুরু হয়েছে। এটিই বাজারে সবজির দাম না কমার অন্যতম কারণ।

ভিন্ন দাবি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর অতিবৃষ্টির কারণে দুই দফায় সবজির ক্ষতি হয়। এর মধ্যে গত আগস্টে প্রায় ১৮ দিনের বৃষ্টিতে ৩৫১ হেক্টর জমির এবং সেপ্টেম্বরে ১৫ দিনে ১২৪ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সংস্থাটির কর্মকর্তাদের দাবি, চলতি বছর শীতের আগাম সবজি আসতে উল্লেখ করার মতো দেরি হয়নি। স্থানভেদে কোথাও কয়েক দিন দেরিতে চাষ শুরু হয়েছে। তবে সেটি সার্বিক চিত্র নয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক মো. ওবায়দুর রহমান মণ্ডল বলেন, ‘আগাম সবজির সরবরাহ কম, এটি ব্যবসায়ীদের সাধারণ কথা। আমাদের তথ্য বলছে, শীতের আগাম সবজি ইতিমধ্যে বাজারে চলে এসেছে। দেশের সব বাজারেই এখন শীতের আগাম সবজি পাওয়া যায়। দামও সহনীয় হয়ে এসেছে। আগাম সবজি যদি কম থাকত, তাহলে দাম আরও চড়া থাকার কথা ছিল।’

বৃষ্টির কারণে সবজি আসতে দেরি হয়েছে কি না—এ প্রসঙ্গে ওবায়দুর রহমান বলেন,সারা দেশে একসঙ্গে টানা বৃষ্টি হয়নি। শুধু কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধাসহ রংপুরের কয়েকটি জেলা এবং চট্টগ্রামের কিছু জেলার নিচু এলাকায় অতিবৃষ্টির প্রভাব পড়েছিল। এ ছাড়া বগুড়া, যশোর অঞ্চলে বৃষ্টির তেমন প্রভাব পড়েনি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আরও জানিয়েছে, চলতি বছর শীতকালে (রবি মৌসুম) প্রায় ৬ লাখ ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অনুমান করেছে তারা। এর মধ্যে ১ লাখ ২৯ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে আগাম সবজি চাষ হয়েছে। যেসব জমিতে আগাম সবজি চাষ হয়েছে, সেখানে আবার সবজি চাষ হবে। গত বছর শীত মৌসুমে সব মিলিয়ে ৬ লাখ ৪২ হাজার হেক্টরে সবজি চাষ হয়েছিল।

করণীয় কী

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন, বৃষ্টির অস্বাভাবিকতা ও লবণাক্ততা বৃদ্ধির ফলে কৃষিতে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে। এ সত্যকে মেনে নিতে হবে। এ পরিস্থিতিতে আধুনিক প্রযুক্তির চাষাবাদ বাড়াতে হবে। বিশেষ করে এক ফসলি জমিকে দুই বা তিন ফসলি করা এবং নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো জরুরি।

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু নোমান ফারুক আহম্মেদ জানান, জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে খাদ্যের চাহিদা মেটাতে কৃষিতে প্রযুক্তিনির্ভর অভিযোজনের বিকল্প নেই। কম খরচে পলিথিনের শেড তৈরি করে সবজি চাষ করা সম্ভব, যা বৃষ্টি বা তাপমাত্রার পরিবর্তনে তেমন প্রভাবিত হয় না। পাতাজাতীয় শাকসবজি, মরিচ, টমেটো, বেগুন ও শসার মতো ফসল এতে সহজে উৎপাদন করা যায়। উৎপাদন স্থিতিশীল থাকলে সবজির সরবরাহ ঠিক থাকবে, কৃষকেরাও ভালো দাম পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ